পিইসি পরীক্ষায় ইংরেজি ভীতি কাটল ৬৩ বছর বয়সী বাসিরনের।

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:৩৬:০০ দুপুর



‘এত ভালো পরীক্ষা দেব ভাবতেও পারিনি। ইংরেজি একটু ভয় ভয় লাগত। পরীক্ষা শেষে সেই ভয় কেটে গেছে।’ গতকাল রবিবার দুপুরে প্রাথমিক সমাপনীর (পিইসি) প্রথম দিন ইংরেজি পরীক্ষা শেষে ৬৩ বছরের বাসিরন এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘স্যার-ম্যাডামরা যা পড়িয়েছেন তার মধ্যেই প্রশ্ন এসেছে। তবে ১২ নম্বর প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি। তাই পুরো ১০০ মার্কের উত্তর দিতে পারিনি। ৯৫ মার্কের উত্তর লিখতে পেরেছি।’

তাঁর পরীক্ষা কেন্দ্র মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া-মহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি এ বছর দেশের সবচেয়ে বেশি বয়সের পিএসসি পরীক্ষার্থী।

১২ নম্বর প্রশ্নটি কী ছিল? এর জবাবে বাসিরন বলেন, ‘এলোমেলো শব্দ গুছিয়ে লেখা। এটা পারিনি।’ পরীক্ষার প্রথমে কী লিখলেন? তাঁর জবাব, ‘প্রথম প্রশ্ন ছিল ফিল আপ করা। Nipa was found in the_?’ উত্তরে কী লিখলেন? তিনি বলেন, ‘আমি সঠিকটাই লিখেছি। field।’

চোখে কিছুটা কম দেখেন তিনি। পরীক্ষার শুরুতে কক্ষটিতে আলোর স্বল্পতা থাকায় তাঁর দেখতে সমস্যা হচ্ছিল। এটা কেন্দ্রসচিব জেনে আলোর ব্যবস্থা করে দেন এবং তাঁকে জানালার পাশে একটি সিটে বসিয়ে দেন। এরপর স্বাচ্ছন্দ্যে লেখা শুরু করেন ষাটোর্ধ্ব এই নারী।

এদিকে গতকাল কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘তাঁর পরীক্ষা দেখার জন্য আমি কেন্দ্রে ছুটে এসেছি। বাসিরন সারা দেশের জন্য একটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ। তাঁকে দেখে অন্যরা উৎসাহিত হবে। এভাবে সবাই শিক্ষার জন্য এগিয়ে এলে নিরক্ষরতা দূর হবে।’

কক্ষ পরিদর্শক ও বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা সাজেদা খাতুন বলেন, ‘অন্যদের মতোই পরীক্ষা দিয়েছেন বাসিরন। স্বাভাবিকভাবে লিখেছেন।’

কেন্দ্রসচিব জিয়া মহাম্মদ আহসান মাসুম বলেন, ‘৬৩ বছরের পরীক্ষার্থী পেয়ে আমি খুব আনন্দিত। এ রকম বাসিরন আরো তৈরি হোক।’

কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, ‘শিক্ষার কোনো বয়সসীমা নেই, বাসিরন এটাই প্রমাণ করলেন।’

পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বাসিরনের স্বজনরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আনার কলি, মেয়ের ছেলে (নাতি) সাকিবুল ইসলাম এবং ভাবি (ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভূত) তন্নী খাতুন।

আনার কলি বলেন, ‘বাসিরনকে আমরা নিজের সন্তানের মতো শেখানোর চেষ্টা করেছি।’

দশম শ্রেণির ছাত্র নাতি হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে নানিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। তাঁকে দেখে আমাদের পরিবারে লেখাপড়ায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নানি কেমন পরীক্ষা দেন, এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছি।’

বাসিরনের ভাবি তন্নী খাতুন ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেন, ‘এত বয়সে তিনি লেখাপড়া করে পরীক্ষা দিচ্ছেন, এটা দেখে আমি আনন্দিত।’

যোগাযোগ করা হলে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পরিমল সিংহ বলেন, ‘দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা থাকায় যেতে পারিনি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে তাঁকে দেখতে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে যাব।’

collected

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379985
২৩ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:৫১
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : চমতকার উদাহরন সৃষ্টি করেছেন
379990
২৩ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
380006
২৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো শিক্ষার কোন বয়স নাই।
380026
২৪ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:৫৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো চমৎকার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন অনেক অনেক ধন্যবাদ
380044
২৪ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
সত্যের বিজয় লিখেছেন : চোখে পানি চলে এলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File