শিশু আর পশু হৃদয়ে একই স্নেহে বাঁধা ।

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২৮:৫৫ রাত

শিশু আর পশু হৃদয়ে একই স্নেহে বাঁধা ।



দাদুমনি,আমিও কেন্দেছি তুমিও কান্দ ।এটা আমার নাতির উক্তি।

তাদের নাওয়া খাওয়া বন্ধ প্রায়।সেইইই রকম বন্ধুর আপ্যায়ন।তবে সব হবে যদি দাদুমনি তাদের সাথে থাকে।কাঠাল পাতা আমার হাতে তাদের মুখে দিতে হবে।কারন তাদের মুখে তুলে দাদুমনি খাবার দিতে পারলে ছাগল কে কেন পারবে না। তাদের কে হাপ্পা (চুমু) দিলে পশু দুইটি কে দিতে হবে। ছাগল কেন টয়লেটের সময় তাদের কে না বলে টয়লেট করে ফেলে সেই জন্য সেই রকম নরম গরম উপদেশ। আমি দাদুমনিদের কেউ না থাকলে গলা ফাটানো চিৎকার। আমাকে দুই জনকে নিয়ে ছাগলের সাথে বসতে হবে।দুইটা ছাগল দুই জনের মাঝে ভাগ করে নেওয়া। দাদীর মত বোনের কালোর উপর এলার্জি তাই আমাদের হল লাল ছাগল আর ভাইয়ের হল কালো ছাগল।

আমি অবাক হয়ে দেখলাম ।পশুদের ভালবাসায় খেলা দেখে।কত তাড়াতাড়ি আমাদের কে তারা আপন করে নিল ।আমাদের আদর ভালবাসায় নিরাপত্তার আবাস বলে মনে করে ছিল।আজ যখন নিয়ে যাচ্ছিল আমি সামনে যেতে পারি নাই বিদায় বেলায়।কেন জানি না এতো ব্যাথা লাগছিল।নাতনী বার বার বলছিল দাদুমনি চাচ্ছু আমাদের ছাগল গুলো নিয়ে যাচ্ছে।একবার দৌড়ে ছাগলের কাছে আসে আবার আমার কাছে রান্না ঘরে যায়।আমি নিরুপায় হয়ে স্তব্ধ পাহাড়ে মত দাঁড়িয়ে রইলাম।পা গুলো কে যেন পেরেগ দিয়ে ফ্লোরের সাথে আটকিয়ে দিল। দাদাভাই তাঁর বাবা আর চাচ্ছুদের সাথে মহা আনন্দে ছাগল নিয়ে চলে যাচ্ছে।তখন সে জানে তারা ছাগল নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছে।

বাসায় ওর দাদা আসল।আমি সালাম দিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম ছাগল গুলোর কি অবস্থ্যা?তখন তিনি জানালেন,তোমার নাতী তোমার মত ছাগল জবাই করার পরে কান্না আর থামানোই যাচ্ছিল না।সেই কি কান্না।তাঁর কথা হল,তার বোনের ছাগল জবাই হয়েছে তাতে তাঁর কোন দুঃখ নেই।কিন্তু তাঁর গুড ছাগল কেন মেরে ফেলল। কেন রক্ত বের হল? তখন আমার কোমল কচিমনের দাদাভাইকে কেন সামনে নিল তাঁর জন্য সবাইকে ধরলাম। সবার থেকে এর জবাব নিলাম।আমার নাতি নাতনী আর ছাগল দুই টির সেই রকম বন্ধুত্ব। দুই দিনে এই নিবোর্ধ পশু কি মায়ার বাধনে হৃদয়টা বেঁধে চলে গেল।আর আমিও অনুভব করলাম শিশু আর পশু হৃদয়ে একই স্নেহেবাঁধা।

উপরের ছবিতে এটা হলো শেষ বিদায়ের সময় ছাগলটি আলিঙ্গন করে মালিকের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে,ছাগল আর মানুষের ভালোবাসার এ এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য,এই ছবিটি দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না তাই সবার সাথে শেয়ার করলাম,এই ছাগলটিকে তার মালিক ছোট কিনে লালন-পালন করে ছোট থেকে বড় করছে,এই কোরবানির ঈদে ছাগলটির মালিক ছাগলটিকে বিক্রি করে দেয়ার পর শেষ বিদায়ের সময় মালিককে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে শেষ বিদায় নিচ্ছে, তাদের মাঝে আজ মানবতা আছে আর আমাদের মাঝে সবার থেকে সবার ভালবাসা মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে।পশুর মাঝে যদি দেখ মনুষত্ববোধ আর মানুষ যদি দেখ পশুর চেয়েও অধম তা হলে আমরা মানুষ জাতির জন্য তা লজ্জাকর নয়?

সকালে আমি দেখলাম ,ছাগল দুইটির চোখে পানি।তখন ভাবলাম তারা কি মৃত্যুর ভয়ে কান্দছে? তাদের তাদের লালন পালনকারীর জন্য প্রান কান্দছে? কিন্তু আমরা মানুষ হয়েও মৃত্যুর কথা একবার ভাবি না । এর পরে কি হবে অনন্ত জীবনে তাও মনে করি না। আমাদের লালন পালনকারী প্রভু / মনিব মহান আল্লাহর কথা মনে আসে না।

আমার দাদাভাইকে কেন পশু জবাই এর স্থ্যানে নিল তাঁর জবাবে আমার ছেলে বলে ,আম্মু ওকে ইসলামের অনেক বড় সেনাপতি বানাতে চাই।আমরা ইসলামের অনুশাসনে ও অনুষ্টানের সাথে কাদামাটির মত ছোট থেকে বড় করে উঠতে চাই।ইসলামের বাস্তব জীবনে কোমলতা ও কঠোরতা দুই টাই সমান ও সমান্তরান ভাবে থাকতে হয় । ইসলামের পথে আনার জন্য কোমলতা ,বিনয়ী নম্রতা থাকা যেমন প্রয়োজন তেমনি ইসলামের বিধান কায়েমে বাধা প্রদানকারী তাগুতশক্তির মোকাবিলায় কঠোরতা খূব বেশি প্রয়োজন। যেমন পানিতে ডুবার ভয় থাকলে সাতার শিখা বা বীর ডুবুরী হওয়া যায় না । তেমনি ইসলামের সৈনিকদের আল্লাহ ছাড়া আর কোন কিছু ভয় পেলে বীর মুজাহিদ হওয়া যায় না ।

আর ভালবাসার প্রিয় বস্তু আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করার শিক্ষা এই কোরবানী দেখার মাঝে ও পশু জবাইয়ের মাঝে রয়েছে। আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য সেই রকম ভালবাসা থাকবে ।আবার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা সাথে কোরবানী করে ফেলতে হবে । তা যত মুল্যবান আর প্রিয় বস্তু হোক না কেন । তা আল্লাহর জান্নাতের মুল্যবান সরঞ্জাম থেকে অতি নগন্য ।এখানে তাঁর শিক্ষা আমরা পেয়ে যাই ।

অনেক তাঁর কথা শুনে পরে ভাবলাম একে বারে মন্দ কথা নয়।

আল্লাহ আমার ও সব মায়ের সন্তানদের জান্নাতুল ফেরাদাউসের সুগন্ধি গোলাপ করে নয়ন ও মন শীতলকারী মুত্তাকিনদের ঈমাম বানিয়ে দিক ।আমিন

বিষয়: বিবিধ

১৭১৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343303
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৫১
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩৭
284574
সত্যলিখন লিখেছেন :
Assalamu alaikum Eid Mubarak
343306
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৪৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমতকার লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। শিশুদের মন সত্যিই কুরবানি দেয়।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৫
285131
সত্যলিখন লিখেছেন :
343322
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৬:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : সত্যইতো মুমিনদের মাঝে কোমলতা ও কঠোরতা দুটিই একান্ত প্রয়োজন৷ ঈদ মুবারক আপা৷
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৫
285132
সত্যলিখন লিখেছেন :
343332
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৩০
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমতকার লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। শিশুদের মন সত্যিই কুরবানি দেয়।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৫
285133
সত্যলিখন লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File