একমাস ট্রেনিং দিয়ে ঈমানের কি প্রমোশন হল না ডিমোশন হল?
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ৩০ জুলাই, ২০১৪, ০২:৩৮:৩৫ দুপুর
একমাস ট্রেনিং দিয়ে ঈমানের কি প্রমোশন হল না ডিমোশন হল?
একমাস ট্রেনিং দিয়ে ঈমানের কি প্রমোশন হল না ডিমোশন হল?
মানুষ জাতি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই করে না।স্বার্থ থাকলে পাগলের কাছেও লোহার বোঝাও হালকা মনে হয় ।আর স্বার্থ না থাকলে তুলার বোঝাও কাধ ভেঙ্গে যায়।আর আল্লাহ রাহমানুর রাহিম আমাদের মনের অবস্থ্যা বুঝেই রমজানের বিশাল বিশাল পুরুস্কার ঘোষনা দিয়ে একমাস ট্রেনিং এর মাধ্যমে বাকি ১১ মাস চলার প্রশিক্ষন দিয়ে দিলেন।গতকাল জাতীয় ঈদগাহ মাঠে লক্ষ লক্ষ মুসললির তাকবির ধ্বনি শুনে এতো খুশি আর ভয়ে এতোই কান্না আসছিলো যা ঝমঝম করে ঝরছিলো প্রকৃতির বারিধারার সাথে।কারন এই লক্ষ জনতার কয়জন জানে আজ সে যেই তাকভির বার বার বলছেও নামাজে ৬ বার বলল তার অর্থ কি ? আর এর পরে তার মুসলমান হিসাবে দায়িত্ব কি?সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য আমাদের গাইড বই আল কোরান কি বলছে ?তা কি আমরা জানি?দীর্ঘদিন পরে ডাঃ ফাতেমা আপা কে ঈদগাহে পাশেই পেয়ে গেলাম।আপার মনের গহীনে লুকানো ভালবাসা পেয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।বিদায়ের সময় আপাকে জিজ্ঞাসা করলাম “আপা একমাস ট্রেনিং এর পর আজ পুরুস্কার হিসাবে আমাদের ঈমানের কি প্রমোশন হল না ডিমোশন হল?”
দেহ টা তো ভালই তাকওয়াবান হয়েছে?
কাল সারা দিন আত্নীয় স্বজনদের সাথে কাটালেও বার বার ক্ষনে ক্ষনে বিদায়ী বন্ধুর বিয়োগ ব্যাথা হৃদয়টা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।তার মাঝে দেহ টা দীর্ঘ একমাস অনেক হালাল হারাম থেকে বিরত থেকে আমাকে আল্লাহর বিধানের অনুগত্য করতে সাহায্য করেছে।আলহামদুলিল্লাহ।ঈদের দিন ও আজ় আল্লাহ হুকুমে আমি তাকে কিছু খাবার গ্রহন করতে বললেই সে আতংকিত হয়ে আমাকে মনে করায়ে দেয় সে কি রোজাদার? পেট টাও খুদার জ্বালা হজম করেতে ভালই অবস্থ্য হয়েছে। তাই সারা দিনে খুদাই লাগছে না।কাল তারাবিহ পড়া হয় নাই।তাতে সারা শরীল ব্যাথা করছে।তখন ভাবলাম হুজুরের সাথে সাথে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালই এক্সেসাইজ করেছে। আমি তারাবিহ ছেড়ে দিলেও তারা সেই ব্যায়ামটা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছে। সব মিলিয়ে চিন্তা করে দেখলাম “দেহ টা তো ভালই তাকওয়াবান হয়েছে”।
‘যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তরে কোন কল্যাণ আছে বলে জানেন, তাহলে তোমাদের থেকে যা নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।‘ (আনফাল : ৭০)
বিবেকটা কি তাকওয়াবান হয়েছে?
বিকেলে সাহেবের সাথে ঘুরতে বের হয়ে যা দেখলাম আর বুঝলাম তা অনেক টা এই রকম হয়ে গেল যে, একজন মা তার রোগাক্রান্ত মুমুর্ষ সন্তানের মঙ্গলের জন্য ডাক্তারের কাছে গেল আর ডাক্তার রোগীকে দামী দামী ঔষধ আর ভাল ভাল প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে দিলেন।যেই কথা সেই কাজ মা বিরতি হীন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু প্রতিদিনই রোগী যা খাচ্ছে তাই আবার ভুমি করে ফেলে দিচ্ছেন।আর মাস শেষে দেখা গেল আগের চেয়ে রোগীর অবস্থ্যার আর অধপতন হলো।ঈদ মানে খুশি তাই রাত থেকে আনন্দ আর খুশির বন্যায় ভাসতে ভাসতে সদ্য শিকল মুক্ত শয়তানের আলিঙ্গনে নামাজ হল না সারা দিনে।দামী শাড়ি গয়নার ঝলকের বাহার সবাই কে দেখাবার জন্য পর্দাশীল নারী পর্দা ছেড়ে দিলেন।কোরান আর ইসলামী সংগিতের জায়গা চোখের নিমিশেই দখল করে নিল বাংলা হিন্দি নফসের উত্তেজনা ধায়ক গানের ক্যাসেট গুলো।তা হলে আমরা আর ঐরোগাক্রান্ত মুমুর্ষ শিশুর মাঝে তফাত কো্থায়?
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না।আর তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা শোনেনা। (সূরা আনফালঃ২০-২১)
একমাস ট্রেনিং দিয়ে কি প্রমোশন হল না ডিমোশন হল?
যেই কোরানের জন্য আল্লাহ রামাদান মাস ও কদরের মাধ্যমে আমাদের দুনিয়াতে শান্তি আর আখিরাতের মুক্তির ব্যবস্থ্যা করলেন।যে কোরানের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আমরা তাকওয়াবান/মুত্তাকিন হয়ে এভারেস্ট জয়ের চেয়ে মুল্যবান জান্নাতুল ফেরদাউস জয় করার সুযোগ করে দিয়েছেন।কোরান এর উপর ঈমানী মনোবল বৃদ্ধি করে কেরান বা রকেটের চেয়েও দ্রুতগতিতে আমাদের কে আল্লাহর নিকটে নিয়ে যেতে পারে।হুমায়ন আহাম্মেদের বই হিমু বানাল। আর আল্লাহর বানী সম্মলিত একটি বই যদি আমাদের কে মুত্তাকিন না বানাতে পারে তা হলে এই লজ্জা সারা জাহানের মুসলিম জাতির জন্য।মানুষ দুনিয়াতে আসে জীব হিসাবে আর এই কোরানের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই মানুষের চেষ্টা সাধনা অধ্যবসায় করে মানুষ অন্য জীব থেকে শ্রেষ্ট জীব হিসাবে মনুষত্ব লাভ করে।এই বিবেক যখন কোরানের মানবিক গুনাবলি লাভ করে তখন সে তাকওয়াবান হন।বিবেকহীন মানুষ সকলজীবের চেয়েও অধম হয়ে যায়।
-হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। বস্তুতঃ তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবে।(সূরা আনফালঃ২৪)
একমাস ট্রেনিং দিয়ে আমাদের কি প্রমোশন হল?
ঈমাম যখন পুরো কোরান শেষ করে শেষ রাকাতে আবার সুরা ফাতেহার পর সুরা বাকারার প্রথম অংশ পড়ে নামাজ শেষ করে তখন মনে হয় কোরানের দায়িত্ব তো আবার আমার উপর দিয়ে দিলেন।আর সেই দায়িত্ব পালনের জন্য আমাকে কোরান জানা মানা ও অন্যকে জানাতে হবে।আর এই কাজ টি আমি স্বতস্ফুর্ত ভাবে করতে সদা তৈরী থাকতে হবে। প্রামান হিসাবে আমাকে আল্লাহর ভয়ে ভীত সৈনিকের মত দ্বীন কায়েমের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।দুনিয়াবী মোহের অজুহাতে আমি সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাব না। একমাস ট্রেনিং দিয়ে আমাদের কি প্রমোশন হল তা বাকী ১১ মাসে আল্লাহর গোলামীর মাধ্যমেই প্রমানিত হবে।রোজাদার আল্লাহ দেখছেন তাই রোযাদার ভয়ে নফসকে হালাল হারাম থেকে দূরে রেখেছেন।সেই আল্লাহই বাকি১১ মাস আমাকে উনার সিসি ক্যামরা দিয়ে নজরদারীতে রেখেছেন।কষ্ট হলে আল্লাহর বিধান মেনে নিব।
-আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি অকল্যাণের সম্মুখীনকারী। বস্তুতঃ আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা সওয়াব। (সূরা আনফালঃ২৮)
যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই।পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।( নিসা-৭৬)
একমাস ট্রেনিং দিয়ে আমাদের কি ডিমোশন হল ঃ
আল্লাহর বিধানের বাহিরে চলার মাধ্যমের আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের অকল্যান বয়ে আনবে।নৈতিক অধপতন হবে।মুসলমান নামেই সীমাব্ধ থাকবে।যেমন ফলের ঝুড়ি সারা জীবন ফলের বোঝা বহন করে কিন্তু আদৌ জানে না কোণ ফলে্র রসের কোন স্বাদ।আমাদের অবস্থ্যাও আল্লাহর বিধান মেনে না চললে একই অবস্থ্যা হবে।সাগর পাড়ের নুড়ি সাগর জলে সিক্ত হয় কিন্তু সাগর পানি দ্বারা নিজে অপকৃত হতে পারে না।সাগরের ভাসমান পোকা সাগরের গভীরতা কত তা জানে না।আমরা এই কোরান না ানার ও না মানার ফলে আমরা কলেমা নামধারীরা একই অবস্থায় থেকে যাব।মাকাম ফল বাহিরে চকচকে ভিতরে দুর্গন্ধ।রমজানের আমেজ না থাকলে আমরা সেই মাকাম ফলের মত মুসলমান না হয়ে মুনাফিক হয়ে যাব।
তাই আসুন, কোরানের ছায়াতলে সমবেত হই।
আল্লাহর কাছে আমরা বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাই তিনি যেন আমাদের কে বাকি ১১ মাস তাক্বওয়াবান হিসাবে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে রমজানের আমেজে কাটাবার তাওফিক দান করুন ।আমিন।
।আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৩২২৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাজার কথার উত্তর দিলো এক কথায়।।
জ়াযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাত ।আমিন।
“দেহ টা তো ভালই তাকওয়াবান হয়েছে”।
‘যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তরে কোন কল্যাণ আছে বলে জানেন, তাহলে তোমাদের থেকে যা নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।‘ (আনফাল : ৭০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন