শুন সন্তানেরা ! একজন মা হিসাবে বলছি
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৮ মে, ২০১৪, ০১:৫৪:১১ রাত
শুন সন্তানেরা ! একজন মা হিসাবে বলছি
ছোট ২ ছেলের এস এস সি পরীক্ষার প্রস্তুতি । নিজের সংসার ও দুই নাতি নাতনির সেবা করা ।
তার সাথে পড়ন্ত বিকাল বেলার বয়স।আর ধজভাঙ্গা শরীলের ঠেলাগাড়ি মার্কা চলন।তার সাথে সাথে আমার উপর আল্লাহর তরফ থেকে আসা
ইকামতে দ্বীন কায়েমের নতুন দায়িত্ব ও সাথে সাথে কাজের জন্য ময়দানে ঝাফিয়ে পড়া ।মাঝে মাঝে হিমশিম খেয়ে ঊঠলেও আমার কাছে তখন বার বার মনে হয়েছে ,
আমি যদি হাজার ব্যাস্ততার মাঝেও আল্লাহর উপর ভরসা করে উনার ফরজ কাজের দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে প্রান পন চেষ্টা করি। তা হলে আল্লাহ আমার দুনিয়ার সকল কাজ সহজ করে দিবেন ।কারন আমার সাথে আমার সমস্ত কাজে আল্লাহর রহমত আছেন ।এই ভরসা করেই চললাম।সত্যি আল্লাহর উপর ভরসাকারী কে তিনি কখনো নিরাশ করেন না ।আমি যখনি আন্দোলনের উধ্বতন বোনদের ডাকে সাড়া দিতে ছুটে যেতে নিতাম তখন আমার আচল ধরে থাকা ছেলে ২টা বলত "মা আমাদের পরীক্ষা থেকেও আপনার প্রোগ্রাম বেশি গুরুত্ব পুর্ন ।"
তখন শুধু বলেছি "বাবা দুনিয়ার সব কিছুর উপর আমার কাছে আল্লাহর ফরজ কাজের দায়িত্ব বেশি বড় । তাই আমাকে বাধা দিও না ।আল্লাহর উপর তোমাদের দায়িত্ব দিয়ে আমি কিছু সময়ের জন্য আমার আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করতে যাচ্ছি । "তাদের কে আমি না আসা পর্যন্ত পড়া দিয়ে চলে যাবার সময় করুন দুই জোড়া নয়নে চেয়ে থাকত আমার পিছনে না তাকানো চরন দুইটির দিকে।
আমি অনেক সময় দেখতাম আমার প্রানপ্রিয় অনেক বোনেরা বাচ্ছার পরীক্ষা ও সংসারের দায়িত্ব ও শারিরীক অসুস্থ্যতা সহ নানান অজুহাত দিয়ে দ্বীন কায়েমের আল্লাহর ফরজ দায়িত্বকে অবেহেলা করছেন।আমার স্বামী সন্তান সংসারের কাজ ১০ ঘন্টা ,আমার ঘুম নামাজ সহ আমার জন্য ১০ ঘন্টা,আর বাকী ৪টা ঘন্টা কি আমি আমার আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহের জন্য বের করে নেওয়া যায় না? তা না হলে এই আখিরাতের ভয়াবহ অনন্ত কাল আমি কি নিয়ে গিয়ে সুখে কাটাব? আমি সেই অজুহাতকে খুব ভয় পাই। কারন ২ টি হাত মানুষের নেক আমলের বেলায় অনেক উপকার করেন আর বাকী অজুহাত মানুষকে আল্লাহুর ফরজ দায়িত্ব পালনের বেলায় ক্ষতিটাই বেশি করেন। এই স্বামী সন্তান সহ দুনিয়াবী সকল কিছু এমন কি আমার জীবন মরন সব যদি আমার প্রতিপালকের হয় তা হলে আমার কিসের টানে আমি আমার আখিরাত পাথেয় নষ্ট করে ফেলব ।
ছেলেদের কে সব সময় একটা কথাই বলেছি " ইসলামের জন্য তুমি ভাল রেজাল্ট করতে হবে ।কারন তুমি জিপিএ ৫ পেলে তুমি যে একজন ভাল ছাত্র ছিলে তার প্রমান পাবে ।তখন তুমি সেই লেভেলের ভাল স্কলার ছাত্রদের কে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে পারবে । তারাও তোমার সাথে চলে বুঝবে যে , ইসলামের মাঝে জীবন যাপন করেও একজন ভাল ছাত্র হিসাবে উন্নত জীবন গড়া যায় । আল্লাহর অশেষ রহমত ও পাওয়া যায়।আর তুমি যদি এই সময় নষ্ট কর তা হলে তা হবে ইসলামের ক্ষতি । কারন তা হলে অন্য ছাত্র রা ভাববে ইসলামী আন্দোলনের পথে চলতে গিয়ে নিজের ভারসাম্য হারায়ে ফেলে ছাত্ররা তাই সে নিজের জীবনটাই গড়তে পারে নাই । কারন যারা ইসলামের পথে চলে না তারা দুনিয়ার জীবনের সফলতা কেই চুড়ান্ত সফলতা হিসাবে মনে করে । তাই তোমরা যারা ইসলামী আন্দোলনের মুজাহিদ তোমরা তাদের কে দেখাবে যে সত্যের পথে চলে তোমর এই ভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল সফলতা ছিনিয়ে নিয়ে তাগুত শক্তির বিরুদ্ধে তোমাদের সেই মেধা কাজে লাগাতে পারো।
আলহামদুলিল্লাহ ।আলহামদুলিল্লাহ ।আলহামদুলিল্লাহ
আমার ছোট দুই ২ ছেলে A+ পেয়েছে ।
“আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও , আমি তাদের কাছেই আছি ৷ যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত” বাকারা-১৮৬
যা আল্লাহর অশেষ রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়।আমি সফরের বের হলে সব সময় মনে মনে আল্লাহকে বলতাম “আল্লাহ আপনি ইসলামের কাজে তাদের ঈমা্নী এলেমী ও আমোলী যোগ্যতা দান করেন।ইসলামের কাজের জন্য তাদের কে এই দুনিয়ার জ্ঞানের পরীক্ষায় তাদের সন্মান রক্ষা করুন।ইসলামী আন্দোলনের জন্য একজন মুসলমানের ভাল ক্যারীয়ার যেমন দরকার ।তেমনি আবার ইসলামের কাজে তাদের ঈমা্নী এলেমী ও আমোলী যোগ্যতাও দরকার। আবার ছেলেরা ভাল কিছু করলে বাবার গর্ভ। আর ছেলেরা খারাপ কোন কিছু করলে তার তা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য একজন মায়ের সন্মানহানী ,যন্ত্রনা ও আজাবের কারন ।আর সেই মা যদি ইসলামী আন্দোলনের হলে তো আর আত্নীয়স্বজন ওপাড়াপড়শীর কাছে দুর্গন্ধের শেষ নাই। তা যেন আমি সহ যেন কোন মাকেই বহন করতে না হয়।সত্যি য়াল্লাহ অন্তরযামী।
বাংলাদেশের সকল সন্তানের প্রতি একজন মায়ের প্রানঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনঃ
এসএসসি / দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা ও অকৃতকার্য হওয়া বাংলাদেশের সকল সন্তানের প্রতি একজন মায়ের প্রানঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।যারা পাস কর নাই তারা ধৈর্য্য ধরে সামনের দিকে ভাল ভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও।হার জীত জীবনে থাকবেই।তবু এগিয়ে যেতে হবে, বাধাবিগ্ন না ফেরিয়ে জীবনে সাফল্যের গৌরব অর্জন করেছে কে কবে? ইসলামে মুমিনের দুই অবস্থ্যায়ই লাভবান হয়।জীবনে হেরে গেলে বা কোন বিপদে আল্লাহর তরফ থেকে আশা ঈমানের পরীক্ষা ও আরো কল্যান কর কিছু এর পিছনে লুকায়িত আছে বলে ধৈর্য্যধারন করা।একবার না পারিলে দেখ শতবার, পারিব না এটা ভেবোনা আর।
সফলতা যারা অর্জন করেছো তারা আল্লাহর কাছে সেজদায় শুকরিয়া আদায় করে আরো আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রাকাশ করো।আলহামদুলিল্লাহ আমার দুই জন সাথে সাথে শোকরানার নামাজ পড়েছে। আর তোমারা জীবনের শেষ লক্ষ্যস্থলে না পৌছা পর্যন্ত তোমাদের সফলতার যাত্রা অব্যাহত রাখো।তুমি এখনো একজন যাত্রী।তাই খরগসের মত অহংকারে থেমে গেলে তো হেরে গেলে।কারন একনিষ্ট চর্চা বা অনুশীলন ছাড়া কোন সফলতাই ধরে রাখা যায় না।তাই যাদের আজ মলিন চেহারা দেখছো এরাই তোমরা ঘুমিয়ে থাকলে জীবনের চুড়ান্ত বিজয়ের মালা ছনিয়ে নিবে।
শুন সন্তানেরা !একজন মা হিসাবে বলছিঃ
শুন সন্তানেরা ! জীবনের ৩টি সময়ের জন্য মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে শুধু কপালে হাত রেখে কান্দে।
১।অলস অবেহেলায় কাটানো ছাত্র জীবন,এই মুল্যবান সময় শ্রমমেধা কে কাজে লাগিয়ে সফলতা লাভ করেনা যারা তা শেষ করে ফেলে তারা কখনো আর সেই জীবনে ফিরে যেতে পারে না।যা সারা জীবনের দুর্ভোগ।
২।নিজের উন্নত চরিত্র ও পরিবারের কথা না ভেবে যেখানে সেখানে আবেগে বিয়ে করে ফেলে বা বিয়ে বসে যায় ।তারা সারা জীবনের জুন্য বিষকাটার মত তা গলায় আটকায়ে যন্তনায় মরে।না ছাড়তে পারে না গিলতে পারে।একটা মেয়েকে যে বয়সে বৌ সাজানো যায়।সেই বয়সে একটা ছেলে কে দুলা সাজালে দেখতে বানায় না।আলহামদুলিল্লাহ আমি যেই বয়সে এখন দাদি হয়েছি।কিন্তু সেই বয়সের আমার ক্লাসমিট সিদ্দিকের দুই ছেলে এখন স্কুল পার হয় নাই।তাই তোমরা সাবধান!কলেজ লাইফ খুব বিপদ সংকুল লাইফ।কারন এই সময় তোমরা যৌবনে প্রথম সিড়িতে পা দিবে।আর চোখে থাকে রঙ্গিন চশমা।যা বাস্তবের বিপরীত।
৩।ক্ষনিকের এই দুনিয়ার খুব ক্ষুদ্র জীবন টা পরীক্ষার হলের ঘড়ির কাটার মত অবেহেলায় পার করে আখিরাতের অনন্ত জীবন যার জন্য শুধু আফসুস আর আফসুস।তার সাথে জাহান্নামের শাস্তি আর শাস্তি। শুন সন্তানরা আল্লাহ তোমাদের মানুষ হিসাবে এক মহান উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন।আল্লাহর সকল সৃষ্টি আল্লাহর শ্রেষ্টত্ব ,বিচক্ষনতা ও স্বার্বভৌমত্বের স্বাক্ষ্য দেয়।তোমরা অনেক জ্ঞানী তাই মানুষের সকল কল্যানের জন্য দেওয়া জীবন বিধান পড়ে দেখো।মানুষ ও রাসুল সাঃ এর উম্মত হিসাবে নিজের জীবনযাত্রাকে আল্লাহর দেওওয়া একমাত্র পথ সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত করে তুমি একজন হুদাল্লিন মুত্তাকিন হয়ে যাও।
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরেঃ
প্রাইমারী লাইফে শিশু ছিলে।এখন কিশোর হিসাবে সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়েছো।আস্তে আস্তে আরো বড় হয়ে একদিন তোমারাই দেশের কর্ণধার হবে।আজও তোমরা তোমাদের বাবার পরিচইয়ে পরিচিত।কেউ কেউ ডাক্তারের , ইঞ্জিনিয়ার,ফাইলট, অধ্যক্ষের বা ব্যারিস্ট্যারের ছেলে/মেয়ে বন্ধু মহলে নিজেদের স্ট্যাটাস তুলে ধর।তুমিও একদিন বাবা হবে সেই দিন তোমার সন্তান তোমার কি পরিচয় দিয়ে তার স্ট্যাটাস তুলে ধরবে তা তুমি আজ থেকেই ভাবতে থাকো আর সেই ভাবে সময়কে কাজে লাগাও।তোমার বাবা মা যেমন তোমার কাছে আদব কায়দা সন্মান নম্র ও ভদ্রতা আসা করে তুমিও একদিন তোমার সন্তানের কাছে বাবা মা হিসাবে তাই আশা করবে ।কিন্তু আজ তুমি তোমার মা বাবা কে যা দিবে তোমার সন্তান তোমাকে তাই দিবে
সৎ সঙ্গে স্বর্গেবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাসঃ
১০ বছর যাদের সাথে খেলে ধুলে কাটিয়েছো তাদের অনেককেই কলেজ লাইফে পাবে না।তখন তোমাকে খুব বুদ্ধি ও বিচক্ষনতার সাথে বন্ধু নির্বাচন করে নিতে হবে।তোমার বন্ধুর এক্টিভিটিই তোমার জীবনে প্রতিবিম্ব দর্প্নের মত এসে পড়বে।তোমাকে দেখেই সবাই বুঝবে তোমার ফ্রেন্ডসার্কেল কেমন?সে তোমার বাবা মা ১৬ বছরে তিলে তিলে গড়া আদরশকে ১৬ ঘন্টার আগেই শেষ করে দিবে।তাই তুমি নামাজী আল্লাহ ভীরু ও মাধক আসক্ত নয় এমন বন্ধু দেখে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবে।যে বন্ধু তোমার ইহকাল ও পরাকালের অনন্তসুখ আর জান্নাতের অনাবিল শান্তি দিতে পারবে।ইনশাল্লাহ।তার ফলে তুমি নিজেকে পরিবার কে সমাজকে দেশ ও জাতিকে উপহার দিতে পারবে একটা আলোকোজ্জল আদর্শ সমাজ।যেখানে থাকবে না শাসকের শোষন অন্যায় অবিচার দুর্নীতি বা হত্যা গুম খুন এর মত নিরাপত্তা হীনতা।নিরোপরাধী পিতা, ভাই ,স্বামী সন্তান হারিয়ে কান্দবে না আর কোন রমনী। ধর্ষনের স্বীকার হবে কোন মা বোণ।তোমরা পারবে ইনশাল্লাহ তোমাদের সৌরভে আর গৌরবে দেশ বিদেশে প্রতিটি আঙ্গিনায় ফুলের সুবাসের মত ছড়িয়ে যাবে বাংলাদেশের সুনাম।।
আমি বাংলার সকল মায়ের পক্ষ থেকে সকল সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইঃ
আল্লাহ তোমাদের আল কোরানের সৈনিক ও দ্বীনের মুজাহিদ হিসাবে দুনিয়ার সকল ঈমানী পরীক্ষায় A+ পেয়ে যেন আখিরাতেও আল্লাহর কাছে A+ এর সার্টিফিকেট পেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস লাভ করেন ।
আর আমি মা হিসাবে আমাকে যেন কাল কিয়ামতের মাঠে দুনিয়াবী বদকারের মা হিসাবে নয় ,আখিরাতি ৫ সন্তানের জান্নাতীগর্ভা মা হিসাবে ডাক শুনায়ে আল্লাহর কাছে পুরুস্কার পেতে পারি ।
আপনারা আমার জন্য ও আমার ছেলেদের জন্য সেই দোয়া করবেন . ।
আল্লাহ আমি মা সহ সকল মায়ের সন্তান কে সদগায়ে জারিয়া হিসাবে দান করুন ।
কোরানের আলোতে তাদের হৃদয় ভরে দিন ।
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৩ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আন্দোলনের প্রান। আপনার লেখা পড়ে শক্তি পাই।
আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন আমিন।
একজন ছাত্র যদি ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভাল রেজাল্ট করে তাহলে তার ইফেক্টটা বেশী পড়ে সমাজে। খারাপ রেজাল্ট করলে ঠিক নেভেটিভ ইফেক্টটাও বেশী পড়ে।
শুনে ভাল লাগল, তাদের জন্য শুভ কামনা। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক।
তয়..মিষ্টি নাই! ক্যান?
মন্তব্য করতে লগইন করুন