ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হলেন হরমুজান।

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৪ মে, ২০১৪, ০৪:৩১:০১ বিকাল

= অসাধারর এক ঘটনা =



তখন ইরানের একটি প্রদেশের শাসক ছিলেন হরমুজান। হরমুজান একদিকে যেমন অত্যাচারী অপরদিকে ঘোর ইসলাম বিরোধী। মুসলমানদের সাথে তার লড়াই হতো প্রায়ই। লড়াইয়ে পরাজিত হলেই তিনি বিভিন্ন শর্তে সন্ধী করতেন এবং নিজের রাজ্যে ফিরে যেতেন। কিন্তু এরপর আবার যখনই সুযোগ পেতেন মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করেতেন। শেষে খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু

আনহু আদেশ দিলেন, হরমুজানকে জীবন্ত ধরে এনে তাঁর মজলিসে হাজির করতে। ইতিমধ্যে এক যুদ্ধে হরমুজান মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেন। খলীফার হুকুম মোতাবেক তাকে বেঁধে খলীফার

দরবারে হাজির করা হলো। খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু

তাকে লক্ষ্য করে বললেন, “আপনি আমাদের সাথে বারবার

বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আর আপনার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই আমাদের বারবার যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। ফলে অসংখ্য মুসলিম সৈন্যকে অযথা প্রাণ দিতে হচ্ছে। তাদের অর্থ সম্পদ নষ্ট

হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি আপনি ধ্বংস করেছেন। নিরীহ অনেক লোকের উপর আপনি অন্যায়ভাবে অত্যাচার চালিয়েছেন। আপনাকে আর সুযোগ দেয়া যায় না। আপনার একমাত্র শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পূর্বে আপনার কোন কথা থাকলে বলতে পারেন।” হরমুজান ছিলেন খুব সূক্ষবুদ্ধির লোক। সুযোগ পেয়ে তিনি একটি ফন্দী আঁটলেন। তিনি বললেন, “মহানুভব খলীফাতুল মুসলিমিন, আমার বড়ই পিপাসা পেয়েছে, দয়া করে আমাকে একটু পানি পান করতে দিন।” খলীফার নির্দেশে তাকে একটি পাত্রে পানি পান করতে দেয়া হল। সুচতুর হরমুজান পানির

পাত্র হাতে নিয়ে তা পান না করে ভীতু ভীতু ভাব দেখাতে লাগলেন

এবং ডানে বামে তাকাতে লাগলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, “কি হলো, আপনি পানি পান করছেন না কেন?” তিনি জবাব দিলেন,” আমিরুল মুমিনিন, আমার ভয় হচ্ছে যে, পানিটুকু পান করার

আগেই আমাকে হত্যা করে ফেলা হয় কিনা?” খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “আপনি নির্ভয়ে পান করুন। হাতের পানি পান করার পূর্বে আপনাকে হত্যা করা হবে না। এ ব্যাপারে আপনাকে নিশ্চয়তা দিলাম।” হরমুজান আমীরুল মুমিনিনের এ কথা শেষ হবার সাথে সাথেই হাতের পানির পাত্রটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, আর বললেন, “মহামান্য খলীফা, আপনি নিজেই

বলেছেন, হাতের পানিটুকু পান করার আগে আমাকে হত্যা করবেন না। আমি পানি ফেলে দিয়েছি, সে পানি আর পান করবো না। ওয়াদা অনুযায়ী আপনিও আমাকে আর হত্যা করতে পারবেন না।”

হরমুজানের এ চাতুরীপূর্ণ কথা শুনে মুসলিম সৈনিকেরা খুব রেগে গিয়ে বললেন, ” আমীরুল মুমিনিন, আপনি অনুমতি দিন আমরা এখনই তার চাতুরীর সাধ মিটিয়ে দেই।তাকে এখনই হত্যা করে ফেলবো।” কিন্তু খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সকলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “না তা হতে পারে না। মুসলমানের কথার

মূল্য অনেক। সুতরাং যে কথা আমি বলে ফেলেছি, যেকোন মূল্যে আমি তা রক্ষা করবই ইনশা’আল্লাহ। যেহেতু আমি তাকে বলেছি, তার হাতের পানিটুকু পান করার পূর্বে তাকে আমি হত্যা করব

না, আর সে যখন পানি পান করেনি সুতরাং, বন্দী হরমুজানকে হত্যা করা চলবে না।” হরমুজানকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন,“যান। আপনি মুক্ত। আমার কথার খেলাফ আমি করবো না।” কথার কি অদ্ভুত দাম ! ওয়াদা পালনের কি অপূর্ব নযীর। হরমুজান কল্পনাও

করতে পারেননি যে, তিনি এত সহজে মুক্তি লাভ করতে পারবেন।

খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মহানুভবতা দেখে তিনি দারুণভাবে প্রভাবিত হলেন। তিনি ভাবলেন, এই যদি হয় ইসলামের আদর্শ তবে এর থেকে দূরে থাকা হবে আমার জন্যে চরম

দুর্ভাগ্যজনক। ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে তিনি সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করে নিলেন। এমনিভাবেই যুগে যুগে ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষ ইসলামের

সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।



বিষয়: বিবিধ

১৬৫২ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217332
০৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৪
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : ইহার নামই ইসলাম। এই কারণেই তো ইসলাম শান্তির ধর্ম। ভালো লাগলো। আরো বেশী বেশী শেয়ার করুন।
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
166121
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম । আলহামদুলিল্লাহ ।মন্তব্যের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাত ।নিচের লিঙ্কটি পড়ার অনুরোধ রইল।

Click this link
217334
০৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
egypt12 লিখেছেন : এটাই ইসলাম Thumbs Up Thumbs Up
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
166120
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম । আলহামদুলিল্লাহ ।মন্তব্যের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাত ।নিচের লিঙ্কটি পড়ার অনুরোধ রইল।

Click this link
217361
০৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৪০
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : সুন্দর হয়েছে অনেক ধন্যবাদ ।
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৫০
166119
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম । আলহামদুলিল্লাহ ।মন্তব্যের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাত ।নিচের লিঙ্কটি পড়ার অনুরোধ রইল।

Click this link
217381
০৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৩
আঁধার কালো লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ... আপনার কাছ থেকে এমন পোষ্ট বেশী বেশী আশা করি ।
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৪৯
166118
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম । আলহামদুলিল্লাহ ।মন্তব্যের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাত ।নিচের লিঙ্কটি পড়ার অনুরোধ রইল।

Click this link
217446
০৪ মে ২০১৪ রাত ০৮:১০
ফেরারী মন লিখেছেন : ইসলামের ছায়তলে যারাই আশ্রয় নিয়েছে তারাই সফলকাম হয়েছে। সুন্দর লিখেছেন ভালো লাগলো।
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৪৮
166117
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম । আলহামদুলিল্লাহ ।জাযাকাল্লাহু খাইরান ।নিচের লিঙ্কটি পড়ার অনুরোধ রইল।

Click this link
217550
০৫ মে ২০১৪ রাত ০১:০৮
মাটিরলাঠি লিখেছেন : খুবই সুন্দর হয়েছে। শেয়ার দিলাম।
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৪৬
166115
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম । আলহামদুলিল্লাহ ।জাযাকাল্লাহু খাইরান ।নিচের লিন্মটি পড়ার অনুরোধ রইল।

Click this link
217574
০৫ মে ২০১৪ রাত ০২:৪১
পাহারা লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৪৭
166116
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম । আলহামদুলিল্লাহ ।জাযাকাল্লাহু খাইরান ।নিচের লিঙ্কটি পড়ার অনুরোধ রইল।

Click this link
217575
০৫ মে ২০১৪ রাত ০২:৫৫
হককথা লিখেছেন : ভালো লিখেছেন। তবে আপনাকে এ বিষয়ে আরো একটু খোঁজ নিতে বলবো। হরমুজান মুসলমান হয়ে মদীনায় বসাবস করছিলো। তারই একসময়কার এক কর্মচারী ফিরোজ, সেও মুসলমান হয়ে মদীনায় বসবাস শুরু করে। হরমুজান, খৃষ্টান জাফর খলিলী এবং ইহুদি সাবা বিন সুরাহবিল, তিনজন হরিহর আত্বা। প্রাণের দোস্ত। এই হরমুজান ও উক্ত দু'জন মিলে ইসলামের বিরুদ্ধে মদীনায় বসে বসে গভীল ষড়যন্ত্র আঁকতে থাকে। তারই ফল হলো সেই ফিরোজ কর্তৃক হজরত ওমর রা: কে হত্যার ঘটনা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা: সহ কয়েকজন সাহাবী খোজ নিয়ে যখন দেখলেন যে হরমুজানই এ ষড়যন্ত্রের আসর নটের গুরু, তখন তারা হরমুজানকে হত্যা করে ফেলেন। আর জাফর খলিলীকেও পরে হত্যা করা হয়। তবে ইহুদি সাবা ইবনে সুরাহবিল'কে ধরা যায়নি। সে পালিয়ে গিয়েছিলো। বিষয়টা আরও একটু ভালো করে জানার চেস্টা করুন, অনুরোধ থাকলো।
০৬ মে ২০১৪ রাত ০৪:১২
166077
সত্যলিখন লিখেছেন : Click this link
০৬ মে ২০১৪ রাত ০৪:২৭
166078
হককথা লিখেছেন : আপনার লিংক কাজ করছে না। যা হোক, সর্বশেষ গবেষণা জানার চেষ্টা আমাদের সবারই করা দরকার। আমার এর আগের মন্তব্যে হরমুজানের অপর দুই সহযোগীর নাম ভূলভাবে লেখেছি বলে দু:খিত। আসল নাম হলো খৃষ্টান জাফিনা খালিল এবং ইহুদি লোকটির নাম ছিলো; সাবা বিন শামুন। এই সাবা বিন শামুনই মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা'র বাবা।
আবারও বলছি, দয়া করে সঠিক ইতিহাস জানা ও জানানোর চেষ্টা করা দরকার। একটা কথা মনে রাখা দরকার, ইসলামের ইতিহাসকে কলুষিত করা হয়েছে মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে অনেক অনেক দূরে সরিয়ে দেবার এক ঘৃন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই।
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৪৩
166111
সত্যলিখন লিখেছেন : আসসালামুয়ালাইকুম ।অনেক কিছু জানলাম আপনার থেকে ।তাই আল্লাহ উত্তম পুরুস্কার দান করুন ।Click this link
218008
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৩৭

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File