লাসের জন্য কেন এত লাখ কলেমা দুরুদ পড়ার দরকার হল?
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৫ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:৪৫:৪১ রাত
লাসের জন্য কেন এত লাখ কলেমা দুরুদ পড়ার দরকার হল?
রোজী আপার রাজশাহী থেকে ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল । তার সাথে আপার আরেক প্রতিবেশি বেলা আপা আবার হুলুস্থুর করে আমাকে জানালেন ,উনার এপার্ট্মেন্টের ৬/বি এর ভাই মারা গেছেন আমি যেন খুব দ্রুত উনার শোকার্ত প্রতিবেশি ভাবীকে শান্তনা দিতে চলে যাই ।প্রিয় দ্বীনিবোন রোজি আপা বেড়াতে গিয়েও প্রতিবেশির শোকে ব্যাথিত হৃদয়ের ডাক আর বিধবা বেলা আপার দায়িত্ব পালনে দিলাম মেরাথোন দৌড়।সাথে সাহেবকে নিয়ে গেলাম ।
জীবনের শ্রেষ্ট বন্ধু হারাবার ব্যাথা প্রখরতা এত বেশি ছিল যে আমি ভাবীকে গিয়ে অধিক শোকে পাথরের মুর্তির মতই পেলাম। কান্নারত ব্যাক্তির সাথে কান্না করা যায় খুব সহজে কিন্তু কারো প্রিয়ব্যাক্তি চিরতরে হারানো ব্যাথার পাথরের পাহাড় সরায়ে তা সমতল ভুমির মত ধৈর্যের সবুজ শ্যামল চির সবুজ করে ফুলে ফলে ভরিয়ে দেওয়া তত সহজ নয়।আর আমার সব সময় আমার আল্লাহর কাছে চাওয়া আল্লাহ কোন মেয়েকে তার সর্বচেষ্ট প্রিয়ধন স্বামী ত্যাগ করার মত কঠিন পরীক্ষা না নেন। সেখানে আমি নিজেকে সেই রুপে দাড় করাতে গিয়ে ামি শান্তনা দেবার ভাষা হারিয়ে ফেলি।বেলা আপার স্বামী মারা যাবার পরে আল্লাহর রহমতে ধৈর্যের উপদেশ আর সবরের সুফল আর সবর না ধরার কুফল বর্ননা করে অনেক ধৈর্য্যশীলা হয়েছেন।তাই আমি কিছু বলার জন্য বেলা আপা বলছেন?
আমি জানতে চাইলাম,সব বোনেরা কোরানের কি পড়ছে আর তসবির দানা কেন টিপছে?
আমার অচেনা খুব বুযুর্গ একজন বোন বললেন ,আমরা সোয়া লাখ কলেমা আর দুরুদ মুরদার সাথে দিব।মরহুমের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাবী আপনি কি করছেন?আমি কি করব বলেন?
ভাবী আমি অদৃশ্য আল্লাহর দৃশ্যমান বানী কি করতে বলে তা শুনেন আর তার থেকে শিক্ষানেন।
" বাকাহে ঈমানদারগণ ! সবর ও নামাযের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো , আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন ৷"সুরা বাকারা ১৫৪
"আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ
“আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে,তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও ৷তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী "৷সুরা বাকারা ১৫৫-১৫৭
উম্মতে মোহাম্মদী পদে আসীন করার পর এবার আল্লাহ উম্মাতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও বিধান দিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সবার আগে যে কথাটির প্রতি এখানে দৃষ্টি আর্কষণ করা হচ্ছে সেটা হচ্ছে এই যে, আমাদের জন্য ্দুনিয়ার জীবন নামের যে বিছানা পেতে দেয়া হয়েছে সেটা কোন ফুলের বিছানা নয় । প্রত্যেক মুসলমানকে একটি বিরাট , মহান ও বিপদ সংকুল কাজের বোঝা আমাদের প্রত্যেকের মাথায় আল্লাহ কিছু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ।
আর কলেমা একবার পড়ার সাথে মুসলমান বা আত্নসমর্পনকারী ও রাসুল সাঃ উম্মত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা দায়িত্ব পালনকারী হিসাবে চতুর্দিক থেকে বিপদ-আপদ এর কঠিন পরীক্ষার মধ্যে আমাদের আল্লাহর খাটি গোলাম হতে হবে।দুনিয়াতে জান্নাতের ঘোষনা জান্নতীরা অগণিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েও ঈমানের থেকে বিন্দু মাত্র পদচ্যুত হননি।সবর,দৃঢ়তা, অবিচলতাও দ্বিধাহীন সংকল্পের মাধ্যমে সমস্ত বিপদ-আপদের মোকাবিলা করে যখন আমরা আল্লাহর পথে এগিয়ে যেতে থাকব তখনই আমাদের ওপর বর্ষিত হবে তাঁর অগনিত অনুগ্রহরাশি।
মৃত্যু সবার জন্য চিরন্তন সত্য ।আর ক্ষনস্থ্যায়ী এই দুনিয়াতে জীবন্ত কোরানের প্রতিবিম্ব হয়ে কোরানের বিধান কায়েম করার কঠিন দায়িত্বের বোঝা বহন করার জন্য আমাদের দু'টো আভ্যন্তরীন শক্তির প্রয়োজন ।
একটি হচ্ছে, নিজের মধ্যে সবর, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার শক্তির লালন করতে হবে।
আর দ্বিতীয়ত নামায পড়ার মাধ্যমে নিজেকে শক্তিশালী করতে হবে। সবরের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের পূর্ন নৈতিক গুণাবলীর সামগ্রিক রূপ অর্জিত হয়। আর আসলে এটিই হচ্ছে সমস্ত সাফল্যের চাবিকাঠি ।এই গুন ছাড়া মানুষের পক্ষে কোন লক্ষ অর্জনে সফলতা লাভ সম্ভব নয় ।আর নামায মু'মিন ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে এই মহান কাজের যোগ্যতা সম্পন্ন করে গড়ে তোলে ।
আর আল্লাহ নিজেই জানিয়ে দিচ্ছেন এই রকম ইমানের পরীক্ষায় আমাদের করনীয় কি?
এই সময় আমাদের বার বার স্মরন করা উচিত যে, যিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন আমরাও সেই একই পথের একই লক্ষে পৌছার অপেক্ষায় থাকা পথিক।আয়ুটা আল্লাহর দেওয়া।তাই আল্লাহ আমাদের এই সময় বলতে বলেছেন ,
“আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে"৷
"আমরা আল্লাহর কর্তৃত্বধীন । " তাইআল্লাহর পথে আমাদের যত প্রিয় যেই কোন জিনিস কুরবানী করা হক না কেন , তা ঠিক তার সঠিক ক্ষেত্রেই ব্যয়িত হয় । যার জিনিস ছিল তার কাজেই ব্যয়িত হয়েছে । আর "আল্লাহরই দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে " --- এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল আমাদের এ দুনিয়ায় থাকব না । অবশেষে একদিন আল্লাহরই কাছে যেতে হবে । কাজেই তাঁর পথে তাঁর বিধান মত চলে প্রাণ দান করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটাই তো ভালো । এভাবে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে চলে যাওয়াটা আমাদের স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করে কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বা রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করে তাঁর কাছে চলে যাওয়ার চাইতে লাখো গুণে শ্রেয় ।
্রাসুল সাঃ এর অনুসারী হবে জীনন্ত উম্মত।তা হলে লাসের জন্য এত দুরুদ পাঠ কেন পড়ব ?
কোরান কে বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাসুল সাঃ যে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের বদৌলতে যে সোনালী সমাজ কায়েম করেছিলেন সেই সমাজের কারো তবসির দানা গুনে গুনে লাখ বার দুরুদ পড়ার সময় ছিল না ।কারন উনারা তাওহীদ রিসালাত আর আখিরাতের উপর দৃড় বিশ্বাস স্থাপনের পর শুধু বলেছেন "আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি" এই আয়াত এর য়ালোকে ময়দানে কাজ করেছেন । আমরাও রাসুলের উম্মতের দাবীদার হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরানের যে নির্দেশগুলো আছে সেগুলোকে মাথা পেতে গ্রহণ করে নেব, সেগুলোর আনুগত্য করব এবং নিজের ভালো কাজের জন্য অহংকার করে বেড়াব না বরং আল্লাহর কাছে অবনত হইয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব।
"হে মুহাম্মাদ! আমি যে তোমাকে পাঠিয়েছি, এটা আসলে দুনিয়াবাসীদের জন্য আমার রহমত৷"
সুরা আম্বিয়া ১০৭
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন আসলে মানব জাতির জন্য আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ। কারণ, তিনি এসে গাফলতিতে ডুবে থাকা দুনিয়াবাসীকে জাগিয়ে দিয়েছেন।মানুষকে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে ফারাক করার জ্ঞান দিয়েছেন। দ্বিধাহীন ও সংশয় বিমুক্ত পদ্ধতি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আমাদের জন্য ধ্বংসের পথ কোনটি এবং শান্তি ও নিরাপত্তার পথ কোনটি তা দেখিয়েছেন। মক্কর কাফেররা নবীর (সা) আগমনকে তাদের জন্য বিপদ ও দুঃখের কারণ মনে করতো। তারা বলতো, এ ব্যক্তি আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে ্তাই নখ থেকে গোশত আলাদা করে রেখে দিয়েছে। তাদের একথার জবাবে বলা হয়েছেঃ অজ্ঞের দল! তোমরা যাকে দুঃখ ও কষ্ট মনে করো তা আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রহমত।
আমার মনে হয় এখনো এই অজ্ঞ মূর্খের দল আরো ভারী হচ্ছে। তাই তারা ইসলাম কাদের জন্য তাও জানছে না। জীবত ও স্বচ্ছল ব্যক্তির এক্টিভিটির জন্য দীন ও শরীয়ত । পাগল ও মৃত ব্যক্তির জন্য ইসলাম নয় । মৃত ব্যাক্তির বাড়িতে গেলে নিজের উপকার হয় । আমাদের তখন এত আমল বৃদ্ধি পায় যদি মনে করি মৃত ব্যক্তির জন্য করছি মনে হচ্ছে কিন্তু আসলে তা আমার আমল নামায় যোগ হচ্ছে। টাকা দিয়ে কোরান খতম করায়ে হুজুরের পোকেট আমলনামা ও পেট সবই ভারী করে দেই ।আর ১০ গরু জবাই দিয়ে চল্লিশা যাই করি না কেন সবই আমাদের আমল নামাইয় যাবে ।
আমি সবাইকে বলব বিশেষ করে হুজুরদের বলব আপনারা মৃতব্যক্তির পরিবারের অন্তরের দুর্বল মুহুর্তে পকেট পেট ভরার চিন্তা বাদ দিয়ে ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে বিদাআত নির্মুল করুন আর আপনার দ্বারা ইসলামের বীজ টি এই সময় বপন করা অনেক সহজ হয়ে যায়।আমার বেলা আপার গত বছর হটাত স্বামী হারাবার পরে সবরের আয়াত ও ইসলামের পরিচর্যায় কোরানের পথে শামীল হয়ে ৩ বার তাফহীমুল ১-১৯ খন্ড অধ্যায়ন করছেন।এখন আবার শুরু করেছেন।পুরো পরিবার কে এই মা পরিবর্তন করেছেন।আলহামদুলিল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখা সম্পাদনা করে পোস্ট করা উচিত
ধন্যবাদ
হুজুরদের কেও যদি স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু হাদিয়া দেয় তা গ্রহণ করাতে দোষ নেই, আল্লাহর রাসূল যেমন হাদিয়া গ্রহণ করতেন। কিন্তু সমস্যা হল, একসময় মাদরাসায় পড়েছি বলে বেশ অভিজ্ঞতা আছে, অধিকাংশ মোল্লা আলেম দাওয়াত খেতে যান, মৃত ব্যাক্তির আত্মার মাগফিরাত কামনার উদ্দেশ্যে নয় বরং পকেট ভর্তি করার উদ্দেশ্যে। অনেকে দেখেছি, গৃহ কর্তা টাকা কম দেওয়াতে হুজুরদের বেশ দরকষাকষি করতে।
দাওয়াতে গেলে, কিংবা গাড়ির ভিতরে কিছু হুজুর কে মসজিদ মাদরাসার জন্যো ভিক্ষুকের মত টাকা চাইতে দেখলে মনে হয় ইসলাম কে কিছু মানুষ সামান্য কিছু কমিশন পাওয়ার লোভে ভিক্ষা বৃত্তিতে পরিণত করেছে।
আপনি যে বিষয়টি অবতারণা করেছেন, তা সমাজে আবহমান কাল থেকে খুব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, খুব কঠিন মানুষ কে এইসব ভ্রান্তি থেকে ফিরিয়ে রাখা তবে অসম্ভব নয়। আপনার আমার চেষ্টাতে একদিন নিশ্চয় পরিবর্তন আসবে ইনশা আল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন