একজন বুদ্ধিমান রাজার গল্প।(শিক্ষনীয় গল্পটি পড়ে দেখুন)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০২ জুলাই, ২০১৪, ০১:২৮:৫০ রাত

একজন বুদ্ধিমান রাজার গল্প

অনেক বছর আগে এমন একটা দেশ ছিল যে দেশের জনগন তাদের দেশের জন্য প্রতি বছর একজন রাজা করে রাজা নির্বাচন করে নিত।নির্বাচিত রাজার নির্ধারিত মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হলে তারা তাকে সমুদ্রের মাঝে একনির্জন দ্বীপে নির্বাসনে দিয়ে আসত।দ্বীপে যাবার সময় জনগন বিদায়ী রাজাকে মুল্যবান সাজে সজ্জিত করে মুল্যবান বাহনে চড়িয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিত।বিদায়ী মুহুর্তটা বিদায়ীরাজার জন্য যতই বেদনা কর হোক না কেন তাও জনুগন নৌকায় করে রাজাকে নির্জন দ্বীপে নির্বাসনে দিয়ে আসত।

এমনি ভাবে একদিন তারা ফিরে আসার সময় তারা একযুবককে সাগরে একটুকরা কাঠের উপর ভাসতে দেখে তাকে তুলে নিয়ে আসল।তারা যুবককে তাদের দেশের রাজা হবার নিয়মকানুন ও নির্বাসনের কথা জানায়ে রাজা হওয়ার অনুরোধ করল।প্রথম যুবক রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যায়।

রাজা হবার ৩ দিন পরে রাজা মন্ত্রী কে বলল,তাকে পূর্ববর্তী রাজাদের রেখে আসা নির্বাসন দ্বীপে বেড়াতে নিয়ে যাবার জন্য।মন্ত্রী প্রথম বারন করলেও পরে সেখানে নিয়ে গেলেন।নতুন রাজা দ্বীপে গিয়ে দেখলেন,সেখানে দ্বীপটি গহীন জঙ্গল ওহিংস্র জন্তু জানোয়ারের ডাকে ভরপুর এবং পূর্ববর্তী রাজাদের কে হিংস্র জন্তু জানোয়ারে খাওয়া অবশিষ্ট কংকাল।

নবরাজা বুঝতে আর বাকী নেই তার পরিনতি কি হবে?

তাই রাজ্যে ফিরে এসেই রাজা একশত জন খুব সাহসী ওসামর্থপূর্ন শ্রমিককে বাছাই করে সেই দ্বীপের জঙ্গল পরিস্কার ও হিংস্র জন্তু জানোয়ার তাড়ানো জন্য নির্দেশ দিলেন।কিছু দিনের মধ্যেই রাজা আবার গিয়ে দেখে আসলে তার দ্বীপটি পরিস্কার করে ফেলা হয়েছে।তারপর রাজা ২য় পর্যায়ে তাদের কে দায়িত্ব দিলে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ফলজ ঔষধি গাছের বাগান করতে এবং কিছু উপকারী পশু পাখির বিচরন ক্ষেত্র হিসাবে দ্বীপ্টি সাজাতে।আর রাজা বিভিন্ন স্থানে ভ্রমনে যাবার জন্য দ্বীপের সাথে সংযুক্ত করে একটি বন্দর তৈরী করতে।কয়েক মাসের মধ্যে দ্বীপটি হয়ে গেল একটি সুন্দর স্থান।জনগন মহাখুশি নবরাজার চালচলন ও সাদাসিদে জীবন যাপন দেখে।

নিদিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর জনগন রাজাকে মুল্যবান সাজে সজ্জিত করে বিদায়ী মুহুর্তে অন্য রাজাদের মত বেদনা ভারাক্রান্ত মলিন চেরাহা ও ক্রন্দন করতে দেখলো না।বরং দেখলো হাস্যুজ্জোল ভাবে সবার থেকে বিদায় নিচ্ছেন।হতভম্ব জনগন রাজাকে প্রশ্ন করলেন আপনি এই কঠিন সময় কেন হাসছেন?তখন রাজা উত্তর দিলেন তোমরা জানো না জ্ঞানী লোকেরা কি বলেন,

“যখন তুমি এসেছিলে ভবে,কেদেছিলে তুমি হেসেছিল সবে,এমন জীবন তুমি করিলে যাপন,মরিলে হাসিবে তুমি কাদিবে ভুবন”।

আমি তেমনি জীবন যাপন করেছি।তোমাদের পূর্বের রাজারা এই নিদিষ্ট্য সময় রাজ্য নিয়ে আরাম আয়েশের মশগুল থেকে কাটিয়েছে।আর আমি অতীত রাজাদের থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা কে বর্তমান সময়কে ভবিষ্যতের চিন্তায় পরিকল্পিত ভাবে কাজে লাগিয়েছি।আমার ভবিষ্যতের আরাম আয়েশের চিন্তায় আমি বিপদ সংকুল দ্বীপ কে মনোমুগ্ধ কর সুন্দর বাসস্থানে পরিনত করেছি যা তোমাদের রাজ্য থেকেও আরাম দায়ক।

এই গল্প থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাঃ

দুনিয়ার জীবনে আমরা প্রত্যেকেই একজন রাজা বা খলিফা(আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নকারী প্রতিনিধি)। আমাদের জীবনের নিদিষ্ট আয়ুকালটা পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতির সময় মাত্র।এই সময়টাকে পরিকল্পিত ভাবে কাজে না লাগায়ে দুনিয়ার নানান রং তামাশায় বিভোর হয়ে পরবর্তি অনন্ত জীবনের কথা ভুলে গেলে আমাদের পরিনতি হবে ভয়াবহ।আমাদের কে রাসুল সাঃএর উম্মত হিসাবে উনার সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে সেই আলোকে নিজের আখিরাত সাজাতে হবে।আমাদের সকল দুঃখ কষ্ট কে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত হিসাবে অটুট ধৈর্য্যশীল হয়ে পরবর্তী জীবনের আনন্দ ও সুখের কথা ভেবে জীবন পরিচালিত করতে হবে।তাই পরবর্তী জীবনে সুখে থাকার জন্য আমাকে দুনিয়ার জীবন থেকেই আমোলের ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ আখিরাতের ঠিকানায় পার্সেল করে পাঠাতে হবে।দুনিয়ার আরাম আয়েশের পিছনেই ভয়াবহ ও সর্বনিকৃষ্ঠ্য বিশ্রামাগার জাহান্নাম আর দুঃখ কষ্ট সকল ত্যাগ এর পিছনেই অনাবিল শান্তির চিরস্থায়ী আবাস জান্নাত।আল্লাহ বলেন,

“হে ঈমানদাররা!আল্লাহকে ভয় করো৷ আর প্রত্যেককেই যেন লক্ষ রাখে, সে আগামীকালের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে৷ আল্লাহকে ভয় করতে থাক৷ আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তোমাদের সেই সব কাজ সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করে থাক”।

সুরা হাশর ১৮


নুন্যতম বিবেকবান তার আচরণে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহকে ভয় করে ধ্বংসের সেই গহবর থেকে উঠে আসার চিন্তা করবে। যার মধ্যে আমরা শয়তানের দাসত্বের কারণে নিক্ষিপ্ত হবো । আগামীকাল অর্থ আখেরাত । দুনিয়ার এই গোটা জীবনকাল হলো, 'আজ' (াখিরাতের সামান্য কিছুক্ষন)এবং কিয়ামতের দিন হলো আগামীকাল যার আগমণ ঘটবে আজকের এই দিনটির পরে ।

আল্লাহ তা'আলা অত্যন্ত বিজ্ঞোচিতভাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন যে, ক্ষণস্থায়ী আনন্দ উপভোগ করার জন্য যে ব্যক্তি তার সবকিছু ব্যয় করে ফেলে এবং কাল তার কাছে ক্ষমা নিবারণের জন্য খাদ্য আর মাথা গুঁজাবার ঠাই থাকবে কিনা সে কথা চিন্তা করে না সেই ব্যক্তি এ পৃথিবীতে বড় নির্বোধ । ঠিক তেমনি ঐ ব্যক্তিও নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করছে যে তার পার্থিব জীবন নির্মানের চিন্তায় এতই বিভোর যে আখেরাত সম্পর্কে একেবারেই গাফেল হয়ে গিয়েছে । অথচ আজকের দিনটির পরে কালকের দিনটি যেমন অবশ্যই আসবে তেমনি আখেরাতও আসবে । আর দুনিয়ার বর্তমান জীবনে যদি সে সেখানকার জন্য অগ্রিম কোন ব্যবস্থা না করে তাহলে সেখানে কিছুই পাবে না ।

আমরা প্রত্যেক ব্যক্তি আমাদের নিজের হিসেব পরীক্ষক । যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে ভাল এবং মন্দের পার্থক্যবোধ সৃষ্টি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আদৌ আমরা অনুভব করতে পারব না যে,আমরা যা কিছু করছি তা আমার আখেরাতের জীবনকে সুন্দর ও সুসজ্জিত করছে, না ধ্বংস করছে । আমাদের এই অনুভূতি যখন সজাগ ও সচেতন হয়ে ওঠবে তখন আমরা নিজের হিসেব-নিকেশ নিজেই করে দেখতে পাব আমরা আমাদের সময়, সম্পদ, শ্রম, যোগ্যতা, এবং প্রচেষ্টা যে পথে ব্যয় করছি তা কি আমাদের কে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ? এ বিষয়টি বিবেচনা করা আমাদের নিজের স্বার্থেরই প্রয়োজন । অন্যথায় আমরা নিজের ভবিষ্যত নিজেই ধ্বংস করে করার জন্য দায়ী ।

.

তাই আসুন আমরা আজই তাওবা করে এই রমজান মাসের আল্লাহর দেওয়া অফার গুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে পরবর্তী জীবনের আরাম আয়েশের কথা ভেবে একজন বুদ্ধিমান রাজা হয়ে যাই।আল্লাহ আমাদের কে এই মাহে রমজানের প্রতিটি মুহুর্ত কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমাদের সকল গুনাহ খাতা মাফ করে আমাদের কে পরবর্তী জীবনে রাইয়ান নামক জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হবার তাওফিক দান করুন।ইয়া আল্লাহ!আমিন।

বিষয়: বিবিধ

২৫৭৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

240774
০২ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:৩৯
আফরা লিখেছেন : তাই আসুন আমরা আজই তাওবা করে এই রমজান মাসের আল্লাহর দেওয়া অফার গুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে পরবর্তী জীবনের আরাম আয়েশের কথা ভেবে একজন বুদ্ধিমান রাজা হয়ে যাই।আল্লাহ আমাদের কে এই মাহে রমজানের প্রতিটি মুহুর্ত কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমাদের সকল গুনাহ খাতা মাফ করে আমাদের কে পরবর্তী জীবনে রাইয়ান নামক জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হবার তাওফিক দান করুন।ইয়া আল্লাহ!আমিন।
০২ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:৫১
186862
সত্যলিখন লিখেছেন : প্রথম মন্তব্যের জন্য আল্লাহ আমাকে ,আপনাকে ,আমাদের মা বাবা কে ও সকল মুমিন মুমেনা কে কবুল করে নিক ।আমিন
240782
০২ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:০৬
ভিশু লিখেছেন : Praying Praying Praying
ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০২
190203
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।
Click this link
240810
০২ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৭:৫৩
চোরাবালি লিখেছেন : তাই আসুন আমরা আজই তাওবা করে এই রমজান মাসের আল্লাহর দেওয়া অফার গুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে পরবর্তী জীবনের আরাম আয়েশের কথা ভেবে একজন বুদ্ধিমান রাজা হয়ে যাই।
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
190202
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।
Click this link
240814
০২ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:১৭
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষনীয় পোস্ট।
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
190201
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।
Click this link
241044
০২ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:০৬
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : রমজান মাসকে কাজে লাগিয়ে আমরা যেন রাজার মত বুদ্ধিমানী হই।
শিক্ষনীয় পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
190200
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।
Click this link
241053
০২ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:৩৬
মাহবুব রহমান লিখেছেন : শিক্ষনীয় পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
যাযাকাল্লাহু খাইরান.
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
190199
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।
Click this link
241458
০৪ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৪৫
সরল কথা লিখেছেন : Good Luck Praying Praying
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
190198
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।
Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File