আমার সাদা মনের দাদারা কেমন আছেন?

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:০০:৫৩ রাত

আমার সাদা মনের দাদারা কেমন আছেন?

নাতিনীর মুখে তার দাদা কে দাদা ডাক আর দাদার প্রতি ভালবাসা দেখলে আমার প্রানপ্রিয় দাদাদের আমার প্রতি কল্যানকর ও পিতৃস্নেহের মত পবিত্র ভালবাসা আজও আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ২+ বয়সের নাতিনীর মানুষিক রুচিতে সাদা/ফর্সা ছেলে/পুরুষ তার মোটেও পছন্দ নয়।আর একই বয়সের বহু আগে আমাকে অতিআদর আর অধিক ভালবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখা বাবা কে চিরতরে হারায়ে পাকিস্থান থেকে সরাসরি গ্রামে বাসস্থান হয়।

তাই আমার নাতিনীর থেকে বিপরীত রোগ ছিল গায়ের রং কাল ছেলে/পুরুষ হলে তা থেকে ১০০ হাত দূরে থাকা। নাতিনীর দাদা সাদা মনের সাদা পুরুষ হওয়াতে দাদার প্রান উজাড় করা ভালবাসার আহবানে সাড়া দিয়ে ভালবাসা মিশ্রিত দাদা ডাক দিলেও এর মাঝে একটা দুরুত্ব ঠিকই রেখে দিন কাটাচ্ছে। তাও দাদার জুতা পরায়ে দেওয়া ,মুজা এনে দেওয়া ,পেপার গুলো পড়ার সময় চশমা খুজে এনে দেওয়া এই রকম টুকিটাকি পুটফরমাস করে দিচ্ছে । আবার তার প্রিয় খাবার গুলো দাদা যখন আনে তখন একটু স্বার্থের জন্য কোলেও উঠে । খাবার শেষ আবার নিজের পজিশানে ফিরে যায় ।৩৩ বছর আমার বাসায় মেয়ে না থাকায় দাদার উতরায়ে উঠা ভালবাসা দেখলে ভাইকে ঠেলে দিয়ে দাদীকে নিয়ে সরে পড়ে ।

আর আমার দাদা ছিলেন শ্যামলা ।মোটামুটি আমার অসুবিধা হত না ।কারন আমার জন্য ছিল দাদার প্রান নিড়ানো ভালবাসা ।কারন আমি নাকি ৮০ বছরের বৃদ্ধ দাদার কাধের সব চেয়ে কঠিন বোঝা মৃত ছেলে আমার বাবার মত চেহারা পেয়েছি।আমার বাবার জন্য কেদে কেদে চোখের আলো হারানো দাদার ভালবাসার উত্তরে দাদার জুতা লাঠি পানির গ্লাস প্লেটে কোন খাবার দিয়েছে বা মুড়ির মাঝের আখের গুড় কে নিয়ে গেল ইত্যাদি খোজ খবর আমি রাখতাম।আমার লাভ ছিল দাদা কিছুই আমার মুখে না দিয়ে খেতনা।কিন্তু অসহ্য লাগত দাদার কোরানের হাফেজ হওয়াতে সাথে সাথে সুরা দোয়া সব দাদার সাথে সুর করে করে পড়তে হত।মজা লাগত দাদার সাথে ঈদের মাঠে যেতে।দাদা অনেক সন্মানিত হও্যাতে সবাই দাদাকে সন্মান দেখাতে গিয়ে আমাকে আদর করে অনেক কিছু কিনে দিত।দাদার আদর বেশি দিন স্থায়ী হল না।সাদা কাপনে ঢাকা দাদা ঘুমিয়ে আছে ভেবে আমিও ঘুমিয়ে যাই। ঘুম থেকে উঠে আর দাদাকে আজও কোথায়ও খুজে পাইনি।খুব ছোটদের কষ্ট আর বয়স্কদের কষ্ট কেউ বুঝতে পারে না ।তাই সেই সময় আল্লাহ দেখেছে দাদা হারাবার কষ্ট আমার সাইট কেমন লেগেছিল ।আজো আগের মত আমার জানতে ইচ্ছে করে দাদা কেমন আছেন ?আল্লাহ আপনি আমার দাদাকে জান্নাতুল ফেরডাউস দান করুন।

টিন এইজে পা দেওয়া মেয়ে বিয়ের পরের দিন সেহেরীর খাবারের পরে হঠাত পারভীন পারভীন এই দিকে আসো শুনে কোন দিক থেকে ডাকটা এসেছে সে দিকে ভো দোড়।কারন আমার কাছে মনে হয়েছে আমার এক মাত্র ভাই আমাকে নিতে এসে মনে হয় ঘরের দরজায় দাড়ায়ে ডাকছে।না মানুষ একই জন না হলেও একই হৃদয়ের আরেকজন বড় ভাইকে গিয়ে দেখলাম।তিনি আমাকে বললেন গম্ভীর গলায়, "পারভীন আমাদের বাড়িটা কি তোমার পছন্দ হয়েছে?আমি বোবাদের মত মাথা নেড়ে হ্যা বোধক সাড়া দিলাম?এরপর বললেন আমাকে চিনেছ, আমি তোমার কি হই?আবার একই ভঙ্গিমায় না বোধক উত্তর দিলাম।তিনি নিজেই জানালেন,আমি তোমার দাদা হই।আমার ব্যাথিত ভারাক্রান্ত ভীত সন্ত্রস্থ্য সাহারা মরুভুমির মত শুস্ক হৃদয় এর উপর দিয়ে এক ফসলা বৃষ্টির মত এই দাদা শব্দটা বয়ে গেল। তাই ঝমঝম বৃষ্টি ঝরে ছিল দুই নয়নে।আর আমার সাদা মনের দাদা (আমার ভাসুর) সেই দিন জোরে সবাইকে শুনায়ে বললেন, তোমার স্কুলে যাওয়া আবার আগের মত চলবে, তোমার বিয়ে হয়েছে তাই পড়া বন্ধ করা যাবে না।নবম শ্রেনীর বই খাতা নোট বুক সহ সব আমি ঢাকা গিয়ে পাঠায়ে দিব।আর তোমার যতদুর পড়তে মন চায় আর যা যা পড়ার জন্য লাগবে আমি সব সময় তা দিয়ে যাব।আর এই সংসারের সদস্য সংখ্যা বেশি (২০ জন)ও সবাই ছোট তাই তুমিও ছোট কষ্ট হলেও আম্মা আব্বার সাথে থেকে তাদের প্রতি খেয়াল রাখবে।"

দাদা ঢাকা একটা স্কুলের হেড মাস্টার।তাই যৌথ সংসারে দাদার শাসন ছিল "একতাই বল" আর ভালবাসা আদর সবার জন্য ছিল অতুলনীয়।দেশে আমার এস এস সি দেওয়া শেষ হবার সাথে সাথে দাদা উনার ভাইএর মনের অবস্থ্যা বুঝে আমাকে ঢাকা নিয়ে আসেন। ঢাকায় ১৫/২০ জনের যৌথ সংসারের কাজ আবার উনার এক ছেলে আমার ৩ ছেলে সহ ৪ সন্তান ও ছোট ছোট দেবর ননদদের লালন পালন সহ সব কাজ করে পড়া চালিয়ে নিতে অনেক উৎসাহ দিতেন। রান্না ঘরে বসার পিড়িকে চেয়ার বানিয়ে আর শুয়ার চার পায়ার খাটকে টেবিল বানিয়ে খাটের ছোট ছোট বাচ্ছাদের দুষ্টামীর মাঝেই অবসর হলেই পড়তাম। দাদা অনেক দিন দেখে এইচ এস সি পাস করার পরে আমাকে টেবিল চেয়ার এনে দিলেন। সাহেব জাপান যাবার পরে আমি যৌথ সংসারে কিভাবে ইসলামের বিধানের মাঝে চলব তা একটা টিচিতে শামসুন্নাহার নিজামী খালাম্মাকে জিজ্ঞাসা করি। খালাম্মা আমাকে বললেন,সতর ঢেকে নামাজে যেই ভাবে থাক সেই ভাবে সারাক্ষন থাকবে।প্রয়োজনে সুতির ফুল হাতার মেক্সি পরবা।

আমি তাই করি ও আমার রুমে দরজা ও রান্না ঘরে ডাবল পর্দা ব্যাবহার করি এবং অনেকের সামনে যাওয়া কমায়ে ফেলি। তাতে যৌথ সংসারের অনেকে আপত্তি তুললেও দাদা সবার মতামতের উপর ইসলামের বিধানকে প্রাধান্য দেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ভর্তি ও আমার পড়ার সুবিধার জন্য হলে সিট নেওয়া সব দাদা খেয়াল করেন।আমার বাচ্ছাদের পড়ার খবর তাদের বাবা জাপান থাকতে দাদা দেখা শুনা করতেন। ১৫ বছর পরে যৌথ সংসার ছেড়ে এপার্ট্মেন্টে উঠলে দাদা পরের দিন প্রচুর বাজার এনে আমার প্রিজ ভরে দিয়ে যান।আমি যখন আমার জান মাল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রি করেদি তখন আমার দাদার সামনে পর্দার করে যাওয়াও বন্ধ করে দেই। তাতে দাদা আর আমার বাসায় আসেন না।এই ভাবে এই দাদার ভালবাসা কেও আমি আখিরাতে আজাব ও আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করি।আমার শ্বাশুড়ি পেরালাইজস্ট হয়ে যখন হসপিটালে ভর্তি হন আর ডাক্তার বলেন আর ভাল হবেন না।তখন দাদা বলেছে ,শুধু পারভীনের কাছে সঠিক ভাবে সেবা যত্ন পাবে।আমি আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য তা করতে চেষ্টা করেছি । আমি বি এড পরীক্ষার রেজাল্ট আনার আগেই দাদা সাহেবকে জানান ,আমি কিভাবে ৫ ছেলের পড়া লিখা ও সংসার করে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছি ।?আমার আম্মা মারা গেলেন আমি জানি না ।দাদা খবর পেয়ে আগে উনার ছেলে কে তার পর আমার বাসায় যৌথ সংসারের যারা এক সাথে ছিলাম তাদের সবাইকে পাঠায়ে দেন। উনারা যেন আমার সাথে থাকেন আর আমার ও বাচ্ছাদের খাবারের ব্যবস্থ্যা করেন। এখন দাদা মাঝে মাঝে খবর নেন আমার সংসারের সবার ।যৌথ পরিবার এখন ভেঙ্গে ১২ টি পরিবার হলেও প্রতি ঈদে দাদার বাসার সবার হাজির হওয়য়া চাই । তাতে সবাইকে খাবার খাওয়ার মাঝে দাদার আনন্দ ।এখনো দাদার শারিরিক অবস্থ্যা আগের মত সুস্থ্যতা নেই । তাও আমার স্বামী ও ছেলেরা দাদা অনেক সন্মান করেন।

আমার আরো তিন দাদা আছেন । তাই লিখার আরেকটি পর্ব আসবে । আপনারা আমার সাথে থাকবেন । কারন আমার সেই তিন দাদা আরো দপদপে সাদা মনের দাদা । লিখা চলবে ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

297013
২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৫৭
বাজলবী লিখেছেন : সাদা মনের দাদা। অাপনার লেখাটা পড়ে দাদাকে খুব মিস করলাম। দাদা নাতির অাদর ভালবাসা অাল্লাহ তাঅালার এক অফুরন্ত নেয়ামত। বাকী লেখার অপেক্ষায় সংগে অাছি। জাযাকাল্লাহ খাইর।
297034
২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
297040
২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:১০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
297081
২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৪২
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম..... .শ্রদ্ধেয়া সুহৃদা আপুজ্বি। আপনার লিখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনার ভাসুর আসলেই উত্তম মানসিকতার মানুষ। পরিবারের জন্য আপনার অদম্য ত্যাগ, ধৈর্য হৃদয়স্পর্শী। বিবাহোত্তর জীবনে সবকিছু সামলিয়ে লেখাপড়া তথা ভালো রেজাল্ট করা সত্যিই ব্যতিক্রম। আপনার প্রেরণাময় সুন্দর লিখাটির জন্য জাজাকাল্ললাহু খাইর। সকলের জন্য দোয়া রইলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File