ইন্টারনেটের গতি কমানোর ফলে সরকার প্রতি মাসে ১৬২ কোটি ৫০লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্লগার চাটিগাঁ থেকে বাহার
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:০৮:০৩ দুপুর
ইন্টারনেটের গতি কমানোর ফলে সরকার প্রতি মাসে ১৬২ কোটি ৫০লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি ইতিপূর্বেও বিভিন্ন ব্লগে অনেক লিখেছি। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টা করেছি যাতে ইনকাম টেক্স, হোল্ডিং টেক্স, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট ইত্যাদি যাতে সঠিক সময়ে আদায় করে। ইতিমধ্যে আমি বেশ কয়েকজনকে ব্যক্তিশ্রেণীর আয়করদাতা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হতে সক্রিয় সহযোগিতাও করেছি। সেদিন একজন বলেই বসলেন-আপনি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে উৎসাহ দিচ্ছেন আর সরকার সেই টাকা দিয়ে গুলি কিনে সাধারণ পাবলিকের বুকে গুলি করে।
যাই হোক, কয়েকদিন থেকে আমার মাথার মধ্যে একটি বিষয় শুধুই ঘুরপাক খাচ্ছিল।
হঠাৎ খেয়াল করলাম বিষয়টি, সম্প্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য টাকা লোড করতে হচ্ছে খুবই কম। যেখানে ১০/১২দিন পর পর টাকা লোড করতে হত সেখানে মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে বাট ক্রয়কৃত জিবি/এমবি শেষ হচ্ছে না।
কেন ?
খতিয়ে দেখলাম ইন্টারনেটের গতি খুবই স্লো হওয়ার কারনে ডাউনলোড হচ্ছে না ঠিকমত। ফলে ক্রয়কৃত জিবি খুবই সীমিত আকারে খরছ হচ্ছিল যার ফলে ১০ দিনের জায়গায় ১মাস যাচ্ছিল। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ৪০০টাকা মোবাইল কোম্পানী গুলোর জন্য লোড করলে সাথে ৬০টাকা ভ্যাট যোগ করতে হয় যা সরাসরি সরকারী রাজস্বখাতে জমা হয়। এমনও আছে যে মাসে দু’তিন বার ঐ পরিমান টাকা লোড করতে হয়। তাহলে ইন্টারনেটের গতি ঠিক থাকলে সরকারের রাজস্ব তহবিল একজন এক্টিভিষ্ট থেকে প্রতি মাসে ১২০টাকা নিয়মিত ভ্যাট পেয়ে থাকে। সেখানে এখন তিনভাগের একভাগ খরছ হওয়ায় বাকী টাকা লোড করতে হচ্ছে না অর্থাৎ প্রতিজন এক্টিভিষ্ট থেকে ৮০টাকা করে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ৮০টাকা না ধরে গড়ে প্রতিজন ৫০টাকাও যদি ধরা হয় তাহলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিয়ে হিসেব করলেই বেরিয়ে আসবে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ কত।
এটাতো শুধু ইন্টারনেট ব্যবহার কারীর পক্ষ থেকে খরছের হিসাব। এরপর ইন্টারনেট নির্ভর ব্যবসা, ইমপোর্ট, এক্সপোর্ট, ইনডেন্ট, শীপমেন্টসমূহ ও একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইন্টারনেটের শ্লথ গতির কারনে।
এখন আসুন দেখি বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহার কারীর সংখ্যা কত ?
গত জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি)’র হিসাব অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪ লক্ষ ৮০ হাজারের উপরে (সূত্র: আইসিটি নিউজ)।
সূত্রে উল্লেখিত হিসাব অনুযায়ী চলতি আটমাসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে কমপক্ষে আরো ২০লক্ষ ২০ হাজার। সেই হিসেবে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার কারীর সংখ্যা ৩ কোটি ২৫লক্ষ। নেটের গতি স্লো হওয়ার কারনে জন প্রতি মাসে গড়ে ৫০টাকা বঞ্চিত হলেও সরকারের রাজস্ব বিভাগ প্রতিমাসে বঞ্চিত হচ্ছে ১৬২ কোটি ৫০লক্ষ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী গত চার মাসে সরকারের নিশ্চিত প্রাপ্তি থেকে গলে গেছে ৬ শত ৫০ কোটি টাকা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী তিন মাসে যে পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সব একত্রিত করলে বিশাল একটি ফান্ড হবে যা পদ্মা সেতুর জন্য খরছের সহায়ক হবে ।
যদিও তথ্যমন্ত্রণালয় থেকে ইন্টারনেটের গতি কমানোর কোন সার্কোলার আছে কিনা আমি জানিনা, তবে যে কোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একবাক্যে স্বীকার করবেন যে বর্তমানে ইন্টারনেটের গতি অনেক কম। অনেক সময় ডাউনলোড এবং আপলোড স্পীড শূন্যের কোটায় এসে ঠেকছে।
সরকারী নীতিনির্ধারকদের এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে ইন্টারনেটের গতি যত বাড়বে সরকারের রাজস্ব ফান্ডে তত বেশী ভ্যাট জমা হবে। কারণ হচ্ছে স্পীড বেশী হলে ১ মাসের জন্য লোড করা টাকা ১০/১২ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং যত স্পীড ততলোড, আবার যত লোড তত ভ্যাট। থ্রি-জি প্রযুক্তির ইন্টারনেট সার্ভিস যত দ্রুত সম্প্রসারণ হবে ততই দেশ ডিজিটালাইজেশন হবে তাড়াতাড়ি।
আশা করি আমার দেয়া হিসাব যাচাই করে সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না ।
লেখক:
ব্লগার চাটিগাঁ থেকে বাহার
বিষয়: বিবিধ
২২০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন