ইসলাম নারীদের সাজসজ্জার অন্তরায় নয়।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:০৩:৫৯ রাত
ইসলামী সভ্যতা নারীদের সাজসজ্জার অন্তরায় নয়।
বুড়াবূড়ি জীবনের শুরুর মত প্রথমের টুনাটুনির মতই প্রতিবেশির বিয়ে খেতে গেলাম। একই সময়ে দুটি বিয়ের প্রোগ্রাম তাই ছেলেদের একদিকে আর আমরা একদিকে গেলাম। বলার উদ্দেশ্য হল সেখানে গিয়ে দুই জনেরই আক্কেল গুড়ুম।
আমার প্রতিবেশি অন্যান্য পর্দানশীল বোনেরা াজ এমন সাজুগুজু করেছেন যা ঢাকার প্রয়োজনীয়তা উপলুব্ধি করার হুশই ছিল না।
সাহেব বলেন ,তুমি এমন করছো কেন ?
আচ্ছা এটা অফিসার্স ক্লাবের পার্টি বলে কথা।
তা না হয় বুঝলাম ।তাই বলে সামান্য সময়ের জন্য আমরা জীবনবিধান ইসলাম ও মুসলিম েই কথা একে বারেই ভুলে যাব।এর নাম কি তাকওয়া?হাটে বাজারে যেতে পর্দা আর পার্টিতে আসতে আর পর্দা লাগে না।ঈমান কি ৬ ঋতুর মত পরিবর্তনশীল কোন কিছু? সাহেব বললেন চুপ কর।তাই কিছুক্ষন চুপ থেকে শুধু দেখলাম আর ভাবলাম।
আমার পাশেই আমার ঘনিষ্ট্য প্রতিবেশি বান্ধুবীর মেয়ে বসল।বসেই খুব সুন্দর করেই বলল, আন্টি আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।আলহামদুলিল্লাহ বলেই বললাম ,
"মামনি আমার তো চোখ দুইটা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না,এর আবার কি সুন্দর আছে?সুন্দর লাগছে তোমাদেরকে।কারন সব দেখা যায়।"
সাজসজ্জা কি ?
সাজসজ্জা মানে নগ্নতা,অশ্লীলতা আর বেহায়াপনা নয়।
আমার মতে সাজসজ্জা বলতে পোশাক ও প্রসাধনকে সুন্দর ও পরিপার্টি করে ব্যবহার করে নিজের দেহকে বেগানা পুরুষের দৃষ্টির আড়ালে রাখাকে বুঝায়।এই ভাবের সুরুচিপূর্ণ শালিন পরিছন্ন পোশাক হচ্ছে ইসলামী সভ্যতার প্রতীক।
ইসলামে সূন্দরের অন্তরায় নয়।
মানুষ(নর/নারী) আল্লাহর সৃষ্টির সেরা মাখলুকাত।তাই মানুষ সৌন্দর্য ও উত্তম পোশাক দিয়ে নিজের আকার আকৃতি,ছবি সুরত,সৌন্দর্যমন্ডিত করবে তা ইসলামেও পুরোপুরি কাম্য।আল্লাহ যাকে যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছে সেই অনুসারে না বুবহার করলে সেই কৃপন আর বেশি করলে সে অহংকারি।তাই মধ্যম পন্থাই উত্তম পন্থা।
ইসলামি পোশাকই জান্নাতি পোশাক।
আমি ভুল বলিনি।দেখুন সর্বস্রষ্টা আল্লাহপাক তাঁর প্রথম সৃষ্টি আদম আঃ ওবিবি হাওয়া আঃ কে জান্নাতি পোশাক পরিয়ে জান্নাতে রেখেছিলেন। মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তানের ধোকার পড়ে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার মাধ্যমে জান্নাতি পোশাক খুলে নেন। তাই শয়তান চেয়েছিল।
সুরা আরাফের ২২ নং আয়াতে বলা হয়েছে তাতে পরস্পরের সামনে লজ্জাস্থান উম্মক্ত হয়ে গেল।গাছের চালবাকল দিয়ে লজ্জা স্থান ঢাকলেন।কারন লজ্জা মানুষের বিবেকের প্রকৃতিগত ও স্বাভাবিক অনুভুতি ।আরো বলেন,শয়তান ামাদের প্রকাশ্য দুশমন।
কোরানে বর্নিত পোশাকের আয়াতঃ
"হে বনী আদম! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি। আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদের আবার ঠিক তেমনিভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ না করে যেমনভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্য তাদেরকে বিবস্ত্র করেছিল। সে ও তার সাথীরা তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। এ শয়তানদেরকে আমি যারা ঈমান আনে না তাদের অভিভাবক করে দিয়েছি।" সুরা আরাফ ২৬-২৭
ইসলামী পোশাক কি রকম ও কত দামের হবে?
নবী করিম সাঃ শরীর,পোশাক,ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পরিছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।ইসলামে সৌন্দর্য্য ও পরিছন্নতার উপর জোর দিয়েছেন।"রাসুল সাঃ বলেছেন,তোমরা পরিছন্নতা অবলম্বন করো।কেননা ইসলামের পরিছন্নতা দ্বীন।"
আরো বলেছেন,"পরিচ্ছন্নতা ঈমান ডেকে আনে।আর ঈমান তাঁর সঙ্গীকে নিয়ে জান্নাতে চলে যায়"(তারবানী)
হাদিসঃ হযরত ইয়াকুব রাঃ বনর্না করেছেন,"আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ জিজ্ঞাস করেন,'ইয়া রাসুল্লাহ সাঃ আমি কি রকম কাপড় পরবো?তিনি উত্তর দিলেন,"এ রকম কাপড় পরো যেন বেওকুফ লোক তোমাকে দেখে তুচ্ছ মনে না করে আর বিজ্ঞজন আপত্তি না করে"।লোকটি প্রশ্ন করলো কাপড় কি মুল্যের হওয়া দরকার ?নবী সাঃ উত্তর দিলেন"পাচ দিহরাম থেকে বিশ দিহরামের মধ্যে।"(তারগীব,তারহীব,তারবানি)
ইসলামে সামর্থ্য থাকলেও কৃপনতা করে চলা পছন্দ করে না।
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন সামর্থ্য থাকলেও কৃপনতা করে সুন্দর ভাবে চলেন না।বা নিজে দামী কাপড় পরলেও কৃপনতা করে বউ বাচ্ছাকে দেন না।
রাসুল সা অন্য একটি লোককে দেখতে পেলেন যার পরনে খারাপ ধরনের কাপড় ছিল।তাকে তিনি বললেন,"তোমার ধনমাল কিছু আছে?লোকটি বলল জি হ্যা।জিজ্ঞেস করলেন কি ধরনের ধনমাল?লোকটি বলল,"আল্লাহ আমাকে সব ধরনের ধনমাল দিয়েছেন।তখন নবী সাঃবললেন,আল্লাহ তোমাকে যখন ধনমাল দিয়েছেন,তখন আল্লাহর নিয়ামত ও তাঁর অনুগ্রহের পরিচয় তোমার উপর পাওয়া যাওয়া বাঞ্চনীয়।"
হাদীস - নাসাঈ।
নারীদের রূপচর্চা ও সাজসজ্জার ব্যাপারে ইসলাম কোন বয়সের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।তবে সেই সাজগোছ ১৪ জনের বাহিরের পরপুরুষকে দেখানো নিষীদ্ধ।তার জন্য সুরা নুরের ৩১ নং আয়াত পড়ে দেখুন।
মেয়েদের জাহান্নামী পোশাক ঃ
যে সব মেয়েলোক ,যারা কাপড় পরিধান করেও ন্যাংটা থাকে,তারা পুরুষদের নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করবে আর নিজেরাও পুরুষদের প্রতি ঝুকে পড়বে।তাদের মাথা উষ্ট্রের ঝুঁকে পড়া চুটের মত হবে।তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না,তাঁর সুগন্ধিও তারা পাবেও না।যদিও জান্নাতের সুঘ্রান বহুদুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।" হাদিস- মুসলিম।
স্বামীর জন্য সৌন্দর্য বৃদ্ধির কথা বলে ব্রুফ্লাক(ব্রু সরুকরন) ওপরচুলা ব্যাবহার হারাম।আর ভিন পুরুষের তো কথাই নাই।
আমি আমার প্রানপ্রিয় বোন ও মামনিদের বলব,নারীর নারী সুলভ আচরন আমাদের প্রথম আলংকার।তার মধ্যে নম্রতা শিষ্টতা চারিত্রিক বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রকৃত সৌন্দর্য ।যা প্রকাশ না করতে চাইলেও প্রকাশিত হয়ে যায়।ইসলাম সাজসজ্জার অন্তরায় নয়? বরং ইসলামেই সাজসজ্জার তাগিদ বেশি দিয়েছে।যা অন্য ধর্মে দেই নাই।তারা আমাদের থেকে নিয়ে উলোংগপনার মাঝে সাজসজ্জাকে বিক্রি করে দিয়েছে ।আর আমরা সেই ইউরোপীয় ও প্রতিবেশি দেশের ন্যাংটা সাজসজ্জা কে ইমান আমোল এলেম বিক্রি করে তাদের অপসংস্কৃতি সভ্যতা কিনে নিয়েছি।
আল্লাহ আমাদের এই অশ্লীলতা ও ব্যাহায়াপনা থেকে রক্ষা করে হেদায়াত দান করুন।আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৩৭২৯ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আস্তাগফেরুল্লাহ এই লিখা কি স্টিকির যোগ্যতা রাখে? তাও এতো বড় চিন্তার জন্য আল্লাহকে বলব ,
আপনার দিদিকে ভালো পাইনাহ্
অনেক সুন্দর ও শিক্ষনীয় মন্তব্য।এটাই পোস্ট করেন। ভাল হবে ।এই কষ্টের জন্য আল্লাহকে বললাম তিনি যেন
পর্দার বিধান সঠিক ভাবে কোরআন ও হাদীস থেকে না পড়েই আজকাল মহিলারা ছোট এক খন্ড কাপড় দিয়ে হিজাব করে, অনেকে তাও করে না তাই বুঝতেও পারেন না প্রতিমুহূর্ত কবীরা গুনাহের মধ্যে আছেন!
আল্লাহ আমাদের অজ্ঞতা ও মূর্খতার অভিশাপ থেকে পানাহ দিন, সঠিকভাবে পর্দার বিধান পালন করার ক্ষমতা দিন। আমিন।
জাযাকিল্লাহ খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন