কে হতে চায় জান্নাতী নারী !!!
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২২ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:৫১:৩০ রাত
সবরের সংসারে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায় না বরং ভালবাসার স্থায়ীত্ব বাড়ে।
ইসলামের দাওয়াতি কাজ করতে গিয়ে অনেক কাছে গিয়ে বোনদের জীবনী দেখেছি। যা থেকে অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহন করার মত।উনাদের বাস্তব জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা দেখে নিজেও অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।আমি প্রানপণ চেষ্টা করি সেই অভিজ্ঞতা গুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে।যাতে করে অন্য বোনেরা সেই খান থেকে শিক্ষা গ্রহব করে তাঁদের সাংসারিক জীবন কে সবরের মাধ্যমে ফুলে ফলে বিকশিত করতে পারে।আমার লিখা যদি কারো জীবনের সাথে মিলে যায় আর তিনি যদি রক্ত গোলাপ চক্ষু নিয়ে আমার সমালোচনা শুরু করেন তাতে আমার করার কিছু থাকবে না।আর মার কলমও ইনশাল্লাহ থামবে না।
প্রথম অভিজ্ঞতাঃ
আমার ইসলামের পথের পথপদর্শক আমার প্রান প্রিয়বোন মরহুম খালেক মজুমদার ভাবি।আপার ৫ মেয়ে এক ছেলে।আপার চতুর্থ মেয়ের বয়সের আমি।তাই আপা আমাকে মায়ের মত আদর ভালবাসা কথার শাসন উপদেশ দিয়ে আমার ছাত্র স্বামী ও ৩ ছেলে ণীয়ে যৌথ সংসারে কিভাবে পর্দানশীল হয়ে চললে সবার দায়িত্ব পালন ও ইসলামের জ্ঞানার্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে সেই পরামর্শ দিতেন।দুই জনের খাটে আমরা স্বামী স্ত্রী ছোট ছোট ৩ছেলে নিয়ে একটা ছোট্ট কুটরীতে থাকতাম।সাথে কুয়া থেকে পানি তোলা আর সিড়ির নীচে রান্না করতাম।আপা এসে হাসি মুখে বলতেন,”পারভীন আপা ভাইয়ের এই দুর্সময় কেটে যাবে ইনশাল্লাহ।আপনি মা ফাতেমা রাঃ মত স্বামীর এই অভাবের সময় উনার সাথে হাসি মুখে সময়টা পার করে দেন।আপনার সবরের ফলে আল্লাহ আপনাকে অনেক সুখি করবেন।স্বামীর অভাবের সময় স্ত্রীদের দৃঢ় ধৈর্য্যশীলা হওয়া উচিত।সত্যিই আল্লাহ আমার বোনের কথা কবুল করেছেন।আলহামদুলিল্লাহ।১৯৮৫ সালে আমার স্বামীকে স্বৈরাচার এরশাদ মরহুম আব্বাস আলী খান সাহেবের সাথে গ্রেফতার করেন।আমি যেন সবরকারী হিসাবে থাকি তাই আমার বোন বার বার আমার বাসায় এসে আমাকে সব জায়গায় প্রোগ্রামে নিয়ে যেতেন।বাচ্ছাদের কে উনার মেয়েদের কাছে রেখে আমাকে টিছি টিএস এ নিয়ে যেতেন।এতে স্বামীর প্রতি ভালবাসা ও স্ত্রী হিসাবে আমার দায়িত্ব কি তা জেনেছি।তাই সবরের সংসারে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায় নাই বরং ভালবাসার স্থায়ীত্ব বেড়েছে।আলহামদুলিল্লাহ।
রাসুল সাঃ বলেছেন,”যখন স্বামী স্ত্রী একে অন্যের প্রতি প্রেম এবং মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকান তখন আল্লাহতা’য়ালাও তাঁদের উভয়ের প্রতি রহমতের দৃষ্টি বর্ষন করেন।(বুখারী-৬১৯,তিরমিযি-১৪৭৯)
দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাঃ
আমার অনেক দ্বীনি বোনেরা স্টাফ কোয়াটারে থাকেন।এক একটা বাসা কবুতরের বাসার মত।স্বল্প আয়ের স্বামীর সাথে সন্তানদের নিয়ে কত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন হাসি মুখে।স্বামী স্ত্রীর মাঝে কি সুন্দর মিল মহব্বত।কত সুন্দর শান্ত নরম দিলের বোন গুলো।না পরার দুঃখের কোন অভিযোগ নেই,না খাওয়া পেটের কোন জ্বালাযন্তনা নেই,হাজার না পাওয়া শোক নেই, রোগের যন্তনায় ছটপটায় তাতেও স্বামীর নামে কোন কারো কাছে কোন অভিযোগ নেই।এর পরেও আল্লাহর প্রতি কত ভীতি আর প্রীতি কত ।মনে মনে বলি ,আল্লাহ তুমি ক্ষমা করো আমাদের। আমরা হাজার সুখে থেকেও পাণ থেকে চুন খসে পড়লে বাবার বাড়ি থেকে শুরু করে আত্নীয় স্বজন সবার কাছে শুধু স্বামীর নামে নয় তাঁর চৌদ্দ ঘুষ্টির নামে বলে তাঁদের পরার কাপড় খুলে ফেলি।অভাবেই স্বভাব চিনে নেওয়া হয়। স্বামীর অসহায়ত্বের সময় ছিড়া কাপড় সেলাই করে পরতে পরতে আর সেলাই করার জায়গা খুজে পাইনি।তখন মনে করেছি মা ফাতেমা দু’জাহানের প্রেসিডেন্টের রাজকন্যা আর আল্লাহ জান্নাতের ঘোষনা প্রাপ্ত কুরাআনের সৈনিক ও প্রথম কিশোর মুসলিমের স্ত্রী হয়েও হাজার তালি দেওয়া কাপড় পরেছেন।কুয়া থেকে পানি তুলেছেন, বহু দিন না খাওয়া শরীল নিয়ে গম থেকে আটা বের করতে গিয়ে হাতে ঠোসা পরেছে তাও স্বামীর নামে বাবার কাছে কোন নালিশ করেন নাই।আমরা কি উনাদের উত্তর সুরী হতে পারন না?ইনশাল্লাহ পারব যদি আমরা সবরকারী হতে পারি।
রাসুল সাঃ বলেছেন,”যে স্ত্রী তাঁর নিঃস্ব স্বামীকে হেয় দৃষ্টিতে দেখে,তাঁর সাথে দুব্যবহার করে-সে বেহেশত তো দূরে থাক,বেহেতের গন্ধও পাবে না।তার উপর সর্বদা আল্লাহর অভিশাপ হয়ে থাকে”।(হাদিস তাবারানি)
৩য় অভিজ্ঞতাঃ
আমার একজন দ্বীনি বোন নিলা।বর্তমান সময়ের একজন উদাহরন যোগ্যতা সম্পন্ন বোন।দুই জন জমজ মেয়ে আবার পরের বছর আরেক মেয়ে হন।উনার স্বামী মা বাবা ভাই বোন দের নিয়ে যৌথ ভাবে থাকেন।শ্বশুড় অসুথ্য ছিলেন অনেক দিন ।এই ৩ বাচ্ছা ও রুগীর সেবা ,সাথে সংসাররের দেখা শুনা সবই পর্দার মাঝে থেকেই করছেন।শ্বশুর মারা গেলেন।তার পর থেকে বলেন,পারভীন আপা আমার এখন চার মেয়ে। বাচ্ছাদের স্কুলে নেওয়া আনা পড়ানো সব কিছুর আগে শ্বাশুড়ি খাবার ঔষধ গোসল সেবা যত্ন।আমাকে বলেন ,পারভীন আপা,আপনার ভাই চান বাঁধা কাজের লোক রাখতে আমি রাজি না।কারন আমি কোন সাইড কাজের লোক দিয়ে করাব।আমার শ্বাশুড়ির সাইড দেব কি ভাবে? যাকে নিয়ে আমি এতো সুখে আছি সেই স্বামীকে কে কি এই মা কাজের লোক দিয়ে পেলেছেন।বাচ্ছাদের সাইড দেব কি ভাবে? তা হলে কি আমি মায়ের মত শিক্ষা বাচ্ছারা কাজের লোকের থেকে পাবে?আর রান্না ঘরের সাইড দেব কিভাবে?আমার এতো ভালবাসার সংসারের লোকেরা কাজের লোকের হাতের অপরিস্কার রান্না কিভাবে খাবে? যদি তাঁদের ক্ষতি হন।আমার শ্বাশুড়ি কোন কাজ করলে আমার কষ্ট হয়।কারন সারা জীবন কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের বড় করেছেন ।এই বয়সে আল্লাহকে ডেকে আরামে থেকে উনার ছেলের জন্য দোয়া করুক।আর আমার মেয়েরা আমার থেকে শিখুক স্বামী ও শ্বাশুড়ির দায়িত্ব পালন কিভাবে করতে হয়। না হলে তারাও মর্ডান মেয়েদের মত শ্বাশুড়ির উপর বসে বসে খাবে।যা আমার নীতির পরিপনহী।
রাসুলল্লাহ সাঃ বলেছেন,” স্ত্রী সর্বশ্রষ্ট সে,যাকে দেখলে (স্বামীর)মন খুশিতে ভরে উঠে,তাকে আদেশ করলে সত্তর সে তা পালন করে,স্বামী বাহিরে গেলে নিজের দেহ সৌন্দর্য ও ইজ্জত এবং স্বামীর ধন সম্পদের যথার্থ রক্ষনাবেক্ষন করে”।আহমদ-২/২৫১ সহীহ সুনানে নাসাঈ ৩২৩১
আমি খুব অবাক হয়ে ভাবলাম ।এতো সাদা মনের তাকওয়াবান মানুষ আছে বলেই মনে হয় দুনিয়াটা এতো সুন্দর।এই টা অনেকের কাছেই কঠিন আবার অনেকের সবরের কাছে এটা কিছুই নয়।স্বামীর সংসার মানে তো আমার সংসার।আমার সংসারে আমি যদি অলস অকর্মঠ অসচেতন হয়ে যাই তা হলে এই সংসার নামের তরীটা বেয়ে বেয়ে শান্তির জান্নাতে নিবে কে?আমার ছোট বিয়ে হলেও মা আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে সকল অবস্থ্যায় স্বামীর সাথে যখন যেভাবে থাকতে হয় যেন তাতে উচ্চবাচ্য না করি।শ্বশুড় শ্বাশুড়ি আমার কারনে যেন আমার স্বামীড় উপর অসন্তুষ্ট না হন, তাতে আল্লাহ আমার স্বামীর উপর নারাজ হবেন, আর তাতে আমার স্বামীর দুনিয়া ও আখিরাতের ক্ষতি হবে।য়ামি যাকে ভালবাসি তাঁর ক্ষতি তো আমার জীবন থাকতে আমি হতে দিতে পারি না।
বর্তমানে দাম্পত্য জীবনের বহু সম্পর্ক কচু পাতার উপরের পানির মত টলমল হয়ে আছে।সিন্ধান্তহীনতায় ভুগছে কি করবেন?কি দুনিয়ার সুখের জন্য সন্তান সহ দাম্পত্য জীবনের ভালবাসার সমাধি রচনা করবেন?নাকি জুটি ঠিক রেখে ক্ষমার দৃষ্টিতে আবার সুখের তরীকে হাজার প্রতিকুলতার মাঝে বেয়ে তীরে নিবেন।
রাসুল সাঃ উম্মত হিসাবে আপনি দুনিয়ার সুখের কথা ভেবে নিচের দিকে তাকান। রাসুল সাঃ এর স্ত্রী গন আল্লাহ আর রাসুল কে ভালবেসে প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসাবে রাজরানীর মত রাজপ্রাসাদ বালাখানা মখমলের বিছানা আর কোরমা পলাউ রাজভোগ তো দূরে থাক ঠিক মত ৩ বেলা খাবারও পাননি।খাদিজা রাঃ আবদুল্লাহর গিরি গুহায় নবীজি সাঃ এর সাথে বয়কট সময়ে আরাম আয়েশ পরিদানের কাপড় তো দূরে থাক চুলায় আগুনও জ্বালানোর মতঁ খাবার পাননি।গাছের পাতা ছিবিয়ে খেয়েছেন।
আখিরাতের জান্নাতের জন্য দুনিয়ার সুখ বিক্রি করে দিয়েছেন।আল্লাহ আমাদের জান্নাতি রমনীদের মত ঈমান আমল এলেম সবর আল্লাহর সন্তুষ্টি দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
৩৫৬১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু এখন এমন নারি হতে চায় কয়জন!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন