মুসলিম মেয়েরা কি হিন্দু প্রথার ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বের হতে পেরেছে?তবে মনে রাখবেন ,আমরা মসলিম নারী।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৪ মার্চ, ২০১৫, ০৪:৩২:৩৯ রাত
আমার প্রতিবেশি নয় তলার দাদা মারা গেল।বৌদি আমায় কান্না করছে আর বলছি ভাবী আমি এই বার কোথায় গিয়ে বাঁচব ? কথাটার অর্থ তেমন বুঝলাম না। ১৫ দিন পরে বৌদির ডাক্তার মেয়ে আমাকে আর সাহেব কে খুব তাড়াতাড়ি তাদের বাসায় নেয় ।কারন তার এক মাত্র ভাই তাদের মা মেয়ে কে বের করে দিচ্ছে ।হিন্দু মেয়েরা তাদের ধর্ম অনুসারে বাবা বা স্বামীর সম্পত্তির মালিক হয় না । ডাক্তার মেয়ে তার মা এর বার নিতে পার বে না ।আমার তার মা যে তাদের নানার বাড়ি গিয়ে থাকবে তেমন উপায়ও নেই কারন বৌদির বাবা মা কেউই বেচে নেই ।ভাইরা , সেই বাড়িতে উঠতে দিবে না। আমি অবাক হয়ে গেলাম বৌদির আর মেয়ের কান্না দেখে।
বাসায় এসে ভাবলাম ,আমাদের ইসলাম মেয়েদের জন্য কত শান্তির ,সন্মান ও সম্পদের ব্যবস্থ্যা করে দিয়েছে।সামান্য কিছু পরিবার এই নিয়ম অনুসারে মেয়েদের সাথে মেনে চললেও অনেক পরিবারে কিন্তু আমাদের মুসলিম মেয়েরা কি তা সঠিক ভাবে পাচ্ছে না? যেমন ,
১। মোহরানা ও স্বামীর সম্পদের মালিকানা ঃ
বিয়েতে মোহরানা কয় জন মুসলিম পুরুষ সঠিক ভাবে তার স্ত্রীকে দিচ্ছে? কি এক ভিক্ষা চাওয়ার পর মাফ করে দেওয়ার মত ভাসর ঘরে মাফ চায় ।আর ঐ সময় লজ্জা শরম আর আতংকে থাকা মেয়েরা একবার না ১০০ বার মাফ করে দিও সেই রাতে কোন অশান্তি সৃষ্টি করে না।তার মানে কি আল্লাহ ফরজ করে দেওয়া হক প্রাপ্যটা মাফ হয়ে গেল।
স্বামী বেচে থাকতে সবার সম্পদের ভাগ দিয়ে গেলেও স্ত্রীর অংশ টা দিয়ে যান না ।কিন্তু স্বামী মারা গেলে একটা মেয়ে ভালবাসার মানুষ হারানোর ব্যাথায় ব্যাথিত সেই সময় আত্নীয় স্বজন মিছিল করে আসে আর বলে ,"আপনার স্বামীর লাস দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছি উনাকে মাফ করে দেন। তখন মেয়েরা শোকাহত হৃদয় ও লোক লজ্জার ভয়ে বলে মাফ করে দিলাম"।কিন্তু ইসলাম যে মোহরানা আর স্বামীর সম্পত্তির ৮ ভাগের এক ভাগ মেয়েকে দিল সেই মেয়ে তো তা থেকে বঞ্চিত হল আর আল্লাহর ফরজ আদায় হয় নাই ।তাও কি মাফ পেয়ে যাবেন ঐ স্বামী?
২। একটা মেয়ে তার বাবা /ভাই থেকে পাবার অধিকার ইসলাম দিয়েছে । ছেলেরা যা পাবে তার অর্ধেক একটা মেয়ে পাবে । কিন্তু আমাদের মুসলিম বাবা ছেলেদেরটা দিয়ে গেলেও মেয়েদের টা জীবিত থাকতে দিয়ে যান না ।তা ছেলেদের মাঝে রেখে যান। অথবা ছোট ছোট মেয়ে রেখে বাবা মারা গেলে ভাইরা বোনদের লালন পালন করে বিয়ে দিয়ে দেন। এরপরে আর তাদের কে বাবার সম্পত্তির ভাগ দিতে চান না। আবার গ্রাম্য কুসংস্কার দিয়ে মুখ বদ্ধ রাখেন যে,মেয়েরা বাবার বাড়ির হক নিলে ধ্বংস হয়ে যাবে । তখন আর সেই মেয়েটা ভয়ে মুখ খুলে না। তা হলে এই এতিম মেয়ে/বোন টা কি এখানেও ইসলামের দেওয়া বাবা /ভাই থেকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে ? আর সেই বাবা / ভাই কি আল্লাহর কাঠগড়ার পাকড়াও থেকে মাফ পেয়ে যাবে?
আমার এই খানে প্রশ্ন ? ইসলামের আলোকে একটা মেয়ে আদর্শ স্ত্রী হিসাবে ধৈর্য্য ধরে স্বামীর সংসার করে সে হলো বঞ্চিত। যেমন হিন্দু মেয়েরা হয় বঞ্চিত ।আবার এতিম মেয়েটা বাবা/ভাই তাদের থেকেও প্রাপ্য অধিকার থেকে হলো বঞ্চিত । যেমন একটা হিন্দু মেয়ে হয় বঞ্চিত। তা হলে মুসলিম মেয়েরা কি হিন্দু প্রথার ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বের হতে পেরেছে?
আমার এক কাজিন বোন আছেন।তিনি ৫ ভাইয়ের এক বোন ।আমার চাচা মারা যাবার কাজিন ভাইরা বাবার জায়গায় বিল্ডিং তোলেন আর আমার ভাইরা পেলেন ৪ টা করে ফ্লাট আর সেই বোনকে দিলেন দুই টা ফ্লাট।বোনের স্বামীও তাকে প্রাপ্য সম্পদ (মোহরানা +স্বামী থেকে প্রাপ্য অংশ ) হাসি খুশি মনে দিয়ে দেন। সম্পদ নেওয়ার পরেও স্বামী ও ভাইদের ভালবাসার কোন ঘাটতি য়নি । বরং আরো বেড়েছে তার সন্মান ও মর্যাদা ভালবাসা ।
স্বামী ও বাবা/ভাই দের কাছে মেয়েরা আল্লাহর কোরান ও সুন্নাহ মোতাবেক প্রাপ্য সম্পদ চাইলে তাতে শুরু হয় মনোমালিন্য । আর এর সমাপ্তি হয় সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মাধ্যমে ।আর শেষ মেষ যদি দেন্ও খারাপ বা যা মার্কেটে চলবে না সেই রকম একটু ভিক্ষা দেওয়ার মত দিয়ে দেন ।এরপর বেড়াতে যাওয়া বা কথা বলা তো দূরে থাক ।তার মানে এই ভাই জীবনে আর এই বোনের লাস দাফনেও আসবে না ।
কিন্তু তিনি আবার উনার স্ত্রী বাবা/ভাইদের থেকে আনা সম্পদের উপর বহুতল বিশিষ্ট ইমারত গড়ে জান্নাতের সুখে থাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। মেয়ে টা ভাই এর বোন না হয়ে যদি ভাই হতেন তখন কি তিনি তার বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে পারতেন? না সম্পর্ক নষ্ট করার মত চিন্তা চেতনা রাখতে পারতেন।তা হলে এই মুসলিম মেয়ে টা কি তার প্রাপ্য ইসলাম দেওয়া অধিকার পেয়েছে ।আপনি একজন ইসলাম জানা বাব/ভাই হিসাবে বলুন?
আবার জামিলের মা তার জন্মের ২ বছর পরে জামিলের বাবার সাথে পারিবারিক কলহে লিপ্ত হন ।এক পর্যায়ে তালাক হয়ে যায় । এতে জামিলের মা ১০ লক্ষ টাকা মোহরানা পুরা পেলেন ।আবার বাচ্ছা সাবালোক না হওয়া পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা জামিলের খরচ বাবদ পাচ্ছে ।তখন অন্য মেয়েরা এতে আরো উতসাহ পায় ।আর তাই বর্তমানে পারিবারিক কলহ আর বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে । ইসলামের সঠিক প্রয়োগের অভাবেই এমন হচ্ছে ।
আসলে ইসলাম মানে শান্তি। যেমন ট্রেণ সমান্তরাল লাইনের উপরে ঠিক ভাবে চলে আপনাকে লক্ষ্য স্থলে পৌছাবে । আর একটু লাইন বক্র হলেই দুর্ঘটনার কবলে পড়লে আপনার জান মাল জীবন সবই হারাবেন ।তেমনি আপনি বাবা /ভাই /স্বামী যেই হোন না কেন আপনি আপনার স্ত্রী/বোনকে ইসলামের দেওয়া পুর্ন অধিকার দেন ।তা হলে পরিবার সমাজ রাষ্ট্রে অনেক শান্তি নেমে আসবে । এতিমের হোক মাছিও খায় না ।
তবে মনে রাখবেন ,আমরা মসলিম নারী ঃ
আমরা সুহাসিনী, প্রিয়দর্শিনী,মিষ্টভাষিনী, আদুরিনী, সোহাগিনী.হিসাবে আমরা আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি।আমরা নবী সাঃ প্রেমাস্পদ আয়েশার প্রতিচ্ছবি। আমরা স্বামীর হৃদয়ে ভালবাসার সৌরভ ছড়ানো গোলাপকুঁড়ি। আবার লজ্জাবতী বীথিকা।বক্রতা, আহ্লাদিপনা, ভালবাসা, হাসি, কান্নার বিস্ময়কর সমন্বয়।সুন্দর, সুন্দরিতা এবং সৌন্দর্যের সমাবেশ।আমরা বাবার আদুরে মিষ্টি মেয়ে আবার ভাইয়ের খুনসুটি কারিনী বোন।স্বামীর অভিমানী প্রেয়সী। সন্তানের মমতাময়ী মা..কোমলতা আমাদের ধর্ম,তবে যুগ যুগ ধরে রথী মহারথীরা যুদ্ধ করার স্পৃহা নিয়ে আসছে আমাদের কাছে থেকে।ভেবনা আমরা অবলা আর অপয়া ।আমরা তোমাদের জন্য চিরন্তন ভাগ্যবতী।আমরা মুসলিম নারী । আমরা সুমাইয়া সাদিয়া মত রমণী...নারীত্ব আমার গর্ব।আমরা নারী। আমরা বিবি খাদিজা আর মা ফাতেমার মতি বিধাতার সুদর্শন সৃষ্টি...তাই আমাদের সন্মান করতে শেখ ।আল্লাহ তোমাদের সন্মানিতদের কাতারে শামিল করবে । —
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লেখেছেন আপু। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন।
মাশা-আল্লাহ, আপু দারুন লিখেছেন। কটু হলেও সত্য কথাগুলো সমাজকে শুনিয়ে দেওয়া আজ বড়ো প্রয়োজন। জাযাকিল্লাহ খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
আপু আপনার সন্তানগুলো কি ভালো আছে? লিখাপড়া ঠিক মত করছে?। তাদের জন্য দোয়া রইল।
নারী বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা যেন আমরা সকলে মেনে চলতে পারি। সেটিই সবচেয়ে কল্যাণকর ও উত্তম। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার তাওফীক দিন।
জাযাকিল্লাহু খাইর আপা!
মন্তব্য করতে লগইন করুন