কালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ভ্রমন
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২৭:৫৭ দুপুর
গত বছর ব্লগারদের প্রানের বই ‘‘স্বপ্ন দিয়ে বোনা’’ প্রকাশে সময় দেওয়ার জন্য যেতে পারিনি। তার আগের বছরও পারিবারিক নানা ঝামেলায় যাওয়া হয়ে উঠেনি। তবে এর আগে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ও তারও আগে বিডিআর দরবার হলে ঠিকই গিয়েছিলাম ।
বিডিআর হত্যার ঠিক দুই সপ্তাহ আগে আমরা ঐ হলে অনুষ্ঠান করে এসেছিলাম । আমার মনে আছে দরবার হলে অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছিলেন আখি আলমগীর।
কোম্পানীর জোনাল ম্যানেজার বললেন- এবার আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে। আমারও যেতে ইচ্ছে হল, অনেকদিন লং ট্যুর এ বের হইনি।
এবার কনফারেন্স হবে গাজিপুর জেলার কালিগঞ্জে, কোম্পানীর নিজস্ব ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কে।
লং জার্নিতে আমার বরাবরই ভিন্ন পথের স্বাদ নিতে আগ্রহ বেশী ।
যেমন আমি ইতিপূর্বে ঢাকা যাবার সময় আগে ময়মনসিংহ হয়ে তারপর ঢাকা গেছি ।
আবার সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ হয়ে নদী পথে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকা গেছি ।
আবার ঢাকা সদরঘাট থেকে নদীপথে বরিশাল হয়ে কোয়াকাটা এবং আসার সময় বরিশাল হয়ে নদী পথে মজু চৌধুরী ঘাট এসেছি।
আবার চট্টগ্রাম থেকে নদী পথে কুতুবদিয়া হয়ে মহেশখালী হয়ে কক্সবাজার গেছি।
আবার চট্টগ্রাম থেকে গাড়ীতে হাজিগঞ্জ এবং সেখান থেকে চাঁদপুর হয়ে নদী পার হয়ে লক্ষ্মীপুর হয়ে নোয়াখালী ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম।
আবার ঢাকা থেকে ফরিদপুর, খুলনা, বাঘেরহাট, পাবনা, বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতু পার হয়ে ঢাকা এসেছি।
একপথে যাওয়া আরেক পথে আসা, এতে ভ্রমনের মজাই আলাদা ।
সাগর-নদী-পাহাড়, আমার ভ্রমনের আহার।
ইতিপূর্বে আমি যে নদীভ্রমন সমূহ করেছি তা আমার একটি কবিতায় ফুঁটে উঠেছে:
আমার নদীভ্রমন
চাটিগাঁ থেকে সাগর পথে গিয়েছিলাম কুতুবদিয়া,
কত মজা পেছিলাম সেবার বন্ধুদের কে নিয়া ।
চাটিগাঁ থেকে সাগর পথে গিয়েছিলাম মহেশখালী,
কর্নফুলী, বঙ্গোপসাগরের পর- মহেশখালী প্রণালী ।
চাটিগাঁ থেকে সাগর পথে গিয়েছিলাম সন্ধীপ ,
সাগর তারে গ্রাস করেছে হতাশ আমার মনদ্বীপ ।
চাটিগাঁ থেকে সাগর পথে গিয়েছিলাম কক্সবাজার,
কত ভাল লেগেছিল জানলেই হবে মন বেজার !
ঢাকা থেকে নদী পথে গিয়েছিলাম বরিশাল,
নতুন এক অভিজ্ঞতা জাহাজটা বেশ সু-বিশাল ।
সুনামগঞ্জ থেকে নদী পথে গিয়েছিলাম নেত্রকোনা,
এত সুন্দর আমার দেশ একেবারেই খাঁটি সোনা ।
বরিশাল থেকে নদী পথে এসেছিলাম লক্ষ্মীপুর,
নদীমার্তৃক বাংলাদেশ নদীতে দেশ ভরপুর ।
নদী ভ্রমন এত মজা, এত ভাল লাগে,
নদী মাতৃক বাংলাদেশ বুঝিনিতো আগে ।
সেন্টমার্টিন যেতে অবশ্য পথের ভিন্নতা খুজে পাইনি । আমার অনেক ভ্রমন কাহিনী এসবিতে প্রকাশিত হয়েছিল, কয়েকটি ষ্টিকিও হয়েছিল ।
কালিগঞ্জের যাবার ভিন্নপথ জানার জন্য ফেবুকে একখান ষ্ট্যাটাস দিয়েছিলাম । একজন পরামর্শ দিলেন ট্রেন ঘোড়াশাল না থামলে নরসিংদী নেমে সেখান থেকে ঘোড়াশাল নদী পার হয়ে তারপর কালিগঞ্জে যেতে।
পথটি আমার বেশ পছন্দ হল। ৭ই ফেব্রুয়ারী’১৪ইং শুক্রবার সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান।
৬ তারিখ রাতে বাসা থেকে বের হবার আগে কাধে ট্রাভেল বেগ ঝুলিয়ে বের হবার আগে আরেকখান ষ্ট্যাটাস দিলাম দোয়া চেয়ে । আমার মেয়ে মিশকাত বলল- আব্বু যেন এভারেষ্ট বিজয়ে বের হচ্ছেন মত লাগছে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন মনে করছি আমার ব্যবসায়িক আইটেমের মধ্যে আমি পারটেক্স গ্রুপ, ন্যাশনাল পলিমার পিভিসি ডোর, আরএফএফ কোম্পানী, জাহান পিভিসি ডোর সহ আরো কয়েকটি কোম্পানীর ডিলার হিসেবে আছি । তারমধ্যে একটি কোম্পানীর চট্টগ্রামের একক ডিলার। আমার টুটাল সেইলের শতকরা ১০ ভাগের মত আরএফএল কোম্পানীর দরজা আমি বিক্রি করি। সেই সুবাধে তাদের পরিবেশক সম্মেলনে আমন্ত্রন পেয়ে কালিগঞ্জ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।
পারটেক্স গ্রুপের পন্যই আসলে আমার কাছে বিক্রি হচ্ছে বেশী ।
রাত নটার পর বের হয়ে আগে ট্রেন ষ্টেশন গেলাম। মহানগরী এক্সপ্রেস তুর্ণা নিশীতা যেহেতু নরসিংদী ঘোড়াশাল থামবে না ওখানে টিকেট খুজে লাভ নেই। তাছাড়া ঢাকার টিকেট নিলেও ৪/৫ দিন আগে টিকেট করে রাখতে হয়।
মেইলের টিকেট চাইলাম । না, শ্লিপিংবাথ, কেবিন, প্রথম শ্রেণী এবং এসির টিকেট নেই, আছে ২য় শ্রেণীর টিকেট । তাও ষ্ট্যান্ডিং টিকেট, দাড়িয়ে যেতে হবে। টিকেটের দাম ১০০টাকা । টিকেটে লিখা কিন্তু ৬২টাকা ।
মনে করলাম গার্ডদের কাউকে বললে বসার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।
ফ্লাটফর্মে গিয়ে দেখি দুই দ্বিগুনে চার চোঁখের দৃষ্টির সমান লম্বা ট্রেন । এত লম্বা ট্রেন, ইঞ্জিন টানে ক্যামনে ?
হাটছি তো হাটছি ট্রেনের শেষ মাথা যেন সেই সুদূরে। শেষ পর্যন্ত ২য় শেনীর বগিগুলোতে গিয়ে দেখি সেখানে দাঁড়াবারও কোন সুযোগ নেই । হতাশ হলাম। সিট খালি থাকলেতো গার্ড বসিয়ে দেবে ।
এসি কেবিনের সুপারভাইজারকে বললাম-ভাইয়া ১ম শ্রেনীর টিকেট না পেয়ে ২
য় শ্রেনীর টিকেট নিয়েছি কিন্তু ২য় শ্রেনীতে তো দাড়াবার জায়গাও নেই ।
মোটাসোটা ভদ্রলোক বললেন- এখানে ও বসার জায়গা নেই, টুলে বসে যেতে হবে ১ হাজার টাকা লাগবে ।
ও-মাই গড, ১হাজার টাকা !! তাও টুলে বসে । টুলেতো সারা রাত নির্ঘুম কাটাতে হবে। ঐ অবস্থায় কালকে তো প্রোগ্রামে এটেন্ড করতে পারবোনা, মাথায় থাকবে ঘুমের চিন্তা ।
নাহ, ট্রেনের চিন্তা বাদ দিলাম, সাথে সাথে হাটা দিলাম বিআরটিসির দিকে । অল্পদুরেই বিআরটিসি বাস টার্মিনাল।
শ্যামলী চেয়ারকোচে খবর নিলাম- না, ওদের নরসিংদী বা ঘোড়াশালের কোন গাড়ি নেই।
গেলাম এসআলম চেয়ারকোচ কাউন্টারে।
ওদেরকে বললাম কালিগঞ্জ যাব, আপনাদের ঘোড়াশাল বা নরসিংদীর কোন গাড়ী আছে নাকি ?
ওরা বলল- নেই. একজন বলল-কাঁচপুর নেমে সেখান থেকে অন্য গাড়ীতে যেতে পারবেন ।
কাউন্টার থেকে বলল- আমাদের সোজা গাজিপুরের গাড়ি আছে, আপনি গাজিপুর চলে যেতে পারবেন। সেখান থেকে কালিগঞ্জে যেতে হবে অন্যগাড়িতে ।
খারাপ না। টিকেট নিলাম ৫১০টাকা । গাড়ি রাত ১১টা ৪৫মিটিটে ছাড়বে।
গাড়িতে গিয়ে দেখি আমার নির্ধারিত সিটে আরেকজন বসে আছে । আমি বসতে গেলে পাশের জন বললেন ভাইয়া আমরা দুইজন একসাথে বসতে চাচ্ছি আপনি ঐ সামনে ২নং সিটে বসুন।
আমি ভদ্রতার খাতিরে কিছু না বলে ২নং সিটে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে বুঝতে পারলাম ২নং ধরাটা খাইলাম। কারন এই সিটে বসে পা টেনে ঘুমাবার সুযোগ নেই, ওটা যাত্রী চলাচলের রাস্তা । যাক ভ্রমণ মানেই কষ্ট, এজন্য আল্লাহপাক ভ্রমনের সময় ফরজ নামাজ রোজায় পর্যন্ত ছাড় দিয়েছেন।
রাত আড়াইটার দিকে গাড়ি বামে মোড় নিয়ে ছোট একটি রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করল। একটু পর দেখি ডিনারব্রেক ।
২০মিনিটের বিরতী। গাড়ী থেকে নেমে দেখি বিশাল পার্কিং স্পেস কিন্তু তেমন গাড়ি নেই। জায়গাটি পরিচিত পরিচিত মনে হল কিন্তু রেষ্টুরেন্টের নামের সাথে পরিচিত নয় । ভিতরে ঢুকেও একই রকম অনুভূতি । পরিচিত লাগছে কিন্তু কোথায় যেন খটকা আছে…..
রেষ্টুরেন্টের নাম ‘চলো বহুদুর’
এই নামটা আমার কাছে নতুন মনে হলেও স্থানটা খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে । পরে মনে পড়েছে এটা হচ্ছে সাবেক ‘কানন’ নামের রেষ্টুরেন্ট যা বর্তমানে ‘চলো বহুদুর’ নামে চলছে..
তবে রেষ্টুরেন্টের অবয়বের মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে । কিছুটা নতুনত্ব এনেছে তবে মনে আমি ঠিকই ধরে ফেলেছি ।
যারা এসআলম চেয়ারকোচের সাথে ভ্রমন করেছেন তারা এই রেষ্টুরেন্টের সাথে পরিচিত।
সকাল সাতটার পর যখন প্রগতি স্মরনী হয়ে বাড্ডা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন কোম্পানীর জোনাল ম্যানেজারকে রিং দিলাম, ভাইয়া আপনারা কোথায় ?
আমরা তো বাড্ডাতেই আছি, আপনি কোথায় ?
আমি বাড্ডার উপর দিয়ে যাচ্ছি গাজিপুরের গাড়িতে গাজিপুর পর্যন্ত যাব।
জিএম সাহেব বললেন- আরে নেমে পড়েন তাড়াতাড়ী, সবাই একসাথে কালিগঞ্জ যাবো। শেষ পর্যন্ত নেমেই পড়লাম। রাস্তায় ডিউটিরত একজন র্যা ব সদস্যকে জিজ্ঞেস করলাম প্রাণ-আরএফএল সেন্টার কোথায় ? র্যা ব সদস্য বললেন-সামনে গিয়ে পেট্রোল পাম্পেরপর ।
প্রথমেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানীর হেডঅফিসের টয়লেটের জন্য আর চারইঞ্চি জায়গা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ৫টি টয়লেট না করে ৪টি করলেই বরাবর হত। মানে টয়লেটগুলো চিপাচিপি হয়েছে।
কেউ কেউ রাতে জার্নি করে এসে ওয়েটিং রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে ।
আবার বাইরে অপেক্ষমান ডিলাররা একটি একটি গাড়িতে করে কালিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছে ।
আগত মেহমানদের জন্য সকালের নাস্তার মওজুদ ।
যাই হোক ১৮নং গাড়িতে করে কালিগঞ্জে রওয়ানা দিলাম ।
গাড়িতে বসারপর সকালের নাস্তার পেকেট দেওয়া হল। দুটি ছোট ছোট জেলিবন, দুটি মিষ্টি, একটি আপেল, আধালিটার পানি।
ঢাকা আমার প্রাণের ঢাকা, আগে ছিল মসজিদের শহর ঢাকা এখন হয়েছে ফ্লাইওভারের শহর ঢাকা ।
টঙ্গি গিয়ে গাড়ি ডানে মোড় নিল ঘোড়াশালের দিকে।
পথ যেন শেষ হতে চায়না। টানা প্রায় তিনঘন্টা চলার পর আমাদের গাড়ি কালিগঞ্জে পৌছে।
খবর নিয়ে জানতে পেরেছি আমাদের প্রিয় ব্লগার নাইস মিয়া বউ নিয়ে এই নৌকায় করে শশুর বাড়ি যায় । অবশ্য ঘঠনা কতটুকু সত্যি জানিনা । হা হা
এখন একটু পেছনের দিকে যাব, চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করার সময় দু’জন ব্যাক্তির সঙ্গে আমি যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছিলাম। একজন হচ্ছেন গাজিপুরের একটি ইন্ডাস্ট্রির মালিক জনাব জাহাঙ্গির সাহেব অপরজন আমাদেরই একজন প্রিয় ব্লগার ।
কথা ছিল চট্টগ্রাম থেকে ডাইরেক্ট গাড়িতে আগে গাজিপুর গিয়ে জাহাঙ্গির সাহেবের ফ্যাক্টরী ভিজিট করবো, তারপর কালিগঞ্জ যাব। তিনি বলেছিলেন গাজিপুর চৌরাস্তা থেকে কালিগঞ্জ যেতে ৩০ মিনিটের মত লাগবে। সকাল ৬/৭টার দিকে গাজিপুর পৌছলে ফ্যাক্টরী ভিজিট করে ৯টার আগেই কালিগঞ্জ পৌছব এটি ছিল জাহাঙ্গির সাহেবের অভিমত। কিন্তু প্রকৃত বিষয় আকাশ পাতাল ডিফারেন্স ছিল। আমি আগে ডাইরেক্ট গাড়িতে গাজিপুর গেলে জাহাঙ্গির সাহেবের ফ্যাক্টরীতে পৌছতেই সাড়ে দশটা এগারটা বাজত। কারণ গাড়ি সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকার বাড্ডা এলাকা অতিক্রম করেছে। আমার মনে হল আমি বাড্ডাতে নেমে কোম্পানীর ভাড়া করা গাড়িতে কালিগঞ্জ যাওয়ার সিদ্ধান্তটি যথার্থ হয়েছে। মনে মনে জিএম মাসুদ সাহেবকে ধন্যবাদ দিলাম।
কালিগঞ্জ নেমে নাইস ভাইকে ফোন দিলাম । উনি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার কল করেছিলেন, আমি গাড়িতে থাকার কারনে কথা বুঝিনি।
নাইস ভাই জানালেন উনার এক আত্বীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া খুবই জরুরী, তবু তিনি আমার সাথে দেখা করতে আসবেন। ৮/৯ কিলোমিটার দুর থেকে এসে তিনি আমাকে রিং দিবেন জানালেন।
ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের সাইকেল পার্কিং বলেই মনে হল।
আমাদেরকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা গাড়িগুলো একটি মাঠে পার্কিং করা হয়েছে । ৩০টি বেশী গাড়ী বাড্ডা থেকে এসেছে ।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে সারাদেশ থেকে আগত সম্মানীত ডিলার ভাইদেরকে যথার্থ সম্মানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অভ্যার্থনা:
এক ফাঁকে দেখলাম কোম্পানীর প্রডাক্ট দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবার জন্য গাড়িতে লোড হচ্ছে ।
ডিলারদের দেওয়ার জন্য সারি সারি গিফট বক্স ।
অত:পর হলরুমে যাওয়ার আগে নীচে কিছুক্ষন সময় নিলাম ।
সীমানার ভিতরে যেন অসীম সারি সারি ফ্যাক্টরী:
কোম্পানীর বিশাল বিশাল টাওয়ারের একটিতে ছয় তালার কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাইকে ঘোষণা আসছে এদিক সেদিক ঘোরাফিরা না করে হলরুমে আসন গ্রহণ করার জন্য । প্রতি ফ্লোরে প্রডাক্ট এবং ষ্টক, ডিলাররা যাতে দেখতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
লিপ্টের সামনে অনেক লাইন, লিপ্টম্যান জানালেন এরকম বড় আকারের ছয়টি লিপ্ট বিরামহীন ভাবে সবাইকে উপরে তুলছে।
টপফ্লোরে হলরুমের পিছনে খোলা স্পেসে প্যান্ডেল করে নাস্তাও দুপুরের লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একপাশে তথ্যকেন্দ্র, মেডিক্যাল টির এর ব্যবস্থা করা আছে । অন্যপাশে কপি ও নাস্তার ব্যবস্থা করা আছে । কার্ডের সাথে নাস্তার কুপন জমা দিয়ে নাস্তার প্যাকেট সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
এসময় আমার বেরসিক ক্যামরার ব্যাটারীর চার্জ চলে যায়। এডাপ্টর সহ চার্জে দিয়ে দেখি ক্যামরার ব্যাটারী চার্জ হচ্ছেনা। বেশ নার্ভাস হয়ে গেলাম । অনেক কিছু ভিডিও, ষ্টিল পিকচার নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ব্যাটারীর কারনে সব শেষ...
যাদের ইচ্ছে সাথের ব্যাগ জমা দিয়ে টুকেন নিচ্ছে, আমারটাও জমা দিলাম।
দুপুর বারটার পর ফ্যাক্টরী পর্যবেক্ষন ও নামাজের বিরতী দেয়া হল । সিঁড়ি দিয়ে নেমে নেমে প্রতিফ্লোরের প্রডাক্টশসমূহ দেখতে লাগলাম । আফসোসের বিষয় যেটা তা হল ঐ সময় ছবি তুলতে পারলাম না।
এসময় নাইস ভাই ফোন দিলেন, বললেন আমি ফ্যাক্টরীর বাইরে মসজিদের সামনে আছি। তাড়াহুড়া করে নেমে পড়লাম। নামার পরও অনেকখানি পথ পাড়ি দিয়ে বের হতে হয় ।
গিয়ে দেখি বাইক নিয়ে অপেক্ষা করে আছে নাইস ভাই, চিনতে কষ্ট হয়নি, কারন উনাকে বিভিন্ন সময় নেটে দেখেছি। বুক মিলালাম, উনার বাইকেও চড়লাম । নামাজের পর উনার বাইকসহ আরএফএল কোম্পানীর ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্কে ঢুকিয়ে দিলাম। উনাকে বাইকসহ সিকিউরিটির কাছে এন্ট্রি করাতে হল। তার আগে নাইস ভায়ের নাইস পরামর্শে ক্যামরার ব্যাটারীর জন্য ৮০টাকা দিয়ে একটি অটো চার্জার কিনলাম।
আমার আগে থেকে গেষ্ট কার্ড সংগ্রহ করা ছিল । সুতরাং কোন সমস্যা হয়নি। লাঞ্জের কুপন দিয়ে দু’জনে একসাথে লাঞ্জ সারলাম।
দাওয়াতী কার্ডে চারটি কুপনছিল, সকালের নাস্তা, দুপুরের লাঞ্চ, র্যাফেল ড্র, গিফট কুপন :
গিফটের প্রতি প্যাকেটে ছিল নীচের ছবির জিনিসগুলো:
ছয়তালার উপর থেকে দেখা যায় ঐ ঘোড়াশাল।
আত্বীয়ের বিয়েতে জয়েন্ট করতে হবে বলে নাইস ভাই বিদায় নিলেন।
আমি গিফটের কূপন দিয়ে গিফট সংগ্রহ করলাম।
ফিরতি পথে কোম্পানীর গাড়িতে উঠেই আমি গাজিপুরে জাহাঙ্গির সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলাম। আমি জানালাম যে আমি টঙ্গি নেমে গাজিপুর এসে আপনার সাথে দেখা করতে চাই। উনি পরামর্শ দিলেন টঙ্গি না গিয়ে পুবাইল নেমে সেখান থেকে টেম্পুতে গাজিপুর রথখোলা আসলে উনি লোক পাঠাবেন আমাকে রিসিভ করার জন্য।
আমি কোম্পানীর গাড়ি থেকে পুবাইল নেমে গাজিপুর রথখোলার টেম্পুতে উঠলাম। টেম্পুতে ভাড়া ২০টাকা। আমার সাথে ট্রাভেলবেগ, গিফট বক্স থাকায় আমাকে দুটি সিট নিতে হল। পথে জ্যামের কারনে অনেক দেরী হল। এসময় ঢাকা থেকে প্রিয় ব্লগার ডিজিটাল প্রেসিডেন্ট মোবাইল করলেন। কিন্তু টেম্পুতে ঠাসাঠাসী বসার কারনে মোবাইল রিসিভ করতে পারিনি।
রথখোলা নেমে রিক্সা নিয়ে শেখেরটেক চলে আসলাম, কারন আমাকে বলা হয়েছে জাহাঙ্গির সাহেবের ম্যানেজার ওখানে এস.আলম চেয়ারকোচের কাউন্টারে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । আমি ওখানে গিয়ে আগে চট্টগ্রামে যাওয়ার চেয়ারকোচের সিডিওল জানতে চাইলাম।
ইতিমধ্যে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপাতত: আর কোথাও না গিয়ে চট্টগ্রামেই ফিরে যাবো যদিও ঢাকা হয়ে হয় মুন্সিগঞ্জ অথবা ঢাকার বই মেলায় যাবার একটি গোপন বাসনা মনের মধ্যে লুকায়িত ছিল।
মনের মধ্যে তো কতকিছুই লুকানো ছিল । একবার মনে হয়েছিল ঘোড়াশাল থেকে নদীপথেই মুন্সিগঞ্জে যাব আবার মুন্সিগঞ্জ হয়ে নদী পথে চাঁদপুর চলে আসবো। চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম।
যাইহোক শেখেরটেক থেকে রাত ১০টা ৪৫মিনিটের টিকের নিলাম ৫০০ টাকা দিয়ে। তারপর প্লাষ্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজারের সাথে মোটর রিক্সায় ওদের ফ্যাক্টরীতে চলে গেলাম । ওখানে মালিক জাহাঙ্গির সাহেব আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। ঐ কারখানা হচ্ছে বাংদেশের টাকা তৈরীর কারখানা টাকশালের সামান্য আগে।
খুবই সাদাসিদে পরহেযগার টাইপের মানুষ জাহাঙ্গির সাহেব, ডায়ারেটিসের রুগি । চার মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। একাই এক প্রফেসর মেয়ে জামাইয়ের পরোক্ষ তত্বাবধানে ফ্যাক্টরী চালাচ্ছেন । এই ফ্যাক্টরীতে আমি এর আগেও কমপক্ষে দু’বার এসেছি। তবে গত ৩/৪বছর আসা হয়নি।
এদের নতুন একটি প্রডাক্ট আমার খুবই পছন্দ হল এবং এটা যদি আমি চট্টগ্রামে মার্কেটিং করি তাহলে তা হবে আমার জন্য একক ব্যবসা। ব্যবসার মধ্যে এমন কিছু প্রডাক্ট না থাকলে ব্যবসায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়। ব্যবসার আইটেমের মধ্যে বৈচিত্র আনতে পারলে কাষ্টমার আকৃষ্ট হয় । আর পন্য কিনার মধ্যে লাভ বের করতে পারলে সে ব্যবসায় শান্তি আছে ।
জাহাঙ্গির সাহেব আমাকে বর্তমান আইটেম সমূহ ঘুরে ঘুরে দেখালেন। ওখানে কাজ সেরে জাহাঙ্গির সাহেব ম্যানেজার সহ আমাকে গাজিপুরের বিখ্যাত সুরমা হোটেলে নিয়ে গেলেন। সেখান উন্নত মানের খাবার দিয়ে ডিনার করালেন। খুবই ভাল লেগেছে সুরমা হোটেলের খাবার । চাও খুব উন্নত মানের । কেউ গাজিপুর গেলে সুরমা হোটেলে খেয়ে আসতে পারেন।
ডিনার শেষে ওনারা সঙ্গে আনা টমটম গাড়িতে করে আমাকে কাউন্টারে পৌছিয়ে দিলেন।
অনেক সোহার্দ পূর্ণ আন্তরিক পরিবেশে আমাদের দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হল। আমি আশা প্রকাশ করলাম যে আল্লাহ চাইলে আগামী দু’মাসের মধ্যেই আমরা নতুন করে ব্যবসা শুরু করবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর শোকরিয়া যে দুই মাস যেতে হয়নি, ১০দিনের মধ্যেই উনার সাথে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছি । আগামী ৩/৪দিনের মধ্যে ঐ নতুন আইটেম আমার দোকানে উঠবে ইনশাআল্লাহ ।
গেলাম আরএফএল এর প্রোগ্রামে, ব্যবসা হয়ে গেল অন্য একটি কোম্পনীর সাথে ।
ভ্রমন মানে জ্ঞান আহরন, ভ্রমনের মাধ্যমে যেমন ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সাথে সাক্ষাৎ মেলামেশা করা যায় তেমনি ঐসব মানুষের আচার-আচরন কৃষ্টি সম্পর্কেও ধারনা পাওয়া যায়।
কারো বুলি কারো গালি শুধু নয়, অঞ্চল ভেদে চলাচলের বাহনেরও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । আমি ৪/৫ বছর আগে যখন খুলনা রাস্তার মোড় থেকে বেনাপুল পর্যন্ত যেতে যেতে পা ঢুলিয়ে ভ্যান গাড়িতে চড়ছিলাম তখন আমার অনেক হাসি পেয়েছিল । সাথে সাথে আমি বাসায় মোবাইল করে বলেছিলাম আমি এখন ভ্যান গাড়িতে চড়তেছি, শুধু আমি নয় আমার সাথে ছেলে মেয়েসহ আরো ৫জন আছে । বাসায় হাসতে হাসতে শেষ ।
আবার দেখলাম মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন । মোটর সাইকেলের মালিক ১/২জন যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট ভাড়ায় নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছে দিচ্ছে। আবার দেখেছি ট্রাকটরে যাত্রী পরিবহন । এই জিনিস গুলো আমাদের দক্ষিন চট্টগ্রামের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ।
গাজিপুরে দেখলাম একধরনের রিক্সা যা আমি ইতিপূর্বে দেখিনি।
এই রিক্সা চালক যখন চালায় তখন মনে হয় যেন রাস্তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে ।
প্রিয় ব্লগার রিদুয়ান কবির সবুজ ভাই ভ্রমনটি শেয়ার করার জন্য বেশ উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন । বলতে গেলে উনার উৎসাহেই সাহস করেছি ।
চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে আমি সামান্য অসুস্থবোধ করতেছিলাম, লং জার্নির জন্য ফিজিক্যালি ফিট না হলেও তবু গেলাম । গাজিপুর থেকে অন্যকোথায় যেতে মন টানেনি । একদিকে ছোট মেয়েটির কথা বার বার মনে পড়ছিল অন্যদিকে পরদিন শনিবার দোকানে কয়েকজন পরিচিত কাষ্টমার আসার কথা ছিল। ভ্রমনটা সময় ও দূরত্বের তুলনায় সামঞ্জস্য হয়নি । ৩০ঘন্টার মধ্যে ২৩ঘন্টার মধ্যে গাড়িতেই ছিলাম । সমান বিছানায় শুয়া হয়নি । চট্টগ্রাম এসে দেখেছি পা দু’টো ফুলে মোটা হয়ে গেছে, কেমন যেন তুলতুলে আরাম । পাগুলো যেন অভিমান করে বলছে ঢাকায় গিয়ে একরাত থেকে পরদিন মুন্সিগঞ্জ কেন যাইনি... হা হা হা
ভ্রমনের মামলা, পা দু’টো সামলা ।
বিষয়: বিবিধ
৩২১৫ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাহার ভাই, আগ্রহী ব্লগারদের নিয়ে সপরিবারে কক্সবাজার ট্যুরের একটা প্লান করেন মার্চ নাগাদ।
ঠিক বলেছেন- আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাইছা থাইকলেও খবর আছিল।
ধন্যবাদ, আমার আঙ্গিনায় ।
আবার আসবেন কিন্তু.....
বিশেষত ছবি গুলি দেয়ায় খুবই ভাল লাগল। আপনার ক্যমেরার ব্যাটারি বেশি নিলে কারখানার ছবিগুলি দেখতে পারতাম। আপনার নদী ভ্রমনের অভিজ্ঞতাগুলি লিখেন। চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে সন্দিপ এবং কুতুবদিয়া গিয়েছি স্কুল জীবনে। সেন্ট মার্টিন ও গিয়েছি। আর আপনার সুনামগঞ্জ টু নেত্রকোনা ভ্রমন এর উল্টা অর্থাত নেত্রকোনার মোহন গঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ নদি ও হাওর পথে ভ্রমন এর অভিজ্ঞতা আছে। কালিগঞ্জে বোধ হয় ঘুড়ার সুযোগ পাননি। কালিগঞ্জ এলাকাটা কিন্তু খুব সুন্দর। অসুস্থ হয়ে না পড়ে ঢাকা ঘুড়ে আসলে আরো উপভোগ্য হতো ভ্রমন কাহিনীটা। ছবিগুলি সহ আসলেই ভাল লাগল।
হ্যাঁ ভ্রমন কাহিনীগুলো আস্তে আস্তে লিখবো ইনশাআল্লাহ । কালিগঞ্জ ঘুড়ার সুযোগ হয়নি ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
সুন্দর ভ্রমন কাহিনী পড়িয়া তৃপ্তি পাইলাম । ছবিগুলোও মনোমুগ্ধকর । এমন সুন্দর পোষ্ট উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকে সুন্দর উৎসাহ মূলক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন