ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলে আসা কিছু স্মরনীয় স্মৃতিঃ
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২১:৫৫ রাত
কিছু ছবি ফেলে আসা কিছু স্মৃতিকে স্মরন করে দেয়।যা অনেক সময় মনে করতে চাই না।অবিবাহিত মেয়েদের উচ্চশিক্ষা নেওয়া যত সহজ মা ছাত্রীদের জন্য ততটাই কঠিন।তবে গভীর মনোবল না থাকলে কেউই কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে পারে না।মেয়েদের জন্য উচচশিক্ষা হলো তাদের কে পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে চলার জন্য এক গোপন অস্ত্র।যা সুন্দর ভাবে ভাল কাজে ব্যবহার করে সে ভাল ফলাফল অর্জনএ সহযোগীতা করে।যা অনেকটাই চুরি/চাকুর মতন।
ইতিহাস বিভাগে্র সিরাজ স্যারের টিউটরিয়াল পরীক্ষা দুপুর দুইটা থেকে।আল্লাহ কি করব? বাচ্ছাদের ছুটি দুপুর দেড়টায়।দে দৌড় করে বাচ্ছা নিয়ে এসে ক্লাসের সামনে আসতেই ফাজিল ক্লাসমিট গুলো হু হু করে অট্টহাসি।কি লজ্জা লাগছিল।স্যার ভিতরে ঢুকার অনুমতি দিল।আমি ভয়ে ৩ জনকেই বারান্দায় দাড়ায়ে থাকতে বললাম।কিন্তু মনে মনে ভয় পাচ্ছিলাম আল্লাহ জানি ৩ টা তিন দিকে চলে গেলে কোথায় খুজব ?তাও তাদের স্কুল ব্যাগ তাদের কাদে দিলাম।স্যার খুব খেয়াল করে দেখে বলল,পারভীন ,তুমি ওদেরকে পিছনের ব্যাঞ্চে বসাও।তারপরে তুমি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দাও।আজো স্যারের সেই উদারতার কথা ভুলতে পারছিনা।
ইতিহাস বিভাগে উনার মেয়ে আশা ম্যাডাম উনিও আমাকে আমার বাচ্ছা নিয়ে ক্লাস করার অনেক সুযোগ করে দিতেন।তাতে আমার পেরেশানি অনেক কম হত।আমার আজো মনে পড়ে ৩ দুষ্ট এত বেশি দুষ্টামী করত তাই সোনিয়া ম্যাডাম আমাকে উনার রুমে বাচ্ছাদের নিয়ে একা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিতেন।আমি বাচ্ছাদের আপার কিছু নষ্ট করার ভয়ে চুপ করে থাকতে বললে আপা রাগ করে বলতেন, "পারভীন তুমি অল্প বয়সে মা হয়েছ ,তাই ওদের দুষ্টামীতে তুমি আনন্দ পাওনা ।আমি তো অনেক মজা পাই বাচ্ছাদের দুষ্টামীতে।" আমার ক্লাসমিটরাও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে ।আমি ছিলাম সবার সরকারি ভাবী।আমার বাচ্ছাদের তারা খুব আদর করত।
আমি যখন বুঝলাম, নারী জাতির সন্মান ও যোগ্যতার জন্য পড়া লিখার বিকল্প কোন পথ নেই।তখন আমি যৌথ পরিবারের প্রবাসীর গৃহিনী ও ৩ পিচ্চি ছেলের মা।তাতেও ইনশাল্লাহ থেমে যাইনি।
৩ ছেলেও ছাত্র আর মাও ছাত্রী।একদিকে আমার ক্লাস আরেক দিকে তাদের ক্লাসের পড়ার খবর রাখা। ভোরে নামাজ পড়ে সবার নাস্তা বানায়ে ওদের স্কুলে দিয়ে আমি আমার ক্লাসে যাওয়া, আবার এসে টিফিন খাওয়ানো, ছুটির পরে ওদের নিয়ে এসে নিজের ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরা।বাসায় এসেই তাদের গোসল নামাজ খাবার শেষে ঘুম পাড়ায়ে বাসার সব কাজ শেষ করা। আবার তাদের নিয়ে আসর পড়ে বিকালে পার্কে নিয়ে খেলতে দেওয়া।তাদের খেলার ফাকে গাছের নীচে বসে নিজের পড়া শিখে নেওয়া।সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে নামাজ নাস্তা তাদের পড়া ও সবার রাতের খাবার তৈরী করা।সবাই ঘুমালে আমার পড়া ও পরের দিনের খাবার রান্না করে রাখা। আমার তো ঘুম নেই।এই সময় এই মাদের কে যারা সহযোগিতা করে তাদের কথা খুব মনে পড়ে।
যা প্রথমে বিশ্বাস করি নাই - আমার তিন বাচ্ছার সাথে দেওয়া ছবির ঘটনা হলঃ
মাস্টার্স করতে আসা ছাত্রীর ছোট ছেলেটি মায়ের ক্লাসে কান্না করছিল। খুবই অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়া সেই ছাত্রী বাচ্চাটিকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে উদ্দত হলেন। প্রফেসর বাধা দিলেন ছাত্রী টিকে ।২ সন্তানের পিতা ও ৪ টি নাতি নাতনির দাদা এই প্রফেসর বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলেন ক্লাসের মধ্যেই। বাকি পুরো ক্লাস চলল প্রফেসরের কোলে বাচ্চাটিকে রেখে। ছাত্রী ও বাচ্চাটির মা আরামে বাকি ক্লাস করলেন। এই প্রফেসরের ক্লাসে বাচ্চা Allowed এমনকি বাচ্চাকে খাওয়ানোর দরকার পড়লে কিংবা যে কোন প্রয়োজনে মায়েরা সাহায্য পান।-
নবীজির জীবন থেকে শিক্ষা
১। একবার নবীজি খুব দ্রুততম সময়ে ছোট সুরাহ দিয়ে নামাজ শেষ করলেন। সাহাবীরা বিস্মিত হয়ে এর কারন জিজ্ঞেস করলেন - নবীজি এমন কিছু বললেন যে একটা শিশু কাঁদছে আর জামাতে নামাজ পড়তে আসা তাঁর মায়ের নিশ্চয়ই মন সেই শিশুর প্রতি আকুল হয়েছে। বিন্দুমাত্র ভরতসনা ছিল না সেখানে - একজন আল্লাহর মনোনীত বান্দা আল্লাহর দরবারের হাজিরাকে সংখিপ্ত করেন একজন মায়ের আকুলতার কথা চিন্তা করে।
২। এক নামাজে নবীজি সিজদায় গিয়েছেন এবং অনেকক্ষণ ধরে উঠছেন না। বেশ অনেক সময় পর উঠলেন। সাহাবীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। পরে নামাজ শেষের পর নবীজি জানালেন তাঁর নাতি সিজদার সময় তাঁর কাঁধে চড়ে বসেছিল তার না নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করাতেই দেরি হয়ে গেছে।
৩। নবীজি কোন এক বাচ্চাকে কোলে নিয়ে জামাতে নামাজ পর্যন্ত পড়িয়েছেন - সিজদাঁর সময় নামিয়ে দিয়ে আবার দাঁড়ানোর সময় কোলে তুলে নিয়েছেন।
প্রফেসর সাহেব বিধর্মী ইসরায়েলের একটি ভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর হয়ে তিনি বাচ্ছার ও শিক্ষার্থী মায়ের শিক্ষার প্রতি এতো যত্নবান।এই কাজগুলো আমাদের কলেজ ভার্সিটি অনেক সময় শিখায় না।আজকের প্রফেসরের এই কাজ দেখে কত মুগ্ধতা আমাদের - চিন্তা করা যায় মহিলাদের অবমাননার সমাজে থেকেও সমাজের বাইরে এসে কত কোমল ছিলেন এই মানুষ, মুহাম্মদ সঃ ।
তাঁর আশ পাশের মানুষগুলোর জন্য সব কিছু কত সহজ করতেন তিনি। একজন নিরক্ষর ১৪০০বছর প্রাচীন মানুষের জ্ঞানের কাছে আল্লাহ কত কিছু শেখার রাখছেন এই বিদ্যার ভার মগজে বহন করা দুই পেয়ে প্রানি এই আমাদের।ব্যাপার হল - আমাদের অহংকার ধর্মের কিংবা বিদ্যার। লেকচারে আমরা আছি - পালনে লব ডঙ্কা ।
বিষয়: বিবিধ
১৭১২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলোহামদুলিল্লাহ ।আপনি ঠিকই ধরেছেন ।স্যার অনেক ভাল ও সাদা মনের মানুষ।
আল্লাহ সাহায্য করেছেন বলেই পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ। পরে ৫ ছেলে নিয়ে বি এড ও এম এড করেছি। তাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাইট এ ক্লাস করে। আলহামদুলিল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন