আমার স্বল্প জ্ঞানে ভিত্তিতে কামারুজ্জামান ভাইকে যতটুকু জানি
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:১৯:০১ সকাল
আমার স্বল্প জ্ঞানে ভিত্তিতে কামারুজ্জামাকে ভাই যতটুকু জানি
আমানতদারী কাকে বলে ?
১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে কামারুজ্জামান ভাই ইসলামিক মিশন অফ জাপান এর একটা বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান অথিতি কামারুজ্জামান ভাই ।আর সেই ইসলামিক অফ জাপানের টোকিও আর নাগোয়া শহরের সভাপতি আমার স্বামী।
আর কামারুজ্জামান ভাইর বাংলাদেশ থেকে খুব প্রিয় ব্যক্তি আমার সাহেব ।তাই জাপানে প্রোগ্রাম শেষে বিদায় নেওয়ার আগে সাহেব বাংলাদেশে আসলে আমাকে দেওয়ার জন্য ভাইকে কিছু টাকা দিলেন ।
কামারুজ্জামান ভাই আরো কয়েক দেশে সফর করে জানুয়ারীতে আসলেন ।
এই দিকে আমার সাহেব হঠাত এতো বেশি অসুস্থ্য হয়ে গেলেন দ্বীনি ভাইদের কে বলে তিনি বাংলাদেশে চলে আসলেন জানুয়ারীর ১৩ তারিখ ১৯৯৩ সালে ।
জানুয়ারীর ১৬ তারিখ আসরের শেষ সময় মাগরিবের আর ৫-১০ মিনিট বাকী এমন সময় দরজায় নকের আওয়াজ । সাহেব তখন অসুস্থ্যতা নিয়েই দরজা খুলে দেখেন কামারুজ্জামান ভাই একা সাথে আর কেউই নাই । দুই জন কে দেখে অবাক হয়ে সালাম বিনিময় করলেন । বাসা খুজে বের করতেই ভাইর দেরী হয়ে গেছে । কারন পুরান ঢাকার ঠিকানা হাতে নিয়ে বাসা খোজা আর গহীন অরন্যে গুপ্তধনের সন্ধান বাহির করার চেয়েও কঠিন ছিল তখন।এতো গিঞ্জি এলাকা।
কামারুজ্জামান ভাই বললেন ,আপনি আগে ভাবীর হাতে আমাকে দেওয়া আমানত টা দেন ।আর আমরা মসজিদে চলেন নামাজের জন্য অপেক্ষা করব আর এর মাঝে কৌশল বিনিময়ের কাজটা সেরে নিব । আমি বার বার সাহেব কে একটু সময় বসাতে বললাম । ভাই নামাজের পেরেশানী টাই বেশি দেখালেন।
পরে সাহেবের কাছে শুনলাম , ভাই ঐ দিন দুপুরে এয়ারপোর্ট থেকে নেমে বাসায় গিয়ে শুধু কাপড়টা চেঞ্জ করে সবার আমানত পৌছানোর জন্য বের হয়ে গেছেন ।এর মধ্যে আমার টা আগে স্থান পেয়েছে কারন আমার ৩ বাচ্ছা ছোট ছোট নিয়ে আমি থাকি ।তাই বাচ্ছাদের জন্য আমার টাকাটা বেশি দরকার তাই তাতক্ষনিক আমার বাসার ঠিকানা নিয়ে চলে আসেছেন। আর বাকী দের গুলা যত রাত হোক দিয়ে শেষ করে বাসায় যাবেন ।
আমার আজ মনের ভিতর গুমড়ে গুমড়ে কান্না আসছে আর ভাবছি এত বড় মানের নেতা তাও একা একা সাথে কাউকে না নিয়ে এতো টাকার ও জিনিসের আমানত দেবার তাগিদে লম্বা সফরের শেষে বিশ্রাম বাদ দিলাম পরিবারের মোহেও তো অন্যরা হলে বলতেন আজ থাক কাল নিয়ে দিয়ে আসব । কে কখন চলে যায় তাই আমানত দিয়ে আসার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করলেন। প্রবাসী দ্বীনি ভাইদের পরিবার কে আগে প্রাধান্য দিলেন। নিজের পরিবারকে কৌশল বিনিময়ের সময় দিলেন না।
জীবনে যত দেশে সফর করেছেন ।একবার নিজের বা পরিবারের সুখের কথা ভাবলে আজ তিনি অনেক বড় বড় মিলিনিয়ন আর বিলিনিয়নদের একজন থাকতেন। কারন আল্লাহ উনাকে সেই রকম মেধা ইলেম প্রজ্ঞা দান করেছেন । দুনিয়ার মোহ ছিল না বলে জাপানে সাহেব সহ অনেক দ্বীনি ভাই অনেক কিছু গিফট করতে চাইলেন । তিনি সবাইকে বলে দিলেন আমি ইসলামের কাজে এসেছি আপনারা যে যা দিবেন ইসলামের কাজে ইসলামের কল্যানে পারলে কিছু দেন ।আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে কিছুই দিতে হবে না ।এর চেয়ে আদর্শ নেতা কিভাবে হন ?
জীবনের প্রথমে যখন ঢাকা সংসার জীবন শুরু করি ।কবুতরের বাসার চেয়ে ছোট আর জ্বানালা না থাকায় দিনে লাইট জ্বালানো উচিত ছিল ।কিন্তু বাড়িয়ালীর নিষেধ তাই জালাতে পারতাম না ।আমার বড় ছেলের বয়স ৭ মাস আবার আমি অন্তঃস্বত্তা ।এই সময় সাহেব বললেন ,পারুমনি আজ বিকালে কয় জন মেহমান আসবে ।তুমি আব্বু কে নিয়ে বাড়িয়ালীর বাসায় কিচুক্ষন থেক।" আমি বললাম তা না হয় থাকা যাবে কিন্তু এই ভাঙ্গা চৌকি আর আলো বাতাস ছাড়া রুমে কিভাবে মেহমান বসবে? তিনি বললেন , ওনারা অনেক উপরের মানের নেতা ।তোমার এই রকম অবস্থ্যা দেখে তোমাকে কিছুই বলবে না।তুমি উনাদের কি খাওয়াবে তাই ভাব"।
এই কথা বলেই ১০ টাকা হাতে দিয়ে দিলেন।আমি এই টাকায় মুড়ি আর ছোলা বুট ছাড়া আর কিছুই পেলাম না। আর প্রোগ্রাম শেষে কামারুজ্জান ভাই, আর এ টি আজহার ভাই , মুজাহিদ ভা্ই ,শহিদ মোল্লা ভাই খুশিতে খাচ্ছেন আর বলছেন ,কে বলে ভাবি ছোট ।ছোট বাচ্ছা নিয়ে আর অসুস্থ্য ভাবি আমাদের অল্প সময়ের ভিতরে পেটভরা একটা মজাদার খাবার দিলেন । আলহামদুলিল্লাহ ।সাহেব কোর্ট থেকে আসলে হাজতে থাকা ভাইদের খবর নেই ।কামারুজ্জামান ভাইর কথা বললেন ,"জানো মনি , ভাই এখন আগের মতই আছেন ।একটুও ঈমানী বল আর দৈহিক বল কিছুই ভেঙ্গে পড়ে নাই ।আমাকে দেখলেই আগের মতই হাসিটাই দিয়ে কথা বলে।"
১৯৮৫ সালে আমার কোলে ২ মাসের বড় ছেলের বয়স ।আমার সাহেব, মরহুম আব্বাস আলী খান সাহেব , শহিদ মোল্লা ভাই , মরহুম ইউনুস ভাই সহ অনেককে জেলে ডুকান স্বৈরাচার এরশাদ । সাহেব দীর্ঘ সময় তখন জেলে ছিলেন । এই সময় কামারুজ্জামান ভাই বাসা্র খরচ , আমার খাবার্, বাচ্ছার খাবার , রোযায় ইফতারীর আগে আমার ইফতারী এতো বেশি করে দিতেন যৌথ সংসারের অনেকেই অবাক হয়ে যেত ।আবার আমাকে জেলে বার বার সাহেবের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিইয়েছিলেন । তিনি তা না করলে আমি তাকে ছাড়া ঐ সময় কাটানো অনেক কষ্ট কর হয়ে যেত ।
আমি দ্বীনি ভাই বোনদের অনেক উত্তম আচরনে আমার হৃদয় দুর্বল হয়ে যায় ।আমি তাই আজো ইসলামী আন্দোলনের ভাই বোনদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।আমার আজ মনে হয় কেন সরকার মানুষের প্রতি আর দেশের প্রতি কল্যানকর এই ব্যক্তি দের ফাসি দিয়ে দেশের ও জনগনের বন্ধুর মত মানুষদের শেষ করে দিচ্ছে। আমাদের এই দ্বীনি ভাই বোনেরা শুধু অন্যের কল্যানে নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে সুখ পায় ,দুনিয়ার মোহে তারা একটা নিঃশ্বাসও ফেলে না ।
দেশের ও দশের কল্যানে নিজেকে ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে দুনিয়ায় শান্তি আর আখিরাতে মুক্তি লাভ করাই একমাত্র উদ্দেশ্য । তাই রবি শষ্যের মত ভাল ঈমানী এলেমী আমোলি বীজ গুলো ধবংস করে দিবেন না।আল্লাহ এই জন্য নমরুদ ফেরাউন কে মাফ করেন নাই।আপনারা এখন সময় আসে অন্যায় অত্যাচার অবিচার বন্ধু করুন । না হলে একই পরিনতি ভোগ করতে হবে ।আল্লাহ সকল মজলুম কে উনার হেফাজতে রাখুন ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিশ্চয় এই অবিচারের বিচার আল্লাহ্ তায়ালা করবেন।
আল্লাহ ওনাকে হেফাজত করুন।
সৃষ্টিকর্তা তার চলার পথ সহজ করে দেয়।
যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তার ওপর প্রবল
বিশ্বাস রাখে, সৃষ্টিকর্তা তার
ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনা।
—হযরত উমর (রাঃ
কত মেধাবী ছিলেন...কিন্তু আচরণে কখনো বুঝতে দেননি।
শুধু তাই নয় একটা নিয়মিত সেনাবাহিনির হুকুমদাতা।
শুধু তাই নয় একটা নিয়মিত সেনাবাহিনির হুকুমদাতা।
পড়তে দেখতে পারেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন