বিশাল পাহাড় ও কিন্তু.....কাঁদে
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৩২:৫৭ দুপুর
ছোটকালে যখন ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম তখন দুটি বড় বড় খাল পার হয়ে যেতে হত। আসলে একটি খাল সামনে গিয়ে বাঁকা হয়ে আসার কারনে দু’বার পার হতে হত।
শীতকালে যখন যেতাম, যখন অনেকদিন পর্যন্ত বৃষ্টি হত না, তখনও দেখতাম ডলু খালে চলমান পানি। অনেকদিন বৃষ্টিহীন থাকলেও দিনে রাতে খালে চলমান পানি দেখলে অবাকই হতাম ।
এখনও অবাক হই ।
আমাদের এলাকায় জোয়ার ভাটার হিসাব নেই, পানি শুধু একদিক থেকে আসে । দিনে-রাতে বিরামহীন ভাবে এত পানি আসে কোত্থেকে ?
এ ছিল আমার কাছে এক বিস্ময় !!
অনেক খোজ-খবর নিয়ে জ্ঞানে বিজ্ঞ লোকদের কাছে সিজ্ঞাসার জবাবে যেটা জানতে পারলাম তা হচ্ছে- ঐ সব পানি আসে পাহাড় থেকে ।
অবাক কান্ড !!!
এটা হয়তো ঠিক যে নদীগুলোর উৎপত্তি পাহাড় থেকে। তাই মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো নৌকা নিয়ে একেবারে পাহাড়ের পাদদেশে চলে যাব, যতদিন লাগুক।
ছেলেবেলার নৌকাভ্রমনগুলো এখনও মনকে আন্দোলিত করে । আমাদের গ্রাম থেকে পূর্বদিকে তাকালে অনেক দুরে বান্দরবনের বিশাল বিশাল পাহাড় যেন মেঘের সাথে মিতালী করছে। দেখতে কাছে মনে হলেও আসলে অনেক দূরে এবং যাওয়ার পথও অনেক দূর্গম।
মনে অদম্য প্রশ্ন জাগতো, আচ্ছা পাহাড়ে কি শীতকালেও বৃষ্টি হয় ? না, তেমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে পাহাড় থেকে এত পানি বের হয় কেমনে ?
পানি আসে বৃষ্টির মাধ্যমে, পানি আসে মাটির গভীর থেকে, পানি আসে কান্নার জল হয়ে ।
তাহলে কি পাহাড় কান্না করে ? হয়তো কান্নাই করে।
এত বিশাল পাহাড়, যেখানে কঠিণত্ব ও ভয়ংকরের সমাহার, যার তুলনা বিশালত্বের সাথে সম্পর্কিত, সে পাহাড় কাঁদে ?
এত কাঁদে যে-মাস, সপ্তাহ, দিন, ঘন্টা, মিনিটি, সেকেন্ড সে কান্না থামায় না। অবিশ্রান্ত ভাবে সে কেঁদেই চলে।
তাইতো কান্নার জল নদীর পানি হয়ে শান্তি-সুখের বার্তা বয়ে নিয়ে যায় দু’উপকূলের মানুষের কাছে। পাহাড়ের কান্নার জল দিয়ে লোকালয়ে আসে অনেক লম্বা লম্বা বাঁশের ঝাঁকি, পাহাড়ী ফুল-ফলার, কলা, তরকারী। মানুষের কল্যাণের জন্যই পাহাড়ের কান্না। অনেকটা কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশের মত।
যা বলতে চাচ্ছিলাম।
মানুষের বেদনার কান্না অনেক সময় বুকের পাঁজর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
কিছু কিছু মানুষের কান্না এমন যে তা বাহির থেকে বুঝার উপায় থাকে না।
যেন হৃদয়ে রক্তক্ষরন।
কয়েকদিন থেকে বুকের মধ্যে ফেনায়িত কান্না- বেদনার লোনাজল হয়ে কণ্ঠনালীতে এসে আটকে যাচ্ছে।
আমি এমন স্বভাবের মানুষ যার কান্না বাহিরে প্রকাশ পায় না।
অন্তরের ভিতরটা শুধু খা খা করছে।
হতে পারলাম না বাবুর্চি, হতে পারলাম না সহকারী কিংবা হেলপার, কেবল খাদকের দলেই থেকে গেলাম।
বেদনার লোনাজল ক্ষেভের দাবানল হয়ে স্ফুলিঙ্গের মত লাভা ছড়ার উপক্রম প্রায়।
একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে- অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর।
আমার চিন্তার দিগন্তরেখা উর্ধপানে ছুটে যায়। উঁড়ে বেড়ায় আকাশে। আমি বাংলাদেশের উর্ধাকাশে পাড়ি দিয়ে প্রিয় দেশটির দিকে নজর দিই- সেখানে দেখতে পাই কেবল পাথর আর পাথর।
আমার আফসোস হয়; মনের গভীরের রেখাপাতের বর্ণনাগুলো যদি পাঠক হৃদয়ে ফুঁটিয়ে তুলতে পারতাম !!!
বিষয়: বিবিধ
২১৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন