গল্পে গল্পে খুকু হল কন্যা , জায়া ও জননী

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৩৮:২১ রাত

খুকু হল কন্যা , জায়া ও জননী



কন্যা হল খুকুঃ

আজকের কন্যারা যখন পুতুল খেলে গেইম খেলে বাবার কোলে ছড়ে নাগর দোলায় দোল খায় , বাবার মোবাইলে বাবার সাথে কথা বলে সেই একই বয়সের খুকু ছিল এই সব কিছু থেকে বঞ্চিত। খুকু ছিলো ভিন্ন জগতের কন্যা ।তাই তাকে মায়ের ঘরের ,কখন নানার বাড়ির নান নানী মামা মামী আবার কখন খালা খালু বা ফুফা/ফুফুর বাড়িতে থেকে পড়া লিখা ও ঘরের কাজ কর্ম জীবন বাচানোর সংগ্রামে এক সংগ্রামী সুলতানা রাজিয়ার মত এক জীবন যোদ্ধা ।

কখন পুকুর পাড়ে পানিতে নিজের ছবিকে তার বান্দবী মনে করে তার সাথে নিজের আলাপ আলোচনা করে বুদ্ধি নেয় কিভাবে পড়া লিখা শিখে বড় হতে হবে ।পড়ার ফাকে কাজ কর্মের ফাকে ফাকে খুকু মায়ের জন্য কান্দে ছোট আদরের বোনটির জন্য কান্দে।চঞ্চল চপলা অভিমানী খুকু নিরবে সব সহে যায় পত্রপল্লবের মত সব দুর্যগ।

মায়ের পাশে খুকুঃ

পঞ্চম শ্রেনীতেই নানা/ চাচা বিয়ের প্রস্তাব আনা শুরু করে ।এতো শিয়ালের মুখের দাবা থেকে খুকুর মত কন্যাকে কে রক্ষা করবে ।একমাত্র ভাইটি শিয়াল তাড়ায়ে তাড়ায়ে বোনকে পড়ার সুযোগ করে দিল । পঞ্চম শ্রনীতে স্কলারসিপ পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিলেন।এই বার মায়ের সংসারের সব কাজ আনন্দের সাথে করে আরো পড়ার অনেক সময় পায় খুকু ।তার সমবয়সীরা যখন মিছে মিছি বনভোজন আর পুতুলের বিয়ে দিয়ে কেউ কেন্দে বাসায় বুক আর কেউ অট্রহাসিয়ে ভাঙ্গায় ঘুম তখন খুকু হাস মুরগী কবুতর গাছ পালা লালন পালন আর তাদের আনন্দের সাথে আনন্দে মাতোয়ারা।আবার মায়ের সংসারের কাজ আরস্কুলের পড়া নিয়ে শিখায় মহাব্যস্ত।

খুকু হল জায়া মনিঃ

খুকু সপ্তম শ্রনীর পরীক্ষা দিয়েই আসার সময় পাশের বাড়ির নারপিনের অষ্টম শ্রনীর বই গুলো নিয়ে আসে।ভরা সন্ধ্যায় চিরাচরিত নিয়মে অষ্টম শ্রেনীর স্কলারসিপ পরীক্ষায় ভাল করার জন্য পড়ছে।বলা নেই কোয়া নেই সুদর্শন এক যুবক ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে খুকুর নাম ধরেই বলল ,কেমন আছো?পিছনে তাকিয়ে একপলকে চোখে চোখ পড়েই আর উত্তর না দিয়েই আম্মাকে ডেকে আনি বলে দিল ভৌদৌড়।খুকুর ভীত সন্ত্রস্ত গলার আওয়াজে খুকুর আম্মা দৌড়ে এসে দেখেন তার একমাত্র ছেলের সব চেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড।

ভাইয়ের বন্ধু খুকুকে ৪র্থ শ্রেনীতে যেমন দেখেছে তার চেয়ে খুকু অনেক বড় হয়েছে।খুকু লজ্জাবতী লতার মত লজ্জা পাচ্ছে তার মানে লজ্জাবতী লতায় ভালবাসার ফুল ফোটানোর সময় হয়েছে।কোকিলের কুহু তানে বাসন্তী ফুলে শিহরন জাগিয়ে সেই বন্ধুর ভালবাসার বাধনের বাধন থেকে আর মুক্তি পেল না।কিশোরী খুকু কন্যা থেকে হয়ে গেল জায়া(স্ত্রী)।যৌথ সংসারে খুকু বয়সে ছোট হলেও দায়িত্ব ছিল অনেকে তার উপরে।খুকু ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে স্নান সমাপর্ন করে স্বামীর বুকের ভালবাসার সাগরে।এতো ভালবাসা পেলে যৌথ সংসারের ১৫/২০ জনের কাজ কেন লোহার বোঝাও হালকা মনে হয়।আর খুকুর মায়ের আদেশ ছিল স্বামীর দেশের ভিক্ষা করে খেলেও সে রানীর মর্যাদায় থাকে।আর বাবার বাড়িতে সোনার খাটেও ভিখারীর ভেসে থাকে।তাই সব সহে যায়।খুকু বুঝে স্বামীর স্ত্রীর মাঝে ভালবাসার জান্নাতী সুখের চেয়ে বড় কিছুই নেই।খুকুকে স্বামী আদর করে ডাকে মনি।খুকু থেকে সে হল স্বামীর ভালবাসার নয়নমনি।খুকুর নয়নে নয়ন রেখেই তার স্বামী বলতে পারে খুকু কেন অভিমানী?

কিশোরী খুকু হল মামনিঃ

মনি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে.৪ দিনের প্রসব ব্যাথায় ক্লান্ত খুকু তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থ্যায় কার গলার আওয়াজ শুনছে?স্বপ্নে না তো।না কপালে চুমু দিয়ে সব ব্যাথা উপশম করছে বাস্তবে তার ভালবাসার মানুষটি।খুকু জিজ্ঞাসা করে কে তোমাকে ঢাকায় খবর দিয়েছে।তার স্বামী উত্তরে জানায় ,তার ভালবাসার কষ্টে তার হৃদয়ের ব্যাথায় সে চলে এসেছে।আল্লাহর সাহায্য চায় সেজদায় আবার একমাইল পায়ে হেটে গভীর রাতে যায় ডাক্তারের কাছে।

একদিকে বাবা হবে সে কি পুলোকিত আনন্দ আবার ভালবাসার শেষ সমাধি দিতে হয় কিনা সে কি আতংক।খুকুর পছন্দের কত খাবার আনে কিন্তু খুকু তো জীবন দানকারীর কাছে সন্তানের আর নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে যাচ্ছে কষ্টের মাঝেও।জুম্মাবার খুকুর জন্য শ্বশুর বাড়ির মসজিদে আবার বাবার বাড়ির মসজিদে আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া হল।বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা ব্যাথা সয়ে সয়ে খুকুর সারা শরীল নীলাভ রং ধারন করল।ডাক্তার আনা হল,খুকুর আসা বাদ দিয়ে শক্তির মালিক আল্লাহকে ডাকতে বলে গেল।জোহরের আজান হচ্ছে খুকুর ছেলে ভুমিষ্ট হয়েছে।তবে সন্তান ব্যাথা সয়ে কালছে নীল বর্নের শিশু কান্দছে না।নড়া চড়া বা শ্বাস প্রশ্বাস নেই ।তাই মৃত সন্তান বলে ফেলে দেবার চিন্তা শুরু হয়েছে।খুকু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।তাই খুকুকে শেষ একবার দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।

১৬ই ফেব্রুয়ারী খুকুর প্রথম মা হল

খুকুর মা কান্দছে ,খুকু জ্ঞান ফিরলে কি বলবে?তাই খুকুর বুকের কাছেই ছেলেকে নিয়ে রাখল।খুকুর স্বামী সেজদায় কান্দছে মা ছেলেকে একবারে হারাতে হয় কিনা ?

এরই মাঝে আল্লাহ খুকুর ছেলের একবার একটু কান্নার শক্তি দেয়।আর সেই কান্নার শন্দে খুকুর জ্ঞান আসে।আল্লাহ কত মেহেরবান।খুকুর স্বামী সবাইকে সরতে বলে মা ছেলের কাছে চলে আসে।খুকুর কপালে কপাল রেখে অঝরে কানতে থাকে হারাধন ফিরে পাবার আনন্দে।স্বামী সন্তান দেখে খুকু সব কষ্ট ভুলে যায়।এটাই মায়ের বিধান।খুকু বাবু কোলে নিতে বা দুধ খাওয়াতে পারত না।খুকুর মা বহু কষ্ট করে তা শিখায়।আস্তে আস্তে খুকু সব দায়িত্ব পালন করতে থাকে।

খুকু হাতের আঙ্গুল মুখে না দিলে তার ঘুম আসে না।আর খুকুর ছেলেরও হাতের আঙ্গুল না মুখে দিলে ঘুম আসে না। তার জন্য খুকুর মা খুকুর স্বামীর কাছে অভিযোগ তুলেন,খুকুকে শাসন করলে খুকুর হাতের আঙ্গুল চোষা বন্ধ হবে।তার স্বামী, উত্তরে বলেন, মা ছেলে দুই জনই বাচ্ছা ।তাই থাক বাধা দেও্যার দরকার নাই ।

পানির তিনটী রুপ ধারন করে ।

কঠিন তরল বায়বীয়।আর খুকুরা ৪টা রুপ ধারন করে ।একেক রুপ পাল্টাতে বহু কাঠঠুকরা পাখির মত কাঠ কেটে কেটে নিজের অবস্থান তৈরী করে নিতে হয়।তাপ চাপ সহ নানান প্রতিকুলতা সহে নিজেকে ধরে রাখতে হয়।সব ক্ষেত্রে খুকু তার স্বামীকে পেয়ে বন্ধু হয়ে তাকে আগলিয়ে রাখার মাঝে। ভালবাসার গোলাপ কে হেফাজতে রাখার জন্য ডাল তার গায়ে কাটা বের করে রাখে।খুকুর স্বামীও খুকুকে সেই ভাবে হেফাজতে এখনো রাখতে ব্যাকুল।

সন্তান রা বড় হয় তারাও আবার সন্তানের বাবা হয় কিন্তু তারা ভুলে যায় কত ত্যাগ আর কষ্টের ফসল এই আজকের তুমি সন্তান।তুমি হয়েছ সুশীল সমাজের সুষিল একজন।তা তো তুমি তোমার মা বাবার অবদানেই হয়েছো ।তুমি যত বড় হও না কেন তোমার মা বাবার কাছে তুমি সেই ছোট বাবুই আছো। তাই আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের পরেই তাদের কে ভালবাসা দিয়ে ঘিরে রাখ ।তারা তোমার কাছে কিছুই চায় না ,চায় শুধু একটু আদর আর একটু ভালবাসা । এর বিনিময়ে তুমি গড়তে পারবা শান্তি সুখের ঘর।

যে তোমাকে বলে সে মায়ের থেকে বেশি তোমাকে ভালবাসে আর এই কথা বলে মায়ের থেকে ভালবাসা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় , সে তোমার প্রকাশ্য দুশমন ।কারন আল্লাহর ভালবাসার পরে মায়ের ভালবাসার উপর আর কেউই নিঃস্বার্থ ভালবাসা তোমাকে দিবে না ।রাসুল সাঃ মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত এই কথা ৩বার বলেছেন।আজই রংধনুর রঙ্গে রাঙ্গানো চশমা খুলে ফেলে মা বাবা কে ভালবাস।দুনিয়াতে জান্নাতী সুখ ও আখিরাতে স্থায়ী জান্নাত মায়ের পদতলে ।

হে আল্লাহ আমাদের এমন স্বামী সন্তান দান কর যারা হবে আমাদের নয়নশীতল্কারী এবং আমাদের মুত্তাকিনদের ঈমাম বানিয়ে দাও ।সুরা ফুরকান ৭৪

বিষয়: বিবিধ

১৮৯৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

305254
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৪৩
246969
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুালিল্লাহ। আপনাকেও অনেক আন্তরিক মোরাবকবাদ আমার ব্লগে বেড়াতে আসার জন্য।

305262
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:৫৭
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : সুন্দর হয়েছে আপু। চালিয়ে যান।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৪২
246968
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ ।ভাইয়া আপনার উৎসাহ মুলক মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।ইনশাল্লাহ কলম চালিয়ে নিতে প্রানপন চেষ্টা করব।

305263
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১২
বাজলবী লিখেছেন : ভালো লাগলো জাযাকাল্লাহ খাইর।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৪০
246967
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ।

305266
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:৪০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৩৯
246966
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুালিল্লাহ। আপনাকেও অনেক আন্তরিক মোরাবকবাদ আমার ব্লগে বেড়াতে আসার জন্য।


305285
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:০৩
যুথী লিখেছেন : বেশি দুষটো দের আমগো গেরামে ছোট বেলায় বিয়ে দ্যায়। বিশেষ করে যদি ছেমড়ি অলপো বয়েশে পেরেম করতে সেখে, তাইলে তো কতাই নাই। নয় বছরের বিয়া। আপনার কতা শোনে মনে হচ্ছে ভালৈ ফাজিল ছেলেন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৯:৩৬
246964
সত্যলিখন লিখেছেন : এমন কথা কইয়েন না।াআমগো গেরামে সুন্দরী মাইগো ছোট বেলায় বুকিং হইয়া যায়।তাই খুকুর বাবা ছিল না আর একটু সাদা চামড়া এইটাই খুকুর কাল হয়ে দাঁড়ায় । পেরেম করার সময় দেয় না ।তাই সারা জীবন একজনের সাথেই প্রেম করে যাচ্ছি ।যা হালাল ও বৈধ আছে এখন।খুকু বাংলা মিডিয়ামে পড়া লিখা করেছে ।আরবী লাইনে পড়লে ফাজিল পাস করতে পারত।তাই খুকু ফাজিল ছিল না।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:০৬
247009
যুথী লিখেছেন : কুসি হলাম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File