আমি মুসলমান-১ (গল্প), ‘‘জীবনে মিথ্যাকথা না বলার শপথ’’
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০১ মার্চ, ২০১৪, ০২:১৬:১৪ দুপুর
‘‘জীবনে মিথ্যাকথা না বলার শপথ’’
আব্দুল মালেক তুহিন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। শান্ত, ভদ্র এক মেধাবী ছেলে। তুহিনের আম্মু লুৎফুন্নিসা, একজন সম্ভ্রান্ত আলেমের মেয়ে। তার বাবা অর্থাৎ তুহিনের নানাজান স্কুলের হেড মৌলভী ছিলেন, এখন অবসরপ্রাপ্ত।
লুৎফুন্নিসা নিজের ছেলেকে একজন আদর্শ মুসলমান হিসেবেই গড়ে তুলতে চান। শুধু ছেলে নয় তুহিনের একটি ছোট বোন আছে, তার নাম সানজিদা নুসরাত ইমা । ইমা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। লুৎফা সময় পেলেই ছেলেমেয়েকে একসাথে বসিয়ে ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল শেখান । নিজেও সময় পেলে কোরানের তাফসীর, বাংলায় অনুবাদসহ হাদিসগ্রন্থ, ইসলামী বই সমূহ পড়েন। শরীয়ত মতে দোষনীয় নয় এমন বই-পুস্তকও পাঠ করেন লুৎফুন্নিসা ।
বই পড়ার অভ্যেসটি বাবার কাছ থেকেই পেয়েছে লুৎফা । বই পড়ার সুবাধে লুৎফা মোটামোটি ভালই জ্ঞান রাখে বলা যায় ।
নিজের ছেলে-মেয়েকে ইতিমধ্যে ইসলামী শরীয়তের অনেক বিধি-বিধান, নিয়ম-কানুন শিখিয়েছেন। যা নিজে বুঝেন না তা নোট করে রাখেন, বাবা মৌলভী আলিমুজ্জামান আসলেই বাবার পাশে বসে এটা ওটা জেনে নেন।
সেদিন স্কুলে তুহিনকে ওর বন্ধু আরমান বলল- তুহিন, তোকে একটি কাজ করতে হবে ।
তুহিন বলল – কি কাজ ?
আরমান বলল- আমার আব্বু আসবে তোর কাছে, জিজ্ঞেস করবে গতকাল আমি স্কুলে এসেছিলাম কিনা, তুই বলবি আমি স্কুলে এসেছিলাম ।
তুহিন বলল- কেন কেন, আমি মিথ্যা কথা বলব কেন ?
আম্মু বলেছে মিথ্যাকথা কখনই বলা যাবেনা, মিথ্যাবলা মহাপাপ । বুঝেছিস আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জীবনে যতদিন বেচে থাকবো কোনদিন মিথ্যা কথা বলবনা ।
আরমান বলল: কি বলছিস তুই ? তুই না আমার প্রিয় বন্ধু ? আমার জন্য সামান্য এই মিথ্যা কথাটুকু বলতে পারবি না ?
তুহিন বলল: মিথ্যা কথা সেটা মিথ্যা কথাই । ছোট হোক বা বড় হোক মহাপাপ ।
জানিস মহাপাপ মানে কি ?
কি ?
মহান আল্লাহ, মহাগ্রন্থ আলকোরআন, মহানবী এসব শব্দে ‘মহা’ ব্যবহার করা হয়েছে না ?
হ্যাঁ ।
কেন ব্যবহার হয়েছে বলতো ।
আমি জানিনা ।
এই জন্য ব্যবহার হয়েছে এখানে ‘মহা’ শব্দটি দিয়ে বিশালত্ব বুঝানো হয়েছে । তাই মহাপাপ মানেও বিশাল পাপকে বুঝায় । এমন বিশাল পাপ আমি করতে পারবনা ভাই । তুই আমাকে জোর করিস না ।
আরমান বলল- তুই এতকথা জানিস কেমনে ?
আমার আম্মু আমাকে বলেছে ।
হুম, তাহলে তুই বলবি না ?
বলতাম, যদি আমি মুসলমান না হতাম ।
তুই তো জানিস আমি মুসলমান । আর আমাদের পিয়ারানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করেছেন । শুধু নিষেধ করেন নি, তিনি বলেছেন মিথ্যা সকল পাপের মূল ।
আম্মু বলেছে মূল মানে শিকড়, শিকড় হল একটি গাছ যার উপর ভর করে দাড়িয়ে থাকে। এমন জঘন্য অপরাধ মিথ্যা কথা আমি কেমনে বলি বল !
আরমান বলল- কিন্তু আমিও তো মুসলমান, কই আমার তো কখনও মনে হয়নি এটি জঘন্য অপরাধ ! এরকম মিথ্যা কথা তো আমরা অহরহ বলে থাকি ।
অতশত বুঝিনা বাপু, শুধু জানি আল্লাহ আমার সৃষ্টি কর্তা, তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আবার আমার জন্য রিজিক পাঠাচ্ছেন । আমি তাঁর কথার অবাধ্য হতে পারবো না ।
মিথ্যাকথা বলার মত জঘন্য মহাপাপ করে আমি কিয়ামতের মাঠে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে দাড়ালে আমার লজ্জ্বায় মাঠির ভিতর ঢুকে যেতে ইচ্ছে করবে ।
তুহিন আরো বলল- ছি: ছি: মিথ্যা কথা বলার নাম নিলেও আমার ঘৃন্না লাগে, বোমি বোমি লাগে।
শোন আরমান, তুই কি সেই গল্পটি শোনিসনি, একজন পেশাদার চোর যে কিনা অনেক অনেক চেষ্টা করেও চুরির অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেনি । শেষ পর্যন্ত হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম এর কাছে গিয়ে বিষয়টি বললে তিনি বললেন মিথ্যা বলার অভ্যাস ত্যাগ করতে । লোকটি শুধু আল্লাহর রসূলের কাছে গিয়ে মিথ্যা কথা বলতে হবে এই ভয়ে, লজ্জ্বায় চুরি করা ছেড়ে দেয় । তাহলে ভেবে দেখ মিথ্যা সকল পাপের মূল নয় কি ?
ধীরে ধীরে আরমান বুঝতে পারে মিথ্যা বলাটা কত বড় অপরাধ । শুধু তাই নয় আব্বুকে একটি মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে সেটি সমর্থন করার জন্য আরো দশটি মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে । কাজ নেই বাবা মহাপাপের মত এই জঘন্য অপরাধ টি করে ।
আরমান দৃড়মুষ্ঠিবদ্ধ করে মনে মনে নিজে নিজে শফৎ নেয়, সেও জীবনে আর কোনদিন মিথ্যা কথা বলবে না। তুহিনকে সে বলে- তুহিন, তুই আজকে আমার অনেক বড় একটি উপকার করলি । আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোর মত আর কখনও মিথ্যা কথা বলব না।
তুহিন আরমানের কথা শুনে বলল- অনেক ভাল লাগছে তোর সিদ্ধান্তের কথা জেনে । আজকে মনে হচ্ছে বেহেস্তেও তুই আমার বন্ধু থাকবি ।
শোন, নানাজান বলেছেন: মিথ্যা বলার পরিণাম খুবই ধ্বংসাত্মক। এর জন্য দুনিয়াতে রয়েছে ধ্বংস আর আখেরাতে রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা।
যেমন:
ক. মিথ্যার কারণে অন্তরে কপটতার সৃষ্টি হয়।
খ. মিথ্যা পাপাচার ও জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
গ. মিথ্যুকদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না।
ঘ. মিথ্যার কারণে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাগতেই চেহারা বিবর্ণ ও মলিন হয়ে যায়।
ঙ. হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মিথ্যুকের চোয়াল চিরে গর্দান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। (বুখারী)
তুহিনের মনে পড়ে তার আব্বুর এক চাচাত ভাই যাকে সে সবচেয়ে বেশী ভয় করে। গতবছর তিনি একবার তুহিনকে একটি মিথ্যা কথা বলতে বলেছিল । তখন তুহিন ভয়ে কেদে দিয়েছিল । জসিম আঙ্কেল সেদিন বুঝতে পারেনি তুহিন কেন কান্না করেছিল ।
তুহিন মসজিদের এককোনায় জুহুরের নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে জড়োসড়ো হয়ে দু’হাত তুলে বলে- হে আল্লাহ, আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলা থেকে রক্ষা করুন। আমি এই মহাপাপ থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই। যে মিথ্যা সকল পাপের মূল সে মিথ্যা যেন আমি জীবনে না বলি । আল্লাহুম্মা আমিন ।
আমি মুসলমান-২, (গল্প), ‘‘জীবনে ঘুষ না খাওয়ার শপথ’’
.......................................................................
[বি:দ্র: নামগুলো এবং ঘঠনাপ্রবাহ কাল্পনীক, জীবিত বা মৃত কারো সাথে না মিলানোর জন্য অনুরোধ থাকবে ।]
বিষয়: বিবিধ
২৬৬৮ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটি পত্রিকায় প্রকাশের উপযুক্ত। সিরিজ টা চলুক। ভাল হবে ইনশাআল্লাহ।
স্কুলের পাঠ্যউপযোগী পরিমান টার্গেট করেছি ।
মানে কঁচিমনে যাতে আগ্রহ জন্মে সেরকম করে ।
পড়ে অবশ্যই সমালোচনা করবেন ।
বাস্তব শিক্ষায় পরিপূর্ন একগুচ্ছ মনি মুক্তার মালা । জাযাকাল্লাহু খাইর ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাত ।
শিক্ষনীয় পোস্ট!! ভালো লাগলো।
এই জাতীয় উপদেশ মুলক গল্প যদি আজ আমাদের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত হত তাহলে এই দেশ সত্য সুন্দর দূর্নীতি মুক্ত হয়ে যেত।
আমরাই পিতা মাতারা এর জন্য দায়ী । পিতা-মাতার পরে শিশুরা সবচেয়ে কাছের যে জিনিস থেকে শিক্ষা গ্রহন করে তা হল টেলিভিশন । সেখানে যে সব অনুষ্ঠান দেখায় ইত্যাতি, আনন্দ মেলা , নাটক বিদেশী কার্টুন ও সিনেমায় যে সব হাস্যরস করা হয় তা প্রায় মিথ্যায় ভরপুর থাকে যে শিশুর কচি মনে ছাপ রেখে যায়। শিশুটি ছোটকাল থেকেই বুঝতে শেখে মিথ্যা বলতে পারা একটা যোগ্যতা । তাই সে মিথ্যাকে পাপ মনে করে না।
প্রিয় সিকদার ভাই আমার মনের কথাটাই বলেছেন।
আশি স্কুলের ছেলেমেয়েদের পাঠ্যসূচীর উপযোগী করেই লেখাগুলো লেখার চেষ্টা করতেছি । কঁচি মনে যদি নীতিনৈতিকতা ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে বড় হলে দূর্নীতিবাজ, ঘোষখোর হবেনা ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
অনেক শিক্ষণীয়। আমিও একটা লিখেছি। আমন্ত্রণ রইল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন