এক নজরে সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) এর জীবনি
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৪১:৫৭ রাত
এক নজরে সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী (রহঃ) এর জীবনি
সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী (২৫শে সেপ্টেম্বর, ১৯০৩ - ২২শে সেপ্টেম্বের, ১৯৭৯), যিনি মাওলানা মওদুদী বা শাইখ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন মুসলিম গবেষক, সাংবাদিক, মুসলিম রাজনৈতিক নেতা ও বিংশ শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক।তিনি তার নিজ দেশ পাকিস্তানের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামী নামক একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলেরও প্রতিষ্ঠাতা।
প্রভাব ও ধারাবাহিকতা
মাওলানা মওদুদীর প্রভাব ছিল ব্যাপক। ইতিহাসবেত্তা ফিলিপ জেনকিন্সের মতে, মিসরের হাসান আল বান্না এবং সাইয়িদ কুতব তার বই পড়ে অনুপ্রাণিত হন। সাইয়িদ কুতব তার কাছ থেকে আদর্শ গ্রহণ করেন এবং এটি আরো সম্প্রসারিত করেন। তিনি একটি অগ্রগামী ইসলামী বিপ্লবী দল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী জুরিস্ট আবদুল্লাহ আযযামও তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। দক্ষিণ-এশীয় জনগন (বিরাট সংখ্যক ব্রিটেন প্রবাসী সহ) মাওলানা মওদুদীর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। এমনকি শিয়া অধ্যুষিত ইরানেও মওদুদীর বড় ধরণের প্রভাব আছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী ১৯৬৩ সালে মাওলানা মওদুদীর সাথে সাক্ষাত করেন, পরবর্তীতে ইমাম খোমেনী মওদুদীর বইগুলো ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন। এখনো পর্যন্ত প্রায়শঃই ইরানের ইসলামী সরকার মাওলানা মওদুদীর কর্মপন্থা অনুসরন করে থাকে। ("To the present day, Iran's revolutionary rhetoric often draws on his themes.") ইমাম ইবনে তাইমিয়ার পর তিনি (মওদুদী) দ্বিতীয় চিন্তাবিদ যিনি আধুনিক বিশ্বে ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তাধারা-কে প্রভাবিত করেছেন।
• যাদের দ্বারা তিনি অনুপ্রানিত হন- শাহ ওয়ালিউল্লাহ, ইবনে তাইমিয়া, ইবন আল কাইয়িম, হাসান আল বান্না, আল্লামা ইকবাল, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার
• তার দ্বারা যারা অনুপ্রানিত হন-সাইয়িদ কুতুব, জালালুদ্দিন উমরি, ইউসুফ ইসলাহী, ইসরার আহমেদ, হাফিজ সাঈদ, সাইয়েদ আলী শাহ গীলানী, মালিক গুলাম আলী , তুফাইল মুহাম্মাদ , ইউসুফ আল কারাদাভী, গোলাম আজম, কাজী হুসাইন আহমাদ
জীবনকাল
• ১৯০৩- জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মস্থানঃ আওরঙ্গাবাদ (বর্তমানে মহারাষ্ট্রের মধ্যে), হায়দারাবাদ, ভারত।
• ১৯১৮- সাংবাদিক হিসেবে 'বিজনোর' (Bijnore) পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।
• ১৯২০- জবলপুরে দৈনিক 'তাজ' পত্রিকার এডিটর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
• ১৯২১- দিল্লিতে মাওলানা আব্দুস সালাম নিয়াজির কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেন।
• ১৯২১- দৈনিক 'মুসলিম' পত্রিকার এডিটর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
• ১৯২৫- নয়া দিল্লির 'আল জামিয়াহ' পত্রিকার এডিটর হিসেবে নিয়োগ লাভ।
• ১৯২৬- দিল্লির 'দারুল উলুম ফতেহপুরি' থেকে 'উলুম-এ-আকালিয়া ওয়া নাকালিয়া' সনদ লাভ করেন।
• ১৯২৭- 'আল জিহাদ ফিল ইসলাম' নামে একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা শুরু করেন।
• ১৯২৮- উক্ত প্রতিষ্ঠান (দারুল উলুম ফতেহপুরি) থেকে 'জামে তিরমিযি' এবং 'মুয়াত্তা ইমাম মালিক' সনদ লাভ করেন।
• ১৯৩০- 'আল জিহাদ ফিল ইসলাম' নামের বিখ্যাত বইটি প্রকাশিত হয়। তখন তার বয়স ২৭ বছর।
• ১৯৩৩- ভারতের হায়দারাবাদ থেকে 'তরজুমানুল কুরআন' নামক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন।
• ১৯৩৭- তার ৩৪ বছর বয়সে, লাহোরে, দক্ষিণ এশিয়ার কিংবদন্তিতুল্য মুসলিম কবি ও দার্শনিক আল্লামা মুহাম্মাদ ইকবালের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় করিয়ে দেন চৌধুরী নিয়াজ আলী খান।
• ১৯৩৮- তার ৩৫ বছর বয়সে, হায়দারাবাদ থেকে পাঠানকোটে গমন করেন। সেখানে তিনে দারুল ইসলাম ট্রাস্ট ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন, যেটি ১৯৩৬ সালে আল্লামা ইকবালের পরামর্শে চৌধুরী নিয়াজ আলী খান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাঠানকোটের ৫ কিমি পশ্চিমে, জামালপুরে, চৌধুরী নিয়াজ আলী খানের ১০০০ একর এস্টেট ছিল। চৌধুরী নিয়াজ আলী খান সেখান থেকে ৬৬ একর জমি দান করেন।
• ১৯৪১- লাহোরে 'জামায়াতে ইসলামী হিন্দ' নামে একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর আমির হন।
• ১৯৪২ - জামায়াতে ইসলামীর প্রধান কার্যালয় পাঠানকোটে স্থানান্তর করেন।
• ১৯৪২ - তাফহীমুল কুরআন নামক তাফসির গ্রন্থ প্রনয়ন শুরু করেন।
• ১৯৪৭ - জামায়াতে ইসলামীর প্রধান কার্যালয় লাহোরের ইছরায় স্থানান্তর করেন।
• ১৯৪৮ - 'ইসলামী সংবিধান' ও 'ইসলামী সরকার' প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা শুরু করেন।
• ১৯৪৮ - পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে বন্দী করে।
• ১৯৪৯ - পাকিস্তান সরকার জামায়াতের 'ইসলামী সংবিধানের রূপরেখা' গ্রহণ করে।
• ১৯৫০ - কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
• ১৯৫৩- 'কাদিয়ানী সমস্যা' নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন। ফলে ইতিহাসখ্যাত বড় রকমের কাদিয়ানী বিরোধী হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়।এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একযোগে কাদিয়ানীদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ২৭শে ফেব্রুয়ারি তারিখে 'ডাইরেক্ট একশন কমিটি' গঠন করে। জামায়াত এই কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু তথাপি মার্চ মাসের শুরুতে আন্দোলন চরম আকার ধারন করে এবং পুলিশের গুলিতে কিছু লোক নিহত হয়। পরে একটি সামরিক আদালত আবুল আ'লাকে এই গোলযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়, (যদিও কাদিয়ানী সমস্যা নামক বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি)। অবশ্য সেই মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়নি। [
• ১৯৫৩- মৃত্যুদন্ডাদেশ পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড করা হয়, কিন্তু পরে তা-ও প্রত্যাহার করা হয়।
• ১৯৫৮- সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান 'জামায়াতে ইসলামী'কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।
• ১৯৫৮- সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান 'জামায়াতে ইসলামী'কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।
• ১৯৬৪- কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
• ১৯৭১- পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হবে কিনা এ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের উপর ন্যাস্ত করেন[
• ১৯৭২- তাফহীমুল কুরআন নামক তাফসির গ্রন্থটির রচনা সম্পন্ন করেন।
• ১৯৭২- জামায়াতে ইসলামীর আমির পদ থেকে ইস্তফা দেন।
• ১৯৭৮- তার রচিত শেষ বই 'সিরাতে সারওয়ারে আলম' প্রকাশিত হয়। এটি হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর জীবনী গ্রন্থ।
• ১৯৭৯- চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন।
• ১৯৭৯- যুক্তরাষ্ট্রে তার মৃত্যু হয়।
• ১৯৭৯- লাহোরের ইছরায় তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার জানাযায় ইমামতি করেন তার পরবর্তী যুগের আরেক কিংবদন্তী শায়খ ইউসুফ আল ক্বারাদাওয়ী
গ্রন্থাবলী
১। তাফহীমুল কুরআন -১৯ খন্ডের তাফসীর গ্রন্থ
২। ঈমানের হাকীকত
৩। নামাজ রোজার হাকীকত
৪। তাওহীদ রিসালাত ও আখিরাত
৫। ইসলাম পরিচিতি
৬। যাকাতের হাকীকত
৭। ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা
৮। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মূলনীতি
৯। ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ
১০। ইসলামী বিপ্লবের পথ
১১। ইসলামের শক্তির উৎস
১২। ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
১৩। ইসলামী আন্দোলনঃ সাফল্যের শর্তাবলী
১৪। সত্যের সাক্ষ্য
১৫। সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং
১৬। আল জিহাদ
১৭। কুরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা
১৮। ভাংগা ও গড়া
১৯। সীরাতে সরওয়ারে আলম
২০। হেদায়েত
২১। ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
২২। ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব
২৩। মহরমের শিক্ষা
২৪। দায়ী ইলাল্লাহ-দাওয়াত ইলাল্লাহ
২৫। ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
২৬। পর্দা ও ইসলাম
২৭। ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ
২৮। কুরআনের মর্মকথা
২৯। খেলাফত ও রাজতন্ত্র
৩০। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার
৩১। হজ্জের হাকীকত
৩২। ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ
৩৩। ইসলাম ও জাহেলিয়াত
cltd
বিষয়: বিবিধ
৪৯০৫ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্যাক্তি মানুষ হিসাবে উনি কেমন ছিলেন, চরিত্রগতভাবে কেমন ছিলেন - অথিনিটিক কোন সোর্স হতে জানা থাকলে শেয়ার করলে - ভাল লাগবে।
তাদের "(অ)মানুষ" হবার সম্ভাবনা খুবই কম-
তাদের শিষ্যদের অবস্থাও একই
বাক্যটা আবার দেখুন তো!
• যাদের দ্বারা তিনি অনুপ্রানিত হন- শাহ ওয়ালিউল্লাহ, ইবনে তাইমিয়া, ইবন আল কাইয়িম, হাসান আল বান্না, আল্লামা ইকবাল, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার
ভাই, না দেখে বলার অভ্যাস কোন কালেই ছিলো না।
১) ইমাম খোমেনীরা তথা শিয়ারা মাওলানা মওদূদীর ভক্ত । এই শিয়াদের আক্বিদা ও মানহায নিয়ে মওদূদীর দৃষ্টিভঙ্গী কি ছিলো ? তিনি কি তাদের কুফ্ফার মনে করতেন ? তিনি তো দেখা যাচ্ছে, আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করে পুস্তক রচনা করেছিলেন । শিয়াদের নিয়ে কি তেমন কিছু লিখেছিলেন ?
২) পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হবে কিনা এ প্রশ্নে তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী কি ছিলো ? রেফারেন্স সহকারে জানান ।
৩) মাওলানা মওদূদীর সমালোচনা করতে গেলে সব সময় একটা গৎবাঁধা উত্তর শোনা যায় -- উনি-ও মানুষ ছিলেন ; উনার-ও কিছু ভুল ছিলো । আমি সেই ভুলগুলো সম্পর্কে-ও জানতে চাই যাতে সাবধান থাকতে পারি ।
ধন্যবাদ ।
জামাতের উপর এম,এন, হাসান ভাই সিরিজ
লিখেছিল। সোনার বাংলা ব্লগে।
ধারাবাহিক জামায়াতের ইতিহাস - এম এন হাসান
মন্তব্য করতে লগইন করুন