পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে……
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৪০:৫১ দুপুর
প্রায় দুই যুগ আগের কথা । তখন কক্সবাজার সহ দক্ষিন চট্টগ্রামের বাস ছাড়ত নিউমার্কেট এলাকা থেকে। জলসা সিনেমার মোড় থেকে আমতল পর্যন্ত বাসের দীর্ঘ সারি থাকত। জলসা সিনেমার উত্তর পাশে বেড়ার তৈরী ছোট ছোট টুকরী দোকান সমূহ নিয়ে হকার মার্কেট ছিল।
বিড়াল যেমন ছা নাড়ে বার বার, আমাদের দক্ষিন চট্টগ্রামের বাস ষ্টেশনও চট্টগ্রাম শহরে বার বার নড়েছে । কখনও আন্দরকিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সামনে ছিল কখনও প্যারেড মাঠের পূর্ব পাশে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোডে ছিল কখনও খুরশিদ মহলের সামনে থেকে কখনও বহদ্দারহাট মসজিদের পশ্চিমে বর্তমান ফ্লাইওভারের মুরাদপুর পয়েন্টের ওখানে ছিল । যাই হোক বাস যখন জলসা সিনেমার সামনে ছিল সে সময়ের কথা ।
একদিন শহরে এসে বাসে করে ফিরে যাচ্ছিলাম গ্রামে। বাস জুবলী রোড হয়ে আলমাস সিনেমার সামনে দিয়ে ওয়াসার মোড়ে বের হত।
গাড়ি যখন কাজির দেওরি চার রাস্তার মোড় পার হচ্ছিল তখন রাস্তার বামে পশ্চিম পাশে যে অংশে সার্কিট হাউস আছে সেই অংশে কোনাকোনি বিশাল এক সাইন বোর্ড দেখলাম।
সাইন বোর্ডের মধ্যখানে একটি ছবি, ছবির উপরে অথবা নীচে লেখা ছিল
ছবির সাথে লিখিত কথার এতই অপূর্ব মিল ছিল যে ছবি দেখার পর লিখাটা পড়ে আমার কঁচিমনে চিৎকুর করে একটি কামড় দিয়ে বসল। আমি প্রচন্ড শখ্ খেলাম।
ছবিতে মধ্যখানে পৃথিবীর গোলাকার অবয়ব অংকিত ছিল। সেই অংকিত গ্লোবাল বিশ্বকে বেষ্টন করে ছিল একটি বিশাল আকৃতির সাপ। সাপটি পৃথিবীকে বেষ্টন করে নিজের হা করা মুখের ভিতর নিজের লেজটিকেই খেয়ে ফেলছিল।
দৃশ্যপটের ফলাফলটা এমন ছিল যে সাপটি লেজের অংশ নিজের দেহখানি থেকে যতই গ্রাস করছিল পৃথিবী ততই ছোট হয়ে আসছে। এটা বুঝতে পেরেই আমার কলিজায় চিৎকুর দিয়েছিল।
আমার স্বার্থপর অবুঝ মনটা এই চিন্তায় অস্থির হচ্ছিল যে আমি বড় হয়ে পৃথিবীতে বসবাস করার জায়গা পাবতো ?
আমি বড় হয়ে বিয়ে-শাদী করে সন্তানাদী নিয়ে কোথায় থাকব যদি পৃথিবী এভাবে ছোট হয়ে যায় ?
এর প্রায় দশ বছর পর অবশ্য রহস্য কিছুটা বুঝতে পেরেছি বলে মনে হল।
মুরব্বীদের কাছে শুনেছি যোগাযোগের মাধ্যম গাড়ি যখন রাস্তায় নামেনি তখন পায়ে হেটে বা নৌকায় চড়ে দুর পাল্লার পথ পাড়ি দিতে হত। চট্টগ্রাম শহরে যাবার জন্য সকালে কলাপাতার মোড়কে ভাতের মৌচা নিয়ে বের হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ৪০মাইল দূরে শহরে গিয়ে পৌছত।
গাড়ি বের হওয়ার পর যখন ঐ একই দূরত্ব ৩ঘন্টা সাড়ে ৩ঘন্টায় পৌছা যত তখন বুঝতে পেরেছিলাম পৃথিবী ছোট হবার রহস্য।
আমাদের এলাকার একজন আলাউদ্দীন ছিলেন স্বচ্ছল কৃষক। বন্যার প্লাবনে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ায় দারিদ্রের কষাঘাতে দেশে টিকতে না পেরে হেটে হেটে সৌদিআরব যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছিলেন, তবে হেটে হেটে সৌদি আরব যেতে সময় লেগেছিল ৬মাস। পরে ঐ আলাউদ্দীনহাজি পরিবারের সবাইকে সৌদিআরব নিয়ে গিয়েছিল। এখনও উনার ছেলেরা সৌদি আরব আছে।
সেই ৬ মাসের পথ সৌদিআরব এখন বিমানে ৬ঘন্টায় যাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কি পৃথিবী ছোট হচ্ছে না ?
তখন দেখেছি বিদেশ থেকে একটি চিঠি আসতে ১৫ থেকে ৩০দিন পর্যন্ত লেগেছে। আর এখন ?
চিঠির ডিজিটাল রূপ এসএমএস, তার আদান-প্রদান হচ্ছে চোঁখের পলকে।
আল্লাহর দেয়া বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞান আমরা ব্যবহার করছি আল্লাহকে ভুলে যাওযার পন্থা হিসেবে।
আমার আল্লাহ রহমানুর রাহীম, তাঁরসৃষ্ট পৃথিবীকে ছোট করে আমার বসবাসের স্থানকে সংকোচিত করেননি। বরঞ্চ পৃথিবীর স্বপ্ল সময়ের
হায়াতে জীবনকে যেন পরিপূর্ণ রূপে উপভোগ করা যায় তার ব্যবস্থা করেছেন। মানুষের জীবন-যাত্রা উন্নয়নের ধাপগুলোকে সুপারনোভা গতিতে ডেভলপ করে দিয়েছেন। আর আমরা মানুষেরা আল্লাহর না শোকরিতো করছিই শুধু নয় আল্লাহর সিপাতের সাথে কাউন্টার হয়ে দাঁড়াবার সাহস দেখাচ্ছি।
আমাদের আত্বীয়-বন্ধু-পরিজনের পাঠানো এসএমএস সমূহ আমরা গুরুত্বের সহিত ঠিকই রিপ্লাই করি। কিন্তু আল্লাহপাকের পাঠানো হাজার হাজার এসএমএস এর আমরা রিপ্লাই তো দুরের কথা বুঝে পড়াটাও কর্তব্য মনে করছি না।
১৪০০বছর আগে পাঠানো সেই এসএমএস সমূহ কিছু কিছু লোক অনর্গল পাঠকরে গেলেও বুঝে পাঠ করার লোক খুবই নগন্য
মালিকের পক্ষ থেকে আসা নির্দেশনা সমূহ আমরা যেন বুঝতে চেষ্টাই করতেছি না ।
এ অবস্থায় বুঝতে পারছি না পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে নাকি আমাদের মন-মানসিকতা ছোট হয়ে আসছে ।
নাকি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপলদ্ধি ছোট হয়ে আসছে ।
মানুষ শব্দের অর্থ কি ?
যতদুর জেনেছি মানসম্মত হুস যার তিনিই মানুষ।
তাই যদি হয় আমাদের হুস কি মানসম্মত আছে ?
মূল্যায়নের ভার আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।
আগের দু’টি পোষ্ট:
আল্লাহর সাহায্য আসবে..... যদি আমরা চাইতে জানি
বিশাল পাহাড় ও কিন্তু.....কাঁদে
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সম্ভব হলে কোরআন বুঝে পড়ার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন । আল্লাহ আপনার দ্বারা এই কাজ সফল করতে ও পারেন ।
যাজ্জাকাল্লাহ খায়ের
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
পৃথিবী ছোট হয়ে আসায় মানুষের পরস্পর এর কাছাকাছি আসা উচিত ছিল। কিন্তু এখন মোবাইল ইন্টারনেট থাকা সত্বেয় অনেক আপনজনের সাথে যোজন দুরুত্ব হয়ে গেছে। কারন আমরা আমাদের যা এক করে রাখতে পারে সেই আল্লাহর বানী থেকে দুরে সরে গেছি।
পৃথিবী ছোট হওয়ার কারনে এখন আমরা হাতের নাগলের মধ্যেই আমরা পাচ্ছি কিন্তু সে পরিমান আমরা আল্লাহর নিকটতম হতে পারিনি । এটাই আফসোস....
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন