শ্বাশুড়ি বনাম ছেলের বৌ
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৩ জুলাই, ২০১৫, ১২:২৪:৪৩ রাত
পারভীন আপা, আপনার ছেলের বৌ রা কি অনেক ভাল?
মুখবন্ধ করে মুডঅফ হয়ে থাকার চেষ্টা করে বার বার ব্যর্থ হয়েছি। তাই মুখ ও মন দুই টাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর ছেড়ে দিয়েছি। যাকে ভালবাসি মন প্রান উজাড় করেই ভালবাসি ।সেই ভালবাসায় উচুনিচু ব্যাবধান বুঝি না । ভাল লাগা ভালবাসা শুধু প্রভুকে পাবার জন্য । সেই সুত্রেই জিয়ার আম্মার সাথে পরিচয় । একদিনের আলাপ আর ভালবাসা ।
সাহেবের ডাক, পারভীন তোমার বান্ধুবীী এসেছে। শুনেই বুঝেছি আমার বান্ধুবী বলতে উনারা য়ামার খালাদের (এপার্ট্মেন্টের ছুটা কাজের বুয়া) আর এপার্ট্মেন্টের জরিনা রুবিনা(ক্লিনার) দেরকেই বুঝায়।তাদের ভালবাসা আর আবদারের সময় আমার মনে হয় তারাই আমার আর আমিও তাদের খুব কাছের বান্ধুবী।সেই ভেবে সামনে গিয়ে দেখি জিয়ার আম্মা।বহু ফ্লাটে আমার নাম বলে বলে খুজতে খুজতে ক্লান্ত হয়ে এসেছেন।
দুনিয়াবী ভাবধারায় বলতে হয় গরীবের ঘরে হাতির পা।আমি সেই চিন্তা বাদ দিয়ে আল্লাহর খুশির চিন্তায় যার পর আর নেই ভালবাসা দিয়েই অভ্যধনা জানালাম।আমার নাতি নাতনী সহ আমার মামনি (ছেলের বৌ) সাক্ষাত করলেন। মামনি উনার জন্য আপ্যায়ন করতে গেলেন আর আপা নিজের পরিবারের অনেক কথা বললেন।ছেলে আর ছেলের বউ নিয়ে আলাপ।আপা মাত্র কয়দিনেই অস্থির তাই আমার কাছেই ছেলের বঊরা কিভাবে নাতি নাতনি নিয়ে একসাথে এত বছর আছেন তা জানতে চাইলেন।আমি বললাম আল্লাহ রহমতে আছেন। না তাতে তিনি খুশি নন।তখন আমি আমার দিলশাত আপার কথাটা বললাম,"পারভীন আপা, আপনার ছেলের বৌ রা কি অনেক ভাল?কারন শ্বাশুড়ি মানেই সব চেয়ে খারাপ এক যন্ত্রনা।তাই বললাম"।আমি সাথে সাথে বলেছি,আলহামদুলিল্লাহ "আপা আমার মামনিরা জান্নাতী মেহমান" ।
তখন জিয়ার আম্মাকে বললাম , আপা আপনার এক ছেলে এক মেয়ে ।এখন হয়েছে দু ছেলে দুই মেয়ে।স্বামী না থাকাতে মেয়ের জামাইকে বানালেন সংসারের গভর্নর।এই বার সংসারের ভিতরের দায়িত্ব বউ মা কে দিয়ে তাকে বানান রানী।আর আপনি হয়ে যান মহারানী।ছেলের বউ কে সংসারের কিছু দিক স্বর্ত ত্যাগ করে ছেড়ে দেন । বিশেষ করে রান্না ঘর ফ্রিজ তালা দিয়ে রাখার চাবির গোছাটা ।আপনার মেয়ে হলে কি সে এই গুলো দেখা শুনা করলে আপনি খুশি হতেন না।এখন তাই ভাবেন। তাতে আপনার অনুপুস্থিতে সেক্রেটারী আপনার মত করেই সংসার চালায়ে নিবেন।
শ্বাশুড়ী বনাম ছেলের বৌ ঃ
আমরা কি এই গৃহযুদ্ধেই জীবন কাটায়ে দিব। শ্বাশুড়ী বনাম ছেলের বৌ । কেন যুগ যুগ ধরে এই নিরব যুদ্ধ চলে আসছে।আর কত দিন চলবে।এর সমাপ্তি কি আমরা দিয়ে যেতে পারব না?শ্বাশুড়ি তো একজন মহিলা আর ছেলের বৌ সেও তো আমার মেয়ের মত আরেক মায়ের মেয়ে ।শ্বাশুড়ী যখন হচ্ছিলাম সেই দিন অনেক কেন্দেছি আল্লাহর কাছে। আল্লাহ আমাকে জীবনের শেষ পর্যায়ের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ন কর।এখন সেই আবেদন জানাচ্ছি। আমি আমার সংসারের অনেক দিক মামনিদের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমি হেরে যাইনি।বরং আমার মাথার বোঝা হালকা লাগছে।জীবন আপনাকে ছাড়পত্র দেবার আগে আপনি জীবিত থাকতে আপনার কিছু দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দেন ।কি হবে সব নিজের মুটে ধরে রেখে।
আমার মামনিদের আর আমার মাঝে চলে সালামের প্রতিযোগীতা । সাথে মিষ্টি হাসি আর কৌশল বিনিময়। বড় মা তো একটু আদর পেলে গলা জড়ায়ে আমার দুই গালে কত গুলো চুমু খেয়ে তারপর গলা জড়ায়ে রাখবে।একটা নতুন কিছু পরবে আর এসেই মা বলেন তো আমাকে দেখতে কেমন লাগছে? মাশাল্লাহ মনে হচ্ছে আমার সারা ঘর আলোকিত হয়ে গেছে ।খুশিতে সাথে সাথে আবার গলা জড়ায়ে আদর করা শুরু। আমার ছেলেদের বকা শুনতে হয় আমার মাদের সাথে অনিয়মের জন্য।
মেঝে মা তো তার বাচ্ছার মত আলহামদুলিল্লাহ আমাকে দেখে রাখে।তাদের স্বাধীনতা আমার থেকে ১০০% দেওয়া ।আমার মনে হয় যেখানে শ্বাশুড়ি বউ মিলে মিশে থাকে সেই ঘরের পুরুষেরা (বাবা ছেলে ) বাহিরে শান্তি মনে থাকতে পারে ও আয় রোজগারে মন দিতে পারে। ঘরে গৃহ যুদ্ধ শ্বাশুড়ি বউ ননদ জা দের মধ্যে চলতে থাকলে তারাও মানুষীক হয়রানিতে থাকে।এই ক্ষেত্রে ছেলেদের উচিত মা ও স্ত্রীর মাঝে শরিয়াহ মোতাবেক স্ত্রী কে তার মর্যাদা আর মাকে মায়ের মর্যাদা দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা ।আর শ্বাশুড়ি তো একদিন বৌ ছিলাম ।সেই দিন আপনি আপনার স্বামী বা সংসারে যেমন ভুমিকা চেয়েছিলেন তা হয়ত পেয়েছেন বা পাননি ।তাই সেই শিক্ষা কে বাস্তবায়ন করে আপনার বৌ মাকে সেই সুযোগ গুলো দিয়ে দেন ।
আমার ছেলেদের বৌ মারা কত ভালবাসে তা আমার সাথে গল্প করে বলেন ।আমি তখন ওদের কে সাথে নিয়ে বলি আল্লাহ তোমাদের এই ভালবাসা জান্নাতুল ফেরদাউসে যাবার জন্য আরো বৃদ্ধি করে দিন। ওদের ভালবাসা বৃদ্ধির জন্য আমরা স্বামী স্ত্রী আমাদের ভালবাসা তাদের সামনে প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করি না।আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবার নয়নশীতলকারী ও মুত্তাকীনদের ইমাম বানিয়ে দিক।
বিষয়: বিবিধ
১৭১৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন