মোটর চালিত রিক্সা, লাভ-ক্ষতি
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:২৮:০৯ দুপুর
চট্টগ্রাম মহানগরীর নতুন বিড়ম্বনা মোটর চালিত রিক্সা
.................................................
হুজুগে বাঙ্গালীর দেশ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ । কোন কিছু কেউ শুরু করলে যদি ব্যবসার টু পাইস কামানোর ধান্ধা থাকে তাহলে আর ঠেকায় কে ? শুরু হয়ে যাবে আদা বেপারীর জাহাজের খবর নেয়া । শুধু জাহাজের খবর নিয়েই ক্ষান্ত দিবে না, জাহাজের না দেখা মালও ফরওয়ার্ড কিনে ফেলবে ।
যেমন ইতিপূর্বে উইনিপে টু এবং শেয়ার বাজারের বেলায় দেখা গেছে । উইনিপে টু এবং শেয়ার বাজারে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা ডিপিএস ভেংগে ইনভেষ্ট করেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ পর্যন্ত । লাভের অংশ যাই থাক, বড় সড় লোকসান যে গুনতে হয়েছে তা সবাই দেখেছেন । লাভের অংশে সিন্ডিকেট লোকশানের বেলায় আমজনতা ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরীতে এই রোগ হচ্ছে, মোটর চালিত রিক্সা ।
অনেক ভাল ব্যবসা ।
৬৫ হাজার টাকার মত খরছ হয় একটি মোটর রিক্সা বানাতে । ড্রাইভার মালিককে ভাড়া দেবে দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা । মাসে ২৬ দিনও যদি চলে ইনকাম হচ্ছে ১০,৪০০ টাকা । যাদের ২০টি মোটর রিক্সা আছে তাদের মাসিক ইনকাম ২০৮০০০/- দুই লক্ষ আট হাজার টাকা । পুঁজি হচ্ছে ১২ লক্ষ টাকা । অর্থাৎ যাদের ৬ লক্ষ টাকা পুঁজি তাদের মাসিক ইনকাম ১০৪০০০/- এক লক্ষ চার হাজার টাকা ।
আর ঠেকায় কে ? কিছু মোনাফা লোভী তরল টাকার মালিক ঝাপিয়ে পড়েছে ঐ ব্যবসায় । ফলে এখন শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে মোটর চালিত রিক্সা ।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই মোটর চালিত রিক্সা সমর্থন করিনা । কারণ হচ্ছে এতে যদি লাভ ক্ষতি হিসাব করি তাহলে ক্ষতির পরিমান বেশীই ধরা পড়ে । আসুন আগে লাভটা দেখি:
মোটর চালিত রিক্সায় লাভ:
প্রথমত: এটা নি:স্বন্ধেহে একটি লাভ জনক ব্যবসা তাদের জন্য যাদের অনেক টাকা আছে । আবার যাদের টাকা নেই তাদের জন্য নয় ।
দ্বিতীয়ত: এতে রিক্সা চালকের ইনকাম হয়তো সামন্য বাড়ছে কিন্তু ঐ বাড়তি ইনকামের সিংহ ভাগই যাচ্ছে মহাজনের পেঠে ।
এছাড়া যানজটের এই শহরে লাভের আর কোন দিক আমি দেখতেছি না ।
এবার আসুন মোটর চালিত রিক্সার ক্ষতির দিকটা দেখি:
১. এই রিক্সা এত বেপরোয়া চলে যে এতে এক্সিডেন্টের যথেষ্ট ঝুকি থেকে যায় । প্রায় প্রতিদিন এই রিক্সায় কেউ না কেউ জখম হচ্ছে ।
২. মোটর চালিত রিক্সা হঠাৎ বাক নিতে পারেনা । হঠাৎ ব্রেক ধরতেও পারেনা । আমি দেখেছি এই রিক্সাকে রাস্তার আইল্যান্ডের উপর তুলে দিয়ে রিক্সা ওয়ালা চিৎপটাং ।
৩. মোটর চালিত রিক্সার ড্রাইভারগুলো এত আলসেমির পরিচয় দেয় যে সামন্য বাউন্তি থাকলেও পেডেল মারতে চায়না, পরিশ্রম বিমুখ হয়ে আলসেমী হয়ে যাচ্ছে খেটেখাওয়া মানুষগুলো।
৪. ৩০ হাজার মোটরের ব্যাটারী দৈনিক ২বার চার্জ দিতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে । অবৈধ বিদ্যুৎ কত পারসেন্ট যাচ্ছে তা তদন্ত সাপেক্ষ । নগরীর যেখানে লোড সেডিং এর কারনে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে পারছে না সেখানে এই বিলাসীতা কতটুকু গ্রহণ যোগ্য ?
৫. মোটর চালিত রিক্সার কারনে লক্ষ লক্ষ মোটর ছাড়া রিক্সা, অটো-রিক্সা, এবং সিএনজির ড্রাইভার ও মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ।
৬. মোটর চালিত রিক্সার যাত্রী বসার সীটের নীচে পুরোটাই ব্যাটারী, রিস্ক তো অবশ্যই আছে । রিক্সা উল্টে গেলে ৪টি বা ৬টি ব্যাটারী যাত্রীর গায়ের উপর পড়বে । সীটের নীচে পুরা বক্সটাই ব্যাটারীতে ভরা।
৭. যাত্রী নিয়ে মাঝপথে গিয়ে হঠাৎ ব্যাটারীর চার্জ চলে যাওয়া । যাত্রীদের অনেক হয়রানীতে পড়তে হয় ।
৮. সরাকারী কোন অনুমোদন না থাকা ।
কোনকিছু একবার শুরু হয়ে গেলে তা আর বন্ধ করা কঠিণ হয়ে দাড়ায় । তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মোটর চালিত রিক্সার লাভ-ক্ষতি হিসাব করে তড়িৎ ব্যবস্থা নিলে বড় ধরনের ক্ষতির কোন সম্ভাবনা থাকবে না ।
বিষয়: বিবিধ
৬০৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন