“আমাতে মিশে আছ তুমি ”
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৫২:৩১ রাত
“আমাতে মিশে আছ তুমি ”
বাবা হারা মনিকে ছোট বেলা থেকেই দেখতাম কখনো নানার বাড়ি আবার কখনো খালা ফুফুর বাড়ি তে পরে থেকে বড় হতে হয়।খুব ছোট হওয়াতে প্রথম প্রথম বেশি কষ্টের সময় নানাদের পুকুর পাড়ের মোটা আম গাছ টা জড়ায়ে ধরে কিছুক্ষন কেন্দে মনের ব্যাথা হালকা কত ।পরে পরে এটা কে নিয়তির পরিহাস ভেবে নিজের দুঃখ কষ্ট গুলোকে বুকের মাঝেই কবর দিয়ে হাসি মুখে দুঃখ মনটাকে রঙ্গিন ঘুড়ির মত উড়িয়ে দিত।সবাই তাকে বোকা ভেবে আরো কঠিন ভাবে আঘাত করত।সে সব বুঝেও না বুঝার ভান করে হাসি মুখেই সব ব্যাথা হজম করে নিত।বাবা মা এর আদর ছাড়া শিশু মনির বুকটা আগ্নেয়গিরির উগ্নুতপাতের মত বিস্ফোরন হয়ে নিবরে দু নয়নে তা গড়িয়ে পড়ত।আল্লাহ কে বলত আল্লাহ মা বাবার স্নেহ সোহাগ থেকে বঞ্চিত করার মাঝে কি কল্যান লুকানো আছে তা তুমিই ভাল জান।হেডমাস্টার নানা তাই ১ম আর ২য় শ্রেনীতে না পড়ায়ে ৩য় শ্রেনীতে ভর্তি করায়ে দিলেন।সব কাজ করার ফাকে ফাকে মনি ৫ম শ্রেনীতে উঠে।আর তখনোই ৩০ বছর বয়সের বড় লোক খালাত ভাইর চোখ পড়ে মনির দিকে।যা নানী বুঝে ফেলে।
মাকে নানী মনির হাতে লিখায়ে চিঠি দেয়।যেন তাড়াতাড়ি চলে এসে মনিকে নিয়ে যায়।মনি মহা আনন্দে কারারুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মায়ের কাছে গুমানোর সুযোগ পেয়ে যায়।সুখ পাখিটা সবার কাচায় শোভা পায় না।৫ম শ্রেনীতে বৃত্তি পরীক্ষা দিতেই আসা শুরু বিয়ের প্রস্তাব। মা তাকওয়াবান ছেলে পেয়ে টিন এইজে পা দেবার সাথে বিয়ে দেওয়া শেষ।মনি বর্তমানের কিশোরী মেয়েদের মা বাবার পাশে খেলা ধুলায় দেখে ভাবে আর বলে ,”তোমাদের যূগে তোমরা এখন মা বাবা কে নিয়ে খেলা ধুলায় কাটও কত বেলা আর এই বয়সে অনাথ মনি জীবন বাচার সংগ্রামে থাকত সারা বেলা”
মনি মনে মনে তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসবে এমন একটা ভালবাসার মানুষ স্বপ্ন দেখত।স্বপ্ন যে সত্যি হয় তা সে জানত না।আল্লাহ সর্বশক্তিমান তিনি তেমনি একজন সুপুরুষ স্বামী হিসাবে দান করলেন।যে পুরুষের প্রচুর ধন ছিলো না কিন্তু স্ত্রীকে ভালবাসার মত ছিলো বিশাল মন।ছিলো না রাজার রাজত্ব আর অট্টালিকা বা ডেকোরেসান করানো রাজপ্রাসাদ।কিন্তু মানুষটা ছিল রাজকুমার আর মনটা ছিল রাজার রাজত্বের চেয়েও বিশাল আর মনের মাঝে ডেকোরেসান করা ভালবাসার ময়ুরসিংহাসন ও তাজমহল।যাকে পেয়ে মনি অতীতের সব ব্যাথা ভুলে যায় আর তার স্বামীও মায়া মমতা ভালবাসা দিয়ে নিজের মনের মত করে মনিকে সাজিয়ে তোলে বসন্ত বাহারে।বিয়ের পরেও যে মনি আঙ্গুল চোষা ছাড়া ঘুমাতো না সেই মনিকে ঢাকা ইউনিভার্সিট থেকে মাস্টার্স, বি,এড, এম,এড সহ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতা করে তোলেন।এর চেয়ে বেশী পাওয়ার মনির কোন ইচ্ছা কোন দিন ছিলো না।
মা বিয়ের প্রথম দিন মনিকে বুঝিয়ে বলে দিয়েছে,”আজ থেকে তোমার স্বামীর সন্মান তোমার হাতে।তুমি তোমার স্বামীর বাড়িতে যত সহ্য করে মুখ বন্ধ রেখে শ্বশুড় শ্বাশুড়ি দেবর ননদ সহ যোথ সংসারে চলতে পারবে ততই তোমার স্বামীর সন্মান বৃদ্ধি পাবে।তুমি নিজেকে ছোট মনে না করে বিয়ে হওয়া স্ত্রী ও উনাদের ছেলের বঊ হিসাবে মনে করবে।তা হলে তোমার মাঝে দায়িত্ব পালনের অনুভুতি আসবে।আর কখন শ্বামিড় কাছে অপ্রয়োজনীয় কিছুর জন্য বায়না ্ধরবা না।কোথাও সুন্দর কিছু দেখলে তা তোমার জন্য আল্লাহ আখিরাতে রেখেছেন এই ভেবে আর দ্বীতিয় বার তাকাবে না।স্বামী তোমার জন্য যা আনবে তা তোমার পছন্দ না হলেও খুব সুন্দর ও ভাল জিনিস বলে সাথে সাথে পড়ে দেখাবে।হালাল পথে আয় করার জন্য উতসাহীত করবে।কোন কিছু করার আগে বা বেড়াতে যাবার আগে স্বামীর অনুমতি নিবে।আর……কত কি।
মনিকে নিয়ে তার স্বামী খুব ছোট একটা বাসায় জান্নাতী আনন্দে সংসার সুরু করে।সেই যৌথ সাংসারে মনি ১৫ বছর ছিলো আলহামদুলিল্লাহ।বহু বছর কুয়া থেকে পানি তুলে আর সিড়ির নীচে একটা চুলায় সিরিয়াল ধরে রান্না করে আসতে হত।মনি যৌথ সংসার অনেক বড় ছিল ।মনিকার স্বামী সন্তানদের ও পরিবারের সুখের কথা ভেবে প্রবাসে থাকেন।মনির হৃদয়ের ভালবাসার সুখ স্বপ্নে ঢেউ ভরা নদীটা হতাত শুন্যতায় খালি হয়ে যায়।বালিকা বধু আবার কিশোরী মাতা মনির দীর্ঘ সময় ভালবাসার ছাতাটা ধরে রাখা মানুষ্ টা না থাকাতে মনি রোদ বৃষ্টি ঝড়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহটা তন্দ্রায় ঝিমিয়ে পড়তে চায়।সুখ শিহরনের ফুলক ব্যাথায় আবার সেই তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়।তখনি মনি ভাবে আমাকে এখন আর কেউই কর্ম ছাড়া ভালবাসবে না।কুকিল কে কেউ না চিনলেও তার সুরের আবেশ বাজে সবার হিয়াতে।তাই একদিকে সন্তান লালন পালন ,সংসার এর সবার মন রক্ষা করে চলা আর পর্দার সাথে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নিজের পড়া লিখা সব কিছুই সুন্দর ভাবে চালাতে আল্লাহ সাহায্য করেন ।তার সাথে সাথে স্বামী নিয়ে শামিল করেন উজ্জ্বল প্রদীপের মত এক আলোকিত আন্দোলনের বোনদের সাথে।যখন চৈত্রের চাতকের মত একটু মায়া মমতা আর ভাল বাসার তৃষ্ণা জাগত তখন ব্যাদনার মহাসাগর নিয়েই দ্বীনি বোনদের মাঝে ছুটে যেত, মনি সত্যি তখন বোনদের মাঝে এক মহাসাগর ভালবাসার সন্ধান তাদের মাঝে খুজে পেত।
পড়ার সময় বাচ্ছাদের মুড়ি, চেড়া, ছোট বিস্কুট, মিষ্টি কুমড়ার বিচি দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে প্রশ্ন মুখস্থ পড়ত আর লিখত ।কোন চেয়ার টেবিল বা বই খাতা কিছুই পাই নাই।কারন এস এস সি পাশ করার ৬ বছর পরে আবার পড়া শুরু করে সে।তাই কারো সহযোগিতা না পেলেও দ্বীনি বোনরা তাকে বই খাতা সংগ্রহ করে দেয়। মনি কলেজ দেখে নাই ক্লাস দেখে নাই তাতেও পাশ করে ।আলহামদুলিল্লাহ। ৫ ছেলে সহ যখন মনি এম,এ ও বি এড ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয় তখন তাকে রাতের ক্লাস এম এড পড়তে বাধা দেন নাই তার স্বামী।বরং নিজে গিয়ে দিয়ে ও নিয়ে আসতেন।
প্রাবাসী স্বামীর স্ত্রীদের দিবারজনী নিজের মান সন্মান পর্দা সব ব্যাপারে চৌকষ দক্ষ সৈনিকের মত নিজের সন্তানের ও স্বামীর রেখে যাওয়া দায়িত্বের প্রতি সাবধানে থাকতে হত।আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন । কারন মনি সব সময় নিজের নজর জ্বিব্হ্বা ইজ্জতের হেফাজত রাখত এই ভেবে যে আল্লাহ দেখছেন আমি আমার স্বামীর এই আমানত গুলোর হেফাজত করছি কিনা ? তা হলে আল্লাহ প্রবাসে আমার স্বামীর এই জিনিস গুলো আমার জন্য হেফাজত রাখবেন।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাই করেছেন।মনি ও তার স্বামী কোন দিন কেউ কাউকে কোন দিন এক মুহুর্তের জন্য্ সন্দেহের চোখে দেখে নাই।মনির ভুল গুলোকে সব সময় ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে সংশোধন করে দিতেন।আজ প্রাস জীবনের চিঠি গুলো মনি জমা করে রেখেছে আর প্রায়ি সময় পেলে পড়ে আবার যৌবনে বকুলের তলায় নুপুর পায়ে সেই ভালবাসা কুড়াতে যায়।পুর্নিমার আলোর মত দূরে হারিয়ে যাওয়া সেই সময়ের জন্য মনি আজোকান্দে।তখন মনি নিজে নিজেই বলে বয়স সময় হারিয়ে গেছে কিন্তু তাদের ভালবাসা আগের চেয়ে আরো গাঢ়ওমজবুত হয়ে গেছে।কারন “আমাতে তুমি রয়েছ মিশে
এই গল্পের শিক্ষাঃ
আমি মনির জীবন না শুধু অনেক মেয়েদের জীবন দেখে অবাক হয়ে যাই ।কত সুন্দর করে তারা স্বামী ,স্বামী পক্ষের মা বাবা আত্নীয় স্বজন নিয়ে একসাথে কাটান ।আরো কত আনন্দের মাঝে সবাই সবার সাথে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে এক সাথে আছেন।দায়িত্ব পালন করছেন একজন অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে। সেই সব মেয়েরা যে সবাই শিক্ষিত তা কিন্তু নয়।কিন্তু সাধারন জ্ঞান অনুসারে তারা স্বামীর মন বুঝে চলত।আমার মা ছিলেন ৩য় শ্রেনী পর্যন্ত পড়া।আর আমার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলের আরবী ও ইংরেজী গ্রেজুয়েট।কিন্তু আমার মা বাবার মধ্যে ছিলেন কোপতকোপতীর মত ভালবাসা। যার কারনে আমার মা ২৭ বছর বয়সে বিধবা হয়েও আমার বাবার সাথে আখিরাতে আবার একসাথে থাকবেন তাই নানা মামা দের বহু চাপাচাপিতেও বিয়ে বসেন নাই।আর কোন দিনআমার মা মৃত্যুর আগ পর্যিন্ত স্বামীর জন্য নামাজের সেজ্জদায় অশ্রু না ফেলে উঠেন নাই।আমার মায়ের দোয়ায় আমিও একজন আদর্শ স্বামী পেয়েছি।
আমি অবাক হয়েযাই বর্ত্মানের মেয়েদের অবস্থ্যা দেখে।তারা স্বামী চায় কিন্তু স্বামীর সাথে আরকোণ জ়োট ঝামেলা সইতে পারবে না।ভালবাসা দিবে শুধু স্বামীকে কিন্তু স্বামীর আর কোন আত্নীয় স্বজন বা আপঞ্জন কে না।মেয়ের বাপের বাড়ির পক্ষের আত্নীয় স্বজন আসলে যারপর নেই মহা খুশি সাথে ভাল ভাল খাবার,আর স্বামীর পক্ষের কাউকে তখন আর সে ছিনে না।আবার স্বামীর পক্ষের কেউ আসলে উপস্থিত যা আছে তা দিয়ে খান।আপনাদের ছেলেরতো এখন হাতে টানা টানি চলছে।অবশ্য সবাই না।আল্লাহ মনের খবর জানেন।
একহাতে তালি বাজে না।তেমনি এক তরফা ভালবাসাও জন্ম নেয় না ।বর্তমান সময়ের ছেলেরা কেমন জানি লাভ ক্ষতির চিন্তা নিয়ে বিয়ে করে।মেয়ের বাবার গাড়ি বাড়ি তা হলে স্ত্রী মাথায় থাকবে।আবার স্বামী হিসাবে স্ত্রীর জন্য এমন ভাবে খরচ করেন যার কারনে পরে হারাম হালাল এর কোণ বেদাবেদ না করে ডান হাতে আর বাম হাতে রুজি করতে থাকে।পর্দা ইসলামের বা তাকওয়ার ভয় নিজের বা পরিবারের মধ্যে আর থাকে না,শয়তানের সেই সংসার কে দুনিয়াতে জাহান্নাম বানিয়ে দেন।যার ফলে স্বামী স্ত্রী মাঝে শুধু স্বার্থের টানে ভালবাসা থাকে।আর তাদের ফসল সন্তানরা হয়ে যায় দুনিয়ার নর্দমার কীট প্রতঙ্গ ,পচা ডিমের যেমন বাচ্ছা আশা করা যায় না তেমনি স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা ছাড়া সুস্থ্য সুসন্তান আশা করা যায় না।
কাগজের ফুলের যেমন সুবাস থাকে তেমনি ভালবাসা ছাড়া সংসার বাধা যায় না ।আমি এই জন্য দুই জন কেই বলব সহনশীল মননের পরিচয় দিন ।ফুল থেকে মৌমাছ নেয় মধু আর মাকসা নেয় বিষ।আমরাও হিন্দি সিনেমা স্টার ঝলসা দেখে নিজের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি না করে আমাদের অতীতের মহিলা সাহাবী ও বর্তমানে ইসলামের আলোকে আলোকিত বোনদের থেকে আদর্শটাই শিখি।এতে করে আমাদের দুনিয়ায় সামান্য ক্ষনীকের সময় টা হয়ে যাবে মধু ময় ।
আমি ৩ বার ব্রেইন স্ট্রোক করে ৩ বারই বোবা ও শরীলের বাম সাইড প্যারালাইজড হয়ে যায় । হসপিটালেও সাহেব কাউকে আমার সাথে থাকতে দেন নাই । নিজেই সেবা করেছেন । আর সব বারই আমার সেবা সাথে সংসারের রান্না ও নিজের আইনপেশা একসাথে চালালেন । আর কাউকে একটুও সাহায্যের জন্য ডাকলেন না । আমার সুস্থ্যতার জন্য অনবরত সব সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে জান । ছেলেদের বলবে তোমার মা কষ্ট পাবে এমন কোণ কাজ় করবে না। আল্লাহ আমার স্বামীকে নেক হায়াত দান করুন ।তার সাথে সাথে আল্লাহ সব মেয়ে দের কে একজন উত্তম ও আদর্শ স্বামী দান করুন ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুন্দর সষ্ট সমাজ কায়েমের জন্য তাকওয়াবান মুমিন মুত্তাকিন স্বামী/স্ত্রী ও ছেলে/মেয়ে দান করুন ।যারা আমাদের নয়নশীতল কারী ও মুত্তকীণদের ইমাম বানিয়ে দিক।
বিষয়: বিবিধ
৩৬৫১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটু চিনচিনে ব্যথা জেগে উঠল মনের ভেতরে।
"পুর্নিমার আলোর মত দূরে হারিয়ে যাওয়া সেই সময়ের জন্য মনি আজো কান্দে।তখন মনি নিজে নিজেই বলে বয়স সময় হারিয়ে গেছে কিন্তু তাদের ভালবাসা আগের চেয়ে আরো গাঢ় ও মজবুত হয়ে গেছে।কারন “আমাতে তুমি রয়েছ মিশে”- অনেক ভালো লেগেছে লেখাটি।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
আমাদের জন্য দোয়া করবেন ।এই ভালবাসা নিয়ে যেন আমরা জান্নাতেও একসাথে থাকতে পারি ।আল্লাহ আপনাকেও দুনিয়া ও আখিরাতে জান্নাতী সুখ দান করুন ।
আপনাকেও দুই দুনিয়ার সকল নেয়ামত যেন আল্লাহপাক দান করেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন