নিয়ম মানব, অনিয়মের সংস্কৃতি ভাঙ্গব [সফল হোক, ওয়াকিং ফর চিটাগং]
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:০৯:১৯ রাত
১৯৮৭/৮৮ দিকের কথা। আমি এস.এস.সি পরীক্ষার পর চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমিতে পরীক্ষা দিতে যাব । আগের দিন গ্রাম থেকে এসে কাতালগঞ্জে বড় আপার বাসায় রাত কাটিয়েছি। ভোরে চকবাজার অলিখাঁ মসজিদের সামনে দক্ষিন পাশে চকভিউ মার্কেটের পশ্চিম গেইট বরাবর দাড়িয়েছি বাসের জন্য ।
রাস্তায় তখনও মানুষজন বের হয়নি। কোন গাড়িও চলাচল শুরু করেনি। আমি দাড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায়। কিছুক্ষন পর দেখলাম চট্টগ্রাম মেডিকেলের দিক থেকে যে রাস্তা এসেছে ঐ রাস্তা দিয়ে একটি মোটর সাইকেল এসে সিগন্যাল লাইটের কাছে দাড়িয়ে পড়ল। আমি ফাকা রাস্তায় লোকটিকে মোটর বাইক নিয়ে দাড়াতে দেখে অবাক হলাম। অটো সিস্টেমের সিগন্যাল লাইটে লালবাতি জ্বলছে, সেজন্যেই লোকটি দাড়িয়ে আছে। নিয়ম মোতাবেক পাঁচ মিনিট পর পর লাল সবুজ বাতি জ্বলতেই থাকবে।রাস্তায় কোন গাড়ি নেই, মানুষ নেই, ট্রাফিক বা সার্জেন্ট কেউ এসময় থাকার কথাও নয়। তবুও লোকটি যতক্ষন লালবাতি জ্বলছিল ততক্ষন দাড়িয়ে ছিল। সবুজ বাতি জ্বলার পর লোকটি দক্ষিনদিকে চলে গেল।
আমার ঘোর তখনও কাটেনি। প্রায় ছয়ফিট লম্বা লোকটির গায়েছিল একটি ঢিলেঢালা গেঞ্জিও জিন্সের প্যান্ট। গায়ের রং ফর্সা, চুল লাল। বিদেশী কোন এনজিও কর্মকর্তা বলেই মনে হয়েছে আমার।
সেদিনের সেই বিদেশী লোকটির আইন মানার প্রতি যে নিষ্টা দেখেছিলাম তা আমি কোনদিনও ভুলিনি। বার বার ভেবেছি, আমরা কি পারিনা সেরকম হতে ? সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই মর্ম বেদনা আমাকে দগ্ধ করে যাচ্ছিল অহরহ।
সম্প্রতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (সিআইআর ’র প্রধান সমন্বয়ক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান স্যার তিনটি শ্লোগানকে ধারন করে আগামীকাল ১২ই এপ্রিল’১৪ইং সকাল ৮টায় ''Walking For Chittagong'' নামের প্রোগ্রামের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর ঘোষিত শ্লোগান তিনটি হল:
# আমি ফিট দেশ ফিট
# পরিচ্ছন্ন থাকব, বাসযোগ্য চট্টগ্রাম গড়ব
# নিয়ম মানব, অনিয়মের সংস্কৃতি ভাঙ্গব
আলোচ্য তিনটি শ্লোগানের তৃতীয় শ্লোগানটি আমার অন্তরের নিভু নিভু শিখাকে নতুন করে প্রজ্জ্বলিত করে দিয়েছে। ''Walking For Chittagong'' সফল করতে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, নাগরিক, এনজিও, সংবাদপত্রের সম্পাদকবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক ও ব্যক্তিত্বদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।এরকম কয়েকটি মতবিনিময়ে আমারও উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছে। তিনি যেটা বুঝাতে চেয়েছেন, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যেটা বুঝতে পেরেছি তা হচ্ছে দোষারোপের গন্ডি থেকে থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। চাই চাই এর পরিবর্তে আমরা বলব ‘করব এবং গড়ব’ । এর ফলে নিজেদের উপরও কিছু দায়িত্ব আপনা থেকেই এসে পড়ে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বর্গ কোন অবহেলা করছে কিনা সেটাকে মূখ্য না ভেবে আমরােই যদি যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হই তাহলে ধীরে ধীরে নাগরিক জীবনযাত্রা শৃংখলার দিকেই এগিয়ে যাবে।
আমাদের ব্যক্তি জীবনে, পরিবারে, সমাজে আজকে নিয়ম না মানাটাই যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে নিয়ম মানার মাধ্যমেই। আমাদের মন-মানসিকতা যদি সেই বিদেশী ভদ্রলোকের মত হয় তাহলে রাতে রাতে হয়তো নাগরিক জীবন যাত্রার মান বদলে যাবেনা, তবে পরবর্তী প্রজন্ম যে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন যানজটহীন শহর উপহার পাবে সেই আশা আমরা করতেই পারি ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের অনিয়মের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে । অনেক ধন্যবাদ বাহার ভাই
চট্টগ্রাম শহরের অবস্থা নিয়ে আমি নিজেও ভাবছিলাম ধারাবাহিক কিছু লেখালেখি করতে। নগর জীবনের অংসগতি এবং তার সমাধান কিভাবে হতে পারে, কিছু সম্ভাবনা এবং তা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আমাদের নাগরিক সমাজের মনে লালিত কথা এবং স্বপ্নগুলো ব্লগে লিখতে আমারও আগ্রহ আছে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের এ উদ্যেগের কারণে আমার মনের না বলা কথাগুলোর বেশীর ভাগই উঠে আসছে। এতে আমার বেশ ভাল লাগছে। যদি সম্ভব হয় আগামীকাল আমিও শরিক হওয়ার চেষ্টা করবো এ কর্মসূচীতে।
আমি প্রতিদিন মফস্বল থেকে চট্টগ্রাম শহরে কর্মস্থলে আসি। প্রতিদিন সকালে যখন কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ দিয়ে শহরে প্রবেশ করি তখন কর্ণফুলী নদীর করুণ অবস্থা দেখে খুবই খারাপ লাগে। এ নিয়ে আমি কিছু তথ্য উপাত্ব সংগ্রহ করে একটি ব্লগ লেখার ইচ্ছা আছে।
কিছু লোকের চুল পাকে..কিন্তু বুড়ো হয় না!
কিছু লোকের চুল পাকে কিন্তু বুড়ো হয়না ।
ওয়াকিং ফর চিটাগং কে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থন দিয়েছে এবং সাথে থেকেছে । আমরা শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন