এক আলোক উজ্জ্বল জীবন্ত কোরআনের মহিয়সীর নাম উম্মে আস-সাদ

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৫ জুলাই, ২০১৬, ১১:১৫:৫২ রাত



মাত্র পনের বছর বয়সে যিনি সম্পুর্ণ কুরআন মুখস্ত করেছিলেন, আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর দ্বীনের সেবায় যিনি নিজ জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, নিজের দুটি আঁখির আলো না থাকলেও সারাজীবন অজস্র মানুষকে যিনি আলোকিত করেছিলেন নিজ জ্ঞানের আলোয়, তিনি উম্মে আস-সাদ, আলেকজান্দ্রিয়ার বিদূষি হাফিজুল কুরআন ও বিখ্যাত ক্বারী।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া উম্মে আস-সাদ তার জীবনের প্রথম বছরে চোখের অসুখে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি শাক্তি হারান। এরপর পিতা-মাতার ইচ্ছায় তার কুরআনের হাফিজ হবার পথচলা শুরু হয়। তিনি পনের বছরেই তা সম্পন্ন করেন। এরপর তেইশ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি তার উস্তাদ, আরেক বিদূষি নারী, বিখ্যাত আলেমা নাফিসা(রহঃ) এর কাছ থেকে কুরআনের দশটি ভিন্ন রীতির আবৃত্তি(ক্বিরাত) অন্তস্থ করে নেন। এটি ছিলো একটি বিরল সম্মান যা নারী-পুরূষ নির্বিশিষে খুব কম মানুষই অর্জন করতে পেরেছিলো।

দুর দুরান্ত থেকে মানুষেরা তার কাছে আসতো কুরআনের সেই আবৃত্তিগুলো শেখার জন্য। তিনি তাদের শেখাতেন, তার ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে লাইন বাই লাইন মুখস্থ পড়ে শোনাতেন, তিনি তাদের ক্বিরাতের ভুল-ত্রুটি শুধরে দিতেন। এইভাবে কেউ যখন কোনো একটি রীতিতে সম্পুর্ণ কোরআনের আবৃত্তি সঠিকভাবে অত্মস্থ করে নিতো, তখন তিনি একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। সেখানে তিনি তার সেই ছাত্র-ছাত্রীকে একটি লিখিত লাইসেন্স প্রদান করতেন, তার নিজের সিলমোহর দিয়ে স্টাম্প করে, এবং তাকে কুরআনের খাদেম হিসেবে ভূষিত করতেন। তার সেই ছাত্র-ছাত্রীও তাকে কোনো উপহার দিতেন। তিনি সবচেয়ে বেশী খুশি হতেন যখন কেউ তাকে উপহার স্বরূপ হজ্ব বা উমরা করার ব্যবস্থা করে দিতেন।

তিনি বলতেন, “এটা আল্লাহর দয়া ও রহমত যে, আলেকজান্দ্রিয়ার যত জন ক্বারী ছিলেন, যারা দশটি রীতির কোন একটাতে কোরআন আবৃত্তি করতে পারতেন, হয় তারা সরাসরি আমার কাছ থেকে তা শিখেছেন, অথবা আমার কোনো ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিখেছেন।” আলেকজান্দ্রিয়া ইনস্টিটিউট ফর কুরআন রিসাইটেশান- এর সম্মানিত ক্বারী ও শিক্ষকদের মধ্যে অসংখ্য আছেন যারা সরাসরি বা তার কোনো ছাত্র-ছাত্রী থেকে কুরআন আবৃত্তি শিখেছেন। বিখ্যাত কুরআন আবৃ্ত্তিকার ক্বারী ড. আহমাদ নুআইনা তারই ছাত্র। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকেও জ্ঞান পিপাসুরা তার কাছে আসতেন নিজেদের সার্টিফাই করতে।

এই মহীয়ষী নারী তারই মতন একজন অন্ধ হাফিজুল কুরআনকে বিয়ে করেছিলেন। সে ছিলো তারই একজন ছাত্র। দীর্ঘ পাঁচ বছর সে তার কাছে অধ্যায়ন করে। সে কুরআনের দশটি রীতির আবৃত্তি শিখেছিলো এবং উম্মে আস-সাদ তাকে লাইসেন্স প্রদান করেছিলেন। এরপরই সে উম্মে আস-সাদের হাত চেয়ে আবেদন করেন এবং তিনি তা গ্রহন করেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর একসাথে পথ চলা এই দম্পতি ছিলো নিঃসন্তান। উম্মে আস-সাদ বলেন: “আলহামদুলিল্লাহ! আমি ভাবি আল্লাহ আমার জন্য সবচেয়ে উত্তম জিনিসটিই নির্ধারন করেন। আল্লাহ আমাকে সন্তান দেন নি, হয়তো তারা কুরআন থেকে আমার মনোযোগ দুরে নিয়ে যেতো, এবং আমাকে হয়তো ভুলিয়েও দিতো।”

নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “ষাট বছরের মুখস্থকরন, আবৃত্তি ও নিরীক্ষার দরুন কুরআন আমার স্মৃতিতে গেথে গিয়েছে। প্রতিটি আয়াত, কোন সূরায়, কোন পারায় রয়েছে, সেই সাথে একই রকমের আয়াতগুলো, এবং বিভিন্ন রীতিতে কিভাবে তা আবৃত্তি করা হয়, সব আমি মনে করতে পারি। আমার মনে হয় আমি আমার নিজের নাম যেভাবে মনে রাখতে পারি, সেভাবেই সম্পুর্ণ কুরআন আমি মুখস্থ করেছি। আমি কল্পনাও করি না যে আমি এর একটি অক্ষরও ভুলে যাবো কিংবা এর পঠনে কোনো ভুল করবো। আমি কুরআন আর তার বিভিন্ন রীতির আবৃত্তি ছাড়া অন্য কিছু জানি না। আমি কোনো বিজ্ঞান অধ্যায়ন করি নি, অন্য কোনো বিষয়ের পাঠও শুনি নি; আমি কুরআন এবং তার আবৃত্তি ও তাজবীদ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ছাড়া অন্য কোনো কিছু মুখস্থ করি নি। সংক্ষেপে, এটাই আমার পৃথিবী, আমার জ্ঞান।”

আলোকের ঝরনাধারা এই মুসলিমা ৮১ বছর বয়সে, ৯/১০/২০০৬ তারিখে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রব্বুল আলামীন তার দেহ ও আত্মার উপর রহমত বর্ষন করুন, তার কর্মকে কবুল করুন, আর তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন।

লিখেছেন মুহাম্মাদ কামরুল, জুলাই ১০, ২০১৬

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374700
১৫ জুলাই ২০১৬ রাত ১১:১৮
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
১৫ জুলাই ২০১৬ রাত ১১:২৪
310836
সত্যলিখন লিখেছেন : দুষ্ট পোলা দুষ্টামীর চলে আমার ব্লগ রাড়িতে আসার জন্য আন্তরিক মোবারক । জাযাকাল্লাহু খাইরান ।
374703
১৬ জুলাই ২০১৬ রাত ০১:০৫
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : ভালো লাগলো,, ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck
১৬ জুলাই ২০১৬ দুপুর ১২:২৪
310863
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ।াপনাকে আল্লাহ ভাল রাখুন।
374705
১৬ জুলাই ২০১৬ রাত ০১:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু ফিল আখেরাহ্, ধন্যবাদ।
374714
১৬ জুলাই ২০১৬ রাত ০২:৩২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আলোক উজ্জ্বল জীবন্ত কোরআনের মহিয়সীর নাম উম্মে আস-সাদ অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File