আল্লাহর বিধান অমান্যকারী ও মুমিনের সাথে জুলুমকারীর ভয়াবহ পরিনতি
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০১:৩১:০৪ রাত
আল্লাহার বিধান অমান্যকারীর ভয়াবহ পরিনাম:
নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, তাদের জন্য কখনো আকাশের দরজা খুলবে না৷ তাদের জান্নাতে প্রবেশ এমনই অসম্ভব ব্যাপার যেমন সূঁচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করানো৷ অপরাধীরা আমার কাছে এভাবেই বদলা পেয়ে থাকে৷
তাদের জন্য বিছানাও হবে জাহান্নামের এবং ওপরের আচ্ছাদনও হবে জাহান্নামের ৷ এ প্রতিফল আমি জালেমদেরকে দিয়ে থাকি৷ সুরা আল আরাফ ৪০-৪১
আর যে ব্যক্তি আমার “যিকির (উপদেশমালা/জীবন বিধান) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে৷সে বলবে, “হে আমার রব! দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম কিন্তু এখানে আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন?আল্লাহ বললেন, “হাঁ, এভাবেই তো৷ আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে৷-এভাবেই আমি সীমা লংঘনকারী এবং নিজের রবের আয়াত অমান্যকারীকে (দুনিয়ায়) প্রতিফল দিয়ে থাকি এবং আখেরাতের আযাব বেশী কঠিন এবং বেশীক্ষণ স্থায়ী৷ সুরা ত্বা-হা(১২৪-১২৭)
প্রথম অবস্থা হচ্ছেঃ
দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন হবার মানে এই নয় যে, দুনিয়ায় তাকে অভাব অনটনের মধ্যে জীবন যাপন করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে এই যে, এখানে মানসিক স্থিরতা লাভ করতে পারবে না। কোটিপতি হলেও মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে। সাত মহোদেশের মহাপরাক্রমশালী সম্রাট হলেও মানসিক অস্থিরতা ও অতৃপ্তির হাত থেকে মুক্তি পাবে না। তার পার্থিব সাফল্যগুলো হবে হাজারো ধরনের অবৈধ কলাকৌশল অবলম্বনের ফল। এগুলোর কারণে নিজের বিবেকসহ চারপাশের সমগ্র সামাজিক পরিবেশের প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে তার লাগাতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে। যার ফলে সে কখনো মানসিক প্রশান্তি ও প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারবে না।
. "তুমি এ জিনিস থেকে গাফলতির মধ্যে পড়েছিলে, এখন আমি তোমার সামনে থেকে পরদা সরিয়ে দিয়েছি, আজ তোমার দৃষ্টি বড়ই তীক্ষ্ণ"। (কাফঃ ২২)
অর্থাৎ আজ তুমি খুব পরিষ্কার ও স্বচ্ছ দেখতে পাচ্ছো।
দ্বিতীয় অবস্থা হচ্ছেঃ
"আল্লাহ তো তাদের আযাবকে সেদিনের জন্য পিছিয়ে দিচ্ছেন যেদিন অবস্থা এমন হবে যে, দৃষ্টি বিষ্ফারিত হয়েই থেকে যাবে, লোকেরা মাথা তুলে ছুটতেই থাকবে। চোখ উপরে তুলে তাকিয়েই থাকবে এবং মন দিশেহারা হয়ে যাবে"। (ইবরাহীমঃ ৪২-৪৩)
তৃতীয় অবস্থা হচ্ছেঃ
"আর কিয়ামতের ্চদিন আমি তার জন্য একটি লিখন বের করবো, যাকে সে পাবে উন্মুক্ত কিতাব হিসেবে। পড়ো নিজের আমলনামা! আজ নিজের হিসেব করার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট"।
(বনী ইসরাঈলঃ ১৩-১৪)
মনে হচ্ছে, আল্লাহর অসীম ক্ষমতাবলে আমরা আখেরাতের ভয়াবহ দৃশ্য এবং নিজেদের দৃষ্কৃতির ফল তো খুব ভালোভাবেই দেখব কিন্তু আমাদের দৃষ্টি শক্তি শুধুমাত্র এগুলোই দেখার যোগ্যতা সম্পন্ন হবে। বাদবাকি অন্যান্য দিক থেকে আমাদের অবস্থা হবে এমন অন্ধের মতো যে নিজের পথ দেখতে পায় না। যার হাতে লাঠিও নেই, হাতড়ে চলার ক্ষমতাও নেই, প্রতি পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে, বুঝতে পারছে না সে কোন দিকে যাবে এবং নিজের প্রয়োজন কিভাবে পূর্ণ করবে।
নিম্নলিখিত শব্দাবলীর মাধ্যমে এ অবস্থাটিকে তুলে ধরা হয়েছে। "যেভাবে তুমি আমার আয়াতগুলো ভুলে গিয়েছিলে ঠিক তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে"।অর্থাৎ তুমি কোথায় কোথায় হোচট খাচ্ছো, আঘাত পাচ্ছো, এবং কেমনতর বঞ্চনার শিকার হচ্ছো আজ তার কোন পরোয়াই করা হবে না। কেউ আমার হাত ধরবে না,আমার অভাব ও প্রয়োজন কেউ পূর্ণ করবে না এবং আমার কোনরকম দেখাশুনা করা হবে না। তখনি আমরা চরম উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও বিস্মৃতির অতল তলে নিক্ষিপ্ত হব।
মুমিনদের উপর জুলুমকারী ভয়াবহ পরিনামঃ
যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম - নিপীড়ন চালিয়েছে , তারপর তা থেকে তওবা করেনি , নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা - পোড়ার শাস্তি৷যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের বাগান যার নিম্নদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে ঝরণাধারা৷ এটিই বড় সাফল্য৷সুরা বুরুজ -১০
জাহান্নামের আযাব থেকে আবার আলাদাভাবে জ্বালা পোড়ার শাস্তির উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে , তারা মজলুমদেরকে আগুনে ভরা গর্তে নিক্ষেপ করে জীবন্ত পুড়িয়েছিল। সম্ভবত এটা জাহান্নামের সাধারণ আগুন থেকে ভিন্ন ধরনের এবং তার চেয়ে বেশী তীব্র কোন আগুন হবে এ বিশেষ আগুনে তাদেরকে জ্বালানো হবে।এই ভয়াবহ পরিনাম ভোগ করবে যারা মুমিনদের উপর জুলুমকারী হিসাবে দুনিয়াতে ছিল।
বর্তমানেও এরা নিজের দেহবল ও দলশক্তি/জনশক্তির দাপটে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান অমান্যকারী বিদ্রোহকারী ছিল।অতীতেও এদের ওস্তাদ নমরুদ ফেরাউন হামান কারুন আবু জেহেল আবু লাহাবরা একই ক্ষমতাও তাগুতের শক্তি নিয়ে আল্লাহর মুমিনদের সাথে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়ে নিজেরাই ধ্বংস হয়েছে। ইসলামের কোন তারা করতে পারে নাই । তার ভয়াবহ পরিনতির ধ্বংসাবশেষ আজো শিক্ষার জন্য রয়েছে।আমাদের উচিত তার থেকে শিক্ষা নেওয়া। আল্লাহর গোলাম মুমিনদের সাথে সদ্যব্যাবহার করা উচিত।
ইমাম আল-আউজা’ঈ বলেন,আমি বিলাল ঈমানদারগণ অন্যদের সাথে মেলামেশা করেন জানার জন্য;নিশ্চুপ থাকেন নিজেকে সুরক্ষা করার জন্য, কথা বলেন বোঝার জন্য; এবং নির্জনতা অবলম্বন করেন নিজেকে আরো উন্নত করার জন্য।”– ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ [সিয়ার আ'লাম আন-নুবালা, ৪/৫৫১]
ইবনে সা’দকে বলতে শুনেছিঃ“গোপনে আল্লাহর শত্রু হয়ে জনসম্মুখে আল্লাহর বন্ধু হবার ভান করো না।” [আল-হিলইয়াহ, ৫/২২৮]
তুমি পৃথিবীর সবকিছু পেয়েছ, কিন্তু আল্লাহ তায়ালাকে পাওনি, তবে তুমি কিছুই পাওনি।" [হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (রহঃ) ]
হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে৷ আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না৷ হে আমাদের রব, তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু৷
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিন৷
সুমহান আল্লাহ বলবেন, “যে লোক কোন একদিন আমাকে স্মরণ করেছে বা কোন এক স্থানে আমাকে ভয় করেছে, তাকে দোযখের অগ্নি থেকে বের কর।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে
মহান ও মর্যাদাশালী আল্লাহ্ বলেছেন,
“আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণার সাথে আমি আছি। সে যদি আমার প্রতি সুধারণা পোষণ করে তবে তা তারই সাথে থাকবে, আর যদি সে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তবেও তা তারই সাথে থাকবে।
আহমদ এ হাদিসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মহান ও মর্যাদাশালী আল্লাহ্ বলেছেন,
“আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণার সাথে আমি আছি। সে যদি আমার প্রতি সুধারণা পোষণ করে তবে তা তারই সাথে থাকবে, আর যদি সে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তবেও তা তারই সাথে থাকবে।
আহমদ এ হাদিসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন