ননদী, তোমার জন্য প্রানটা কাঁদছে।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:৪৫:১৬ রাত
ননদী, তোমার জন্য প্রানটা কাঁদছে।
শুনছ, আজ আকাশ টা কেমন মুডঅফ হয়ে আছে।এই রকম দেখে আমার মাথা ঘুরাচ্ছে আর বুমি বুমি ভাব হয়ে আছে।মাইগ্রেনের সমস্যার পেইন থেকে এমন হচ্ছে।
মনি শুনো, ফ্রিজে রান্না করা সবজ্বি আছে।কষ্ট করে ভাতটা রান্না করে ,জানালায় পর্দা ঢেনে দিয়ে শুয়ে থাক"।
"কত ভাল স্বামী আমার" ।আলহামদুলিল্লাহ।তাড়াতাড়ি করে কোর্টে যাবার সব আগায়ে দিচ্ছি।
এমন সময় মোবাইলে ফোন বেজে উঠল।
"ভাবী ,বাচ্ছাদের পরীক্ষা শেষ।ওরা মামার বাসায় বেড়াতে আসবে।আপনি সুস্থ্য আছেন কিনা।তাই ফোন দিলাম। এখন আপনার হাসির আওয়াজে বুঝা যাচ্ছে আপনি সুস্থ্য আছেন। আলহামদুলিল্লাহ"
আলহামদুলিল্লাহ ।আপুমনি, তুমি এখনি বাচ্ছাদের সবাইকে নিয়ে চলে আসো"।
সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন ,কাকে এই অসুস্থ্য শরীলে দাওয়াত দিলে।আমার হাতে এখন বাজার করার মত সময় নেই"।
"তোমার ছোট বোন আসছে বেড়াতে।তোমার এই নিয়ে কিছুই ভাবতে হবে না।তুমি আল্চলাহর উপর ভরসা করে চলে যাও।"আসসালামুয়ালাইকুম বলে বিদায় দিলাম।
ভাবলাম একমিনিত।আজ আমার বোন হলে আমি কি করতাম?আমার শ্বশূড় শ্বাশুড়ি বেঁচে থাকলে এই আদরের মেয়ে ও নাতী নাতনির জন্য কি করত? তাঁর চেয়ে কোন অংশে যেন তাঁর সমাদর কম না হয়।মাইগ্রেনের পেইন আর বুমির ভাব সব উদাও।আমি অসুস্থ্যতার কথা ভুলেই গেলাম।
অতীতের স্মৃতিরা আমায় অনুপ্রেরনা দিয়ে ২ ঘন্টায় অনেক আইটেম ওরা আসার আগেই আলহামদুলিল্লাহ শেষ করতে সাহায্য করল।ননদী ভাবির গল্পের মজাই অনেক আলাদা।
আমার বিয়ের সময় ছোট ননদী ৫ বছরের আর ছোট দেবর ছিল ৩ বছরের।ভাবির হাতে গোসল করান, ভাই আর ভাবীর মাঝ খানে শোয়া, ভাবীর সাথে ভাবির বাপের বাড়ি বেড়ানো , স্কুলের আটানা(৫০ পয়সা) থেকে চারানা(২৫ পয়সার) রেখে জমায়ে তাদের জন্য রাখা চকলেট ভাগ করার সময় লুকায়ে ছোট দেবর কে দুইটা বেশি দেওয়া, মাথা আচড়ায়ে সাজায়ে রাখা সব কিছুতেই ভাবির হাতে হও্য়া চাই।
ছোট ননদী ইডেন কলেজে পড়ে। নিজের সন্তানের মত আগলায়ে রাখতাম। তারাও সেই রকম ভাবীদের মান্য ও সন্মান করত। একদিন ছুটির পরে আর ননদী কে বের হচ্ছে না।আমি তো খুজছি আর কান্দছি।সব মেয়েদের ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করছি তাঁরা আমার ছোট বোনটাকে দেখেছে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আবার আমার ৩ ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরটরী স্কুলের ছাত্র।আমার ক্লাস এর অফ টাইমে এসেছি।আবার বাচ্ছাদের ছুটির সময় তখন ।বাচ্ছাদের কথা ভুলে ননদী কে না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ভাসুরের (স্বামীর বড় ভাই) স্কুলে গিয়ে হাজির হয়ে জানালাম। কারন সাহেব তখন জাপান উনাকে কি বুঝাব আর দেশে শ্বশূড় শ্বাশুড়ি কে কি উত্তর দেব ? মাথা পুরাই নষ্ট হওয়ার উপক্রম। ভাসুর বাচ্ছাদের স্কুল থেকে আনতে পাঠালেন আর উনি খুজছেন বলে আস্বাস দিলেন। বাচ্ছা নিয়ে বাসায় এসে দেখি সে ভাত খাচ্ছে । হারানো মানিক খুজে পাবার আনন্দে ওকে জড়ায়ে ধরে অনেক কান্দলাম।
সেই আদরের ননদীকে বিয়ে দিলাম যেই দিন সবাই আনন্দে আত্মহারা।আমার বুক ফেটে খান খান হয়ে যাচ্ছিল এই ভেবে ,সবার আদরের বোনটাকে কি জান্নাতের বাগানের মেহমান করে পাঠাচ্ছি নাকি জাহান্নামের অনলের তাপদাহে পাঠাচ্ছি।আমি জীবনেও ভাবি নাই ও কোন দিন স্বামী সংসার নিয়ে একদিন ঠিকে থাকতে পারবে।কারন সবার আদরে আদরে কোন কাজই করে থেকে হয় নাই তাকে।
ওর বাচ্ছা হও্ইয়ার সময় রাত দুই টাই ফোন আসল আমার কাছে।আমি আমার ২+ ও১+ বয়সের বাচ্চা রেখে আমি আর আমার শ্বাশুড়ি টেক্সি নিয়ে সেই মোহাম্মাদ পুরের বার চিপা তের কোনার ভিতরের হসপিটালে হাজির।সেহেরী খাচ্ছি এমন সময় বাচ্ছা কোলে নেওয়ার ডাক।শ্বাশুড়ি আম্মা বললেন,বউ তুমি গিয়ে প্রথম কোলে নাও"।খাওয়া ফেলে দে দৌড়।সাহেব কে বললাম, তুমি বাচ্ছা এনে দুধ খাওয়ায়ে নাও।ও তো আমাকে ছাড়ছে না।সে তাই করল দুই দিন ।এই ননদী আমার দাওয়াতের দ্বীন কায়েমের মুজাহিদা ও কোরানের প্রশিঙ্কারী একজন কোরানের উস্তাদ হয়ে শত শত হৃদয়ে কোরালের আলো জ্বালাচ্ছে ।আলহামদুলিল্লাহ।ননদী, তোমার জন্য প্রানটা কাঁদছে।বাচ্ছারা যাবে না আমার বাসা থেকে ।আবার আসবে বলে জোর করে নিল।
আজ ননদী বলে ,ভাবি আমাদের সেই ভালবাসার মত এখনকার বঊদের ভালবাসা দেখছি না কেন? এখন কার বউরা স্বামীর সংসারে এসেই আগে নিজের বাপের বাড়ির জন্য সুখ কিনা শুরু করে।স্বামী কে ভালবাসে কিন্তু স্বামীর পরিবারের কাউকে ভালবাসে না।আপনি এতো ছোট এসেও কিভাবে আমার ভাইটাকে গিলে ফেললেন।
এখনকার মেয়েরা না পারে স্বামী ধরে রাখতে না পারে বাচ্ছা পালতে না পারে শ্বশুড় শ্বাশুড়ির মন রক্ষা করতে।
তখন ননদীকে বললাম,আপু আমাদের মা আমাদের শিক্ষা দিত কিভাবে স্বামীর সংসারে সবাইকে নিয়ে সুখে থাকা যায়।কিভাবে আচার ব্যবহার করলে শ্বশুড় শ্বাশুড়ির দোয়া নেওয়া যায়।শ্বাশুড়ি প্যারালাইসেজ হয়ে স্বামী স্ত্রীর সাথে একই খাটে শুয়েছে।তখন আমি নিজেও স্বাশুড়ি কিন্তু আমি আমার শ্বাশুড়ির সামনে ঐ দিন প্রথম দিনের নব বধুর মতই জিজ্ঞাসা করে করে কি খেতে চাইতেন তাই রান্না করে আর সেই মাসুম বাচ্ছার মত করে সেবা করেছি।মলমুত্র পরিস্কার করতে আমার মেয়ের মত মাসুম বাচ্ছা মনে করেই আল্লাহ খুশির জন্য করেছি।াল্লাহ কবুল করুন।
এখন কার অনেক শিক্ষিত অজ্ঞ/ অসামাজিক প্রানীর মত কিছু মেয়ে স্বামীর সংসারে আসতেই প্রধানমন্ত্রীর মত স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে আসে।এসেই হাম মিয়া বিবি রাজি আর সব ফাজি।এরা প্রথমে সবাইকে স্বামী থেকে দূরে সরায় ।এর পরে স্বামী কে নিয়ে একক সংসার শুরু করে ।দুই সপ্তার মাথায় স্বামী কে মনের মত নাকে রশি দিয়ে ঘুরাতে না পারলে আম পেলে চালা (সন্তানের ) কাঁধে ফেলে বাপের বাড়ি গিয়ে উঠে। এরা হলো হাইব্রিট শিক্ষিত ছেলে মেয়ে /স্বামী স্ত্রী।
পচা ডিমে যেমন বাচ্ছা ফুটে না ।তেমনি এই রকম নিরামিষ দাম্পত্য জীবনে না তাঁরা সুখে থাকে, না বাচ্ছা গুলোকে মানুষ করার চিন্তা রাখে,পরিবার ,সমাজ বা দেশের জন্য কোন কল্যান বয়ে আনতে পারে।পদ্মা যমুনা কত ঘর বাড়ী বিলিন করে ঘ্রাস করছে তাঁর চেয়ে হাজার গুন বেশি ঘর সংসার নিমিশে ভাঙছে ইন্ডিয়ার শয়তান মিডিয়ার অপসংস্কৃতি আর সভ্যতার কোরাল ঘ্রাসে।ইউরোপীয় কালচারে চলা এই সব পরিবার আজ আমাদের সমাজের বিষ ফোড়া থেকে ক্যান্সারের দিকে রূপ নিচ্ছে। এরা আপনে দোষে শয়তানের দোষর হয়ে মরে ।পরে ভুত পেত্নীর নাম পড়ে।ইসলামের জ্ঞানের অভাবে এদের নুন্যতম বিবেকটাও থাকে না ।তাই আল্লাহ এদের মাঝে সঠিক বুঝদান করে এদের মাঝে জান্নাতী সুখ দান করে দিক।
বিষয়: বিবিধ
২৭৯৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
চায়ের কাপ টা খুজে পাচ্ছি না ।তাই
মা শা আল্লাহ...
এক কথায় "লা-জওয়াব"
জাযাকিল্লাহ...
ননদী ভাবির গল্পের মজাই অনেক আলাদা।
আল্লাহতায়ালা আমাদের দেশে/সমাজে তেমন পরিবেশ, সংসার ও সম্প্রীতি যেন আবার ফিরিয়ে দেন!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন