বিবেককে প্রশ্ন করুন ,‘মধ্যপন্থী’ উম্মাত হিসাবে আমরা কি দায়িত্ব পালন করেছি ?

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ৩০ জুন, ২০১৪, ০৪:০৬:৩০ রাত

বিবে্ককে প্রশ্ন করুন ,‘মধ্যপন্থী’ উম্মাত হিসাবে আমরা কি দায়িত্ব পালন করেছি ?

" আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী"।বাকারা ১৪৩



এটি হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাতের নেতৃত্বের ঘোষণাবানী।

'এভাবেই'শব্দটি সাহায্যে দু'দিকে ইংগিত করা হয়েছে ।

এক:আল্লাহর পথপ্রদর্শনের দিকে ইংগিত করা হয়েছে। যার ফলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুগত্যকারীরা সত্য-সরল পথের সন্ধান পেয়েছে এবং তারা উন্নতি করতে করতে এমন একটি মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে যেখানে তাদেরকে 'মধ্যপন্থী উম্মাত' গণ্য করা হয়েছে ।

দুই: এ সাথে কিব্‌লাহ পরিবর্তনের দিকেও ইংগিত করা হয়েছে । অর্থাৎ নির্বোধরা একদিক থেকে আর একদিকে মুখ ফিরানো মনে করছে । অথচ বাইতুল মাকদিস থেকে কা'বার দিকে মুখ ফিরানোর অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে বিশ্ববাসীর নেতৃত্ব পদ থেকে যথানিয়মে হটিয়ে উম্মাতে মুহাম্মাদীয়াকে সে পদে বসিয়ে দিলেন ।

'মধ্যপন্থী উম্মাত' শব্দটি অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক তাৎপর্যের অধিকারী ।

এর অর্থ হচ্ছে, এমন একটি উৎকৃষ্ট ও উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন দল, যারা নিজেরা ইনসাফ, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত , দুনিয়ার জাতিদের মধ্যে যারা কেন্দ্রীয় আসন লাভের যোগ্যতা রাখে , সত্য ও সততার ভিত্তিতে সবার সাথে যাদের সম্পর্ক সমান এবং কারোর সাথে যাদের কোন অবৈধ ও অন্যায় সম্পর্ক নেই ।

বলা হয়েছে, তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মাতে পরিণত করার কারণ হচ্ছে এই যে, "তোমরা লোকদের ওপর সাক্ষী হবে এবং রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হবেন । "

এ বক্তব্যের অর্থ কি৷

এর অর্থ হচ্ছে ,

আখেরাতে যখন সমগ্র মানবজাতিকে একত্র করে তাদের হিসেব নেয়া হবে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হিসেবে রসূল আমাদের ব্যাপারে এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, সুস্থ ও সঠিক চিন্তা এবং সৎকাজ ও সুবিচারের যে শিক্ষা দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল তা তিনি আমাদের কাছে হুবহু এবং পুরোপুরি পৌছিয়ে দিয়েছিন আর বাস্তবে সেই অনুযায়ী নিজে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। এরপর রসূলের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে সাধারণ মানুষদের ব্যাপারে আমাদের এই মর্মে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, রসূল আমাদের কাছে যা কিছু কার্যকর করে দেখিয়ে ছিলেন তা তাদের কাছে কার্যকর করে দেখিয়ে ছিলেন তা তাদের কাছে কার্যকর করে দেখাবার ব্যাপার তোমরা মোটেই গড়িমসি করোনি।

এভাবে কোন ব্যক্তি বা দলের এ দুনিয়ায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সাক্ষ্য দানের দায়িত্বে নিযুক্ত হওয়াটাই মূলত তাকে নেতৃত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত করার নামান্তর । এর মধ্যে যেমন একদিকে মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির প্রশ্ন রয়েছে তেমনি অন্যদিকে রয়েছে দায়িত্বের বিরাট বোঝা ।

এর সোজা অর্থ হচ্ছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে এ উম্মাতের জন্য আল্লাহভীতি , সত্য-সঠিক পথ অবলম্বন, সুবিচার, ন্যায়-নিষ্ঠা ও সত্যপ্রীতির জীবন্ত সাক্ষী হয়েছেন তেমনিভাবে এ উম্মাতকেও সারা দুনিয়াবাসীদের জন্য জীবন্ত সাক্ষীতে পরিণত হতে হবে ।

এমন কি কথা, কর্ম, আচরণ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয় দেখে দুনিয়াবাসী আল্লাহভীতি, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও সত্যপ্রীতির শিক্ষা গ্রহণ করবে ।

এর আর একটি অর্থ হচ্ছে ,

আল্লাহর হিদায়াত আমাদের কাছে পৌছাবার ব্যাপারে যেমন রসূলের দায়িত্ব ছিল বড়ই সুকঠিন, এমনকি এ ব্যাপারে সামান্য ত্রুটি বা গাফলতি হলে আল্লাহর দরবারে তিনি পাকড়াও হতেন, অনুরূপভাবে এ হিদায়াতকে দুনিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাবার ব্যাপারেও আমাদের ওপর কঠিন দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে।

যদি আমরা আল্লাহর আদালতে যথার্থই এ মর্মে সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হই যে, "তোমার রসূলের মাধ্যমে তোমার যে হিদায়াত আমরা পেয়েছিলাম তা তোমার বান্দাদের কাছে পৌছাবার ব্যাপারে আমরা কোন প্রকার ত্রুটি করিনি ",

তাহলে আমরা সেদিন মারাত্মকভাবে পাকড়াও হয়ে যাবো । সেদিন এ নেতৃত্বের অহংকার সেখানে আমাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে । আমাদের নেতৃত্বের যুগে আমাদের যথার্থ ত্রুটির কারণে মানুষের চিন্তায় ও কর্মে যে সমস্ত গলদ দেখা দেবে , তার ফলে দুনিয়ায় যেসব গোমরাহী ছড়িয়ে পড়বে এবং যত বিপর্যয় ও বিশৃংখলার রাজত্ব বিস্তৃত হবে --

- সে সবের জন্য অসৎ নেতৃবর্গ এবং মানুষ ও জিন শয়তানদের সাথে সাথে আমরাও পাকড়াও হবো । আমাদের জিজ্ঞেস করা হবে , পৃথিবীতে যখন জুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অত্যাচার, পাপ ও ভ্রষ্টতার রাজত্ব বিস্তৃত হয়েছিল তখন তোমরা কোথায় ছিলে ৷

"রাব্বানা-আফরিগ 'আলাইনা-সাবরাওঁ ওয়াতাওয়াফফানা-মুসলিমীন।

"হে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান কর।"

সূরা আল আরা'ফ- ১২৬

তাফহিমুল কোরআন

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

240190
৩০ জুন ২০১৪ সকাল ০৭:৪০
সন্ধাতারা লিখেছেন : Very beautiful discussion. Jajakalla khairan.
০২ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:৪৩
186852
সত্যলিখন লিখেছেন : Praying Praying Praying
একজন বুদ্ধিমান রাজার গল্প।(শিক্ষনীয় গল্পটি পড়ে দেখুন)

Click this link
240194
৩০ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
হতভাগা লিখেছেন : চমতকার লিখেছেন ।

আপনার লিখিটা দিয়েই মনে হয় শুরু হয়েছে ব্লগার ভিশুর আমন্ত্রনে ক্বুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন আয়াত ও কথার অনুবাদ ও তাফসির ।

বাংলাদেশের মুসলমানরা মধ্যপন্থী উম্মত না , মডারেট মুসলমান

এই মডারেট স্ট্যাটাসের কারণে আমরা পারি না রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে স্টাবলিশ করতে ।

এই মডারেটিসিটি বুঝাতে হয় অন্য ধর্মের লোক ও তাদের আচার আচরনকে নিজ ধর্মের লোক ও আচার আচরনের উপর বড় দেখিয়ে ।

এখানে ''ধর্ম যার যার, উতসব সবার'' এই নীতি গ্রহন করা হয়েছে । তবে তা শুধু মুসলমানদের জন্যই । এখানকার একজন মুসলমানকে অন্যধর্মের উতসবে যেরকম আচরন করতে দেখা যায় তা তাদের মডারেটিসিটি প্রমান করতেই । তবে ভিন্ন ধর্মের লোকেরা ঠিকই নিজেদের মর্যাদা ধরে রাখে , তারা এতটা উতসব করে না বা আসেও না ।

এটাই ঠিক । মুসলমানদের অন্যধর্মের উতসবে যোগ দেওয়া হারামই । কিন্তু মডারেট মুসলমানদের অন্যতম সূচকই হচ্ছে এটা ।

বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ । এদেশে অনেক অলি - আউলিয়া এসেছিলেন ধর্ম প্রচার করতে । ঢাকাসহ দেশের প্রতিটা শহরের অলিতে গলিতে প্রচুর মসজিদ আছে । ঢাকাকে মসজিদের শহরও বলা হয় । কিন্তু কয়জন আছে যে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে নিয়মিত ?

বাংলাদেশ হতে পারতো বিশ্বের নেতৃস্থানীয় একটা মুসলিম দেশ কারণ এখানে ৯০%ই মুসলমান । ইসলামী শরিয়ত কায়েম হবার মত এখানে সব পরিস্থিতিই ছিল ।

কিন্তু সমস্যা হল আমরা মডারেট মুসলিম - সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে আমাদের প্রয়োজনে নিজেদেরটা ত্যাগ করে অন্যেরটা উঠিয়ে ধরতে হবে ।




এই ছবিটা আমি প্রায়ই দিয়ে থাকি এরকম পোস্ট বা মন্তব্যে ।

আমরা বাংলাদেশীরা কি ধরনের মুসলমান তা বুঝাতে এই ছবিটাই যথেষ্ট।
০২ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:৪৪
186853
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ ।এত ধৈর্য্য আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০৫
190204
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।
Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File