আবারও নববধু সাজে যাবো অন্ধকার ঘরে।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৫ জুন, ২০১৪, ১২:১২:৪৩ রাত
হুররে হুয়া কি মজা,বহু আকাঙ্গিত রমজান মাসের ছুটিঃ
প্রথম প্রথম জ্যোতস্নাকে সত্ত্র হাজার বলে ক্ষেপাতে আমরা সবাই মজা পেতাম।কারন বিবাহিত বান্ধুবী নেপুর,হালিমা নার্গিস রিতা এদের থেকে অর মোহরা বেশি তা সে বুক ফুলিয়ে বলেছিল। কিছু আনন্দ উল্লাসে আর কিছু খন্ড খন্ড বেদনার মাঝে মেয়েদের কমোন রুম থেকে সবাই মিলে জ্যোতস্নাকে কিছু পরামর্শআর হাসিকান্না উপহার দিয়ে বিদায় জানালাম।স্কুল বাড়ির দীর্ঘপথ সেইদিন বান্ধুবীদের আনন্দের প্লাবনে প্লাবিত হয়ে চোখের পলকে শেষ হয়ে গেল।ঘরে ডুকেই হাস্যউজ্যোল দুলাইভাইকে দেখেই পিলে চমকে উঠল।যথারীতি মায়ের নিয়ম আগে নামাজ পরে খাবার।তাই আসরের নামাজের অজু করতে গিয়েই পুকুর পাড়ে বান্ধুবীদের ঝটলা আমাকে দেখেই চুপ।আমিও তাদের এই আচরনে অভিমান করে অজু সেরে পাড়ে উঠার সাথেই লাকী বলল,”২য় রমজান,২৪জু্ন ১৯৮২ আমার বিয়ে”।বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত আমার কাছে খবরটা মনে হয়েছে।
সেইদিন আষাড়ের মেঘেরা অনেক কেদেছিলঃ
আমাকে রমজানের মাসে ভালভাবে পড়ার জন্য উপদেশ দিয়ে আমার প্রানপ্রিয় স্যার সেই দিন বলেছিল, তোকে অনেক বড় ডাক্তার হতে হবে”।বিবাহিত বান্ধুবীদের মত আমার জীবনে আর পড়ালিখা হবে না ভেবে নামাজে শেষে আল্লাহর কাছে অনেক কেদেছিলাম।আমার প্রতিবেশি এক বান্ধবী নেপুরের বিয়ে হয় তার কয়েক দিন আগে। তার কাছে দৌঁড়ায়ে গিয়ে বিয়ে বাসরঘরওপরবর্তিদায়িত্ব সম্বন্ধে যা শুনলাম হৃদয়টা আমার সাহারা মরুভুমি হয়ে গেল।সেইদিন আষাড়ের মেঘেরা অনেক কেদেছিল আমার সাথে ।কারন আমি নিজের আত্নসমালোচনা করে দেখলাম আমি অযোগ্যতার (-০)শুন্যের কোঠায়।না আমি অনিন্দ্য সুন্দরী যে বাইরের রূপটা পুরুষকে মুগ্ধ করবে।বাহিরের চেয়েও বেশি ভিতরটা ামার ঘোর অন্ধকারে ঢাকা ছিল। কারণ কোরানের আলোকে ইসলামের আলো তখনো তার অন্তর জগতে প্রবেশ করেনি। না বুঝে কালেমায়ে শাহদাত পড়ে বা নামে মাত্র মুসলমান মাত্র।
অন্ধকার ঘরে একজন আলোকিত উত্তমবন্ধুর ভালবাসার সন্ধান পেলাম:
বিয়ে মানে ধর্মীয় অনুশাসনে একে অন্যের সাথে এক নিবীড় ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। সুখে দুঃখে একে অন্যকে জড়িয়ে রাখা।নেপুরের সব কথা তার জীবনের জন্য সত্য হলেও আমার বেলায় তা ভুলছিল। ইফতারের পরে আমাকে গোসল করাচ্ছিল বোন ভাবিদের বালতির গরম পানির সাথে তখন মুষলধারেরে আষাড়ের বারিধারার জল আর আমার নয়নজল মিলে গোসল শেষ হল।তারা আমাকে তাদের মত সাজালো তখনো আমি নেপুরের উপদেশ মত জীবন্ত লাসের মত নিরব রইলাম।স্বপ্নের মত একপলক দেখা ছোট্ট মেয়েটাকে ভালবাসার ফসলের মত নিজের মনের গোলায় বউ হিসাবে স্থান দেবার জন্য অন্ধকার ঘরে আগে থেকে একজন মানুষ বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল।তা আমার জানা ছিল না।ভাবীরা সবাই আমাকে অমাবস্যার অন্ধকার রাতের অন্ধকার ঘরে ভিতরে রেখে চলে গেল।আমি ভীত সনত্রস্থ হয়ে সেই অন্ধকার ঘরে একজন আলোকিত উত্তমবন্ধুর হৃদয়ে ভালবাসার সন্ধান পেলাম।যিনি আমাকে শুধু ভালবাসা দিয়েই ক্ষান্ত হন নাই তার সাথে সাথে আমার জীবনের প্রতিটি ধাপে আলোর মোশাল জ্বালিয়ে আমার জীবনের সকল অন্ধকারবন্ধুর পথে আমার হাতটি শক্তবাধনে আগলিয়ে রেখেছিলেন ওআমার হৃদয়ের অন্ধকার দূর করার জন্য একটা আলোকিত পথের সন্ধান দিলেন।যেখানে গিয়ে আমি পেলাম হাজারো আলোর মিছিলের জোনাকীদের যারা শুধু অন্ধকার অনাবাদি হৃদয়ে্র অন্ধকার দূর করে আলোকিত করে দেওয়া।
বাবারা তোমরা কি উত্তমবন্ধু হতে পারবে না?
আমার স্বামীর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাকে নিয়মিত নামাজ , কোরান পড়া , ইসলামিক জ্ঞান অর্জনে ধাবিত হওয়া , পর্দা করা ও ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে এক আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে আত্ন-সমর্পণ করতে তিনি আমাকে শিক্ষা দেয়।বর্তমান ছেলেরা যখন বলে একটা ভাল মেয়ে দেন।তখন আমার মন চায় তাদের বলতে বাবারা তোমরা কি একটা মেয়ের জীবন সুন্দর করে সাজানোর জন্য একজন উত্তমবন্ধু হতে পারবে না?আমি যখন বোন্দের কাছে শুনি দাম্পত্য জীবন অভিশপ্ত জীবন,যেখানে আছে নোংরামি আর অসভ্যতা ।তখন বলি“দুনিয়ার জান্নাতী সুখ দাম্পত্য জীবনের হাসি আনন্দের মাঝে।সুখেদুঃখে একজন আরেকজনকে স্বার্থহীন প্রেমে জড়িয়ে রাখার মাঝে।
তোমাকে হৃদয়ের পবিত্র ভালবাসা ছাড়া আর কি দেব উপহার?
আজ ২৪শে জুনআলহামদুলিল্লাহ।।আমি হিসাব করে দেখি দাম্পত্য জীবনে সে ভালবাসার যে পিরামিড পরম আনন্দ পরম জান্নাতী সুখ আমাকে দান করেছে সেই খানে আমি তার কাছে ঋনী।আল্লাহর নেয়ামত স্বরুপ ইসলামের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আমরা লাভ করেছি অপূর্ব প্রশান্তি। দাম্পত্য জীবনে ইসলাম জানা ও মানার মধ্যে যে এত শান্তি সুখ আছে তা যারা এইপথে নেই তারা পাবে না। তবে শান্তি-সুখের এই সুন্দরতম জীবনকে যারা উপভোগ করতে তারা কোরানের ছায়াতলে সমবেত হন ।হে আল্লাহ! দাম্পত্য জীবনের যে কয়েকটি বসন্ত পেরিয়ে এসেছি তার পুরুস্কার হিসাবে আমার রিক্তহস্তে হৃদয়ের পবিত্র ভালবাসা ছাড়া কি দেব উপহার। হে আল্লাহ!এই উত্তমবন্ধুও আদর্শস্বামীকে এর প্রতিদানও উত্তম পুরুস্কার জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।আমীন।
আবারও নববধু সাজে যাবো অন্ধকার ঘরে :এবার সঙ্গে দিও একটি বাতি।:
মিনারা আপা খবর দিলেন দ্বীনিখালাম্মা মারা গেছেন।(ইন্নালিল্লাহে…)খাল্লামাকে গোসল করাতে হবে মিনারা আপার সাথে।য়ামার জীবনের এটাই প্রথম মৃতব্যক্তি গোসল করানো ও সাজানো।আমি দেখলাম নববধুর মতই সাজানো হলো।খালাম্মাকে চার পায়ার খাটের উপর শোয়ায়ে ছেলে সহ সবাই যখন কাধে করে নিচ্ছিলো তখন আমার মনে হলো পালকি চড়ে নববধু যাচ্ছে।আর সবাই মিলে ডুকায়ে দিয়ে আসবে একটা অন্ধকার ঘরে।আরেকটা অনন্তজীবন শুরু হবেএরপর থেকে।আমার মনে হচ্ছে সেই অধকার ঘরেও যাবার জন্য সবাই আমাকে সুন্দর মেসিং করা পর্দা ওগোমটা পরায়ে সুসজ্জিতসাজে সাজানো আমাকেও।আবারও আমি নববধু সাজে যাবো সেই অন্ধকার ঘরে?এবার সঙ্গে দিও একটি বাতি।আমি দেখবো কে হবে আমার সাথী।
‘হে আমাদের রব! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। সুতরাং তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তুমি তাকে লাঞ্ছিত করবে। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।তুমি আমাদের রামজানের হায়াত দান কর।আমাদেরকে ও আমাদের পরিবারকে নয়নশীতলকারী মুত্তাকিনদের ঈমাম বানিয়ে দিন।
বিষয়: বিবিধ
২৮৮৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link
Click this link
Click this link
Click this link
Click this link
Click this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন