মেয়েদের সুশিক্ষিত/উচ্চশিক্ষিত হবার প্রয়োজন কেন ? ১ম পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২১ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:৪৪:২৬ রাত



যে জ্ঞান দিয়ে নিজের পশুত্ব ও মনুষ্যত্ব যে যেই কোন দিকে চালিত করে জীবন ধারন করে বাচিয়ে রাখে ।দুর্জন বিদ্বান হলেও তা পরিত্যাজ্য।

যে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে পশু সুলভ আচরণ থেকে নিজেকে মনুষত্ব সুলভ আচরনে বিকশিত করা য়ায় তাই সু শিক্ষা।

"যার শিক্ষায় কোরান সুন্নাহের আলো নেই ,সে মুর্খ্যদের পন্ডিত"

ডঃ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ


শিক্ষিত ব্যক্তি কে ?

কোন ব্যক্তির মধ্যে যে movement এর মাধ্যমে সভ্যতা , ভাল মন্দ বিচার করার শক্তি ,ন্যায় অন্যায় বা সত্য্ মিথ্যা যাচাই করার মত মানবিক বল প্রকাশ পায়। আর সেই শিক্ষার আলো দিয়ে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্ধকার দূর করে সোনালী সমাজ উপহার দেন । তিনিই শিক্ষিত ব্যক্তি ।

প্রশ্ন করতে পারেন আমি প্রথমেই পশু সুলভ আচরন বললাম কেন ?

ধরেন একটা গরু সকালে মাঠে যায় ,সারাদিন খায় ,যাবর কাটে ,মলমুত্র ত্যাগ করে । এটাই তার প্রতিদিনের কাজ ।আর যদি মানুষও খাওয়া ,ঘুম আর ত্যাগ করা এই জৈবিক চক্রের মধ্যে আবদ্দ্ব থাকে তাহলে মানুষ আর গরুর মধ্যে প্রার্থক্য কোথায় ?বরং কুশিক্ষিত মানুষকে লোভ –লালসা স্বার্থবাদিতা ,কামান্দ্বতা , নেশাখোরী ,নীচতা ,ক্রোধ ইত্যাদি বদ অভ্যাস গুলো পেয়ে বসে ।

পশু তার মালিককে খুশি করার জন্য মালিকের আদেশ নিষেধ মেনে চলার মত জ্ঞান রাখে ।কিন্তু মানুষ নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তার মালিকের আদেশ নিষেধ প্রতি খেয়াল না করে নৈতিক মানবিক দিক দিয়ে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায় ।পশু তার ক্ষুদা নিবারনের জন্য খাদ্য যোগার করতে গিয়ে নখ ও দাঁত ব্যবহার করছে ।কিন্তু মানুষ ক্ষুদা নিবারনের পরও লোভ লালসা হিংসা ইত্যাদির কারনে নিজ ধর্মের লোকদের হত্যা করছে ।

শিক্ষা যে কোন একটা জাতির মেরুদন্ড ।শিক্ষা ছাড়া জাতি বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে ।শিক্ষা ব্যতীত সমাজের অন্যায় ,অবিচার , শোষন ,জুলুম ইত্যাদি অপরাধ কচুরি ফেনার মত বিস্তার লাভ করে ।বিশ্বের কোন দরবারে সে জাতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।



কোরআনের নাযিল করা প্রথম শব্দ হল “ইকর” মানে পড় ।

ইসলামে আরও বলা হয়েছে

“জ্ঞান অর্জন শ্রেষ্ঠ ইবাদত”-আল হাদিস।

“বিদ্বান ব্যক্তিরা নবীদের ওয়ারিস”-আল হাদিস।

‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর উপর ফরজ"

’- ইবনে মাজাহ


মেয়েদের শিক্ষিত/উচ্চশিক্ষিত হবার প্রয়োজন কেন ?

উপরে ছেলে মেয়ে আলাদা করে কিছু বলা হয় নাই ।

জ্ঞান অর্জনের জন্য ইসলাম দুই জনকেই সমর্থন করেছেন ।

রাজা নেপোলিয়ান বোনার্পাটও বুঝতে পেরেছেন মেয়েদের শিক্ষার অনেক প্রয়োজন ।তাই তিনি জোরাল ভাবে বলেছেন “ তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও। আমি তোমাদের উপহার দিব একটা শিক্ষিত জাতি”।

আমাদের দেশে শিক্ষিত বলতে শুধু নিজের নাম টা লিখতে পারলেই হলো । আর আগের দিনে তো যদি বিদেশী স্বামীর চিঠি পড়তে পারেন বা উত্তর লিখতে পারলেই শিক্ষিত ধরা হত ।যে ঠিঠি পড়তে গিয়ে বেচারা স্বামী হযত বার বার চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করতে হত ।আমার অষ্টম শ্রেনী পাশ বলে বিয়ে হলে আমি শুধু পড়ার কেঁদেছি ।তখন চাচী ভাবিরা বলেছে এতো পড়া দিয়ে কি করবি,জামাই কাছে চিঠি লিখতে পারলেই হবে"।আমার কিশোরী মনের কান্না আল্লাহ কবুল করাতে আজ এখানে।

আমাদের বাংলা দেশে শহরে শিক্ষা ব্যবস্থার মান কিছুটা উন্নয়ণ হলেও গ্রাম অঞ্চলে তেমন উন্নয়ণ হয় নাই ।তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ঝরে পড়ার হার ছেলেদের তুলনায় মেয়েদর অনেক বেশী । কারন আমাদের দেশে অভিভাবকরা ছেলেদের শিক্ষার প্রতি মেয়েদর তুলনায় অনেক বেশি সচেতন ।তাই প্রাথমিক শিক্ষার পর অনেক মেয়ে আর পড়া চালিয়ে যেতে পারে না ।

আর যারা মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে যান তারা অনেক বাধা বিপত্তির সন্মুখীন হতে হয় ।একটু চামড়া সাদা হলে এর মাঝেও অনেকে বিয়ে নামের কালবৈশাখীর কচি আমের মত ঝরে পড়ে য়ায় ।S.S.C পরীক্ষা পর্যন্ত অনেকে অনেকে যেতে পারেন না।আর যারা পাস করতে পারেন S.S.C তাদের অনেকেই কলেজে ভর্তি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন না ।কিছু কিছু বাবা মা সমাজের নিজের মান সম্মানের কথা ভেবে বা মেয়ের জন্য ভাল পাত্র পাওয়ার লোভে বা নিজের বিবেকের তাড়নায় কলেজে পড়ার সুযোগ করে দেন । টিন এইজের শেষে হাইফাই কাস্টমার মেয়েদের বিয়ের বাজারে সিরিয়ালে থাকে।তাই H.S.C পাস করার পর ৭৫% মেয়েরই স্বামী নামের খরিদদারদের সদাই হয়ে পড়া থেমে যায় ।

এই বার শুরু হয় মেয়ের জন্য বিয়ের পাত্র দেখা বা বাছাই করার পর্ব ।কারন কন্যার বোঝা দায় গ্রস্থ্য বাবা মা বিদায় করতে পারলে মুক্তি পায়। সেখানে কি আর মেয়ের উচ্চ শক্ষার কথা ভাবার সময় আছে ।কারন কুড়িতে মেয়ে হয় বুড়ি। হয়ত সে স্বামীর ঘরে গিয়ে সংসারের ভার সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে । এর মাঝে পড়ার কথা ভাবার সময় কোথায় ?তার কষ্টে অর্জিত সনদ পত্র গুলা প্রথমে ঝকঝকে থাকলেও পরে সেই গুলা ঘরের কোন জীর্ণশীর্ন বাক্সে/ফাইলে ধুলা বালির মাঝে পড়ে থাকে ।উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন তার মন থেকে চোরা বালির মাঝে হারিয়ে য়ায় ।হয়তো এখানেই নিভে যাবে প্রতিভার উজ্জ্বল ত্বেজদীপ্ত সূর্য্য টা। যাকে সে সূর্য্যগ্রহনের কোরাল গ্রাস ভেবে নিজে অন্ধকার কুটির থেকে অন্ধকার কবরে চলে যায়।

আপনার মেয়ে/বোন/স্ত্রী কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ দিনঃ

"
এদের জিজ্ঞেস করো যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে?কেবল বিবেক-বুদ্ধির অধিকারীরাই উপদেশ গ্রহণ করে৷" সুরা জুম্মা




আমি বাবা মায়ের জান্নাতের ঠিকানা,ভাইয়ের জন্য সন্মান ও রহমত, স্বামীর জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদ , তার পোষাক ও তার জান্নাতের সনদপত্র। আর আমার পায়ের নীচে আমার সন্তানের জন্য াল্লাহ জান্নাত দিয়েছেন।আপনি আমাকে আড় চোখে ভ্রু কুঁচকায়ে মলিন মুখে কি ভাবছেন ?ইসলাম আমাকে এই সব অধিকার দিয়ে খাদিজা আয়েশা ও মা ফাতেমার উত্তর সুরি বানিয়েছেন ।শিক্ষায়/জ্ঞান আমায় মুক্তি দিবে মুক্তি।

আমার গোপন অস্ত্র আমার জ্ঞান ।আপনাদের দেওয়া সম্পদ নয়।কারন আলো আরে আধারে আমী আলোকিত প্রদীপটিই চাই।তেমনি আমার কাছে জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে জ্ঞানই উত্তম ।

একটা মেয়ে জ্ঞানী হলে সে একজন মুসলিম নারী হিসাবে আল্লাহ কে জানার জন্য কোরান ,রাসুল সাঃ আদর্শ জানার জন্য সুন্নাহ ও দ্বীনের জ্ঞানার্জনের জন্য সাহাবাদের জীবনী আমার জানা আবশ্যক।তাতে আপনার নানান কন্যা/বোন/স্ত্রী আপনার জীবনেই কল্যান বয়ে আনবে।

জ্ঞানী মেয়েরা বন্ধু সুলভ আচরনে আপনার পরিবারের সবাইকে আপন করে নিতে পারেন। সংসার জীবনে আপনি সেই মেয়েকে পাহারা দিয়ে নিরাপদে রাখতে হবে না।সেই আপনাকে ও সংসার সম্পদ কে নিরাপদে রাখবে।

আপনার কন্যা/বোন/স্ত্রী আপনার জীবনে শিক্ষিত হলে আপনার পরিবার প্রতিবেশি সমাজ রাষ্ট্রে কল্যান শান্তি বয়ে আনবে।আপনার জন্য জান্নাতের দরজা উম্নুক্ত করে দিবেন আপনার সময় সম্পদের সুষ্ঠ মৃতব্যায়ী বন্টনের মাধ্যমে।আদর্শ মা হিসাবে সন্তান লালন পালন এর জন্য উচ্চ শিক্ষিত মায়ের খুব প্রয়োজন ।আমার বান্ধবী শিরীন কে বলেছিলাম আমি বি এড ও এম এড করার সময় , বাংলার প্রত্যেক মাকে আমি যদি বাচ্ছা শিক্ষিত করার জন্য বি এড ও এম এড এর প্রশিক্ষন টা দেওয়াতে পারতাম। আমার প্রথম তিন ছেলের লন্ডন ইউনিভার্সিটির অনার্সের সময় আমাকেই তারা মাস্টারের মত পাশে রাখত।বড় ছেলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে পড়া দিতাম আবার সেই পড়া স্কাইপিটে আডায় করে পাশ করাল আল্লাহ।আলহামদুলিল্লাহ।

জ্ঞান মানবতাবোধে উদ্ধুদ্ধ করে যেমন আল্লাহর রাসূল সাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহকে বলেছেন, আমরা আপনার দাসত্ব করি এবং আমরা আপনারই দাস। পক্ষান্তরে জাহেল / অজ্ঞ ফেরআউন ও নমরুদকে আবু লাহাব আবু জাহেল কে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, তারা দাবী করেছে তারাই মালিক /অধিপতি। সুতরাং জ্ঞানই উত্তম সবার জন্য বিশেষ করে মেয়েদের জন্য ।

বিঃদ্রঃ

২য় পর্বে থাকবে মেয়েদের শিক্ষিত/উচ্চশিক্ষিত হতে বাধা কোথায়? তাই সাথে থাকার অনুরোধ রইল

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378905
২২ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৫:০৭
স্বপন২ লিখেছেন : আপু, চমৎকার লেখা। চালিয়ে যান। সাথে আছি। সেই সাথে ভিডিওটা থাকলো।
378964
২৩ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৭:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য ধন্যবাদ। তবে শুধু ডিগ্রি অর্জন ই শিক্ষা নয়। এখন অনেক নারিই শুধু ডিগ্রি অর্জন আর ক্যারিয়ার এর নামে বিসর্জন দিচ্ছে পরিবার ও পারিবারিক মুল্যবোধ কে। উচ্চতর শিক্ষা মানুষত্ব নয় শিখাচ্ছে রোবটে পরিনত হতে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File