কোরআন হাদিসের তাফসীর নির্ভর প্রচলিত কিছু বানোয়াট কাহিনী [৩]
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৩৪:১৪ বিকাল
লেখাটি বুঝতে সহজ হবে যদি আগের ভূমিকা সহ পোষ্টটি একবার পড়া হয় ।
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/2668/rashic/22332#.Ue4nv6w25r5
আছহাবে কাহফের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বর্ণনা :
অনুবাদ : ‘যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিলো, তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি নিজ হাতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন। অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় কয়েক বছর ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম। পরে আমি তাদেরকে জাগরিত করলাম জানবার জন্য যে, দুই দলের মধ্যে কোন্ দল তাদের ইন্তিকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। আমি তোমার কাছে তাদের সঠিক বৃত্তান্ত বর্ণনা করছি, তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম। আমি তাদের চিত্ত দৃঢ় করেছিলাম, তারা যখন উঠে দাঁড়ালো তখন বলল, আমাদের প্রতিপালক আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক, আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন মা‘বূদকে আহ্বান করব না, যদি করে বসি, তবে তা অতিশয় গর্হিত কাজ হবে। আমাদেরই এই স্বজাতিরা তাঁর পরিবর্তে অনেক মা‘বূদ গ্রহণ করেছে। তারা এই সব মা‘বূদ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চেয়ে অধিক সীমালংঘনকারী আর কে? তোমরা তখন বিচ্ছিন্ন হলে তাদের হতে ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করত, তাদের হতে তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তীর্ণ করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসু করবার ব্যবস্থা করবেন। দেখতে দেখতে তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত হল। সূর্য উদয়কালে তাদের গুহার দক্ষিণ পার্শ্বে হেলে আছে এবং অস্তকালে তাদেরকে অতিক্রম করছে বাম পার্শ্ব দিয়ে, এই সব আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন সে সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন সে কখনই তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। তুমি মনে করতে, তারা জাগ্রত কিন্তু তারা ছিল নিদ্রিত; আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম দক্ষিণে এবং বামে ও তাদের কুকুর ছিল সম্মুখের পা দু’টি গুহার দ্বারে প্রসারিত করে। তাদেরকে তাকিয়ে দেখলে তুমি পিছনে ফিরে পালিয়ে যেতে ও তাদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়তে। এভাবেই আমি তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বলল, তোমরা কতকাল অবস্থান করছো? তা তোমাদের প্রতিপালকই ভাল জানেন; এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ নগরে প্রেরণ কর। সে যেন তোমাদের জন্য কিছু খাদ্য নিয়ে আসে। সে যেন বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে ও কিছুতেই যেন তোমাদের সম্বন্ধে কাউকে কিছু জানতে না দেয়’ (কাহাফ ১০-১৯)।
আছহাবে কাহফের সম্পর্কে মিথ্যা কাহিনী
অত্র আয়াতসমূহের মিথ্যা তাফসীর : যখন ওমর (রাঃ) খলীফা হলেন, কিছু ইহুদী পাদ্রী তাঁর নিকট আসলেন এবং বললেন, ‘হে ওমর! আপনি মুহাম্মাদ ও আবুবকর (রাঃ)-এর পর খলীফা হয়েছেন। আমরা আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনি সঠিক উত্তর দিলে আমরা মনে করব ইসলাম সত্য, মুহাম্মাদ সত্য নবী। আর আপনি যদি না বলেন, আমরা বুঝবো ইসলাম বাতিল ধর্ম, আর মুহাম্মাদ সত্য নবী নন। ওমর (রাঃ) বললেন, জিজ্ঞেস করুন, কি জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছেন। তারা বলল, (১) আকাশের তালা বা দরজা সমূহ কি জিনিস তা আমাদের বুঝিয়ে বলুন,
(২) আকাশ সমূহের চাবি কি জিনিস?
(৩) কবর তার সঙ্গীকে কোথায় নিয়ে গেছে?
(৪) তিনি কে? যিনি তার সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিলেন, যার সম্প্রদায় মানুষও নয়, জিনও নয়?
(৫) পাঁচটি জিনিসের কথা বলুন, যা যমীনের উপর চলে। অথচ সেগুলিকে মায়ের পেটে সৃষ্টি করা হয়নি।
(৬) আমাদের বলুন, তিতির পাখি তার ডাকে কি বলে?
(৭) মোরগ তার চিৎকারে কি বলে?
(৮) গাধা তার ডাকে কি বলে?
(৯) কুম্বর পাখি তার ডাকে কি বলে? ওমর (রাঃ) মাথা মাটির দিকে নীচু করার পর বললেন, ওমর যা জানে না তা জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কাজেই ওমর বলবে আমি জানি না। আর এতে ওমরের কোন দোষ নেই। তাৎক্ষণিক ইহুদীরা লাফ দিয়ে উঠে বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ নবী ছিলেন না। ইসলাম একটি বাতিল ধর্ম। তখন সালমান ফারসী লাফ দিয়ে উঠে বললেন, হে ইহুদীরা! একটু থাম। তিনি আলী (রাঃ)-এর নিকটে গেলেন এবং বললেন, হে আবুল হাসান! ইসলামের সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, কি হয়েছে? সালমান (রাঃ) সব খবর তাঁকে বললেন। তখন আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাদর গায়ে দিয়ে গৌরব সহকারে চলে আসলেন। ওমর (রাঃ) তাঁকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে তাঁর সাথে কোলাকুলি করলেন এবং বললেন, হে আবুল হাসান! যে কোন কঠিন সময়ে আপনাকে ডাকা হয়। আলী (রাঃ) ইহুদীদের ডাকলেন এবং তাদের বললেন, তোমরা জিজ্ঞেস কর, কি জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছ? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিদ্যার এক হাজারটি দরজা শিক্ষা দিয়েছেন, প্রত্যেকটির আবার এক হাজার করে শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তোমরা জিজ্ঞেস কর কি জিজ্ঞেস করতে চাও? তারপর আলী (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আমার পক্ষ থেকে আপনাদের উপর একটি শর্ত রয়েছে। আমি তোমাদের প্রশ্নের উত্তর এমনভাবে দিব যেমন তোমাদের তাওরাতে রয়েছে। তোমরা আমাদের দ্বীনে প্রবেশ করবে এবং ঈমান আনবে। তারা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। আলী (রাঃ) বললেন, তোমরা একটি করে জিজ্ঞেস কর (১) তারা বলল, আকাশের দরজাসমূহ কি জিনিস? আলী (রাঃ) বললেন, আকাশের দরজা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা। কারণ কোন দাস-দাসী আল্লাহর সাথে শিরক করলে তার আমল আকাশের উপর যায় না।
(২) তারা বলল, আমাদেরকে আকাশের চাবী সম্পর্কে বলেন। আলী (রাঃ) বললেন, আকাশের চাবী হচ্ছে ‘‘ লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ’’ ! বলে সাক্ষ্য দেয়া। তারা পরস্পরের দিকে লক্ষ্য করে বলল, যুবক ঠিক বলেছে।
(৩) তারা বলল, ঐ কবর সম্পর্কে বলূন, যে কবর তার সঙ্গীকে নিয়ে চলে গেছে। আলী (রাঃ) বললেন, কবর হচ্ছে ঐ মাছ, যে মাছ ইউনুস (আঃ)-কে গিলে খেয়েছে তারপর তাকে সাত সমুদ্রের মধ্যে নিয়ে চলে গেছে।
(৪) ঐ নবী সম্পর্কে বলুন, যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিলেন
অথচ সম্প্রদায় মানুষও নয়, জিনও নয়। আলী (রাঃ) বললেন, সম্প্রদায় হচ্ছে পিপিলিকা আর সতর্ককারী হচ্ছেন সুলায়মান (আঃ)।
(৫) পাঁচটি জিনিস সম্পর্কে বলুন, যারা মাটির উপর চলেছে, অথচ তাদেরকে মায়ের পেট হতে সৃষ্টি করা হয়নি। আলী (রাঃ) বললেন, তারা হচ্ছেন (ক) আদম (আঃ) (খ) হাওয়া (আঃ) (গ) ছালিহ (আঃ)-এর উটনী (ঘ) ইবরাহীম (আঃ)-এর দুম্বা (ঙ) মূসা (আঃ)-এর লাঠি।
(৬) মোরগ তার ডাকে কি বলে? আলী (রাঃ) বললেন, মোরগ তার ডাকে বলে, হে গাফিল নারী-পুরুষ! তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর।
(৭) ঘোড়া তার ডাকে কি বলে? আলী (রাঃ) বললেন, ঘোড়া তার ডাকে মুমিন যখন কাফিরের সাথে যুদ্ধ করতে যায় তখন বলে, হে আল্লাহ! তুমি তোমার মুমিন বান্দাকে কাফিরদের উপর সাহায্য কর।
(৮) গাধা তার ডাকে কি বলে? আলী (রাঃ) বললেন, গাধা তার ডাকে বলে, সীমালংঘনকারী পাপাচারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক এবং শয়তানের চোখের উপর চিৎকার করে।
(৯) আমাদের বলুন, ব্যাঙ তার ডাকে কি বলে? আলী (রাঃ) বললেন, ব্যাঙ তার ডাকে বলে, আমার প্রতিপালক প্রকৃত মা‘বূদের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। যারা পাঠ করে সমুদ্র সমূহের গর্ভে।
(১০) তারা বলল, কুম্বর পাখি তার ডাকে কি বলে? আলী (রাঃ) বললেন, কুম্বর পাখি তার ডাকে বলে হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের প্রতি যে শত্রু“তা রাখে, তুমি তার উপর অভিশাপ কর। ঐ সময় ইহুদীরা তিনজন ছিল। তাদের দু’জন বলল, ‘‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু’’ ! তৃতীয় পণ্ডিত লাফ দিয়ে উঠে বলল, হে আলী! আমার সাথীদ্বয়ের অন্তরে ঈমান পতিত হয়েছে। আমার একটি প্রশ্ন বাকী রয়েছে যা তোমাকে আমি বলতে চাই। আলী (রাঃ) বললেন, যা ইচ্ছা হয় বলুন। আপনি আমাদেরকে অতীতের এক সম্প্রদায়ের খবর দেন, যারা ৩০৯ বছর মৃত্যুবরণ করে থাকার পর আল্লাহ তাদের জীবিত করেছিলেন। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। আলী (রাঃ) বললেন, হে ইহুদীরা! তারা ছিল আছহাবে কাহফ। আল্লাহ আমাদের নবীর উপর যে কুরআন নাযিল করেছেন, তাতে সে কাহিনী রয়েছে। আপনি চাইলে তাদের কাহিনী আপনাকে পড়ে শুনাই। তাদের ঘটনা জানা থাকলে আমাদের বলেন। তাদের নাম, তাদের পিতার নাম, তাদের শহরের নাম, তাদের বাদশাহর নাম, তাদের কুকুরের নাম, তাদের পাহাড়ের নাম, তাদের গর্তের নাম এবং তাদের কাহিনী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনান। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাদরটি জড়িয়ে গায়ে দিলেন এবং বললেন, হে আরবদের ভাই! আমার প্রিয় মুহাম্মাদ আমাকে বলেছেন, আফসুস শহরের রুমাইয়া নামক যমীনে ঘটনাটি ঘটেছে। শহরটিকে তারসুমও বলা হয়। জাহেলী যুগে তার নাম ছিল ‘আফসুস’। ইসলাম আসার পর তার নাম হয়েছে ত্বরসুম। তাদের একজন নেককার বাদশাহ ছিল। তাদের বাদশাহ মারা গেলে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এ সংবাদ ইরানের একজন বাদশাহ শুনতে পায়, যার নাম ছিল দাকয়ানূস। সে ছিল অত্যাচারী কাফির। সে তার সৈন্য নিয়ে আফসুস শহরে প্রবেশ করল। সে এটাকে নিজের রাজত্ব হিসাবে গ্রহণ করল এবং সেখানে প্রাসাদ নির্মাণ করল। ইহুদী লাফ দিয়ে উঠে বলল, আপনার জানা থাকলে প্রাসাদের বিবরণ দিন এবং তার নির্মাণের বিবরণ দিন।
আলী (রাঃ) বললেন, হে ইহুদীদের ভাই! শুন। সেখানে একটি শ্বেত পাথরের প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল, যার দৈর্ঘ ছিল তিন মাইল এবং প্রস্থ ছিল তিন মাইল। তাতে ছিল চার হাজার স্বর্ণের খুঁটি। এক হাজার স্বর্ণের বাতি ছিল। বাতির শিকলগুলি ছিল রূপার। পবিত্র তেল দ্বারা প্রতি রাতে বাতিগুলি জালানো হত। পূর্বদিকের বৈঠকের জন্য ছিল একশত ৮০টি ছোট জানালা। সূর্য যখন আকাশে উঠত ও ডুবত বৈঠকের ইচ্ছানুযায়ী ঘুরত। সেখানে একটি স্বর্ণের খাট নির্মাণ করেছিল যার দৈর্ঘ ছিল ৮০ গজ আর প্রস্থ ছিল ৪০ গজ। যেটাকে মণি-মাণিক্য জহরত দ্বারা শক্ত করা হয়েছিল। খাটের ডান দিকে ৮০টি স্বর্ণের চেয়ার লাগানো হয়েছিল। তার উপর বসানো হয়েছিল বাতারিকদের (বাতারিক হচ্ছে রোমান সেনাপতি)।
খাটের বামে ছিল ৮০টি স্বর্ণের চেয়ার। সে তার উপর আলোকবাতিগুলি বসিয়েছিল। তারপর সে নিজে খাটের উপর বসে ছিল রাজমুকুট মাথায় দিয়ে। ইহুদী লাফ দিয়ে উঠে বলল, আলী! তার মুকুট কি দ্বারা তৈরী ছিল, জানা থাকলে বল। আলী (রাঃ) বললেন, হে ইহুদীদের ভাই! তার তাজটি তৈরী ছিল স্বর্ণের পিণ্ড দ্বারা। তার নয়টি কোণ ছিল। আর প্রত্যেক কোণে ছিল মুক্তা। মুক্তা তাতে ঝকমক করে আলো দিত যেমন অন্ধকার রাতে বাতি আলো দেয়। তার তারিকদের সন্তান হতে ৫০জনকে দাস হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তাদের কোমর বেড়ী ছিল লাল রেশমী কাপড়ের। তাদের পায়জামা ছিল সবুজ রেশমী কাপড়ের।
তাদের মুকুট, তাদের বাজুবন্ধ, তাদের পায়ের মল ছিল মূল স্বর্ণের। তাদেরকে সে তার মাথার পাশে দাঁড় করে রেখেছিল। তাদের ছয়জন ছেলেকে উযীর হিসাবে গ্রহণ করেছিল যাদের ছাড়া বাদশাহ কোন সিদ্ধান্ত নিতেন না। তাদের তিন জনকে দাঁড় করিয়েছিলেন ডানে এবং তিনজনকে দাঁড় করিয়েছিলেন বামে। ইহুদী লাফ দিয়ে উঠে বলল, হে আলী! তাদের নাম জানা থাকলে বল। আলী (রাঃ) বললেন, আমার প্রিয় নবী আমাকে বলেছেন, ডানের তিনজনের নাম হল (১) তামলীখা (২) মাকসালমীনা (৩) মাহসালমীনা। আর বাম দিকের তিনজনের নাম হচ্ছে (১) মারত্বলাউস (২) কাশত্বউস (৩) সাদনীউস। সে তাদের সাথে সব বিষয়ে পরামর্শ করত। প্রত্যেক দিন বাড়ীর আঙ্গীনায় বসত। মানুষ তার পাশে একত্রিত হত। এ সময় তিনজন গোলাম মিশকপূর্ণ স্বর্ণের বাটি নিয়ে তার পাশে আসত। আর তাদের দু’জনের হাতে থাকত গোলাপের পানি পূর্ণ রূপার তিনটি বাটি। তৃতীয়জনের হাতে থাকত একটি পাখি। সে তাকে নিয়ে একটি চিৎকার দিত, তখন পাখিটি উড়ে গোলাপের পানির বাটিতে পড়ে বাটির মধ্যে গড়াগড়ি পাড়ত। গোলাপের পানি পাখির দু’ডানায় প্রবেশ করত। তারপর দ্বিতীয়জন চিৎকার দিত, তখন পাখি উড়ে মিশকের পানির বাটিতে পড়ত এবং তার মধ্যে পাখিটি গড়াগড়ি করত। মিশক তার ডানা ও পরের মধ্যে প্রবেশ করত। এরপর তৃতীয়জন চিৎকার করত, তখন পাখি উড়ে গিয়ে বাদশার মুকুটের উপর বসত। বাদশার মাথার উপরে পাখি ডানা ঝাড়া দিত। কারণ ডানায় থাকতো মিশক ও গোলাপের পানি। এভাবে বাদশাহ ত্রিশ বছর থাকেন। এই ত্রিশ বছরে তার কোন দিন মাথা ব্যথা হয়নি, কোন লালা বা থুথু বা শিকনি আসেনি। সে নিজেকে এরূপ দেখে উদ্ধত হয়ে পড়ে এবং সীমালংঘন করে, অত্যাচারী হয়ে যায়। নাফরমানী করে এবং আল্লাহকে ত্যাগ করে নিজেকে প্রতিপালক বলে দাবী করে। তার সম্প্রদায়কে নিজের দাবীর উপর দাওয়াত দেয়। যে ব্যক্তি তার দাবী কবুল করত, তাকে নিকটে করে পোশাক পরাত, সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিত। আর যে ব্যক্তি তার দাবী কবুল করত না, তাকে হত্যা করত। বহু লোক তার দাবী মেনে নিয়েছিল। তারা তার দেশে বসবাস করত। আল্লাহকে ছেড়ে তার ইবাদত করত। একদা সে খুব আনন্দের সাথে মাথায় মুকুট পরে খাটে বসে ছিল। হঠাৎ তার কোন বার্তাবাহক এসে বলল, একদল অশ্বারোহী তাকে ঘিরে নিয়েছে যারা তাকে হত্যা করতে চাই। এতে সে খুব চিন্তিত হল এবং মাথা থেকে মুকুট পড়ে গেল। সেও খাট হতে পড়ে গেল। তার ডান দিকের তিন যুবকের একজন তার দিকে লক্ষ্য করে। সে খুব বুদ্ধিমান ছিল। তাকে তামলীখা বলা হত। সে চিন্তা করল এবং মনে মনে বলতে লাগল, দাকয়ানূস যদি মা‘বূদ হত তাহলে সে চিন্তিত হত না। সে যদি মা‘বূদ হয় তাহলে সে কেন পেশাব করে কেন খায়? এগুলি তো মা‘বূদের গুণাবলী নয়। প্রত্যেক দিন তারা ছয়জন একজনের পাশে একত্রিত হত। তার একদিন ছিল তামলীখার দিন। তারা সকলেই তামালীখার পাশে একত্রিত হল। তারা সবাই খেল ও পান করল। তামলীখা খেল না, পান করল না। তারা বলল, হে তামলীখা! তোমার কি হয়েছে? কেন তুমি খাচ্ছ না, পান করছ না? আমার অন্তরে কিছু খটকা হচ্ছে যা আমাকে খাওয়া ও পান করা হতে বিরত রাখছে। তারা বলল, হে তামালীখা! সেটা কি? সে বলল, আমি এই আকাশের ব্যাপারে চিন্তা করলাম। অতঃপর বললাম, তিনি কে? যিনি এই নিরাপদ ছাদ তৈরী করেছেন? যার উপরে কোন কিছু সংযুক্ত নেই, যার নীচে কোন খুঁটি নেই। তিনি কে? যিনি এই আকাশের মধ্যে চন্দ্র-সূর্য চালু করেছেন? তারকা দিয়ে আকাশ সুন্দর করেছেন। তারপর আমি যমীনের দিকে লক্ষ্য করে চিন্তা করলাম, তিনি কে? যিনি এই পানি দ্বারা পরিপূর্ণ সমুদ্রের উপর মাটিকে বিছানা করে বিছিয়েছেন। তাকে থামিয়ে রেখেছেন পাহাড় স্থাপিত করে, যেন পৃথিবী নড়াচড়া না করে। তারপর আমি
নিজের প্রতি লক্ষ্য করলাম, অতঃপর বললাম, কে আমাকে গর্ভস্থ সন্তান করে আমার মায়ের পেট হতে বের করল? কে আমাকে খাদ্য দিল? কে আমাকে লালন-পালন করল? অবশ্যই এসব কিছুর একজন পরিচালক ও প্রস্তুতকারী রয়েছেন। অবশ্যই তিনি দাকিয়ানুস বাদশা নন। তারা তামলীখার কথা শুনে ফিরে গেল এবং তার কথা কবুল করে নিল। তারা বলল, হে তামলীখা! আমাদের অন্তরে সে কথাই জেগেছে যা তোমার অন্তরে জেগেছে। তুমি আমাদের পরামর্শ দাও কি করা যায়? তামলীখা বলল, এই অত্যাচারী বাদশার নিকট হতে আসমান যমীনের মালিকের নিকট পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন পথ নেই। তারা বলল, আমাদের সিদ্ধান্ত সেটাই যা তোমার সিদ্ধান্ত। তামলীখা তিন দিরহামে কিছু খেজুর বিক্রয় করল এবং দিরহাম তিনটি তার চাদরে বেঁধে নিল। তারপর তারা ঘোড়ায় চড়ে বের হয়ে গেল। শহর থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে চলে গেল। তামলীখা তাদের বলল, হে আমার ভাইয়েরা! আমাদের থেকে দুনিয়ার বাদশাহ দূর হয়ে গেছে। তার আদেশ আমাদের থেকে দূরে সরে গেছে। তোমরা এখন তোমাদের ঘোড়া থেকে নেমে যাও। তোমরা তোমাদের পায়ে হেঁটে চল। আল্লাহ তোমাদের সব ব্যবস্থা করে দিবেন। তারা তাদের ঘোড়া থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ২১ মাইল গেল। তাদের পা থেকে রক্ত ঝরতে লাগল। পথিমধ্যে একজন রাখালের সাথে তাদের দেখা হল। তারা বলল, হে রাখাল! তোমার নিকট কোন দুধ বা পানি আছে? রাখাল বলল, তোমরা যা ভালবাস তাই আমার নিকট রয়েছে। তবে তোমাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে রাজকীয় মুখ। মনে হয়, তোমরা পালিয়ে এসেছো। তোমরা আমাকে তোমাদের কাহিনী বল। তারা বলল, হে রাখাল! আমরা এমন এক দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করেছি যে, আমাদের জন্য মিথ্যা কথা বলা জায়েয নয়। সত্য আমাদের পরিত্রাণ দিবে কি? সে বলল, হ্যাঁ সত্য তোমাদের পরিত্রাণ দিবে। তারা তাকে ঘটনা শুনালো। রাখাল ফিরে আসল এবং তাদের দ্বীন কবুল করল। সে বলল, তোমাদের অন্তরে যা ঘটেছে, আমার অন্তরেও তাই ঘটেছে। তোমরা এখানে একটু থাম! আমি ছাগলগুলি ছাগলের মালিককে ফেরৎ দিয়ে তোমাদের নিকট ফিরে আসব। সে ছাগলগুলি মালিককে ফেরৎ দিয়ে দ্রুত ফিরে আসল। এ সময় তার কুকুর তার পিছে পিছে এসেছিল। ইহুদী লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, হে আলী! কুকুরের রং ও তার নাম জানা থাকলে বল। আলী (রাঃ) বললেন, হে ইহুদীর ভাই! আমার প্রিয় নবী আমাকে বলেছেন, কুকুরটির রং কাল চিৎকাবরা ছিল। তার নাম ছিল কিৎমীর। যুবকেরা যখন কুকুরটিকে দেখল, তখন তারা পরস্পরকে বলল, আমাদের ভয় হচ্ছে কুকুর তার চিৎকারে আমাদেরকে অপমান করতে পারে। তারা তাকে পাথর দ্বারা তাড়িয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করল। কুকুর তার দু’পা লম্বা করে নিজেকে থামানোর চেষ্টা করে কাতর কণ্ঠে বলল, হে সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে কেন তাড়িয়ে দিচ্ছ? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ‘‘ আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু ’’ তোমরা
আমাকে তোমাদের সাথে থাকার সুযোগ দাও। আমি তোমাদেরকে পাহারা দিব। আর এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। তারা তাকে ছেড়ে দিয়ে চলতে আরম্ভ করল। রাখাল তাদের নিয়ে পাহাড়ের উপর উঠে গর্তের ভিতরে গেল। ইহুদী লাফ দিয়ে উঠে বলল, হে আলী! পাহাড়ের নাম এবং গর্তের নাম বল। আলী (রাঃ) বললেন, পাহাড়ের নাম হচ্ছে নাজেলূস আর গর্তের নাম ‘আল-ওয়াছীদ’ গর্তের সামনে ছিল ফলদার বৃক্ষ আর প্রচুর পানির ঝরণা। তারা গাছের ফল খেল এবং ঝর্ণার পানি পান করল। রাত নেমে আসলে তারা গর্তে আশ্রয় নিল। আর কুকুর গর্তের দরজায় অপেক্ষা করতে লাগল এবং তার দু’পা গর্তের উপর প্রসারিত করল। আল্লাহ মউতের ফেরেশতাকে তাদের জান কবয করার আদেশ দিলেন। তারপর আল্লাহ তাদের প্রত্যেকের জন্য দু’জন করে ফেরেশতা নির্ধারণ করলেন। তারা তাদের পার্শ্ব ডানে ও বামে পরিবর্তন করাবে। তখন আল্লাহ সূর্যকে আদেশ করলেন, সূর্য গর্তের মুখের উপর যাবে না, ডানে ও বামে সরে যাবে। দাকিয়ানুস তার ঈদ হতে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল, যুবকেরা কোথায়? তাকে বলা হল, তারা আপনাকে ছেড়ে অন্য মা‘বূদ গ্রহণ করেছে। তারা আপনার নিকট হতে পালিয়ে গেছে। বাদশাহ আশি হাজার অশ্বারোহী ছাড়লেন। তারা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করল। শেষ পর্যন্ত সে পাহাড়ে উঠে গর্তের মধ্যে উঁকি মেরে দেখল তারা চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। সে মনে করল তারা ঘুমিয়ে আছে। সে তার সঙ্গীদের বলল, আমি তাদের এমন শাস্তি দিব তারা নিজেদের যে শাস্তি দিয়েছে তার চেয়ে বেশী। তোমরা তীর নিক্ষেপকারীদের আমার নিকট নিয়ে আস। তাদেরকে তার নিকট নিয়ে যাওয়া হল। তারা গর্তের দরজায় তাদের উপর অনেক পাথর নিক্ষেপ করল। তারপর বাদশাহ তার সঙ্গীদের বলল, তোমরা তাদেরকে বল, তারা যেন তাদের আকাশের মা‘বূদকে বলে তাদের মা‘বূদ যেন তাদেরকে এ গর্ত থেকে বের করে। তারা সে গর্তে ৩০৯ বছর থাকে। আল্লাহ তাদের ভিতরে আত্মা দিলেন, তারা তাদের ঘুম থেকে জেগে উঠল যখন তাদের উপর সূর্যের আলো লাগল। তারা পরস্পরকে বলল, আজ রাতে আমরা ইবাদত হতে গাফিল হয়ে গেছি। চল ঝরণার পাশে যাই। হঠাৎ তারা দেখল ঝরণা শেষ হয়ে গেছে। গাছগুলি শুকিয়ে গেছে। তারা পরস্পরে বলল, আমাদের বিষয়টি আশ্চর্য। এক রাতে ঝরণার পানি নীচে চলে গেল, গাছগুলি শুকিয়ে গেল। আল্লাহ
তাদের উপর ক্ষুধা চাপিয়ে দিলেন। তারা বলল, পয়সা নিয়ে আমাদের কে বাজারে যাবে? আমাদের জন্য সেখান থেকে খাদ্য নিয়ে আসবে? আর দেখে নিবে শুকরের চর্বি দ্বারা রুটি বানানো হয় না যেন। সে যেন উত্তম পবিত্র খাদ্য কিনে নিয়ে আসে। তামালীখা তাদেরকে বলল, আমি ছাড়া তোমাদের কেউ খাদ্য আনতে পারবে না। তারপর সে রাখালকে বলল, তুমি তোমার পোশাক খুলে আমাকে দাও আমার পোশাক তুমি লও। তারপর সে চলতে লাগল, কিন্তু স্থান চিনতে পারে না পথ অপরিচিত মনে হয়। শেষ পর্যন্ত শহরের দরজায় আসল, সেখানে দেখল সবুজ পতাকা। তার উপর লেখা আছে, ‘‘ লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ঈসা রুহুল্লাহ ’’ যুবক সেদিকে দেখতে লাগল এবং দু’চোখ মুছতে মুছতে বলল, আমি নিজেকে ঘুমন্ত মনে করছি। কিছু সময় পর শহরে প্রবেশ করল। মানুষের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল মানুষ ইনজীল কেতাব পড়ছে। কিছু লোক তার সামনে আসল যাদেরকে সে চিনতে পারে না। তারপর বাজারে পৌঁছে গেল। একজন রুটি ওয়ালাকে পেল। রুটি ওয়ালাকে বলল, তোমাদের এ শহরের নাম কি? সে বলল আফসুস। তোমাদের বাদশার নাম কি? সে বলল, আব্দুর রহমান। তামলীখা বলল, তোমার কথা সত্য হলে আমার বিষয়টি আশ্চর্য। তুমি আমাকে এ দিরহামের বিনিময়ে কিছু খাদ্য দাও। দিরহাম ছিল সেই কালের বড় ও ভারী। রুটিওয়ালা দিরহাম দেখে অবাক হল। ইহুদী লাফ দিয়ে উঠে বলল, আলী তোমার জানা থাকলে বল দিরহামের ওজন কত ছিল? আলী (রাঃ) বললেন, প্রত্যেক দিরহামের ওযন ছিল দশ দিরহামের সমান এবং এক দিরহামের তিনভাগের দু’ভাগের সমান। রুটিওয়ালা তাকে বলল, হে যুবক! তুমি সম্পদের ভাণ্ডার পেয়েছ। তুমি আমাকে কিছু দাও, নইলে তোমাকে ধরে বাদশার কাছে নিয়ে যাব। তামলীখা বলল, কোন ভাণ্ডার পাইনি। এ হচ্ছে খেজুরের মূল্য যা তিন দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করেছিলাম। আজ থেকে তিনদিন পূর্বে। আর এ শহর থেকে আমি বের হয়ে গেছি। কারণ তারা দাকিয়ানুস বাদশাহর ইবাদত করে। এতে রুটিওয়ালা রাগ করল এবং বলল, আবার এক অত্যাচারী বাদশাহর আলোচনা কর, যে নিজেকে প্রতিপালক বলে দাবী করেছিল। সে আজ থেকে তিনশত বছর আগে মারা গেছে। তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছ। তারপর তারা তাকে ধরে বাদশাহর নিকট নিয়ে আসল। সে বাদশাহ ছিল জ্ঞানী ও ন্যায় পরায়ণ। তিনি তাদের বললেন, এ যুবকের কি ঘটনা? তারা বলল, এ ধনভাণ্ডার পেয়েছে। বাদশাহ তাকে বললেন, তুমি ভয় কর না, আমাদের নবী ঈসা (আঃ) বলেছেন, আমরা ধনভাণ্ডারের পাঁচ ভাগের এক ভাগ নিব। তুমি আমাদেরকে পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাও। আর তুমি নিরাপদে ফিরে যাও। তামলীখা বলল, হে বাদশাহ আপনি আমার বিষয়টি বিশ্বাস করুন। আমি কোন ধনভাণ্ডার পাইনি। আমি এ শহরেরই একজন। বাদশাহ বললেন, তুমি এ শহরের একজন? তুমি শহরের কাউকে চিন? যুবক বলল, হ্যাঁ। সে প্রায় এক হাজার লোকের নাম বলল। তারা তাদের কাউকে চিনতে পারল না। তারা বলল, হে যুবক আমরা এদের কাউকে চিনি না। এসব নামগুলি আমাদের যুগের কারো নাম নয়। তারা বলল, তোমার কি এ শহরে কোন বাড়ী আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। আপনি কাউকে আমার সাথে পাঠান। বাদশাহ তার সাথে এক জামা‘আত লোক পাঠালেন। সে শহরের বাড়ী সমূহের একটি বড় বাড়ীতে তাদের নিয়ে আসল এবং বলল, এটি আমার বাড়ী। তারপর সে দরজায় নক করল। একজন বৃদ্ধ মানুষ তাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসল। বয়স বেশী হওয়ার কারণে তার চোখের চামড়া ও ভ্রু জড় হয়ে গেছে। তিনি সকলকে দেখে ভীত হয়ে বললেন, হে মানুষ! তোমাদের কি খবর? বাদশাহর দূত তাঁকে বললেন, এ ছেলেটি বলছে, এ বাড়ী তার। বৃদ্ধ রাগ করে যুবকের দিকে ফিরল এবং তাকে বলল, তোমার নাম কি? সে বলল, তামলীখা ইবনু ফালাসত্বীন। বৃদ্ধ বললেন, আবার বল। তামলীখা তার পরিচয় আবার বলল। বৃদ্ধ তার কথা গ্রহণ করল এবং বলল, এ যুবক আমার দাদা। কা‘বা ঘরের প্রতিপালকের কসম! আসমান-যমীনের মধ্যে অত্যাচারী শাসকদের মধ্যে দাকিয়ানুস একজন অত্যাচারী শাসক। তার নিকট হতে যেসব যুবকেরা পালিয়ে গিয়েছিল, এ যুবক তাদের একজন। ঈসা (আঃ) আমাদেরকে তাদের কাহিনী বলেছেন এবং একথাও বলেছেন তারা অচিরেই জীবিত হবে। বাদশাহকে এ সংবাদ দেয়া হল। বাদশাহ ঘোড়ায় চড়ে তাদের নিকট আসলেন। যখন বাদশাহ তামলীখাকে দেখলেন ঘোড়া থেকে নেমে তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিলেন। সকল মানুষ তাকে গ্রহণ করল এবং বলতে লাগল, হে তামলীখা! তোমার সঙ্গীরা কোথায়? সে বলল, তারা একটি গর্তে রয়েছে। এ সময় শহরের মালিক ছিল দু’জন। একজন মুসলমান আর একজন খৃষ্টান। তারা দু’জন তামলীখাকে নিয়ে গর্তের নিকটবর্তী হল। তামালীখা তাদের বলল, আমার ভাইয়েরা যদি অনুভব করে ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ, চতুষ্পদ প্রাণীর শব্দ, লাগাম ও হাতিয়ারের ভন ভন শব্দ, তাহলে তারা মনে করবে দাকিয়ানুস তাদেরকে ঘিরে নিয়েছে, তাহলে তারা সকলেই একসঙ্গে মারা যাবে। আপনারা থামুন! আমি আগে তাদের নিকট যাই এবং তাদের সংবাদ দেই। মানুষ থেমে গেল। তামালীখা তাদের নিকট প্রবেশ করল। যুবকেরা লাফ দিয়ে উঠে তার সাথে কোলাকুলি করল এবং বলল ঐ আল্লাহর প্রশংসা যে আল্লাহ আপনাকে দাকিয়ানুসের হাত হতে রক্ষা করেছেন। তামলীখা বলল, তোমরা এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলা হতে বিরত থাক এবং দাকিয়ানুসের কথা ছাড়। তোমরা বল, তোমরা এখানে কতদিন ঘুমিয়েছিলে? তারা বলল, একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ। তামলীখা বলল, না বরং তোমরা ৩০৯ বছর ঘুমিয়েছিলে। দাকিয়ানুস মারা গেছে। তার শতাব্দী পার হয়ে গেছে। দেশবাসী আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে। তারা তোমাদের নিকট চলে এসেছে। তারা বলল, হে তামলীখা! তুমি কি চাও যে আমরা বিশ্ববাসীর জন্য ফিতনা হয়ে যাই। তামলীখা বলল, তাহলে তোমরা কি চাও? তারা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে আশ্চর্য কিছু দেখায়ো না। তুমি আমাদের মরণ দাও। কোন মানুষ যেন আমাদেরকে অবগত হতে না পারে। আল্লাহ মরণের ফেরেশতাকে আদেশ করলেন। ফেরেশতা তাদের জান কবয করলেন এবং আল্লাহ গর্তের দরজা মিটিয়ে দিলেন। দু’জন বাদশাহ এসে গর্তের চতুর্দিকে সাতদিন যাবৎ ঘুরলেন। কিন্তু গর্তের দরজা বের করতে পারলেন না। কোন ছিদ্র বা কোন রাস্তা পেলেন না। তারা বিশ্বাস করলেন, এটা আল্লাহর মহিমা। আল্লাহ তাদের অবস্থাকে মানুষের জন্য উপদেশ স্বরূপ করে দিলেন। মুসলিম শাসক বললেন, তারা আমাদের দ্বীনের উপর মারা গেছে। অতএব আমি তাদের গর্তের দরজায় একটি ঘর নির্মাণ করব। শেষ পর্যন্ত দু’বাদশাহর মধ্যে তুমুল লড়াই হল। মুসলিম বাদশাহ খৃষ্টান বাদশাহর উপর জয়ী হল। তিনি তাদের গর্তের দরজার উপর মসজিদ নির্মাণ করলেন। তারপর আলী বললেন, হে ইহুদী! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আমি তোমাদের তাওরাতের অনুকূলে বলেছি? ইহুদী বলল, হে আবুল হাসান! তুমি বলতে এক অক্ষর কমও করনি, বেশীও করনি।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ‘‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু’’ !
হে আলী! তুমি এ উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। (ছা’লাবী, কাছাছুল আমবিয়া, পৃঃ ৪২১-৪২৮)।
মনে রাখতে হবে, নিশ্চয়ই এ বিবরণ আলী (রাঃ)-এর নয়। এটা তাঁর উপর এবং নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম)-এর উপর মিথ্যা অপবাদ। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে, তার থাকার জায়গা জাহান্নাম (বুখারী, হা/১১০, মুসলিম মুকাদ্দামা, ১/৭)। আল্লামা শানকিতী বলেন, আছহাবে কাহফের ঘটনা কুরআনে যা রয়েছে, তার চেয়ে বেশী বিবরণ কোন ছহীহ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত নয়। অনুরূপ বলেন, আল্লামা আন্দালুসী ও আল্লামা কুরতবী (রহঃ)।
এসংক্রান্ত আগের লেখাসমূহ:
[১] ইউসুফ (আঃ)-কে বিক্রয় সম্পর্কিত কাহিনী
[২] তাওরাতের ফলক সম্পর্কে কাহিনী
বিষয়: বিবিধ
২৭৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন