শিক্ষকদের কাজের করেছি বেঘাত,কিন্তু দেয়নি বেত্রাঘাত।

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৪৩:২৫ রাত



শিক্ষকদের কাজের করেছি বেঘাত,কিন্তু দেয়নি বেত্রাঘাত।

শিক্ষক সমাচার ঃ

আমি শিখার মাঝে লজ্জা খুজে পাইনি কখনো । জীবনে প্রাইভেট কুচিং এই সব কিছুই দেখিনি ।ক্লাসমিট আর শিক্ষকদের কমনরুমে গিয়ে স্যারদের জ্বালায়ে মাথা নষ্ট করার মধ্যে ১ নাম্বারে ছিলাম।প্রথম একটু বকা দিবে তার জন্য প্রস্তুতি নিয়েই যেতাম।তারপরে বলে আবার আসিছ।

প্রাইমারীতে এক স্যার ডাকতেন লালপরী।কারন আমি হঠাত গিয়ে নাকি পরীর মত স্যারদের রুমে হাজির হই।তখন কোন স্যার যদি না করে বলত, এখন না পরে আসিস।তা হলেই মনের ব্যাথায় কাঁদতে কাঁদতে চেহারাটা লাল হয়ে যেত।বাবা হারা ছিলাম বলেই স্যারও খুব আদর করতেন।স্যারের বয়স খুব বেশি হও্যাতে সবাই পন্ডিত ডাকত।আমি বুড়া স্যার বলে ডাকতাম।

হাইস্কুলে এসে আবার পেলাম সরোয়ার বি,এস,সি স্যারকে।স্যার আমাকে আইরিন পারভীন বলে ডাকতেন।কারন স্যারের এক ডাক্তারনী আত্নীয় ছিল আমার চেহারার।তার নাম ছিল আইরিন।আমি ষষ্ঠ শ্রেনীতে তখন স্যারের মেয়ে হয়।স্যার আমাকে দেওয়া নামই উনার মেয়ের নাম রাখে ।

গান শিখানো অংঙ্ক বিজ্ঞান সব স্যার আমাকে খুব মনযোগ দিয়ে শেখাতেন।আমার অভ্যাস ছিল খুব দ্রুত বই মাথায় আনা।আর স্যার ছিল আমার সহযোগী।তাই ব্লাকবোর্ডে সবাইকে অংক বিজ্ঞান বুঝানো আমার দায়িত্ব ছিল।

হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেনীতে স্কলারসিফ পরীক্ষার সময় দশম শ্রেনীর অংক বিজ্ঞানের অনেক কিছু শেষ করে ফেলি।তখন স্যার বলেছিল,"তোর আম্মাকে আমার সালাম দিয়ে বলিস , তোকে যেন এত সকাল বিয়ে না দেয়"।লজ্জাবতী পাতার মত লজ্জায় কুচমুচ হয়ে দে দৌড়। বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্টানে অংক দৌড়ে,কোরান তেলয়াত ,হামদ নাত, নজরুল সঙ্গিত,আধুনিক গান এই কয়টার প্রথম পুরুস্কার আমার চাই ই চাই।

বিয়ের পর নবন শ্রেনীতে আমার নাম ডাকছে।আমি পেছনের ব্যাঞ্চে হেড ডাউন করে কান্দছি।স্যার উঠে এসে আমাকে স্টাইজে যেতে বলল।আমি কেঁদে কেঁদে বলছি,স্যার আম্মু বলেছে, বিয়ের পরে স্বামীর অনুমতি ছাড়া গান গাইতে পারে না।অনুমতি ছাড়া এই গুলো করলে আমার স্কুলে আসা ও পড়া বন্ধ করে দিবে।আমি অনেক পড়া লিখা করব।আর এই গুলো করব না।"স্যারের মুখতা ধুসর মেঘের মত কালো হয়ে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে চলে গেলেন।

জীবনে বেকার, অজ্ঞ , বোকা রয়ে গেলাম।কলেজ লাইফে শিক্ষক দেখিনি।ঢাকা ইউনিভার্সিটির এখনকার কথা জানি না।আমাদের সময় ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা সবাই খুব ভাল ছিলেন।আমাদের কলা ভবনের ইতিহাসের সিরাজুল ইসলাম স্যার আমার প্রিয় স্যার।আমার খুব উপকারী বন্ধু ছিলেন । সেখানে এসে প্রকৃত শিক্ষক আর শিক্ষা দেখলাম।যদিও ইসলামের নিয়ম কানুনের তেমন চর্চা ছিল না।কিন্তু পড়ার ব্যাপারে সাহায্য সহযোগীতা প্রচুর পেয়েছি।আইইইআর এর মনোয়ারা আপা,আজহার স্যার খুব বন্ধু সুলভ আচরনের ছিলেন।এখানে এসে দেখলাম শিক্ষকরা ছাত্রদের নাম তো ধরেনই না বরং আপনি বলেন।

প্রবাসী ছেলেদের খবর নেবার সুবাদে নেট জগতে আসা।আর শিক্ষক হলেন আমার পুত্ররা।যেখানে জ্ঞানের জাহাজ সেখানে এনে আমাকে নোঙ্গর বিহীন হাল পাল ছাড়া কলার ভেলায় করে উত্তাল সাগরের মাঝে ছেড়ে দিল।আমি প্রথম ব্রেইন স্ট্রোক করে প্রকৃতির জলোচ্ছাস ঘুর্নিঝড়ে কুল কিনারা হারায়ে ভাসতে ছিলাম।একটু খানি খড়কুটা ধরার জন্য দিকবেদিক সাতারাচ্ছিলাম।আমার তখন মনে হচ্ছিল জীবনটা তীর ভাঙ্গা ঢেউ আর নীড় ভাঙ্গা ঝড়ে তছনছ হয়ে যাচ্ছে।

এমন মুহুর্তে আল্লাহ এক বিশেষ রহমত নিয়ামত স্বরূপ একজন সন্মনিত অনেক বড় সাদা মনের আল্লাহর অলিকে আমার দুনিয়ার জন্য নয় আখিরাতের ওস্তাদ হিসাবে পাঠালেন।যিনি আমার জীবনের প্রেরনার এক ঝলক ঝাড়বাতি হয়ে আমার আলোর পথের আলোকবর্তিকা হয়ে আসলেন।আমার লিখার জগতের হাতে খড়ি ও আজকের আমিতে আসার পিছনে উনার অবদান আর আল্লাহর রহমত।জানি না আমি কি লিখি।তবে উনার কথায় আমার আখিরাতের মালামাল সংগ্রহের জযবা আসে।লিখার শক্তি আসে।

ঠেলাগাড়ীর মত দেহটা নিয়ে সময় কাটাতে চেষ্টা করি আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সাধনায়।আমার কষ্টের সময়ের এই শিক্ষকরা আমার শ্রেষ্ট ও মুল্যবান সম্পদ।

আমি কত খারাপ কিন্তু উনাদের কাছে আমি সব বড় বড় অপরাধের ক্ষমা পাই।যা আমার অতিব আপন জনরাও করে না। আমার মা আমাকে অন্ধকার গর্ভ থেকে অন্ধকার পৃথিবী তে এনেছেন।এই জন্য আমি , আমার মায়ের ঋন আজীবনেও শোধ করতে পারিনি।আমার শিক্ষকরা ামাকে অন্ধকার পচা নোংরা এই পৃথিবী নামের মেনহল থেকে টেনে আমাকে আলোতে এনেছেন।বাবা মা হারায়ে আমি শারিরীক মানুষিক ভাবে ঝড়তুফানের তান্ডবে ভাঙ্গা গড়া তাসের ঘরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।তখন আমার প্রান প্রিয় শিক্ষক রা আমাকে তাদের হৃদয়ের ছাতার নীচে ঠাই দিয়েছে।আজো প্রবল ঝড়ে ভেগে আমি যখন খেই হারিয়ে ফেলি তখন উতসাহ উদ্দীপনার ছাতাটা মেলে ধরেন আমার প্রান প্রিয় শিক্ষক।তখন ঈমাণ আমোল এলেম তাকওয়া বাড়াতে আর জান্নাতের পথে ছুটে চলতে মন প্রান প্রেরনা পাই ।

আল্লাহ আমার এই শিক্ষকদের দুনিয়াও আখিরাতের উত্তম পুরুস্কার প্রতিদান হিসাবে দান করুন।উনাদেরকে পরিবার সহ জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তম বাসিন্দা হিসাবে কবুল করুন ।আমিন







বিষয়: বিবিধ

১৬৩৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360532
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৫:৫০
শেখের পোলা লিখেছেন : বাস্তবিকই মা বাবার পরেই শিক্ষকদের ভূমিকা৷ আমিও জীবনে যে টুকু পড়াশোনা করেছি সব সময়ই আার স্যারদের পূর্ণ সহযোগীতা পেয়েছি৷ আমারও নেট জগতের শিক্ষক আমার ছেলে,জামাই ছাড়াও ব্লগের অনেকেই আছেন৷
দুঃখের বিষয় বর্তমানে শিক্ষা জগতও বানিজ্যে স্থান করে নিয়েছে৷ এখন সেই মন মানষের শিক্ষক নাই বললেই চলে আর ছাত্ররাও শিক্ষকদের আগের মত মূল্যায়ন করা ছেড়ে দিয়েছে৷ সামনে আরও কি আছে জানিনা৷ ধন্যবাদ আপা৷
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৫৭
298803
সত্যলিখন লিখেছেন : আল্লাহ পৃথিবীতে দুই শ্রেনীর মানুষকে উদারতা ,মহত্ব , নিঃস্বার্থ ভালবাসা ও কল্যানকামী হওয়ার ক্ষমতা দান করেছেন। উনারা কখন আপনার কল্যানে হিংসা করবেন না ।বরং শুধু চাইবেন আপনি উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেন ।ঐ দুই শ্রেনীর এক শ্রেনী হলেন বাবা মা আর দ্বিতীয় শ্রেনী হলেন সন্মানিত শিক্ষক মন্ডলী। আর এই দুই শ্রেনী থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ মনুষত্ব অর্জন করে পৃথিবীতে বেচে থাকে।
360541
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৮:০১
মিশু লিখেছেন : জাযাকাল্লাহী খাইরান। আল্লাহ আমাদের ভালো শিক্ষাগুলোকে ধরে রাখার তাওফিক দান করুন।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৩২
298983
সত্যলিখন লিখেছেন :

Praying Praying Praying
360550
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৫০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৩২
298984
সত্যলিখন লিখেছেন :

360593
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : অনেক আগের স্কুল,কলেজের দিনগুলো, আমাকে পরানো প্রিয় কিছু শিক্ষকের প্রায় ভুলে যাওয়া নাম আর বিস্মৃতির ধুলোবালিতে প্রায় চাপা পরা মুখ আপনার লেখা পরে মনে পড়ল|ভালো লেগেছে আপনার এই লেখা|
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৩৩
298985
সত্যলিখন লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File