ভিন্ন স্বাদের সৈকত ভ্রমন, বিনোদনের সাথে মানবতা
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২৪ মার্চ, ২০১৪, ০৫:০২:৪৫ বিকাল
তিন তিন বার তারিখ পিছানোর পর অবশেষে সেই ২০শে মার্চ১৪ইং এসে হাজির । আমি ইতিমধ্যে ব্লগ ও ফেসবুকের বন্ধুদের পরামর্শে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা সামগ্রীর গিফট বক্স তৈরী করে আগের দিন বাটালী রোড পাঠিয়ে দিয়েছি ।
অনেক কষ্ট ও ঝামেলার কাজ প্যাকেট করা । গিফট কিনতে সহযোগিতা করেছেন আন্দরকিল্লা আল-হিকমা পাবলিকেশনের মালিক ব্লগার আবু সুফিয়ান জুনিয়র। এক সপ্তাহ লেগেছে সব তৈরী করতে ।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার আগে আগে হাজির হলাম। মনে করেছিলাম সবাইকে ডেকে ডেকে নিতে হবে । না আমার ধারনা ভুল, গাড়িতে অর্ধেক সিট বুকিং হয়ে আছে । তবে সবার সামনেরটা আমার জন্য রেখে দিয়েছে দেখলাম । ঠিক আটটায় গাড়ি ছেড়ে দিল ।
লালখান বাজার কিছুক্ষন দাড়িয়ে আগে থেকে অর্ডার দেয়া নাস্তা সংগ্রহ করা হল । মুরাদপুর এবং বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের ওপার থেকেও কয়েকজন উঠল ।
এর পর যাত্রা শুরু । গাড়িতে নাস্তা দেয়া হল ।
নাস্তার মান বেশ ভালই, সেন্ডউইচ, স্পেশাল ছমুচা, সন্দেশ, আপেল, কেক, পানি।
আমি নাস্তা খেতে খেতে আমিরাবাদ সাইফুল্লাহ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলাম। উনাকে জানালাম যে আমরা ১০টা নাগাদ স্কুলে পৌছতে পারি ।
উল্লেখ্য যে আমরা অনেক চেষ্টা করেও কক্সবাজারের দরিদ্র পল্লীর কোন স্কুল শিক্ষকের মোবাইল নং যোগাড় করতে পারিনি। তাছাড়া যাত্রার দিন বৃহ:স্পতিবার হওয়ায় আমরা কক্সবাজার পৌছতে পৌছতে স্কুল ছুটি হয়ে যাবে।
তাছাড়া অনেক্ষন জার্নি এবং সাগর পাড়ে হাজির হওয়ার উন্মাদনায় অনেকে বিরক্তিবোধ করতে পারে। সাত-পাঁচ ভেবে আমি তা যাত্রা পথে দিয়ে যাওয়ার কথাই চিন্তা করেছি।
আমরা স্কুলের সামনে বড় রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সবাই নেমে পড়লাম ।
৪০ সিটের হানিফ এক্সক্লুসিভ চেয়ারকোচ, যাত্রী আমরা ৩৩জন, আরো ৭সিট খালি।
গাড়ি থেকে ব্যানার খুলে নেয়া হল । স্কুল সীমানায় ঢুকেই দেখি বাচ্চারা ফুলের ডিশ নিয়ে আমাদের কে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে ।
অফিসে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সাথে দেখা করলাম। ঐ দিকে ব্যানার টেনে মঞ্চ প্রস্তুত করা হল ।
আমাদেরকে নির্বাচিত ছাত্র/ছাত্রীদের তালিকা দেয়া হল যেটা আগে থেকে তৈরী করে রাখা হয়েছিল ।
আমাদেরই একজন তালিকা হাতে নিয়ে নাম ধরে ধরে ডাকতে লাগলেন ।
আমাদের সবাই একে একে ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিলাম শিক্ষাসামগ্রীর গিফট প্যাকেট।
এরপর স্কুল কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষিকাসহ আরো কয়েকজন কে দিয়ে বিতরন করালাম । যাবার সময় আমাদের গাড়িতে অনেকগুলো শশা দেয়া হল স্কুলের পক্ষ থেকে ।
একঘন্টার চেয়ে বেশী সময় লাগলেও কারো মুখেই কোন বিরক্তির লক্ষন দেখা যায়নি । বরঞ্চ সবাই এত খুশি হয়েছে যে আমাকে কয়েকজনে ঝাপটে ধরে বুকে টেনে নিয়েছে।
সেখানে বক্তৃতা দেয়া সম্ভব হবেনা বলে প্রতি প্যাকেটে কিছু কথা লিখে দিয়েছিলাম ।
:বিনামূল্যে বিতরনের জন্য:
পিভিসি ডোর মার্চেন্ট এসোসিয়েশন-চট্টগ্রাম মহানগর কর্তৃক সৈকত ভ্রমন ও দরিদ্রছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষা-সামগ্রী বিতরন’১৪ইং । বিতরন কৃত জিনিস: (১)একটি চার্জ লাইট (১৪বাল্ব বিশিষ্ট), (২)একটি পেন্সিল বক্স, (৩)তিনটি খাতা, (৪)দুটি কলম, (৫)ছqটি পেন্সিল, (৬)একটি ক্লাসিক রোলার, (৭)একটি রাবার, (৮)একটি শার্ফনার ও (৯)একটি ফাইল । তারিখ:২০শে এপ্রিল ২০১৪ইং ।
চার্জলাইট ব্যবহারের নিয়ম: একটানা ২ঘন্টার বেশী চার্জ করা যাবেনা । চার্জ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগেই চার্জ করে নিতে হবে। চার্জ লাইট অফ অবস্থায় চার্জ করাতে হবে। চার্জ থেকে নিয়ে সাথে সাথে না জ্বালানোই ভাল। নিয়ম মেনে চললে একবছর ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়া যায় ।
ছাত্র/ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে: তোমরা যদি মনদিয়ে ভাল করে পড়ালেখা করে সৎ ও যোগ্য মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারো তাহলে তোমরাও একদিন এরকম ভাল কাজ সমূহ করতে পারবে । তোমাদের শুভ ও কল্যান কামনা করছি ।
সাথে থাকা মেহমানদের মাঝে পারটেক্স গ্রুপের ম্যানেজার আখতার হোসাইন ঢাকা থেকে এসে আমাদের সাথে সঙ্গ দিয়েছেন। তিনি বললেন- এত সুন্দর আয়োজন যদি কোম্পানী আগে থেকে জানত তাহলে পুরো স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য কোম্পানীর পক্ষথেকেই ব্যবস্থা করতেন । তিনি আগামীবার সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এস.এ.প্লাষ্টিক ইন্ডস্ট্রিজ এর মালিক জনাব শাহ আলম সাহেব ও আগ্রহ দেখালেন। আমার নেয়া রুল মডেল এখানে কিছুটা স্বার্থক হল বলেই মনে হল ।
কঁচি কঁচি শিশুদের মুখে পবিত্র হাসি দেখে আমার প্রান জুড়িয়ে গেল ।
উল্লেখ্য যে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে মাত্র ৩০জন ছাত্র/ছাত্রীর জন্য ব্যবস্থা করেছিলাম । স্কুলে বলেদিয়েছিলাম যে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ৫জন ছাত্র ও ৫জন ছাত্রীর তালিকা তৈরী করে রাখতে । দরিদ্র ও মেধার দিকে নজর দিতে বলা হয়েছিল ।
গাড়িতে আমরা পার্টেক্স গ্রুপের দেয়া গিফট টি-সার্ট পড়ে নিলাম।
আমরা বেলা দেড়টার দিকে হোটেলে পৌছলাম । একেবারে সাগরের কিনারে, হোটেল অভিসার । গতবার ছিলাম এর পিছনের হোটেল সী-ওয়ার্ডে, ওটা অবশ্য থ্রি-স্টার ছিল
পারটেক্সের টি-সার্ট পড়ে ম্যানেজারের সাথে সবাই ছবি তুললাম।
প্রথমেই রুম বুঝে নেয়ার পালা।
তারপর নামাজ সেরে যদিও আগে থেকে নিরিবিলিতে খাওয়ার প্রোগ্রাম ছিল কিন্তু এখন ক্ষিদে পেট চৌ চৌ করছে বিধায় অভিসারেই Handi তে ঢুকে পড়লাম।
অর্ডার দেওয়ার পর ওরা এত সময় নিল যে আমার মনে হল বাজার থেকে দেশী মুরগী কিনে এনে কেটে-বেচে রান্না করে তারপর পরিবেশন করছে ।
লাঞ্চ শেষে টঙে গিয়ে চা পান করলাম।
তারপর কয়েকজন নিরিবিলি রেষ্টুরেন্টে রাতের ডিনারের অর্ডার দিতে গেলেন। আমি রুমে এসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম।
আমার রুম তিন তালায়, এক ফাঁকে পাঁচ তালার মুক্ত বারান্দায় গিয়ে সাগরটাকে উকিঁ দিয়ে দেখে নিলাম।
আসরের নামাজের পর এক ফাঁকে হোটেলের ছাদে উঠলাম।
প্রত্যেকে যার যার মত করে বেরিয়ে পড়েছে । কেউ কেউ হয়তো রুমে ঘুমাচ্ছে । আমি মাগরিবের পর সাগরের দিকে হাটা দিলাম একা একা ।
চরে পানির বিশাল বিশাল ঢেউয়ের গর্জন শুনা যাচ্ছে ।
===============================্
আমাদের প্রোগ্রামটি দৈনিক কর্ণফুলী নিউজ করেছে:
তাছাড়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুডনিউজ বিডি.কম নিউজ করেছে
http://www.goodnewsbd.com/2014/03/23/18575.php
বিষয়: বিবিধ
২৫২৩ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কক্সবাজার
স্বচ্ছ জলের প্রান্তর ছুয়ে
সিলিকন বালিকণা ঝিকিমিকি
দিগন্ত প্রসারে তুমি এক অলৌকিক স্বপ্ন
আলোকময়ের জ্বলন্ত নিদর্শন
‘কক্সবাজার’।
তোমাকে অবিস্কার করেনি কলোম্বাস
এবং আবিস্কৃত হওনি কোন মানুষের দ্বারা-
সাগরের স্ফটিক প্রবাহমান জলের ফোয়ারায় জন্ম।
বিষুবরেখার ডান প্রাপ্ত দ্রাঘিমাংশ ছুঁয়েছ
আজ পৃথিবীর সকল মানুষের মিলন মেলা
ঢেউয়ের ছলোচ্ছ্বাসে কোলাহল মূখর।
অহ! কী সুন্দরে আবদ্ধ এ মহা ভূমি
পৃথিবীর মহাটান অনুভব করি
নানার রংয়ের মানুষের মহা নিকেতন-
তা যদি জানতো চেঙ্গিস খান
তবে প্রলয় আর নিধনে গ্রাস করে নিত
অথবা হিটলার বোমা মেরে উড়িয়ে দিত জল কানন
ওহ! হিরোশিমা ওহ! নাগাসাকি
তোমরা দেখে যাও
প্রশান্তির আনন্দ স্র্রোত কিভাবে চেতনা ফিরে আসে?
কিভাবে স্বপ্নের টাইটানিক ভেসে আসে বঙ্গপোসাগরে-
সিটির জঞ্জাল পূর্ণ রাসায়নিক বিচ্চুরণের নিস্কৃতি থেকে
যান্ত্রিক জীবনের ব্যাকুলতা থেকে
কিভাবে সকল অতিত ঝেরে ফেলে আসে
একটু খুশির জন্য এতটুক আনন্দের জন্য।
দেখে যাও আর্য অনার্য
মহানন্দ প্রলয় বাতাস নিয়ে যাও।
প্রতিদিন ঘর্ম ক্লিষ্ট যান্ত্রিকতায় প্রতিযোগি যখন পৃথিবী
প্রতিদিন পাপ গ্লানিমায় নিমজ্জিত যখন পৃথিবী
প্রতিদিন স্নায়ু যুদ্ধে বিবাদমান যখন পৃ্থিবী
প্রতিদিন সম্রাজ্য দখল যুদ্ধে লিপ্ত যখন পৃথিবী
তখন একটু প্রশান্তির শুভ্র জলে সূর্যস্নান সেরে নেয়
পবিত্রতার আসল নৈতিক সংস্পর্শ খুঁজে পায়
তাই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিরা আসে- স্বাগতম! স্বাগতম!
এসে এসে দেখে যায়... কতটা প্রচ্ছন্ন হলে
তবে ভালবাসা যায়.. কতটা আয়েশী হলেই পরিচ্ছন্ন হওয়া যায়।
হায়! এরিস্টোটল বেঁচে থাকলে এ নিয়ে দর্শন লিখতে
এলিয়েট কবিতা লিখতেন এখানে হেলান দিয়ে
হায়! শেলী বেঁচে থাকলে হয়তো এ সাগরই তোমাকে পেত
শেখ সাদী তোমাকে দিতেন প্রতিশ্রুত প্রতিদান… সুলতান মাহমুদ।
ওহে! কক্সবাজার.. তুমি পৃথিবীর বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত
তোমাকে চিনেছে জিওগ্রাফী চ্যানেল টিভি
তোমাকে চিনেছে গুগুল আর্থ
তুমি তো বাংলার ব্যাবিলন, পিরামিড
তোমার নাম যে অঙ্কিত আছে ওয়ান্ডার সেভেন-এ
বিশ্বময় সারা জাগানোর আয়োজনে ব্যস্ত
একটি প্রজ্ঞাময় যাদুমোহ আকর্ষনে
আলিঙ্গণে নিয়ে আসে আলোকময় সৈকত আশ্রম।
আনন্দ আরও আনন্দ জোয়ারে হাসছে যিনি নিরাকার
হাসছে কক্সবাজার, হাসছে বাংলাদেশ্।
আপনি তাড়াতাড়ি কক্সবাজার ঘুরে যান।
সৈকত যেন আপনার পানে থাকিয়ে আছে ।
আশাকরি আগামীতে আরো ব্যাপক আকারে আয়োজিত হবে।
স্কুলটি খুব পুরনো । ১৯২৫ সালে স্থাপিত , মানে বৃটিশ আমলের । বৃটিশরা এতদূর পর্যন্ত কাজ করেছিল !
কক্সবাজারে লাবনী বিচের কাছাকাছি কোন হোটেলে ছিলেন মনে হল ।
হলিডের মোড়ে ঝাউবন রেস্তোরা , পঊষীতে গিয়েছিলেন কি ?
ঝাউবনের রুপচাঁদা ফ্রাই খুবই সুস্বাদু ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
<:-P
যেখানে সরকার কোটি টাকা নষ্ট করছে স্রেফ জাতিয় সঙ্গিত গাওয়ার রেকর্ড করার নামে সেখানে আপনাদের এই কল্যানমুখি উদ্যোগ স্মরনিয় হয়ে থাকবে।
মুরুব্বিরাতো সবই বলে দিলেন।
তবুও বলি...
সবাই যদি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে চলি,
নিরক্ষর থাকবেনা কভু
সমাজের কোন অলি-গলি।
সবাই যদি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে চলি,
নিরক্ষর থাকবেনা কভু
সমাজের কোন অলি-গলি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন