স্মৃতিপটে নারীদের প্রধান শিক্ষক ও রাজরানী মহীয়সী নারী শামসুন্নাহার নিজামী

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২০ মে, ২০১৬, ১০:১০:৩৮ সকাল

মহীয়সী রানীর হৃদয়ের ময়ুরসিংহাসন থেকে কেন রাজাকে তুলে নিলে?



আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ মরিমরি অবস্থ্যা থেকে কিছুটা বাঁচার আলো দেখাচ্ছেন।কিন্তু দ্বীনি বোন ও প্রতিবেশি বোনদের যার কানে যখন খবর যাচ্ছে সেই বোনেই রুগী দেখতে হাজির হচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ।যেই সময় আল্লাহ বোবা করে ফেলেন সেই সময় ছাড়া মুখ অন্ধ রাখা মুসকিল।তাই দেখার মাঝে তা হয়ে যায় বোনদের মাঝে দ্বীনি জ্ঞানার্জনের বাঁ দাওয়াতী কাজের মজলিশ।

এইবার লম্বা সময় রোগে যন্ত্রনার মাঝেও শুয়ে শুয়ে যা খেলাম করলাম ।তা হল ,সবার একই প্রশ্ন পারভীন আপা,এই সোনার মানুষটাকে কেন ফাঁসী দিল?উনার পরিবার কি বলে নিজের মনকে শান্তনা দিবে?য়ামাদের এত কষ্ট লাগছে না জানি আপার (শামসুন্নাহার নিজামী) কাছে কেমন লাগছে? এই বয়সে কি ভাবে এত ব্যাথা সইবে আপা ?

শামসুন্নাহার নিজামী আপার মাঝে নিজের চোখে কিছু স্মৃতি তুলে ধরলাম।কারন বাংলার বুকেও আজো মহীয়সী রানী আছেন।তা অনেকের জানা নেই ।আর নারী না বলে রানী বলছি কারন উনার উত্তম আচরনে যা দেখেছি তা রানীদের মাঝে ইতিহাসে পড়েছি।

১।জীবনে প্রথমবার আশির দশকে বড় ছেলেকে ৭ মাসের কোলে নিয়েই খালেক মজুমদার ভাবীর সাথে রাসেদা খালাম্মার বাসায় ৩দিনের টি সি তে যাই। আমি প্রথম থেকেই আপার ইসলামের বক্তব্য গুলো মন দিয়ে শুনে আসছিলাম। আর আপাও প্রথম থেকে এত বোনের মাঝেও আমার ও আমার বাচ্ছার দিকে আলাদা খেয়াল রাখছেন।আপার জ্ঞানের পরিসীমা এতো বেশি আমি খেয়াল করেছি ।তাই জ্ঞানী শিক্ষক আর বোকা ছাত্রের মত আমি দুরুত্বরেখে চলেছি।

বাবার বাড়িতে বোনদের বেড়ানোর মত মঝা ও জ্জানার্জন করছি।৩য়দিন আমি সকাল বেলায় শুনি আমি আপার নেতৃত্বে গুপ আলোচনার দশ জনের একজন।ভয়ে আত্নাশুকায়ে সাহারামরু।কারন আমি ইসলামের জ্ঞানে তখন শুন্যে(০) বাচ্ছা রাখার দায়িত্বে থাকা বোনদের আমার ছেলেকে যত্নে রাখার।আলোচনা তে আমি তিন দিনে যা শিখেছি আমি তাই আলোচনায় তুলে ধরেছি।

আলোচনা শেষে আমার দায়িত্বশীল বোন কে ্বললেন,বাচ্চা মেয়ে হলেও অনেক মেধাবি।পরিচর্যা করে গড়ে তুলবেন।" আজো আমার কানে আপার হাসি মিশ্রিত মুখের সেই কথাটাই কানে বাজে।বিকালে মাইকে জানাচ্ছেন শামসুন্ননাহার নিজামী আপা একটা সন্তান প্রসব করেছেন ,মা ও সন্তান সুস্থ্য আছেন।তার আগের দিন চিটাগাং থেকে ৩ দিনের টিসির দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। আমি অবাক হয়ে আজো ভাবছি ,ঈমানের ,সবরের আর ইসলামের প্রতি কত গুন বেশী ভালবাসা থাকলে এই ত্যাগ করা যায়।হাসি মুখে প্রসব ব্যাথা সয়ে গেলেন নিরবে।আল্লাহর ওয়য়াদা মুমিন পুরুষের জন্য মুমিন নারী।য়ামি মিশরের জয়নাব গাজ্জালী ,আমিনা কুতুব সহ কোন মহিয়সীকে দেখিনি। তবে তার বাস্তব উদাহরন আমি এই মহিয়সী নারীর মাঝে অনেক গুনাবলী স্বচক্ষে দেখার সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন। যা উনার জীবনীতে ক্ষনিকের জন্য দেখেছি।

২।আমার আপার প্রতি মায়ের মত সন্মান শ্রদ্ধা এতো বৃদ্ধি পেয়েছে আপার প্রোগ্রাম শুনলে আমার হাজির হওয়া ও আপার হাসি মুখে ,পারভীন তুমি কেমন আছো?তোমার ছেলেরা কে কেমন আছে? এই টা শুনতে আমার হৃদয় শীতল হয়ে যেত।মনে হত আমার হারানো মায়ের ভালবাসা আমি খুজে পেয়েছি.২০০৬ সালে ২৮শে অক্টোবর আমার ৩ ছেলে কে আওয়ামী হায়নাদের শিকারে আহতবস্থ্যায় ফিরে দেন।আপা শুনে আমার বাসায় আসার জন্য পেরেশান।আমি হসপিটালে ছেলের খাবার নিয়ে শুনে আপার নিরাপত্তার জন্য আমি তা বারন করি।কারন আমার বিল্ডিং ছিল তখন সব নেকড়ের আবাসস্থল।

আমি অভাক হয়ে আজো ভাবছি ,সেই সময় আমাদের হাজার হতাহত পরিবার।আপার মনে সবার জন্য কত ভালবাসা মায়া মমতা হলে তো দায়িত্বের ভীড়েও কেউ বঞ্চিত হয় না।একজন নারী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করতে স্বামী সন্তানের ষোল দায়িত্ব পালন করার পরে।কারন আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে অনেক পুরুষ বলে মহিলাদের এটা দরকার নেই,কেউ নফল ভাবে অনেকেই ফরজ ভাবতে জানলেও মানতে নারাজ।কারন যদি নিজের সংসারের এক আনা নষ্ট হয়ে যায়।আর স্বামী কত বড় মানের ঈমানদার হলে ফরজ জেনে বুঝে স্ত্রীকে দ্বীন কায়েমের জন্য সারা বাংলাদেশের মহিলাদের মাঝে সেরে দিয়েছেন।তাই আপা শুধু এতো বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নয় ,সারা বাংলার কোটি কোটি নারীদের প্রধান শিক্ষক ও রাজরানী।রাজরানী বলেছি এই জন্য অতীত বর্তামান রাজরানীরা ডাকলে সারা বাংলার যত মা বোন আসবে এই বোন ডাকার সুযোগ দের তার চেয়ে লক্ষ কোটি গুন বেশি মা বোন স্বামী সন্তান নিয়ে রাজধানীতে এসে হাজির হবেন। ইনশাল্লাহ।

৩। সাহেব জাপান থেকে আসার পরে নিজামী ভাইর বাসায় ঈদের নামাজের পরে দেখা করতে যান।বাসায় এসেই আমাকে বলল, জানো আমি আজ নিজামী ভাইয়ের বাসায় গিয়ে অবাক। আগের সেই পুরানো ভাংগা বই এর তাক ,ঐ সেই ছাত্র আমলের টেবিল চেয়ার।নেই কোন সখিন জিনিস।ঈদের আপ্যায়ন হলো কিন্তু বাচ্চা ও বাসায় মানুষ আছে বলে কোন শব্দ শুনলাম না। আর জানো ৩/৪ বছরের ছোট ছেলেটা বিদায়ের আগে উনার ছোট ছেলেটা সামনে আসল ।জোর করেও তাঁকে ৫০০টাকার নোট টা দিতে পারলাম না।তারপর থেকে আপাকে আদর্শ স্ত্রী মায়ের মডেল হিসাবে সংসার করতে চেষ্টা করেছি।আর ভেবেছি এক জন মায়ের কেমন দ্বীনি শিক্ষা পেলে একটা বাচ্ছা এই বয়সে এত আদর্শবান হয়।আর একজন স্ত্রীর কত দুনিয়ার মোহহীন হলে একজন স্বামীর সংসারে যুগ যুগ ধরে ভোগ বিলাস আরাম আয়েশ সব বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহ সন্তুষ্টির দিকে তাকায়ে স্বামীকে হালাল পথে ধরে রাখতে পারে।

৪।আমার বড় ছেলে ২০০৯এ লন্ডন গেলে প্রথম আল্লাহ আপার মেয়ের বাসায় নিয়ে যান।আমার ছেলে কে কত আদর আর দায়িত্বের সাথে কোথায় থাকবে সেই ব্যবস্থ্যা করে।আপার ছোট মেয়ে ও মেয়ের জামাই নজরুলকে বাংলাদেশে আসার পরে আমার বাসায় দাওয়াত দিল সাহেব।আমার তো শুনেই রোগ বালাই সব দুর।আইটেম বেশী করার জন্য যেই নরমাল খাবার গুলো দিলাম তারা তাই খেল।আর মেয়ের সাথে কথা বলে মনে হল একটা অহংকার মুক্ত নিষ্পাপ একটা পবিত্র গোলাপের চেয়েও পবিত্র মনের বাচ্ছা মেয়ে।লন্ডন যাবার সময় আমার ছেলেদের জন্য কোরবানের মাংস সহ একটা পুটলা দিব বলেছি ।যাবার আগে আর কেউ হলে ভুলে গেছি বলে নিত না।কিন্তু নজরুল ফোন করে সাহেব কে বলে ঠিকই নিয়ে ছেলেদের দিল।

বড় মেয়ে মোহসেনার সাথে আমার রমনা থানায় সুফিয়া আপার স্টাডি সার্কেলে পড়ি।আমি তো জ্ঞানগর্ভা মায়ের সন্তান শুনেই আমার মুখস্ত বিদ্যা সহ ভিতরে যা ছিল সব উদাও।পরিচিত হয়ে কথা বলে দেখি এতো ভাল মোমের চেয়েও নরম কাদামাটির মত মনের একটা মেয়ে।স্বামী সন্তানের প্রতি কি দায়িত্ববান।ছোট ছোট সন্তান স্বামী রেখে যেই সময় দিয়েছেন ।আপ্যায়ন আড্ডায় গল্পে একটু সময় নষ্ট না করে ঠিক উঠে গেল।কারন সে বাসায় গেলে তার স্বামী আবার আরেক প্রোগ্রামে যাবে। আজ ভাবছি আল্লাহ সোনার খনি থেকে সোনাই বের করেন।আর কয়লার খনি থেকে কয়লাই বের করেন।

একজন মা বাবা কত সচেতন কত আদর্শবান হলে তাঁদের সন্তান আদর্শবান হয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে। এই বাবা মা শুধু আদর্শবান নেতা আর নেত্রী ছিলেন না ।একজন আদর্শবান মা বাবা ও আমাদের অভিভাবক ছিলেন। এই বাংলার রাজা আর রাজরানী হবার যোগ্যতা সম্পূর্ন ছিলেন । সেই মহীয়সী রানীর হৃদয়ের ময়ুরসিংহাসন থেকে কেন রাজাকে তুলে নিলে? একাকীত্ব স্বামীর মত সঙ্গীহীন জীবন কত কষ্টের তা নিজের বিধবা মাকে দেখে বুঝেছি।ামার বাকী বোনরা কিভাবে এই বার্ধক্য কিভাবে কর বেদনা আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে দিন কাটছে। আর কোন মা বোন কে তুমি এতো বড় কঠিন পরীক্ষায় ফেল না।আমাদের ঈমানী এলেমি আমোলী দৃড় ভাবে বৃদ্ধি করে দাও।

বিষয়: বিবিধ

১০৩৩২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369649
২০ মে ২০১৬ সকাল ১১:১৭
আয়নাশাহ লিখেছেন : ধর্মের কারণে যেবা প্রাণ দান করে
সাধারন লোক কভু ভাবিওনা তারে।
বিনষ্ট হয়েছে তাঁর নশ্বর শরীর
মহান প্রভুর কাছে জীবিত সে বীর।
369662
২০ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
369685
২১ মে ২০১৬ রাত ১২:৩৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

দোয়া করি ..
369800
২২ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬
আবু নাইম লিখেছেন : আমিন। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File