নিয়তের গুনেই কর্মের ফল।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:০৩:২৫ রাত
নিয়তের গুনেই কর্মের ফল।
আসসালামুয়ালাইকুম
বলে ফোন তুলতেই বললেন ,পারভীন একটু নীচে নেমে আসো ।
কোথায় যাবা ? আগে একটু বলো ।
তুমি আগে আস ।তারপরে বলব।
স্বামীর আনুগত্য বলে চোখ বন্ধ করে নেমে গেলাম । অনুগত স্ত্রীর মত হাটছি আর ভাবছি কোথায় নিচ্ছে। মাঝে মাঝে দুই জনে রাতে আমরা রিক্সা ভ্রমন করে খোলা আকাশের নীচে খোলা হৃদয়ে মধুময় যৌবনের দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি চারন করে কিছু সময় এর জন্য যৌবনে ফিরে যাই ।
না আজ তেমন কিছু নয় । একটা মার্কেটে নিয়ে গেলেন ।আমার সব চেয়ে কষ্টকর জায়গা মার্কেট।তাই কিছুক্ষন পর জানালাম ।এটা কোথায় আনলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে । আমি কিছুই কিনব না তুমি বের হয়ে চলো ।এই সময়ে আমার অনেক দাওয়াতী কাজ হত ।সময়ের হিসাব দিতে হবে যখন কি উত্তর এই সময়ের জন্য দেব?
সাহেব এক ঝাপটায় উত্তর দিলেন ।তুমি সংগঠন ছাড়া আর কোন কিছু ভাবতে জান না?
আমি শুধু বললাম ,জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে আল্লাহকে আর জীবন চলার পরিধিতে রাসুল সাঃ এর শরীয়ত কে রাখলে এর বাহিরে চলার কোন অধিকার কি কোন মুমিন থাকতে পারে? এর বাহিরেই জাহান্নামের প্রজ্জলিত আগুন।
কথা বলা আর পথ চলার মাঝামাঝি সময় একজন দ্বীনি ভাইয়ের সাথে দেখা । উনার সাথে আমাদের সালাম ও পরিচয় শেষ হল। এর পরেই তিনি জানালেন ,ভাবী আমার স্ত্রী ও আমার এপার্ট্মেন্টের তার আরো ৪ জন বান্ধবী সহ সংগঠনের আসতে চাচ্ছে ।তাদের কে একটু সময় দেন ।
আলহামদুলিল্লাহ । আমার মনের আশা আল্লাহ কবুল করলেন কিভাবে ? আমি তখন ভাবলাম আল্লাহর পঅথে চলার চিন্তার করলে আর হতাশ না হলে তিনি ঠিকই সাহায্য করেন নিয়ত অনুসারে ।আর ইসলামের সঠিক পথে অনেকে আসতে চায় কিন্তু সময় আর সুযোগ পাচ্ছে না। তখন আমার মনে হলো আমরা কাকে ভয় পেয়ে ইসলামের পথ থেকে ভয়ে সরে যাচ্ছি।
"মুসা তার কওমকে বললো, হে লোকেরা! যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে থাকো তাহলে তার ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা মুসলিম -আত্মসমপূর্ণকারী হও৷" সুরা ইউসুফ ৮৪
এ ধরনের কথা কখনো কোন কাফের জাতিকে সম্বোধন করে বলা যেতে পারে না। হযরত মূসার এ বক্তব্য পরিষ্কার ঘোষণা করছে যে, সমগ্র বনী ইসরাঈল জাতিই তখন মুসলমান ছিল এবং হযরত মূসা তাদেরকে এ উপদেশ দিচ্ছিলেন যে, তোমরা যদি সত্যিই মুসলমান হয়ে থাকো যেমন তোমরা দাবী করে থাকো তাহলে ফেরাউনের শক্তি দেখে ভয় করো না বরং আল্লাহর শক্তির ওপর আস্থা রাখো।
তেমনি আমাদের উচিত এই সমাজের ভয়ে আতংকিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে ফেরাউনের দালালদের সামনের ইসলামের ও ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে কলেমার দাও্বয়াত নিয়ে যাওয়া ।
"তারা জবাব দিল , আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করলাম্৷ হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালেমদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না৷ এবং তোমার রহমতের সাহায্যে কাফেরদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো৷"সুরা ইউনুস ৮৫
আমাদেরকে জালেম লোকদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না-উক্তি সাচ্চা ঈমানদার নওজোয়ানদের দোয়া বড়ই ব্যাপক অর্থ ও তাৎপর্যবোধক। গোমরাহীর সর্বব্যাপী প্রাধান্য ও আধিপত্যের মধ্যে যখন কিছু লোক সত্যের প্রতিষ্টার জন্য কোমর বেঁধে লাগে তখন তারা বিভিন্ন ধরনের জালেমদের মুখোমুখি হয়।
একদিকে থাকে বাতিলের আসল ধারক ও বাহক। তারা পূরর্ণশক্তিতে এ সত্যের আহবায়কদের বিধ্বস্ত ও পর্যুদস্ত করতে চায়।
দ্বিতীয় দিকে থাকে তথাকথিত সত্যপন্থীদের একটি বেশ বড়সড় দল। তারা সত্যকে মেনে চলার দাবী করে কিন্তু মিথ্যার পরাক্রন্ত শাসন ও দোর্দণ্ড প্রতাপের মোকাবিলায় সত্যপ্রতিষ্ঠিতর প্রচেষ্টা ও সংগ্রামকে অনাবশ্যক বা নির্বুদ্ধিতা মনে করে। সত্যের সাথে তারা যে বিশ্বাসঘাতকা করেছে তাকে কোন না কোন প্রকারে সঠিক ও বৈধ প্রমাণ করার জন্য তারা চরম প্রচেষ্টা চালায়। এ সংগে উল্টা তাদেরকে মিথ্যার ধারক গণ্য করে নিজেদের বিবেকের মর্মমূলে জমে উঠা ক্লেশ ও জ্বালা মেটায়।
সত্যপন্থীদের সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার দাওয়াতের ফলে তাদের মনের গভীরে সুষ্পষ্ট বা অস্পষ্টভাবে এ ক্লেশ জমে উঠে।
তৃতীয় দিকে থাকে সাধারণ জন মানুষ। তারা নিরপেক্ষভাবে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে থাকতে। যার পাল্লা ভারী হয় সে সত্য হোক বা মিথ্যা তাদের ভোট শেষ পর্যন্ত তারই পাল্লায় পড়ে। এমতাবস্থায় এ সত্যের আহবায়কের প্রতিটি ব্যর্থতা বিপদ-আপদ ভুল ভ্রান্তি দুর্বলতা ও দোষ ক্রটি বাতিল পন্থী বা নিরপেক্ষ বিভিন্ন দলের জন্য বিভিন্নভাবে উৎপীড়ন, ও উত্যক্ত করণের সুযোগ ও উপলক্ষ হয়ে দেখা দেয়।
তাদেরকে বিধ্বস্ত ও পর্যদস্ত করে দেয়া হলে অথবা তারা যদি পরাজিত হয়ে যায় তাহলে
প্রথম দলটি বলে , আমরাই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলাম। যে নির্বোধরা পরাজিত হয়ে গেছে তারা সত্যপন্থী ছিল না।
দ্বিতীয় দলটি বলে, দেখলে তো! আমরা না বলেছিলাম , এসব বড় বড় শক্তির সাথে বিবাদ ও সংঘর্ষের ফল নিছক কয়েকটি মূল্যবান প্রাণের বিণাশ ছাড়া আর কিছুই হবে না।
শরীয়াত কবেই বা নিজেদেরকে এ ধ্বংসের গর্তে নিক্ষেপ করার দায়-দায়িত্ব আমাদের ওপর চাপিয়েছিল৷ সমকালীন ফেরাউনরা তথা স্বৈরাচারী শাসকেরা যেসব ধ্যাণ ধারণা পোষণ ও কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল তারা মাধ্যমেই তো দীনের সর্বনিম্ন প্রয়োজন দাবীগুলো পূরণ হচ্ছিল।
তৃতীয় দলটি তার সিদ্ধান্ত শুণিয়ে দেয়, যে বিজয়ী হয়েছে সেই সত্য। এভাবে যদি সে তার দাওয়াতের কাজে কোন প্রকার ভুল করে বসে অথবা বিপদ ও সংকটকালে কোন সাহায্য সহায়তা না পাওয়ার কারণে দুর্বলতা দেখায় কিংবা তার বা তার কোন সদস্যের কোন নৈতিক ক্রটির প্রকাশ ঘটে তাহলে বহু লোকের জন্য মিথ্যার পক্ষাবলম্বনের হাজারো বাহানা সৃষ্টি হয়ে যায়।
আর তারপর এ দাওয়াতের ব্যর্থতার পর সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত সত্যের দাওয়াতের উত্থানের আর কোন সম্ভবানাই থাকে না। কাজেই মুসা (আ) এর সাথীরা যে দোয়া করেছিলেন তা ছিল বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া। তারা দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি এমন অনুগ্রহ বর্ষণ করো যাতে আমরা জালেমদের জন্য ফিৎনায় তথা উৎপীড়নের অসহায় শিকারে পরিণত না হই।
অর্থাৎ আমাদের ভূল -ভ্রান্তি দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে রক্ষা করো এবং আমাদের প্রচেষ্টাকে দুনিয়ায় ফলদায়ক করো, যাতে আমাদের অস্তিত্ব তোমার সৃষ্টির জন্য কল্যাণপ্রদ হয়, জালেমদের দুরাচারের কারণে না হয়। —
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তেমনি আমাদের উচিত এই সমাজের ভয়ে আতংকিত না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে ফেরাউনের দালালদের সামনের ইসলামের ও ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে কলেমার দাও্বয়াত নিয়ে যাওয়া ।
আস-সালামুয়ালাইকুম আপু, অনেক দিন পর আপনার অসাধারণ লিখা পরলাম। আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম পুরষ্কার দান করুণ। আমীন।
আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহ আপনাকেও দুনিয়াও আখিরাতে উত্তম পুরুস্কার দান করুন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন