মেরাজের রাতের পড়াঃরাসুল সাঃ মেরাজ থেকে আনা মুলনীতি ও শিক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৫ মে, ২০১৬, ১২:০৭:১৬ রাত



১৪টি মূলনীতি পেশ করা হয়েছে যার ওপর ভিত্তি করেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসলামী আন্দোলনের ঘোষণাপত্র দাখিল করেন ও ইসলাম কে মানুষের সমগ্র জীবন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার ইমারত গড়ে তুলে ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা তাইয়েবায় পৌঁছে কার্যত যে রাজনৈতিক, তামাদ্দুনিক ও নৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন এটি হচ্ছে সেই সমগ্র ব্যবস্থার ভিত্তি প্রস্তরও । এ ইমারতের বুনিয়াদ রাখা হয়েছিল এ মতাদর্শের ভিত্তিতে যে, মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহই সমগ্র বিশ্বলোকের মালিক ও বাদশাহ ‌ এবং তাঁরই শরীয়াত এ রাজ্যের আইন ।

১৪টি মূলনীতিঃ

সুরা বনী ইসরাইল ২৩ -৩৭ নং আয়াতে দেওয়া ।

(১) তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো৷

(২) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো৷ যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্‌” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো

আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন৷ তোমাদের রব খুব ভালো করেই জানেন তোমাদের মনে কি আছে৷ যদি তোমরা সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপন করো, তাহলে তিনি এমন লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল যারা নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে বন্দেগীর নীতি অবলম্বন করার দিক ফিরে আসে৷

(৩)আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও৷

৪)বাজে খরচ করো না৷ যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ৷

.

(৫)যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও৷

(৬)নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে৷

.

(৮)যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ

(৯)আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, সত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না৷ আর যে ব্যক্তি মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছে তার অভিভাবককে আমি কিসাস দাবী করার অধিকার দান করেছি৷ কাজেই হত্যার ব্যাপারে তার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়, তাকে সাহায্য করা হবে৷

(১০)ইয়াতীমের সম্পত্তির ধারে কাছে যেয়ো না, তবে হ্যাঁ সুদপায়ে, যে পর্যন্ত না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে যায়৷

(১১)প্রতিশ্রুতি পালন করো, অবশ্যই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে৷

(১২)মেপে দেবার সময় পরিমাপ পাত্র ভরে দাও এবং ওজন করে দেবার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো৷ এটিই ভালো পদ্ধতি এবং পরিণামের দিক দিয়েও এটিই উত্তম৷

(১৩)এমন কোনো জিনিসের পেছনে লেগে যেয়ো না সে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই৷ নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷

(১৪)যমীনে দম্ভভরে চলো না৷ তুমি না যমীনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে৷

মূলনীতি থেকে শিক্ষা ঃ

এক ঃ এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাঊকে বা কিছুই মা'বুদ/ইবাদত এর যোগ্য মনে করা যাবে না।

দুইঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আইন মানা যাবে না ।

তিনঃ মাতা -পিতা প্রতি কোন অবস্থ্যাতে অসাদরন করা যাবে না এবং সদা - সর্বদা তাঁদের সাথে বিনীত ও নম্র আচরন করতে হবে।

চার ঃমাতা - পিতা সাথে কখনো ধমক দিয়ে কথা বলা যাবে না।

পাচঃ মাতাপিতা জন্য সর্বদা এই বলে দোয়া করতে হবে ," হে আমার প্রতিপালক ,তারা শৈশবে আমাকে যেরুপ প্রতিপালন করেছেন,আপনি তাঁদের প্রতি অনুরুপ দয়া করুন"।

ছয়ঃ মাতা - পিতার সাথে অসদাচরন করে নেক্কার হওয়ার কোন সুযোগ ইসলামের নেই।অতএব যারা নেক্কার হতে চান তাঁদের অবশ্যি আল্লাহর পরে মা বাবার সাথে উত্তম চরিত্রের হতে হবে।

সাতঃ কখনো কোন অসতর্ক মুহুর্তে যদি কোন কারনে মাতা পিতার মনে কষ্টদায়ক কোন খারাপ আচরন ফেলে , তাৎক্ষনিক তাঁদের থেকে ক্ষমা চেয়ে তাঁদের মনের ব্যাথা দূর করে রাজি খুশি করে ফেলতে হবে। আর করবনা বলে আল্লাহর কাছেও তাওবা ইস্তেগফার করতে হবে।

আট ঃ ব্যক্তিগত অর্জিত সম্পদে নিকট আত্নীয়ের অধিকার রয়েছে ।গবীব মিসকিন মুসাফিরের অধিকার রয়েছে। তাই আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্য থেকে এই খাত গুলো বের করে ফেলতে হবে।

নয়ঃ কোন অবস্থ্যাতেই সম্পদের অপচয় ও অপব্যায় করা যাবে না ।কেননা অপচয়কারিরা শয়তানের ভাই।আর শয়তান প্রতিপালকের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ জাহেল।

দশঃ নিকাত্নীয় গবীব মিসকিন ও সম্বলহীন মুসাফিরকে দেওয়ার মতো আর্থিক গরিব মিসকিন ও সম্বলহীন মুসাফির কে দেওয়ার মত আর্থিক অবস্থ্যা না থাকে তা হলে নরম কথায় তাঁদের সাথে কথা বলে নিতে হবে ।

এগারঃকৃপনতা করা যাবে না,আবার অপচয় করে নিঃস্ব ও দরিদ্র হয়ে পড়াও উচিইত নয়।কেননা এই উভয়টি আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের চরম না শুকুরি ও অপচয় ।

বারঃ রিযিক বন্টনে কম বেশি করা আল্লাহর বিধানের স্বাভাবিক নীতি ।এবং এটাও মানুষের কল্যানেই করা হয়েছে । কিন্তু আমাদের জ্ঞান নিতান্তই খুবই কম বলে আমরা এর কল্যানকারীতা বুঝতে সক্ষম নই।

তের ঃ আল্লাহ যেহেতু সর্বজ্ঞানী ,তাই তার বান্দাদের মধ্যে কার কিসে কল্যান নিহিত তা আল্লাহ ভাল করে জানেন ।সুতরাং আল্লাহ বিধানকে বিনা চিন্তা ভাবনায় কর্মে মেনে নিতে হবে।

চৌদ্দঃপ্রতিশ্রুতি পালন ক্রতে হবে । অবশ্যই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে৷

পনেরঃমেপে দেবার সময় পরিমাপ পাত্র ভরে ্দিতে হবে এবং ওজন করে দেবার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দিতে হবে ৷ এটিই ভালো পদ্ধতি এবং পরিণামের দিক দিয়েও এটিই আমাদের জন্য উত্তম।

ষোল ঃঅহংকার /গর্ব করা যাবে না ।কারন আল্লাহ পরকালে নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বাক্ষ্য নিবেন।

বিষয়: বিবিধ

২২১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File