আগে আমাদের মনের পশুত্বকে কোরবানী করে মনুষত্বকে উদ্ভাসিত করি
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৩৪:২৩ রাত
আগে আমাদের মনের পশুত্বকে কোরবানী করে মনুষত্বকে উদ্ভাসিত করি
জিলহজ্জ মাসের পবিত্র হজ্জ অনুষ্টানকে কেন্দ্র করে সবার মুখের এই একই ধ্বনিতে কাবাঘর বা বায়তুল্লাহর চারপাশের আকাশ বাতাস মুখরিত হতে দেখলাম টিভিতে।কি সুন্দর একই পোষাক,একই ধ্বনিতে একই নিয়মে কি সুন্দর মহাসম্মেলন এর নমুনা আল্লাহর এক নিষ্ট আনুগত্যের।কোন ভয় কুন্ঠা ছাড়া বিনাদ্বিধায় প্রানাধিক প্রিয় আল্লাহ হুকুম আর আল্লাহর রাসুল সাঃ এর অনুসারী হয়ে নিজের দেহপ্রান সোপে দিচ্ছে আল্লাহর রাহে। প্রভু কে পাবার জন্য আত্মিক দৈহিক আর্থিক সকল কিছু কোরবানী করে দিলেন।
আমার কাছে খুব অবাক লাগে সারা বিশ্ব থেকে আসা হাজার হাজার মুসুল্লী ভাই বোনেরা আল্লাহর ঘরে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সম্মেলনে একত্রিত হন।তাকওয়াবান ও নিষ্পাপ হয়ে সবাই আবার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন।তারপর কেন আজ সারা বিশ্বে মুসলমান ভাই মুসলমানের হাতে বা নাস্তিক দের হাতে মার খেয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।সেই মজলুম দেশ ও সেই মজলুমের জন্য কেন অন্য মুসলিম দেশ বা সেই দেশের মুসলমান নেতাদের ভিতরে কোমলতা দয়ামায়ার সৃষ্টি হয় না।
সেখান থেকে আসা হাজি রা কেন আল্লাহর জমিনে ছড়িয়ে পড়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল পাঠানো দেশে রাসুল সাঃ এর ইসলামের জন্য ত্যাগ তীতিক্ষার স্থান থেকে নেওয়া শিক্ষা আমাদের না দেখাদের মাঝে ছড়িয়ে দেন না। সাহাবে কেরামদের পদধুলি মিশে থাকা রাস্তায় হেটে এসে কেন আমরা আবুবকর , ওমর ,ওসমান ,আলী ,হামজা , খাদিজা ফাতেমা আয়েশা রা; হতে পারি না। খতমে নবুয়ত হিসাবে রাসুল আর কেউ হতে পারবে না তা জানি কিন্তু আর কেউ সাহাবাদের মত হতে পারবে না ।তা তো আল্লাহ ও রাসুল সাঃ কাউ কে বলেনি । আজ আরাফাতের ময়দানের দিকে চেয়ে শয়তান ও তাঁর চেলাচামচারা ভয়ে মরছে ।আর সেখান থেকে এসে ইসলামের কাজ করতে তাগুতের ভয়ে অনেক কে বনে বাঘ আসার আগে মনের বাঘে খেয়ে ফেলে। তা হলে ইসলামের জন্য আমাদের কিসের কোরবানী আর কার ভয়ে আমাদের ইসলামের বিধান কায়েমের এতো দেরী ।
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (তিরমিযী নং ৩৫৮৫, হিসনুল মুসলিম)]
আমরা মৌখিক ভাবে লক্ষ লক্ষবার তাওহিদের ঘোষনা দিলেও বাস্তব জীবনে এসে আমরা তাঁর ১০০% পালন করার প্রতি সচেষ্ট হচ্ছি না। প্রকাশ্য দুশমনের খবর জেনেও আমরা আল্লাহর আনুগত্য থেকে আমাদের নফসের গোলামী বেশি করছি। আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণকারীর বিপক্ষে যাওয়ার আগে নিজের ভিতরের বিদ্রোহীকে শায়েস্তা করতে হবে।নফসের সাথের জিহাদের চেয়ে বড় জীহাদ আর কিছু নেই।যে অনবরত আমাকে আরাম আয়েশ ভোগ বিলাস লোভ লালসা দেখিয়ে দুনিয়ার ফন্দি ফিকিরে ব্যাস্ত রেখে আমার আসল গন্তব্যের কথা ভুলিয়ে দেন।
সরল রেখা একটি হয় আর বক্র রেখা হাজার হাজার টি ।কেন্দ্রবিনদু ও পরিধি একটিই হয় ।আর কেন্দ্র বিনদু উপর দিয়ে পরিধি পর্যন্ত সরল রেখা /ব্যাস একটিই হয় ।আর জ্যা হয় বহুটি।আমার জীবন বৃত্তের কেন্দবিন্দুতে আল্লাহ থাকবে আর জীবন পরিধি হবে রাসুল সাঃ এর জীবন আদর্শ।এখানে সেই সরল রেখাটি/ব্যাস হল সিরাতুল মুস্তাকিম।আর সেই সরল রেখার উপর টিকে থাকতে পারলে আমরা হতে পারব হুদাল্লীন মুত্তাকীন। আর এই পথে চলার জন্য অনেক লাভবান পথ ত্যাগ করার মাধ্যমে আমাকে ইউটার্ন করে আমাদের আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাল জান কোরবানী করতে হবে।তাতেই আমাদের সফলতা।
আমরা রিসালাতের স্বাক্ষ্যদানকারী হিসাবে শুধু রাসুল সাঃ এর মাক্কী জীবন মেনে চললে আমি কি মধ্যম্পন্থী উম্মত হতে পারব? আবার শুধু মাদানী জীবন মেনে চললেই কি রাসুল সাঃ এর অনুসারী হতে পারব।একজন উম্মতে মোহাম্মাদী হিসাবে আমাকে রাসুল এর পুরো জীবন কেই মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমার জন্য রাসুল সাঃ এর হাউজে কাউসারের পানি তখনি আসবে যখন আমি একজন জীবন্ত কোরআন ও সুন্নাহর আদর্শ বহন করতে পারব।
আখিরাতের বিশ্বাসী হলেই আমার সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে । হাবিল আর কাবিলের কোরবানী গ্রহর যোগ্যতার মানদন্ডে ছিল তাকওয়া ।যেখানে কাবিল কিয়ামত পর্যন্ত নাস্তিকতার নেতা হয়ে থাকবে।পক্ষান্তরে হাবিল গোপন প্রকাশ্য সকল অবস্থ্যায় আল্লাহভীরু ও আখিরাতের জবাবদিহিতার অনুভুতি তথা আখলাকে হামিদা ও সকল পাপাচার থেকে দূরে থাকার জ্বলন্ত পিরামিড হয়ে থাকবে ।
হাবিল কাবিলের মত কোরবানী কবুল হওয়ার চাক্ষুস প্রমান যদি বর্তমান সময়ে থাকত তা হলে বর্তমান মুসলমানদের ৯০% এর পশু গুলো জীবন্ত থেকে যেত ।আর তা দেখে কাবিলের মত এই ৯০% বাকী ১০% কে হাবিলের মত হত্যার স্বীকার হতে হত ।কারন আমাদের সবার আত্নসমালোচনা করে দেখলে দেখা যায় আমাদের সবার ভিতরে একটা রাক্ষুসে হিংস্র পশুত্ব আমরা লালন করে যাচ্ছি।যার বহিঃপ্রকাশ হয়ে যাচ্ছে নিজের ,পরিবারের ,সমাজের ও রাষ্ট্রের তৃন্মুল পর্যায় থেকে ভিবিন্ন ধাপে ধাপে ব্যক্তিগত অনৈতিকতা, পারিবারিক ,সামাজিক ,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ভঙ্গুর ও বিপর্যায়ের মাধ্যমে।
অন্ন বস্র বাসস্থান সহ মৌলিক চাহিদা পুরোন করতে পারছে না দুই শ্রেনী । শুধু অবৈধ হারাম টাকায় লালিত পালিত উচ্চবিত্তরা মহা সুখে আছে ও নিরাপদে জীবন যাপন করছে। আর দিনে দিনে নদীর পাড় ভাঙ্গার মত ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে আমাদের বাংলাদেশের সভ্যতা ও সংস্ককৃতি ভারতের গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
"লাব্বাইক ।আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক।ইন্নাল হামদা ওয়া নেয়মাতা লাকা ওয়াল মুলুক।লা শারিকালাকা"-হে প্রভু!আমি হাজির হয়েছি তোমার দরবারে।তোমার কোন শরীক নাই,তুমি আমাদের রব"
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন ,হেদায়াতের আলোতে আমাদের মনের অজ্ঞতা অন্ধকার দূর করে দিন। আরাফাতের লক্ষ্য লক্ষ্য ক্ষমাকারীদের সাথে আল্লাহ আমাদের কবুল করে নিন ।বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের সকল মুমিন মুমেনা জান্নাতুল ফেরদাউসের অধিবাসী করে নিন আর জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন ।আমিন সুম্মা আমিন ইয়া গাফুরুর রাহিম ইয়া রাহমানুর রাহিম।
বিষয়: বিবিধ
১৯৯৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আনুষ্ঠানিকতায় আজ পর্যবসিত আজ দিন দিন!
প্রকৃত কুরবানীর মহিমা ফুটে উঠুক সমাজের প্রতিটি বিষয়ে-এই কামনায় সবাই কে পবিত্র ঈদুল আজ হার শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন