"রূপ না থাকিলে সখি কাজল দিলে কি হবে ?"

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৩ মার্চ, ২০১৫, ০২:৩৬:২২ দুপুর

"রূপ না থাকিলে সখি কাজল

আম্মু আম্মু , মেয়েরা চোখের নীচে দিয়ে এইটা কি দেয় ?

আরে বাবা , এইটা এক ধরনের রং , নাম মনে হয় আয়্যারল্যান্ড ।

ছেলে হাসতে হাসতে বলে , "তাই তো বলি ছেলেরা একপলকে কেন আয়্যারল্যান্ড চলে যায় ?মেয়েদের চোখের নীচে আয়্যারল্যান্ড থাকলে সেখান দিয়েই তো ফ্রীল্যান্ড হইয়া জাহান্নাম চলে যাওয়া যায়।"

আসলে আমার মেয়ে না থাকায় এবং নিজেও ব্যবহার না করয় কোন কসমেক্টিসের নামও জানি না আবার কোন টা কোন জায়গায় কিভাবে লাগায় তাও আমি জানি না । বলতে পারেন আমি গ্রামের ক্ষেত বা আদিম যুগের মানুষ ।হতে পারে আমার রুচি হীন বা বিনোদন বলতে কিছুই নেই।

আল্লাহ আমাকে মাফ করুন । কিছু লাগায়ে নকল সাজে নিজেকে জাহির করার মাঝে আমি আসলে কোন আনন্দ খুজে পাই না । আমার চোখে একটু কাজল লাগানোর শখ ছিল ।তাতে আমার মা আমাকে একদিন বলে উঠলেন ,"রূপ না থাকলে সখি কাজল দিলে কি হবে ?" আমি তখন প্রাইমারীতে পড়ি তাই এর কোন অর্থ বুঝিনি । পরে ভাবীদের একজন কে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ।

আমার মা বুঝাতে চেয়েছেন ,একটা মেয়ের মাঝে তার ইসলামের আলোকে আলোকিত করা গুন গুলো না থাকলে সেই মেয়ে বাহ্যিক যত সুন্দরই নিজেকে সাজুগুজু করুক না তাতে কোণ লাভ নেই । মা আরো ভয় পেতেন , কোন ছেলের বা পরিবারে বিয়ে হয় সেই খানে যদি সেই ছেলে এই রুপচর্চার প্রসাধনী কিনে দেওয়ার সামর্থ না থাকে তখন তো শুরু হবে অশান্তি। আসলেই আমার স্বামী ছিলেন একজন ছাত্র । আবার যৌথ সংসারের আমি আমার এই চাহিদা বা সখের কথা কোনদিন বলার চিন্তাও মাথায় আনার সুযোগ পাই নাই ।স্বামীকেও কোন এই জন্য মন খারাপ থাকতে দেখিনি । আলহামদুলিল্লাহ ।

মজার ব্যাপার শুনবেন ,প্রথম বার ভঙ্গভবন যাওয়ার দিন সাহেব পাঠালেন উনার বড় ভাবীর বাসায় গিয়ে আমি যেন সেইইই রকম সাজুগুজু করে আসি । এই সবাই খুব হাইপাই ভাবে যান ।আমি বুঝালাম আমি তো হিজাব খুলব না তা হলে আর সেজে লাভ হবে কি ? না উনার ভায়না ও খুব সখ আমি যেন আজ একটু সেজে যাই ।কথা না বাড়ায়ে একই এলাকায় বড় জা থাকে তাই আমি নিচে একবারে নেমে গেলাম আর বললাম আমি ইনটার কম করলেই তুমি নীচে নেমে এসো । প্রায় আধা ঘন্টা সময় গাড়ি পার্কিং এ পার করে আমি ডাকলাম আর উনি নীচে নেমে আসলেন । তখন ভুয়োশী প্রশংসা আবার বাসায় আসার পরেও বোরকা হিজাব খুলার পরেও একই প্রশংসা ।তখন আমি বললাম , জানো তোমার চোখ গুলো অনেক ভাল ।আলহামদুলিল্লাহ। কারন আমি তোমার বড় ভাবীর বাসায় যাইই নাই । আমি আগের মতই আছি ।এমন মনের মানুষ আমার স্বামী ।আলহামদুলিল্লাহ ।

আমার যখন শুনি বোনরা বলে, "আরে আপা আল্লাহর পথে দান কিভাবে করব ?আমার স্বামী তো ঠিক মত আমার কোসমেক্টিস এর খরচটাই দিতে পারে না। আমার মায়ের থেকে নিয়ে আমি সেই খরচ চালাই" ।আবার মায়েরা বলেন , আপা মেয়ের জন্য স্টাব্লিস্ট ছেলে খুজে দিবেন । প্রাইভেট /সরকারী চাকরীজীবি গুলো তো নুন আনতে পানতা পুরায় আবার আমার মেয়ের পার্সনাল খরচ চালাবে কোথার থেকে "?।

আমার এই গুলো শুনলে কান্না আসে এই ভেবে যে আল্লাহর দেওয়া রুপের বাহিরে আমরা কেন সামুয়িক একটু সময়ের জন্য দেওয়ালের প্লাস্টারিং করার পর বার্জারের এনামিল ফ্রিন্টের মত নিজের চেহারাটাকে বিউটি পাল্লারে গিয়ে বিউটি হতে হবে? মেয়েরা সাজুগুজু প্রিয় ও তা দেখাতে পছন্দ করে ।আল্লাহ তা জেনেই মেয়েদের জন্য ১/২ জন না ১৪ জন কে তা দেখানোর অনুমতি দিয়েছেন । এর বাহিরে দেখানো আমাদের জন্য হারাম ঘোষনা করে দিয়েছেন । এই কয়জন আবার এমন আপনজন যারাদের মাঝে আল্লাহ আপনার জন্য অটোমেটিক একটা রহমত দিয়ে রেখেছেন । যাদের জন্য আপনার অতিরঞ্জিত সাজার বা খরচের প্রসাধনীর দরকার হয় না।

আমি অনেক মেয়ে ও বোনদের রুপচর্চার পর দেখি স্বামীর সংসারে অশান্তি আর মুখের চামড়া মৃগয়া হরিনীর গায়ের চামড়ার মত বরনের ফোট ফোট দাগে ভরা ।তখন আমার মায়ের ঐ কথাটা মনে পড়ে, "রূপ না থাকিলে সখি কাজল দিলে কি হবে ?" আবার পার্কে ও নানান জায়গায় নর্তকীর সাজে সজ্জিত বেপর্দাশীল যুবতী মেয়েদের দেখি আমাদের ছেলের বয়সের যুবকদের সাথে চলে , তখন দাদী শ্বাশুড়ির কথা মনে পড়ে, আমার সাহেব বার বার আমি কোন খানে কাজ করছি ঐ বরাবর কোথায় বসে আমার দিকে তাকায়ে থাকত ,তখন তিনি বলেছিলেন , "যৌয়ান যুবকদের চোখে পেত্নীও রূপসী জলক দেয়" ।

আমি জানি আমার লিখায় আমার অনেক বোনরা আমার উপর ক্ষেপে যাবেন । কিন্তু আমি যখন দেখি আমার গেইটে রিক্সা ঠিক করতে দাড়াই , তখন দেবী সাজে সজ্জিত বোন/মেয়েদের দিকে অপলক নয়নে আমার গেইট কিপারদের ও ক্লিনার রঞ্জুনকুমার এমন ভাবে তাকায়ে থাকে যেমন ভাসর ঘরের নববধুর দিকে তার স্বামী তাকায়ে থাকে। তখন মনে হয় ,হায় বোন/মেয়ে তুমি তো জানো না তোমার বাসন্তী রূপের ঝলকে কত কুকিলের মনে তোমাকে পাবার কুহুতান দিয়ে গেলে । বসন্ত যাবে কিন্তু কূকিল তো কাকের বাসায় ডিম পেড়ে রেখে যাবে ।আর বোকা কাক সেই ডিম তা দিয়ে ফোটাবে আর দেখবে কলংকিত বাচ্ছা ।

রুপচর্চার টিপস ঃ

এটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বানানো । আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অজুতে তো করবেনই আর বাকি সময়ও অজু করবেন বার বার আর অজুর সময় মুখে পানি দেওয়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়ার সাথে মুখ ধৌত করেন । ৩ বারের জায়গায় আপনি ৭ বার বা বিজোড় আরো বাড়ান । তার পরে মুখের জন্য নরম আলাদা কাপড় দিয়ে আলত ভাবে মুখ মুছবেন ।যা আপনার শরীলের বা অন্য কারো শরীলে অন্য জায়গায় ব্যবহার হয় না। মুখে সাবান বা অন্য কোন প্রকার কসমেক্টিস কিছুই না ব্যবহার করে আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন । আর বার বার আয়নায় নিজের চেহারা দেখার সময় আল্লাহর সাহায্য চান ।আর এই দোয়া টা বলুন।

"হে আল্লাহ! আমার ভিতরকে আমার বাইরের চেয়েও সুন্দর করে দাও, আর আমার বাহিরকেও ভাল করে দাও"। আমিন। —

বিষয়: বিবিধ

২৫৩৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

308685
১৩ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০২:৪৮
আফরা লিখেছেন :
"হে আল্লাহ! আমার ভিতরকে আমার বাইরের চেয়েও সুন্দর করে দাও, আর আমার বাহিরকেও ভাল করে দাও"। আমিন। জাজাকাল্লাহ খাইরান আপু ।

আপু মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে না হলে সাজাটা খারাপ কিছু নয় । পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হালকা একটু সাজলে মন ভাল থাকে আপু । ডিপপ্রেশনের রোগীদের জন্য এটা একটা থেরাপি ।

আবারও ধন্যবাদ আপু ।
১৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৮
249704
সত্যলিখন লিখেছেন : ঠিক বলেছ । অতিরঞ্জিত কিছুই ভাল নয় । তবে একজন খাটি মুমিন ডিপপ্রেশনের রুগী হওয়া উচিত নয় ।আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন রোগের থেকে মুক্তি নেই ।যার প্রমান আমি বার বার পাচ্ছি ।


308686
১৩ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:০৩
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : "হে আল্লাহ! আমার ভিতরকে আমার বাইরের চেয়েও সুন্দর করে দাও, আর আমার বাহিরকেও ভাল করে দাও"। আমিন।

আপু সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৪২
249707
সত্যলিখন লিখেছেন :


Praying Praying Praying
308687
১৩ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:১০
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আল্লাহ নিজে সুন্দর তিনি সৌন্দর্য্ পছন্দ করেন। আর যে কোন কাজেই সীমালংঘন করা তিনি অপছন্দ করেন। তাই সাজগোজ করা দোষের কিছু না। যদি তা পরপুরুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে না হয়। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
১৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৪০
249706
সত্যলিখন লিখেছেন : সহমত ১০০%



Praying Praying Praying
308691
১৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:০০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৯
249705
সত্যলিখন লিখেছেন :
308697
১৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৪০
আব্দুল জাব্বার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান
১৩ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৫
249708
সত্যলিখন লিখেছেন :

308708
১৩ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
স্বপন২ লিখেছেন : চমৎকার হয়েছে আপু।
মুখে এবং চোখের নীচে যথেষ্ট নার্ভ টিসু রয়েছে। প্রসাধনী লাগার ক্ষেত্রে চিন্তা করতে
হবে। TMS হবার সম্ভবনা থাকে100%।
০৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:০৩
253952
সত্যলিখন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর।
308709
১৩ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪০
বাজলবী লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর।
০৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:০৩
253953
সত্যলিখন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর।
308728
১৩ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:৩৪
যুথী লিখেছেন : নিজে যে ইসলাম মানেন, ঐটাকে ইসলাম না বলে ইসলামের শিক্ষা তুলে ধরেন। ইসলামের রূপ চর্চার যথেষ্ঠ সুযোগ আছে। নবীর স্ত্রীরা ঘাড় সমান করে চুল কাটতেন মাঝে মাঝে। মুখে হাতে রং এর ব্যবহার হতো সর্বত্র। আপনার স্বামী বা আপনি ইসলামের দলীল না। ইসলাম অনেক ভালো। আপনারা সেটাকে অযথা গন্ডিবদ্ধ করেছেন
০৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:০৩
253954
সত্যলিখন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File