সিবিএফ-চট্টগ্রাম’র পক্ষ থেকে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান, সৈকত ভ্রমন ও মানববন্ধন....
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:০১:২৯ রাত
সিবিএফ চট্টগ্রামের সফল অনুষ্ঠানটি কিভাবে এতসুন্দর ভাবে সম্পন্ন হল তা অনেকেই জানতে চেয়েছেন । তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস । আশা করি সকল ব্লগার যাতে দেখতে পারে কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা নিবেন ।
ইচ্ছা ছিল অনেক ব্যাপক আকারে চট্টগ্রামের সিবিএফ’র ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি করব । দু’একবার ডেট পরিবর্তন করার ফলে অনেকে ইতিপূর্বে কনফার্ম করলেও শেষ পর্যন্ত যোগদিতে পারেননি । শেষ মূহুর্তে আমার চাচার মৃত্যু আমাকে অনুষ্ঠানে উপস্থিতি অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয় । কিন্তু ব্লগার আজব মানুষ, ইজিপ্ট’১২, আহমদ মুসা প্রমুখ বললেন, আপনাকে ছাড়া আমরা গুছিয়ে প্রোগ্রাম করতে পারবো না । ঐ দিকে ঢাকার মেহমান ট্রেনে আসার পথে আছে, এ অবস্থায় অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয়াও শোভা পায় না । যাই হোক সবাইকে বহদ্দারহাট মিনি চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট কাশবনে আসতে বলা হল ৩০ আগষ্ট’১৩ইং সকাল সাড়ে নটায় । শেষ পর্যন্ত আমিও গ্রামের বাড়ি থেকে যথাসময়ে কাশবনে এসে হাজির হলাম। কাশবনটা হচ্ছে ঐতিহাসিক বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের পাদদেশে।
ঢাকার মেহমানদের সাথে সাক্ষাৎ হল । কক্সবাজার থেকে সিনিয়র ব্লগার সাংবাদিক, কলামিষ্ট সাইফুল ইসলাম আমাদের সাথে এসে যোগ দিলেন । আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল বৃষ্টি হলেও আমরা অনুষ্ঠান করবই । জুমার নামাজের দায়িত্ব থাকার কারনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ব্লগার আমিনুল হক যোগ দিতে না পারায় দু:খ প্রকাশ করে অংশগ্রহণ কারী সকলকে শুভেচ্ছা জানান । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জনপ্রিয় ব্লগার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বৃষ্টির কারনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বাস মিস করায় দু:খ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানের শুভ কামনা করেন । আমাদের প্রোগ্রামকে শুভেচ্ছা পাঠান প্রিয় ব্লগার ড.সালেহ মতীন সহ আরো অনেকে। প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে ছোটখাট সিটি বাস একটি রিজার্ভ করে রওয়ানা দিলাম বঙ্গোপসাগরের দিকে । গাড়ীতে বসে সকলের মনমেজাজ বেশ ফুরফুরে মনে হল । আমাদের গাড়ির আগে আগে গার্ড অব অনার দিয়ে যাচ্ছেন নিজের বাইক দিয়ে ব্লগার আহমদ মুসা । এই গার্ড অব অনার বিষয়টি আমরা গাড়ীর ভিতর থেকে বেশ উপভোগ করলাম । পথিমধ্যে আমাদের সাথে যোগ দিলেন ব্লগার সিকদার ভাই ও এক্টিভিষ্ট নজরুল ইসলাম ।
অত:পর চলন্ত গাড়ীতে দাড়িয়ে ব্লগার আজব মানুষ তার স্বভাব সুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘোষনা দিলেন.... এখন আমাদের আজকের সিবিএফ-চট্টগ্রাম’র অনুষ্ঠানের উদ্ধোধনী ঘোষণা করবেন ব্লগার চাটিগাঁ থেকে আমি (বাহার) ।
উদ্ধোধন ঘোষণার পর শুরু হল গানও কৌতুক পর্ব । গাড়ি চলছে তো চলছেই.... জামে পড়ল নাকি নেমে পড়ল সেদিকে দেখার আমাদের সময় কই !!!
প্রথমেই স্বরচিত গান পরিবেশন করলেন স্বপ্নচারী মাহমুদুল হাসান, অত:পর গান গেয়ে শুনালেন মামুনুর রশীদ ভাই । এরপর কৌতুক পরিবেশন করলেন একে একে শিকদার ভাই, আহমদ মুসা সহ আরো অনেকে, প্রধান অতিথী ডিজিটাল প্রেসিডেন্টও কয়েকটি সুন্দর সুন্দর কৌতুক শুনালেন ।
সবাই বেশ আনন্দ করলেন গাড়ীতেই । একটি শেয়াল যখন ডাক ছাড়ে অপর শিয়াল গুলো নাকি না ডেকে থাকতে পারেনা । সকলের কৌতুক বলা দেখে আমিও একখান কৌতুক ঝাড়িয়ে দিলাম । আমার বলা কৌতুক শুনে অবশ্য আমিই বেশী হেসেছি । সকলের হাসি দেখে মনে হচ্ছিল হাসি যেন বাংলালিংক দামে পাইছে ।
ব্লগার আহমদ মূসা কি বাসের ভাড়া তুলছেন ?
বীচের কাছাকাছি গিয়ে আমাদের সাথে যোগ দিল ব্লগার আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজ ভাই । এ সময় যে মানুষটির কথা বেশী বেশী মনে পড়ছিল তিনি হচ্ছেন আমাদের সকলের প্রিয় ব্লগার বাকপ্রবাস । উনার বাসা এই এলাকায় । তিনি সাথে থাকলে আজকে আরো অনেক বেশী মজা হত ।
বীচে পৌছে সবাই যখন গাড়ি থেকে নামলাম তখন সু-বিশাল সাগরের জীবানুমুক্ত একঝলক নির্মল বাতাস আমাদেরকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানাল।
বিশাল লম্বা সৈকতে আমরা কোন পয়েন্টে পরবর্তী অনুষ্ঠান সমূহ সম্পন্ন করব তার ভার ব্লগার আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজ ভাইকে দিলাম। কারণ তিনি ঐ এলাকার বাসিন্দা । সিরাজ ভাই আমাদেরকে বেড়ী বাধের উপর দিয়ে প্রায় এককিলোমিটার উত্তর দিকে নিয়ে গেলেন।
একটু নিরিবিলি পরিবেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের অনুষ্ঠান করব এটাই ছিল উদ্দেশ্য।
বেড়ী বাধের বাম পাশে উন্মুক্ত সাগর, মাঝে মাঝে সৈকতী ষ্টাইল দোকান ও রেষ্টুরেন্ট সমূহ আর ডান পাশে সারি সারি ঝাউগাছ। কত যে সুন্দর আমাদের এই দেশখানি, তারছে সুন্দর সমুদ্র সৈকত । আমরা যেখানে এসে ঠিকানা করে নিলাম তার নাম মদীনা রেষ্টুরেন্ট। জুমার নামাজ আরো একঘন্টার মত বাকী।
রেষ্টুরেন্টে ফাষ্টফুড জাতীয় কিছু না থাকায় বিস্কুট চা দিতে বলা হল।
চা পর্ব শেষে অনুষ্ঠানের ২য় পর্ব শুরু হল । প্রথমেই আল-কোরআন থেকে তেলাওয়াত করলেন ব্লগার মিষ্টি ভাই । এরপর পরিচয় পর্ব। একজন একজন করে সকলে দাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিতে লাগলেন আর সেই সুযোগে সবাই একে অপরকে জানতে, বুঝতে, চিনতে সুবিধা হয়ে গেল।
ততক্ষনে জুমার আজান হয়ে গেছে । ২য় পর্বের অনুষ্ঠানের সমাপ্তী ঘোষনা করা হল ।
কেউ কেউ দৌড় দিল সাগর পাড়ের বিশাল বিশাল পাথরের দিকে । টাটকা রোদ হলেও সাগর পাড়ের উন্মুক্ত পরিবেশে তা গায়েই মাখছেনা কেউ। রেষ্টুরেন্টের পাশেই ছোটখাট একটি মসজিদ ছিল, ইতিমধ্যে হুজুর বয়ান শুরু করে দিছে। আমাদের ভাইয়েরা গ্রুপিং করে করে ঝাউবাগানে পারস্পরিক আলোচনায় মত্ত। মাইকে হুজুরের বয়ান যেন শেষ হতেই চায়না।
আস্তে আস্তে সবাই মসজিদের দিকে এগিয়ে গেল। ওজুর পানি মুখে দিয়েই সবাই যেন শখ খেল। ইহা তো পানি নয়, ইহা তো খাবার স্যালাইন।
আজব নানা বললেন কারো পেঠে গন্ডগোল থাকলে অল্পকিছু পানি পান করে নিতে পারেন । নামাজ শেষ করতে দু’টার পর হয়ে গেল।
এরপর খাওয়া পর্ব। খানা আমাদের সাথেই ছিল, সকালে বহদ্দারহাট কাশবন রেষ্টুরেন্ট থেকেই নিয়ে এসেছিলাম।
মদীনা রেষ্টুরেন্টের ভিতরে আর বসলাম না । বাইরে খোলামেলা ঝাউবাগানে টিনের ছাউনিযুক্ত যে বসার ব্যবস্থা ছিল সেখানে গিয়ে বসলাম সবাই। কয়েক কদম দুরেই সাগর।
সেখানে এত বাতাস যে আমাদের ঈদ পুনর্মিলনীর ব্যানার টাঙ্গাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। আমাদের লাঞ্চ পর্ব শেষ হয়েছে এমন সময় আমাদের সাথে শহর থেকে এসে যোগ দিলেন ব্লগার রিদওয়ান কবির সবুজ ভাই। তিনি গায়ে জ্বর থাকার কারনে সকালে আসতে পারেন নাই। পরে এইচ টেবলেট খেয়ে জ্বর নামিয়ে তবেই এসেছেন । সবুজ ভাইয়ের এই যে ত্যাগ তাতে আমার এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হল যে আমাদের এই ব্লগার্স সংগঠনটি অনেকদুর যেতে পারবে।
লাঞ্চপর্বের শেষে আমাদের অনুষ্ঠানের তৃতীয় ও শেষ পর্ব শুরু হল।
শেষ পর্বের শুরুতেই সিবিএফ এর লক্ষ উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রিফিং দেওয়ার জন্য সঞ্চালক আজব মানুষ আমার নাম ঘোষনা করলেন।
আমি এর লক্ষ-উদ্দেশ্য আশা-আকাংখার উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলাম এবং সকলকে আলোচ্য লক্ষ-উদ্দেশ্যে পৌছলে হলে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হবে তার উপর আলোচনা করার জন্য আহবান করলাম।
এরপর মতামত ও পরামর্শ পর্ব:
এপর্বে মোটামোটি সবাই নিজ নিজ মতামত পরামর্শাকারে পেশ করলেন। সকলের পরামর্শ নোট করা হল।
এরপর বক্তব্য রাখলেন কক্সবাজার থেকে আগত সিনিয়র ব্লগার সাইফুল ইসলাম।অত:পর বক্তব্য রাখলেন ঢাকা থেকে আগত প্রিয় ব্লগার নেহায়াৎ।
অত:পর প্রধান অতিথীর বক্তব্যে ব্লগার ডিজিটাল প্রেসিডেন্ট সিবিএফ এর পুর্বাপর ইতিহাস, লক্ষ-উদ্দেশ্য সমূহ গোছালো আকালে তুলে ধরলেন ।সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত উনার ঝালে-মিষ্টি তেজোদীপ্ত বক্তব্য শুনলেন এবং খুশী হলেন।
সব শেষে সভাপতি হিসেবে আমাকেই সমাপ্তি টানাতে হল।আমি সকলের কাছে জানতে চাইলাম শহর থেকে এতদুর এনে সবার সময় লজ করলাম কিনা।
সবাই একবাক্যে কারোরই সময় লজ হয়নি বরঞ্চ সবাই উপকৃত হয়েছেন।ডিজিটাল পর্দাল অন্তরালে থেকে পরস্পরের লেখা পড়ে মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য দিয়ে যাদের কল্পনা করেছি তারা আজ স্বশরীরে একে অপরের সামনে ।এতে অনেকেই আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন।
অত:পর আজকের অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ৬দফা দাবী পেশ করা হলে উপস্থিত সকলে হাত তুলে সমর্থন জানান।
মূল অনুষ্ঠান শেষ করে সকলে নেমে পড়লাম সাগরে তীরে। প্রথমেই পাথরের পাদদেশে ফটো সেশন।
সাগরতীরে মানববন্ধন:
চমকের উপর চমক, আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আশা মানববন্ধন পর্ব শুরু হলে সৈকতে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটক আমাদের সাথে হাতে হাত মিলালো।
আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান শুভ্রকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবীতে আমাদের মানববন্ধনের মাধ্যমে সিবিএফ চট্টগ্রামের ঈদ-পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ও সৈকত ভ্রমনের ইতি টানা হল।
সিবিএফ এর পেশকৃত ৬দফা দাবী
দৈনিক আমার দেশের নিউজ
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় দৈনিক আজাদীর নিউজ
ব্লগার প্রেসিডেন্ট এর দেয়া পোষ্ট
ফেইসবুকে সিবিএফ এর ফেন পেইজ
আসুন সবাই এই পেইজে লাইক দিয়ে সিবিএফ গণমানুষের সংগঠনে পরিনত করি ।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতিপূর্বে ইষ্টিপ্রাপ্ত আজব মানুষের পোষ্টটি দেখুন
কমিউনিটি ব্লগারস ফোরাম (সিবিএফ) হোক আগামী দিনের গণমানুষের প্রাণের সংগঠন
বিষয়: বিবিধ
১২০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন