স্বামী পরিত্যক্ত স্ত্রী রাসেলের মায়ের জীবনগল্প

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০:১২ দুপুর



আমার বাসায় খালাদের (কাজের বুয়া) আড্ডা দেওয়া দেখে আমার ছেলেরা বলে তারা আমার বান্ধবী ।আমি বলি সত্যি তাঁদের কাছে আমি যে ভালবাসা আর অচল অবস্থ্যায় সহযোগিতা পাই তা আপনজন থেকেও পাই না।তাই তাঁদের কঠিন কাজ(ঘর মোছা কাপড় কাছা) গুলোর সাথে থেকে বাঁ বাধ দিয়ে কিছু সময় তাঁদের মনের ব্যাথার কথা শুনি। তা থেকে নিজে শিক্ষা নেই আর তাদেরকেও ইসলামের নামাজের সবরের দাওয়াত দেই।

স্বামী পরিত্যক্ত স্ত্রী রাসেলের মাঃ

রাসেলের মায়ের নাম রিনা।আমি রিনা খালা বলেই ডাকি।কাল একটু আলহামদুলিল্লাহ মনটা খারাপ লাগছিল। তাই খালার চার কাজের মধ্যে দুই কাজ বাদ দিয়ে খালার সাথে ঐ সময় গল্প করলাম।খালার গল্প শুনে নিজের মনের সব ব্যাথা আলহামদুলিল্লাহ শরতের মেঘ কেটে যাওয়া স্বচ্ছাকাশ হল

সুন্দরী রিনাকে পাগলপারা ভালবাসা দিয়ে বিয়ে করে রাজু।বিয়ের বছর গড়ানোর সাথে সাথে কোল জুড়ে আসে রাসেল।তাতে রিনার ভালবাসা আকাশচুম্বী।অভাবের সংসারেও সোনালী রোদ্দুর।পর পর তিন মেয়ে হওয়াতে সেই ভালবাসা আর সোনালী ভোরের সুর্য্যটা কালো মেঘে চেয়ে যায়।রাজু নানান অজুহাতে রিনাকে অত্যাচার করতে থাকে।তারপর সংসারের খরচ বন্ধ করে দেয়।অবশেষে রাজু নিরুদ্দেশ। অগত্যা রিনা চার সন্তান বুকে নিয়ে দুঃখের সাগরে ঝাপ দেয়।বাসা বাড়িতে কাজ করে রাসেল কে দশম শ্রেনী ও অন্য মেয়েদের আরবী কোরআন ও বাংলা শিক্ষা সহ পড়ানো সহ সংসার চালিয়ে যান।যেন তারা তাঁদের বাবার মত না হয়।

মা মিষ্টি খাওয়াও তোমার পোলা ফোন দিয়েছেঃ

রাসেল প্রেম করে সুন্দরী ও মধ্যবিত্তের মেয়েকে বিয়ে করে।বিয়ের প্রথম থেকে মা বোনের উপর হুকুম জারী তার বউকে যেন কেউ কাজের হুকুম/কাজ করতে না দেয়।রাজকুমারের আদেশে ২ নাতি সহ রাজরানীর মত রিনাও তার মেয়েরা ৩ বছর রাখে।এর মাঝে রাসেল মাকে বুঝায় ড্রাভিং শিখলে সে সংসারের হাল ধরতে পারবে।মা এনজিও থেকে সুদের উপর টাকা দিয়ে রাসেল কে ড্রাভিং শিখায়ে কাজের বাসার সাহেবকে ধরে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে গাড়ি চালানোর চাকুরী নিয়ে দেয়।

রাসেল দুই মাস সংসারের চাল আর বাসা ভাড়া দিলে বউ আর রাসেলের সংসারে থাকবে না বলে ২ সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি গিয়ে উঠে।রিনা ছেলের বউ বাচ্ছার নিয়ে আলাদা বাসা নিয়ে সুখে থাকতে বলে।তাতে বউ মহাখুশি হয়ে স্বামীর সংসারে ফিরে আসে।কিন্তু রাসেল আর মায়ের খোজও নেয় না।মায়ের পাগলমন ছেলে কেমন আছে জানার জন্য ফোন দিলে ছেলে গালি দিয়ে বলে "আমাকে বউ বাচ্ছা নিয়ে শান্তিতে থাকতে দিতে চাইলে ফোন দিবা না।" এখন ৫/৬ মাসে রাসেল একবার ইচ্ছা হলে ফোন দিলেও মা থাকে কাজে।্তাই মেয়েরা রিনাকে নিয়ে উপহাস করে বলে,মা মিষ্টি খাওয়াও তোমার পোলা ফোন দিয়েছে"।কারনঅবুঝ মনের মা তো রাসেলের জন্য অবসরে জায়নামাজে আল্লাহর কাছে কাঁদতে থাকে।রিনা নিজের কপালের ভয়ে বিয়েলাক মেয়ের বিয়ে দিতে সাহস পায় না।সে বলে ,"মেয়ের কপাল আমার মত হয় নাকি অন্য মায়ের কপালের দুর্গতির কারন হয়ে যায় রাসেলের বউ এর মত ।আমি ডরাই খালা।"

ামি দেখি স্বল্প শিক্ষিত রাসেল আর উচ্চ শিক্ষিত হাইব্রিট রাসেলদের মাদের জীবন কাহিনী একই রকম। এই মা গুলো চোরের মায়ের মত জোরে চিৎকার করেও কাঁদতে পারে না। কুসন্তান এর কথা কারো কাছে বলতেও পারে না।মা প্রসব ব্যাথা ভুলে সন্তানের মুখ দেখে। এখন সন্তানের আচরনে হৃদয়ে বুলেটের মত ব্যাথা কিভাবে সয়ে নিবে।দুঃখের সাগর কি শুধু মায়েরাই বুকে রেখে পাড়ি দিবে।ঐ নরপিচাশ রাজুরা কি আর কোন দায়িত্ব বোধ নিবে না মাথায়। রিনার স্বামী রাজু তো আরেক বিয়ে করে আরামেই আছে। মা রিনারা কি শীতের পাতা ঝরা বৃক্ষের ন্যায় চির সবুজ যৌবন হারায়ে এই অর্ধ্মৃত হয়ে বেছে থাকবে।

যেই সন্তান মায়ের সাথে অলির আর বকুল ফুলের মত গলার সাথে মিশে থাকত বুকে সেই সন্তান এখন কেন মায়ের সাথে হেসে কথা বলে নাতো? যেই মা দশ মাস গর্ভে রেখে নাড়ি থেকে ছিড়ে এই ধরার বুকে আলো দেখালো ।সেই সন্তান মায়ের হৃদয়ের ভুবনে ফাগুন হয়ে ফুল ফূটায় না তো। মায়ের বসন্ত ভালবাসার ডাকে কাছে এসে সাড়া দেয় নাতো। মা বাধ্যক্য দেহে হাহাকার মনে আকাশ পানে চেয়ে থাকে । অনেক দুরের মেঘ কেমন করে ছুটে যায় বাতাসের টানে উড়ে যায় সবুজ শ্যামল কাননে সিক্ততায় ভরে দেয় । তেমন করে মায়ের কাছে এখন আর সন্তান কেন আসে না কো?

প্রিয় সন্তানরা , মা বাবা হয়েছ যারা তারা অন্তত নিজের ভবিষ্যৎ কি হবে তা ভেবে মা বাবার সাথে সুন্দর আচরন করে যাও। মা আর স্ত্রী দুই টাই তোমার জান্নাতের সার্টিফিকেট । তাই রিনার মত বহু মা নরবে আহাজারি করে কান্দছে । বউ তোমার সম্পদ।আর মা তোমার জান্নাত । দাড়িপাল্লার ভারসাম্য ঠিক রাখো। মেরাজে রাসুল সাঃ কে আল্লাহর পরেই মা বাবার কথা বলে দিয়েছেন। মা বাবা পাগল হলেও তুমি তাঁদের সন্তান। তোমার জন্য পাগল নয়। সামর্থ্য না থাকলে ব্যবহার দিতেও কার্পন্য কর না। আল্লাহর কাঠগড়ায় রেহাই পাবা না।

আল্লাহ আমাদের স্বামী সন্তানদের মুত্তাকিনদের ইমাম বানিয়ে দাও।তাদের অন্তরে মা বাবার জন্য রহমত দান কর ।তাঁদের নেক হায়াত ,হেদায়াত , সতচরিত্র ও হালাল রিজিক দান করুন। আমিন



বিষয়: বিবিধ

৬৫৫০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370046
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ১২:১৭
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আমাদের সামনে অসংখ্য রীনা আর রাসেলদের দেখতে পাই। আল্লাহ রাসেলদেরকে হেদায়েত দান করুন, রীনাদের প্রতি রহম করুন এবং আমাদের সন্তান আর আমাদেরকে রাসেল চরিত্রের হওয়া থেকে রক্ষা করুন।
370057
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ০১:০৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। কাজের মানুষের প্রতি আপনার সুন্দর আচরণ আল্লাহ কবুল করুন।সমাজের বাস্তব চিত্র খুব ভয়ঙ্কর। মানুধ অপরাধ দ্বীধা ছাড়াই করছে
370068
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ০২:৩৮
নেহায়েৎ লিখেছেন : গত মার্চের ২ তারিখ আমার মায়ের বাম পা ভেঙ্গে গেছে। মা আমার বাসায়। গত কয়েক দিন আগে পায়ের প্লাষ্টার খুলে আনলাম। তবুও এখন পর্যন্ত বাথরুমে যেতে পারেন না। তার বয়স ৮০(প্লাস)।আমি মায়ের সেবা করাকে ইবাদত মনে করেই করি। আমি আনন্দের সাথে তার কাজগুলো করে দিই। আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
370071
২৫ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:২৭
নেহায়েৎ লিখেছেন : মায়ের সাথে মেয়ের আচরণ দেখুন।
http://www.taza-khobor.com/bd/weird-news/63982-2016-05-23-17-21-53
370083
২৫ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২১
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সুন্দর একটা পোষ্ট করেছেন অনেক কিছু শিক্ষনীয় আছে
যাজাকাল্লাহ খায়ের
370086
২৫ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আমাদের সমাজে এমন চিত্রের অভাব নেই। আল্লাহ করুন সবাই যেন সঠিক পথের সন্ধানী হয়। ও নেক আমল করে। আপনার খাদ্দামার প্রতি সুন্দর আচরণ মানুষকে উৎসাহিত করবে। আল্লাহ জাযা দিন আপনাকে উত্তম জাযা।
370115
২৫ মে ২০১৬ রাত ১০:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমরা যে নৈতিকতা নয় বরং মানবিক বোধই হারিয়ে ফেলেছি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File