মা তুমি বড্ড অভিমানী
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১১ মে, ২০১৪, ১০:০১:৪৭ রাত
মা আমার মা। এই কথা টি অনেক ছোট ।কিন্তু এর গভীরতা আর কিছুতেই নেই । এটা অনেক মধুর এক নাম আর সন্তানের জন্য এটা আল্লাহর সেরা উপহার ।যার সাথে তুলনীয় পৃথিবীতে আর কিছুই নাই । যে সব সময় সন্তান কে আগলে রাখে বুকের মাঝে । নিরাপদে রাখতে ঝড়ায়ে রাখে আচলের তলে ।সন্তান মায়ের কাছে কখন বড় হয় না । বড় হয় সেই দিন যে দিন মা পৃথিবীর কোথায় থাকে না ।মা ছাড়া সন্তান বড় একা হয়ে যায় তাই হতাশার মাঝে আর সে আলো জ্বালাতে পারে না। মা নিজের হৃদয় টা পুড়ে পুড়ে প্রদীপের মত সন্তানের মাঝে আলো দান করে ।
একজন মা সন্তান কে এতই ভালবাসে যে , তাঁর নাড়ি চেড়া ধন ভাল থাকলে তখন সে মায়ের চোখে তন্দ্রা আসে । আর সন্তানের দুঃখ শুনলে সেই ব্যথায় ব্যাথিত হয়ে লজ্জাবতি পাতার মত দেহ ও মন টা অবসন্ন হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে ।কারন এই পৃথিবীতে মায়ের মত নিঃস্বার্থ ভালবাসা আর কেউই দিতে পারে না । সবাই কর্ম দেখে ভালবাসে আর সেটা না থাকলে তার জন্য আর কার ভালবাসা থাকে না । যেমন চাঁদ কে কেউ ভালবাসে না কিন্তু চাদের আলোকে সবাই ভালবাসে ।
মা , তুমি বিশ্বাস কর আমি এখন অনেক বড় হয়েছি । নিজের মনের হাজারো ব্যাথা , দুঃখ কষ্ট গুলো এখন নিজের মাঝেই লুকায়ে রাখতে পারি ।যত বড় ঝড় তুফান বা সুনামিই আমার জীবনে আসুক না কেন সব সময় হাসি মুখে ঐ সব আমার আয়ত্তে আনতে চেষ্টা করি ।তখন মা তুমি শুধুই বলতে আমি তোমার বোকা মেয়ে, আমি কিছুই বুঝি না ।এখনো মা, আমার সরলতাকে আমার দুর্বলতা মনে করে অনেকে আমাকে কষ্ট দেয় ।মা আমাকে মানুষ এমন বিষয় নিয়ে অপরাধী বলে কষ্ট দেয় যা আমি আদৌ করিনি । তাও মা আমি আল্লাহর সাহায্যে সব হজম করে ফেলি ।
মা, আমি তো বালিকা বধু হয়ে অল্প বয়সে তোমার কোল থেকে সরে এসেছি । তাই মা, আমি তোমাকে মন ভরে ডাকতে পারি নাই । এখনো মা রাতে তোমাকে নিয়ে যখন সুখ স্বপ্ন দেখে মাঝ রাতে জেগে উঠি ।তখন সে ডাকটা বাজতে থাকে আমার হিয়ার মাঝে আর চোখের প্রতি ফোটা অশ্রু ফুল হয়ে ফুটে উঠে বুকের মাঝে ।তোমার ভালবাসা পেতে এই হৃদয়ে কি তৃষ্ণা জাগে । প্রশান্ত মহাসাগরেও সেই তৃষ্ণা মিটাতে পারবে না ।মিটবে তোমাকে বাহুতে ঝড়ায়ে তোমার কোলে শুয়ে থাকলে। যেমন পূর্ণিমার চাঁদ আকাশের কোলে ঘুমায় ।আমি মা , সকাল সাজে মাঝ রাতে তোমার জন্য আমার প্রভু নিকট সাহায্য চেয়ে বলি হে আল্লাহ আমার মাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দিয়ে দাও।
মা , এই সেপ্টেম্বর মাস টা যেন এসে আমার ক্ষত স্থানে নুনের ছিটা দেয় । বল মা, আমি কিভাবে তোমাকে ভুলতে পারি ? তোমার ভালবাসার রঙ আর আমার ব্যাথার তুলি দিয়ে আমি যে তোমাকে মধু ঢেলে আমার হৃদয়ের প্রতিটি পরতে পরতে এঁকে রেখেছি । তুমি কি তা জান মা, আমার হৃদয়ের ব্যাথা আর নয়নের বারিধারা দেখে চাঁদ ,তাঁরা আর ফুল ফলে ভরা বৃক্ষ লতারা সবাই কাদে ।
মা , আমার ভাগ্যবতি মা । তুমি তো আমাকে বড় করে তোলার কারনে আমি আজ এই সুন্দর পৃথিবীর আলো বাতাস ,রুপ রস ,গন্ধ দু নয়ন ভোরে দেখার সু্যোগ পেয়েছি ।তাই সপ্তম আকাশের চেয়ে উচু সন্মানের যদি আর কিছু থাকে তা আমার মা । এই পৃথিবীর চেয়ে গুরুভার কিছু থাকলে তা আমার মায়ের ভালবাসা। ছোট বেলায় কত কিছুর জন্য কত বায়না ধরেছি তোমার কাছে ।তুমি কেন একটু ও রাগ কর নাই ।শুধু বলেছ মধুমাখা কন্ঠে “কোথায় পাব? তোমাদের কি বাবা আছে?” ।
মা মাগো , তোমার সব কথা গুলো আমি আজও শুনি ।তখন আমার মন উদাস হয়ে হারিয়ে যায় নীল আকাশে ।বুকের ভিতর সাদা মেঘেরা এসে ব্যাথার জাল বুনে আর চোখ দিয়ে বয়ে যায় পাহাড়ের ঝর্না ধারা ।মাঝে মাঝে মন চায় নীল আকাশ থেকে তাঁর নীল চাঁদর টা নিয়ে মিটিমিটি করা তারাদের মাঝে তোমাকে খুজি । না হলে মেঘের নৌকায় ভেসে ভেসে তোমাকে খুজব আর বলব,” তোমরা কেউকি আমার মা কে দেখেছ ? মা আমি অনেক একা ।এই মনটা নিঃসংগ ।আমাকে এই পৃথিবীতে তোমার মত কেউই ভালবাসে না ।এই পৃথিবী মা তোমার মত ভালবাসতে জানে না ।
মা আমি তো তোমার হৃদয়ের বাগানের একটা ফুলের কলি ছিলাম । ঐ কলি টাই অন্যরা তুলে নিয়ে আর শত দলে বিকশিত হতে দেয় নাই । পরে হলাম কাগজের ফুল ।তাই তোমার মাঝে আর সুবাস ছড়াতে পারি নাই ।কারন বয়স অনুসার এর চেয়েও বেশি কঠিন দায়িত্ব ছিল আমার উপর । যার জন্য অনেক বন্ধুর ও মরুপথ পাড়ি দিয়ে আর তোমার কাছে আসতে পারিনি ।তুমি কত অসুস্থ হয়ে আসলে আমার কাছে ।আমি কিভাবে ডাক্তার দেখাব যৌথ সংসার ফেলে ? কে আমাকে এই সময়টুকু দিবে ? আজ কাল দেখি অনেক মেয়েরা তাদের মায়ের কত কি করে ।তখন আমি পরাজিত সৈনিকের মত লজ্জায় চুপসে যাই । মনে মনে নিজেকে নিজে ধিক্কার দেই । কারন আমি প্রমান দিতে পারিনি আমি যে তোমাকে কত ভালবাসি । উপস্থাপন করার মত পরিবেশ ও যোগ্যতা আমার ছিল না মা । তা কি আমি কোন দিন তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি ? না আমি বুঝাই নাই ।কারন আমি চাইনি তুমি কষ্ট পাও।
মা তুমি আমার আদুরনী মা । তাই আমি এখনও তোমার অবাধ্য হইনি । । তুমি নামাজ পড়া শিখিয়েছ । নামাজ ও রোযা না পড়লে বা না রাখলে তুমি ভাত দিতে না ।এখন আলহামদুলিল্লাহ সেই ভাবে পড়ে যাচ্ছি । তুমি বলেছ দুনিয়াবী কিছুর প্রতি লোভ লালসা আনতে না । কোন কিছু স্বামীর কাছে বায়না ধরতে না । মা তাই করছি এখন । পর্দা করতে বলেছ তাও করছি । যখন সেই অবস্থ্যায় স্বামী রাখেন তাতেই খুশি থাকতে বলেছ । তাই করছি । তুমি বলেছ স্বামী সন্তান এর চেয়ে বড় অলংকার আর মেয়েদের হয় না । আমি তাই মেনে নিয়েছি । কাউকে হিংসা করতে না, পারলে উপকার করতে না পারলে ক্ষতি করতে না বা কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে না ।আমি তাই করছি । এই ভাবে তোমার আদেশ আমার মাথার মুকুট করে আমি মেনে চলছি ।
মা , আমি যখন ঢাকায় থাকি তখন আমার মনে হয় তুমি আগের মত গ্রামে আছ । আমি গেলেই তোমাকে পাব । আর যখন গ্রামে যাই তখন সব চাচী খালাদের মুখের ভীড়ে তোমার চাঁদ মুখটা না দেখলে আমার কলিজা চিন চিন করা ব্যাথা নিয়ে পুকুর পাড়ে ছুটে যাই । যেখানে আমাকে ছোট বেলায় যেতে দিতে না সেই নিঝুম নিরালায় তুমি কিভাবে এখন একা একা শুয়ে থাক । এমন জায়গায় আছ তুমি যেখানে টেলিফোন করা যায় না , টেলিগ্রাম পাঠান যায় না , চিঠি নিয়ে পিয়ন যায় না । বল মা কিভাবে মনের কথা গুলো তোমাকে পৌছাব ? মা তুমি বড্ড অভিমানী । তাই আমি যে তোমার কবরের পাশে তোমাকে না পাওয়া ব্যাথায় হৃদয় ফাটা আত্নচিতকারে আমার চোখের জলে দু গাল ভাসিয়ে ফেলি তাও তুমি সারা দাও না ।আর আমারও কান্না ফুরায় না । বল মা , তুমি ছাড়া কে দিবে আমায় সান্তনা । চাচিরা অনেক আদর করে ।কিন্তু ভাতের ক্ষুদা কি চিড়া মুড়ি দিইয়ে ফুরায় মা। তুমি কি তা বুঝনা ।
আমার মত এতিম আল্লাহ ,তুমি কাউকে কর না। মা তুমি যাবার বেলায় আমাকে একটু ও বলে যাওনি । বড় আপা বলে , তুমি নাকি বিদায়ের সময় অনেক সুন্দর সাজে সেজেছ । অনেক সুগন্ধী গায়ে মেখেছ । চোখে নাকি সুরমাও দিয়েছ । আবার একেবারে সাদা ড্রেস পরেছ ? তখন তোমাকে নাকি নব বিবাহিত বধুর মত লেগেছে । আমাকে কেউ শুনাই নাই ।না হলে মা , আমিও দেখতে পেতাম তোমার বিদায়ের বেলার সাজ । তুমি যে বিদায়ের সময় আমি শেষ ভালবাসা টুকু কেড়ে নিতাম যেমন নদী নেয় সাগরের থেকে , আধার কেড়ে আলোর থেকে ।
মা , তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও । হে আল্লাহ আমার বিধবা মা আমাকে অনেক আদর যত্ন করে বড় করেছেন ।হে আমার প্রতিপালক! আমার মা বাবা প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন৷ আমাকে ক্ষমা কর, আমার পিতা মাতাকে ক্ষমা কর ,আর তোমার নেককার দের ক্ষমা করে দাও । ।ইয়া আল্লাহ আমার মা আসর নামাজের অজু করা অবস্থায় তোমার ডাকে সারা দেয়। সেই পবিত্র অবস্থায় আপনি আমার মাকে জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান করে দেন।আমিন ।
বিষয়: বিবিধ
৬৯৩৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link
দারুন লেখা আপু।
President Wilson's Mother's Day Proclamation of May 9, 1914।
সেই থেকে আমেরিকায় Mother's Day পালিত
হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন