আত্নহত্যায় নয় সমাধান ,সবরে বেঁচে থাকায় সকলকল্যান
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৮:৪৩ রাত
আত্নহত্যায় নয় সমাধান ,সবরে বেঁচে থাকায় সকলকল্যান
আত্নহত্যায় নয় সমাধান ,সবরে বেঁচে থাকায় সকলকল্যান
সুমন আমার প্রানপ্রিয় এক দ্বীবি বোনের আত্নীয়।সেই সুত্রে সুমনের সাথে আমার পরিচয়।আমাকে খালাম্মা ডাকত ও অনেক সন্মান করত।যেমন ছিল ভদ্র তেমনি ছিল বিনয়ী ছিল।মা বাবার একমাত্র ছেলে ।সব সময় তাদের দাম্পত্যজীবনে সুন্দর মিল ছিল । হঠাত শুনি সুমন আত্নহত্যা করেছে । অবাক হলাম এই ভেবে স্বামী স্ত্রী থাকত একটা বাসায়। ছেলে মেয়ে নাই ।তাতেও সুখি না হয়ে নিজেকে নিজে শেষ করার মাঝে কি সুখ পেল?
সাহেব আইনজীবি হওয়াতে প্রেম বিরহে একা বা যুগল আত্নহতাা বা মা বাবার উপর অভিমানে ,শিক্ষক /বন্ধুর /লোকলজ্জার ভয়ে আত্নহত্যা -এই রকম ঘটনা এখন অহরহ শুনছি।এর শেষ কোথায় ? আর এর পিছনে কারন কি বৈধ ? কোন সমস্যার সমাধান কি নিজেকে নিজে শেষ করার মাঝে?
আত্মহত্যা সমাধান নয়। একটি ভুল পথ। জীবন তো সংগ্রামের, বেচে থাকার লড়াইয়ের।এই সামান্য সময় আপনি একটু জীবন যুদ্ধের ময়দানে থাকতে চেষ্টা করুন। পরাজয়ে ডরে না বীর ।শয়তান আমাদের প্রকাশ্য দুশমন।তাই পলায়নে কাপুরুষের পরিচয় । সাহসী সৈনিকের সব আঘাত এসে আঘাত করে বুকে । তাতেও সে বীরবিক্রম উপাধি পায় । কাপুরুষ শয়তানের আঘাত লাগে পিঠে ।তাতেও সে শয়তানের দোসর হয়ে আত্মহত্যা করে মুক্তি পেতে চায়।
মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় মূর্খতা হল আত্মহত্যা করা। আর যারা ভালবাসার/প্রেমের কারনে আত্মহত্যা করে তারা তো মূর্খতার উপর করা বিশেজ্ঞ। জাহেল /বর্বতার একটা পর্যায় আছে । কিন্তু এদের কে শয়তান দুনিয়ায় থাকতেই পশুর চেয়ে অধম বানিয়ে ফেলেছে । একবার ও ভেবে দেখেনা যে তার বাবা মা কি নিয়ে বাঁচবে। আরে যার জন্য মরতেছ সে হয়তো ২-৩ মাস পর তোমার কথা ভুলেই যাবে, কিন্তু সারা জীবন কষ্ট পাবে বাবা মা।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ঃ
আল্লাহ বলেন ,মানুষ ও জীন জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদাতের/বন্দেগী/দাসত্ব/অনুগত্য ও অনুস্মরনের জন্য "-সুরা জারিয়াহ
এখানে স্পষ্ট মানুষ এর দুনিয়াতে আসার মুল উদ্দেশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । সুরা বাকারায়ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মানুষ কে আল্লাহ প্রতিনিধি /খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব। তাঁর মানে আমি আল্লাহর গোলাম হয়ে এক মুহুর্তের জন্য আমার দায়িত্ব থেকে আমি অব্যাহতি পাব না । দুনিয়ার জীবন যাপনে যতই আসুক সুখ শান্তি আর বাধাবিঘ্ন আমি কোন অবস্থায় আল্লাহর স্মরন থেকে গাফেল হয়ে থাকতে পারব না । কোন কিছুর মোহে তাকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মনে করে ,সেখানে আমি নফসের গোলাম হয়ে যেতে পারব না।সুখে আল্লাহর শুকরিয়া আর দুঃখে সবরের মাধ্যমে আমার দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।আপনি যে কারনে নিজে নিজের প্রান হননের সিন্ধান্ত নিচ্ছেন সেই প্রান তো আপনার নয় ।তা তো সকল প্রানের সৃষ্টিকারী/মালিক আল্লাহ রহমানুর রাহিম।আপনাকে কুকুর /হিংস্র জানোয়ার বা গাছ পালা হিসাবে সৃষ্টি না করে মধ্যম পন্থ্যি উম্মোত হিসাবে দুনিয়াতে পাঠালেন।আর আপনি দুনিয়ার পুজারী/আত্নপুজারী হয়ে নফসের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিলেন ।
আপনি দুনিয়াতেই ধ্বংসের থেকে বাচায় জন্য আল্লাহ আপনাকে সুরা আসরে চারটি দায়িত্ব পালনের জন্য দিয়েছেন। তাঁর মধ্যে শেষের দুইটি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান নিহিত । সব শেষ গুনটি হল সবরের উপদেশ দেওয়া ।যা প্রথম নিজের মধ্যে আসবে তারপর তা দিয়ে অন্যের মাঝেও শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে হবে । যা খুবই কষ্টকর কিন্তু তাঁর ফল খুবই মিষ্টি ও আনন্দ দায়ক ।যা ছাড়া আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের অতলগহ্বরে পড়ে থাকব।সুরা ইমরানের ১০৪ ও ১১০ নং আয়াতে কি কাজে আখিরাতের সফলতা তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
শেষ পরিনতিঃ
আর আত্মহত্যার শাস্তি খুবই ভয়ঙ্কর। দুনিয়াতেও কিছু পেলে না আখিরাতেও অনন্ত জীবনেও কিছুই পেলেন না। তাই আমরা বলতে পারি যে আত্মহত্যার করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মূর্খতা। এই কুল ঐ কুল -দুই কুলই হারায় । ইসলাম কখনই এই পথ কে সমস্যা সমাধের পথ হিসাবে বেচে নেন নাই। সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারেন আল কোরান ।
"আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।
[সহীহ বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯]
" এমন আমরা অনেকেই করি। অনেকেই আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কেও মারা যায়, কেও বেঁচে থাকে।একটা ছেলে বা মেয়ের ভালোবাসা আমাদের কাছে এত বড় হয়ে যায় যে সৃষ্টিকর্তার দেয়া জীবন মূল্যহীন হয়ে যায় ? বাবা মার ভালোবাসা কি এতই সস্তা ? তাদের ত্যাগ কি কোন মানেই রাখে না আমাদের জন্যে ? যে আত্মহত্যা করে সে তো চলে যায়, কিন্তু পেছনে রেখে যায় এক অভিশাপ । যা তার পরিবার, কাছের মানুষকে ধ্বংস করে দেয় ।
৬ মাস ১/২ বছরের প্রেম ২৫-৩০ বছরের বাবা মার সকল ভালোবাসা, ত্যাগ থেকে বড় হয়ে যায় । আপনাদের বলছি যারা ভালোবাসায় কষ্ট পেয়েছেন তাদেরকে বলছি, জীবনে সেই মানুষটিকে সবকিছু ভাববেন না, যে আপনাকে কষ্ট দিয়েছে । ভালোমতো তাকিয়ে দেখুন আশেপাশে এমন অনেকেই আছে যে শুধু আপনার মুখের হাসি দেখে বেঁচে থাকে । কারো জন্য আপনি কিছুই না, কিন্তু আপনার বাবা মার জন্যে আপনি তার পৃথিবী । সেই পৃথিবীকে এভাবে নষ্ট করবেন না । আত্নহত্যা নয় সবরের মাধ্যমে বেচে থাকায় কল্যান
যে মুহূর্তে আপনি আশা ছেড়ে দিতে চান সে মূহুর্তে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন- তাহলে কেনইবা আপনি এতকাল আশা করে বেঁচেছিলেন ।
আপনার উত্তর আপনাকে আবার বেঁচে থাকার নতুন আশা যোগাবে। আর যদি আপনার অন্তরে মরিচা পড়ে যায় তা নিচের হাদিসের আলোকে মরিচা দূর করুন।
অন্তরের মরিচা দূর করার উপায়ঃ.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "পানি লাগলে লোহায় যেমন মরিচা ধরে, তেমনি অন্তরেও গুনাহের কারণে মরিচা পড়ে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! অন্তরের মরিচা দূর করার উপায় কি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ অধিক হারে মৃত্যুর কথা স্মরণ ও কুরআন তেলাওয়াত করলে অন্তরের মরিচা বিদূরীত হয়।" (মিশকাত)
আপনি একবার ভেবে দেখুন সুরা আনয়ামের ১৬২ নং আয়াতের কথা - সেখানে আল্লাহ আমাদের কে বলতে বলেছেন ,যে আমাদের নামাজ (ইসলামের সকল কার্যাবলী),আমাদের ত্যাগ , আমাদের জীবন ও মরন বিশ্ব প্রতিপালক মহান রব্বুল আলামিনের ।
তা হলে আমিও আমার নয় , আমার সকল কামনা ভাসনা কষ্ট ব্যাথা বেদনা সকল কিছু আমার ,মালিকের ইখতিয়ারাধীন । আমার জীবনের সকল সুখকর দুনিয়াবি ও আখিরাতের জান্নাতী সুখ আল্লাহর ক্ষমতাধীন ।আবার দুঃখ ব্যাথা বেদনা সব আল্লাহর ইচ্ছাধীন ।তিনি যা আমার জন্য নিদিষ্ট করবেন তা আমার দুনিয়াবী /আখিরাতের কল্যানেই হয়ে থাকে । তাই আমার মনে হয় আমার মালিক আমার উপর যেই ভাবে যা নিয়ামত দিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট । তা হয়ত একটু হাস্যুজ্জোল সময় /সারা জীবনের ব্যাথা বেদনার মেঘে ঘেরা বৃষ্টির কান্না । তাতেও প্রভু থাকুক আমার উপর সন্তুষ্ট ।
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:‘ যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো একটি কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন, যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্য করেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে’ (আহমদ,সহীহ)।
আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলার কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম ও প্রিয়। তবে উভয় প্রকার মুমিনের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তোমার জন্য যা উপকারী-কল্যাণকর তার প্রতিই আগ্রহী হও, আর আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। অপারগ হয়ো না। যদি তোমার উপর কোনো মুসীবত আসে তাহলে একথা বলো না যে, যদি আমি এমনটি করতাম তাহলে এরূপ হতো না। বরং বলো, এটা আমার তাকদীরের লিখন। আল্লাহ তাআলা যেমন চেয়েছেন তেমন করেছেন। কেননা যদি শব্দটি শয়তানকে কাজ করার পথ খুলে দেয় (মুসলিম)। —
বিষয়: বিবিধ
২২৮৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিষয়টা জানলে উপলব্ধিতে আমরা নিতে পারি না যেন!
তাই তো সামান্য কিছু কারণেই এই পথে পা বাড়াই!
কোরান-হাদীস সমৃদ্ধ আলোচনা আমাদের বুঝ কে সঠিক রাস্তায় পরিচালিত করবে ইনশা আল্লাহ!
জাযাকিল্লাহু ওয়া ইয়্যানা ফিদ্ দারাইন,আমিন!
সুরা বালাদে আল্লাহ বলেছেন দুঃখে-কষ্টের জীন্দেগি দিয়েই মানুষকে বানানো হয়েছে।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
যার জন্য এই আত্ম হত্যা তাকে হয়ত এর মাধ্যমে পুরুষ্কৃতই করা হল কিন্তু নিজেকে নিক্ষেপ করা হল জাহান্নামে আর বাবা মাকে ভাসিয়ে দেয়া হল দুঃখের সাগরে। তাই আত্ম হত্যার মাধ্যমে সমাধানের নামে এই চির বঞ্চনার পথ বেছে নেয়া চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন