স্বামী স্ত্রী দুই জনের ত্যাগে আখেরাতের জান্নাত ক্রয় করা যাবে।

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৬:০১ রাত

বিশাল বাগান, বাগানের ভিতরে তাদের বাড়ি।যাকে বলে বাগানবাড়ি। ইচ্ছেমত বাগান থেকে ফল পেড়ে খায় তারা।

উপভোগ করে বাগানের শীতল ছায়া ও মৃদুমন্দ হাওয়া।

এমনই ছিল উম্মুদ দাহদাহ-এর সংসার। এ বাগান উম্মুদ দাহদাহের কাছে ছিল খুবই প্রিয়। কিন্তু উম্মুদ দাহদাহের বিশ্বাস ছিল, এ বাগান, এ সাজানো সংসার, এমনকি এ গোটা দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। কেমন ক্ষণস্থায়ী? যার ক্ষণ-কাল নির্ধারিত নয়; একদিনের, একমাসের, এক বছরের না ষাট-সত্তর বছরের -ছুই জানা নেই।

আবার ছায়াঘেরা এ সবুজ বাগান এ সম্পদও চিরস্থায়ী নয়; যখন তখন তা শেষ হয়ে যেতে পারে। ফলে তাঁর মনে আকাঙ্খা ছিল এমন এক বাগানের, এমন এক জীবনের যা কোনোদিন

শেষ হবার নয়।

ইসলামের বদৌলতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের

মাধ্যমে তারা কিছুদিন হল লাভ করেছেন ঈমানের দৌলত, সন্ধান পেয়েছেন সেই চিরস্থায়ী জীবনের, চিরসবুজ সেই বাগানের। এমনই সময় হঠাৎ একদিন আবুদ দাহদাহ এসে বলল,"হে প্রিয়তমা! হে উম্মুদ দাহদাহ!! চলো, আমাদেরকে বের

হয়ে যেতে হবে এ বাগান থেকে,ছেড়ে যেতে হবে এ বাগান বাড়ি। আমি তো জান্নাতের খেজুর গাছের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছি আমার এ গোটা বাগান।

প্রথমে উম্মুদ দাহদাহ একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। এমন কী হল!

আমার প্রিয় এ বাগান ছেড়ে আমাকেই চলে যেতে হবে!! কিন্তু

পরবর্তী বাক্য শুনে তিনি যেন আবুদ দাহদাহ থেকে আরো বেশি খুশি হলেন। আবুদ দাহদাহ যেখানে চিমিত্মত ছিলেন, এ

বিষয়টি শুনে উম্মুদ দাহদাহ না জানি কী বলে? কিন্তু উম্মুদ দাহদাহ ছিলেন সাচ্চা মুমিন, বিচক্ষণ এক নারী। তিনি বুঝলেন এ বেচা- কেনা হয়েছে রাসূলে আমীনের সাথে।বিনিময়ে পাওয়া গেছে জান্নাতে খেজুর গাছ; তার মানে সোজা জান্নাত।

ফলে তিনি আবুদ দাহদাহকে অবাক করা প্রশামিত্মদায়ক এমন জবাব দিলেন যা আবুদ দাহদাহের কলিজাটা ঠাণ্ডা করে দিল। উম্মুদ দাহদাহ বলে উঠলেন, ‘রাবিহাল বাইউ’ (ইয়া আবাদ হদাহ!) -‘কতইনা লাভজনক বেচা-কেনা করেছ হে প্রিয়তম!’ (যে জান্নাতের আশা আমি লালন করছি আমার হৃদয়ে,

তা আজ তুমি সত্যে পরিণত করেছ।)

এবার হাদীসের ভাষায় হযরত আনাস রা. থেকে শোনা যাক পুরো ঘটনা-

হযরত আনাস রা. বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আল্লাহর রাসূল! অমুকের একটি খেজুর গাছ আছে। আমি তা দ্বারা আমার প্রাচিরটি দাঁড় রাতে চাই। আপনি তাকে একটু বলে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐব্যক্তিকে (গাছের মালিককে) বললেন,

তুমি তাকে ঐ গাছটি দিয়ে দাও, বিনিময়ে তুমি জান্নাতে খেজুর গাছ পাবে। সে দিতে রাযি হল না। (এটা রাসূলের আদেশ ছিল না, বরং অনুরোধ ছিল।) তখন আবুদ দাহদাহ ঐ ব্যক্তির কাছে গিয়ে বলল, আমার বাগানের বিনিময়ে তুমি খেজুর গাছটি আমার কাছে বিক্রি কর। সে রাযি হয়ে গেল।

তখন আবুদ দাহদাহ নবীজীর কাছে এসে বললেন,আল্লাহর

রাসূল! আমি আমার বাগানের বিনিময়ে ঐ খেজুর গাছটি খরিদ করেছি। এটি আমি আপনাকে দিলাম। আপনি চাইলে এখন এটি ঐ ব্যক্তিকে দিতে পারেন।

একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারপরনাই আনন্দিত হয়ে বলতে লাগলেন-

ﻛَﻢْ ﻣِﻦْ ﻋَﺬْﻕٍ ﺭَﺩَﺍﺡٍ ﻟِﺄَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺣْﺪَﺍﺡِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ

‘‘আবুদ দাহদাহ জান্নাতে ফলে পরিপূর্ণ কত খেজুর গাছের/ বাগানের মালিক হয়ে গেল!’’

(একথা তিনি কয়েকবার বললেন।)


তারপর আবুদ দাহদাহ বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে বললেন,

হে উম্মুদ দাহদাহ! চলো আমাদেরকে এ বাগান(বাড়ি) ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমি তো জান্নাতের খেজুর গাছের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছি আমার এ গোটা বাগান। (এবং উম্মুদ

দাহদাহকে খুলে বললেন সবকিছু। খুলে বললেন, জান্নাতের খেজুর গাছের বিনিময়ে তার বাগান বেচে দেয়ার লাভজনক সওদার কথা।) একথা শুনে উম্মুদ দাহদাহ বলে উঠলেন, ‘রাবিহাল বাইউ’ বড় লাভজনক বেচা-কেনা করে এসেছ তুমি হে প্রিয়! -

মুসনাদে আহমাদ,হাদীস ১২৪৮২; সহীহ ইবনে হিববান,

হাদীস ৭১৫৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী,হাদীস ৩১৭৭

আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা।ঃ



উম্মুদ দাহদাহের এ বাক্যটি আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রেখে গেছে।স্বাভাবিকভাবে একজন নারীর কাছে তার সাজানো সংসার, তার বাড়ি (আরো যদি হয় বাগানবাড়ি) অনেক প্রিয়। আর মানুষ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াকেই বেশি প্রাধান্য দেয়

। আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার এত বড় সম্পদ হাতছাড়া হওয়া অনেকের কাছেই মেনে নেয়ার মত নয়। স্বামীর এ

কাজে কোনো প্রকার উচ্চ-বাচ্য না করে বরং দিল ঠাণ্ডাকরা জবাব দিয়ে তিনি আখেরাতের সফরে স্বামীকে সহযোগিতা করলেন। প্রতিটি নারীর জন্য তিনি আদর্শ হয়ে রইলেন; আখেরাত বিনির্মাণে যদি দুনিয়া হাতছাড়া হয় হোক। ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ার সামান্য ক্ষতি আখেরাতের প্রাপ্তির কাছে তুচ্ছ,

অতি তুচ্ছ -তা-ই তিনি আমাদের শিখিয়ে গেলেন। আমরা তো আখেরাতের যাত্রী। এ যাত্রায় স্বামী-স্ত্রী একে অপরের

সহযোগী। পরস্পর সহযোগিতা ছাড়া সুন্দরভাবে এ পথ

পাড়ি দেয়া সম্ভব নয়। স্বামী যদি আখেরাতের পথে এগিয়ে যেতে চায় আর স্ত্রী যদি পিছন থেকে টেনে ধরে বা স্ত্রী এগিয়ে যেতে চাইলে স্বামী টেনে ধরে তাহলে আখেরাতের পথে এগুনো সম্ভব নয়। বরং একে অপরকে হাতে ধরে এগিয়ে নিতে হবে।

একজন এগিয়ে গেলে অপরজন উৎসাহ দিতে হবে, পিছিয়ে গেলে সতর্ক করতে হবে।

হালাল উপার্জনে স্ত্রীকে স্বামীর সহযোগিতা করতে হবে। হালালের উপরই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তা না করে যদি অতিরিক্ত চাহিদার মাধ্যমে স্বামীকে হারামের পথে লেলিয়ে দিই, তাহলে হারামের এ আগুন আমাকেও জ্বালাবে আমার স্বামীকেও জ্বালাবে। সন্তানেরা দুনিয়ায় হয়ত কিছু বলবে না। কিন্তু আখেরাতে ঠিকই বাবা- মাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেবে। সুতরাং আমি এমন কোনো আচরণ স্বামীর সাথে করব না, যা তাকে হারামের পথে ঠেলে দেয়, তেমনি যেকোনো অন্যায়ের পথে ঠেলে দেয়।

এটা দিতে পারবে না, ওটা দেয়ার সামর্থ্য নেই তাহলে বিয়ে করেছ কেন? কোথা থেকে টাকা পাবে জানি না, আমার অমুক জিনিষটা চাই-ই চাই। তোমার দ্বারা কিছু হবে না। অমুকে তোমার থেকে ছোট চাকুরী করে এটা করে ফেলেছে ওটা করে ফেলেছে, আর তুমি...! এধরনের কথা স্বামীকে অন্যায় পথে অর্থ উপার্জনে ইন্ধন যোগায়। তার চেয়ে স্বামীকে হালাল উপার্জনে সহায়তা করা উচিত।

অল্প খাব তবুও হালাল খাব। মোটা কাপড় পরব তবুও আমরা হারামের পথে পা বাড়াব না। হারাম টাকার গাড়ির আমার দরকার নেই। আমাদের শরীরের এক ফোটা রক্তও যেন হারাম দ্বারা তৈরি না হয় -এসব কথা স্বামীকে হালাল উপার্জনে উৎসাহিত করবে, সৎ বানাবে। সন্তানদের সৎ হতে, অল্পে তুষ্ট হতে সহায়তা করবে।

শুধু অন্যায় থেকে ফেরানোই নয়, ভালো কাজে এগিয়ে দেওয়া, উৎসাহ দেওয়া আরো বড় সহযোগিতা। নামায থেকে নিয়ে সকল ভালো কাজে যদি স্ত্রী স্বামীকে সহযোগিতা করে তাহলে দুজনেই সহজে ভালোর দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। আল্লাহর প্রিয় হবে। আল্লাহই তাওফীকদাতা...।

হে আল্লাহ, আমাদেরকে এমন ঈমান দাও, প্রভু, আমীন.....।

(সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১২৬৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

289704
২৯ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
কিন্তু আমাদের দেশের অনেক মহিলাই তো এখন শুধু বিলাসিতাকেই গুরুত্ব দেন।
৩০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২৯
233450
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।খুটার বলেই বকরী লাফায় ।আপনারা যেমনে নাচান তেমনেই নাচে মহিলাদের কি দোষ ।
আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেন আমার আয় এত ,তুমি ব্যয় করবে কত?
আমি ১০ টাকায়ও যৌথ সংসার চালিয়েছে । কারন তখন আমার স্বামী একজন ছাত্র । আমি দেখছি তার হালাল রুজির ভিতরে এর চেয়ে বেশি খরচ করা সম্ভব নয় । আমার সোজা কথা প্রথম থেকে"আমি না খেয়ে বা নুন ভাত খেয়ে থাকব , বা মোটা কাপড় সাত বার সেলাই করে পরব তাও একটা টাকা হারাম আমার ঘরে আনবে না । ছেলেদের বলেছি তোমাদের বাবা হালাল পথের রুজি তাই উচ্চ বিলাসী মনোভাব আমাদের থাকবে না । আল্লাহ আমাদের হেদায়াতের পথে রাখুন ।
289722
৩০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৫৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব খুব ভালো লাগলো লিখাটি আপুজি।
289728
৩০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:১৮
আফরা লিখেছেন : আপু অনেক অনেক ভাল লাগল ধন্যবাদ আপু ।
289762
৩০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:১৭
নাছির আলী লিখেছেন : অনেক ভালো হয়েছে।সকল কে এমন স্বামী স্ত্রী হওয়ার তাওফিক দান করুন।
289800
৩০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এ বিষয়টি খুবই পরিষ্খার যে, মুমিনা স্ত্রী থাকলে স্বামী ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও ভাল কাজ করে এবং এক সময় সেটাতে াভ্যস্ত হয়ে পড়্।ে এজন্যে মুমিনা স্ত্রী সবথেকে বড় নিয়ামত,কারন তারা নিজে ও সকলকে জান্নাতে পথে থাকতে সাহায্য করে একেবারে ভেতর থেকে। আপনাকে ধন্যবাদ আপনি দারুন উপলব্দী উপহার দিলেন
289876
৩০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৮
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : আপু অনেক অনেক ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ আপু। তবে আজ কাল এই রকম ভালো মনের নেক মুমিনা স্ত্রী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। Rose Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File