আসুন আল্লাহর বিধান জেনে বুঝে কোরানের ছায়াতলে সমবেত হই

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৫২:০৭ রাত

আসুন আল্লাহর বিধান জেনে বুঝে কোরানের ছায়াতলে সমবেত হই



সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তা’লার জন্য ।আমাকে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞানের মাধ্যমে অমুল্য রতন কোরান এর কিছু লিখার তাওফিক দান করেছেন।দরুদ ও সালাম আমার প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ এর প্রতি, যার উপর আমার অদৃশ্য রহমানুর রাহিম আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির দুনিয়ার কল্যানের ও আখিরাতের মুক্তির জন্য সর্বশ্রেষ্ট নেয়ামত দৃশ্যবান মহা গ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেছেন।

আসসালামুয়ালিকুম আমার ইসলাম প্রিয় ও প্রান প্রিয় ভাই বোণ ছেলে মেয়েরা।আমরা সবাই জানি ণেক আমলের পিরামিডের মাস মাহে রামাদান কিছুটা প্রীতি আর কিছু টা ভীতি নিয়ে মন আনছান করছে।আল্লাহর নৈকট্যলাভ করার আনন্দে একবার মন নেচে উঠছে আবার এতো ভয় হচ্ছে যে ,গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য কিভাবে সঠিক পথে চলব এবং তা জানার আর মানার উপায় কি ?

রমজান কুরআণ নাজিলের মাস ।আর কোরান মানুষের কাছে যা দাবী করেঃতা হল

আল্লাহর আদেশ নির্দেশ অনুসারে কোন কাজ করা , সেই বিধান এর শিক্ষার জীবন্ত উদাহরন হিসাবে নিজেকে তুলে ধরা ,সারা দুনিয়ার সামনে এর দাওয়াত বা আহ্বান তুলে ধরা, কোরান এর অনুসারে আকিদা বিশ্বাস ,ধ্যান ধারনা ,নৈতিক- চরিত্র,ও আচার-আচরন করা । যা এমন একটি সহজ সরল পথের কাজ কিন্তু এর চেয়ে বেশি কঠিন ও গুরুবার কাজের কল্পনা করা যায় না ।

খলিফা বা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পৃথিবীতে আমাদের আসা।আর সেই দায়িত্ব পালন করার হিকমত ও শয়তানের নানা প্রকার বাধাবিপত্তি বরদাশত করার মত শক্তি আমাদের দেহ ও মনে অর্জন করা আবশ্যক। আল্লাহর বানী কুরআন অধ্যায়ন মানে বুঝে বুঝে কোরান পড়ার মাধ্যমে আর ইবাদত বন্দেগীতে তার প্রমান দিয়ে এই শক্তি অর্জনের কৌশল ও হিকমত লাভ করতে হবে।মুমিন মুত্তাকিন হিসাবে এই জ্ঞান এর মাধ্যমে আগে নিজের সাড়ে ৩ হাত দেহে কোরআন কায়েম করে তারপর বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে তা কায়েম করতে হবে।

আল্লাহর বানী,”আপনি বলুন ্যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?বুদ্ধিমান লোকেরাই তো নসিহত কবুল করে থাকে” ।সুরা জুমার ৯

“বল অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে ?আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে”। সুরা রায়াদ -১৬

হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণিত,নবী করিম সাঃবলেছেন ,”প্রতিটি মুসলিম নরনারীর উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরয”।(ইবনে মাজাহ )

হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, নবী করিম সাঃ বলেছেন, “যে ব্যক্তি এলেম অন্বেষনে বের হয় ,সে প্রত্যাবর্তন না করা পযন্ত আল্লাহর পথেই থাকে” ।(তিরমিযি )

“ধন সম্পদ তুমি নিজে পাহারা দিয়ে রাখতে হয় ,আর জ্ঞান তোমাকে পাহারা দিয়ে রাখে”।– হযরত আলী রাঃ

“ইসলামের জ্ঞান ছাড়া সে যত বড় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত পন্ডিত হোক না কেন সে মূর্খ পন্ডিত”। –ডঃ মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ ।

শিক্ষা যে কোন একটা জাতির মেরুদন্ড ।শিক্ষা ছাড়া জাতি বিকলাঙ্গ বা মেরুদন্ড হীন কেচোর শয়তানের বা অন্যান্য জাতির পদদলিত হতে থাকে।সুশিক্ষা ব্যতীত সমাজের অন্যায় ,অবিচার , শোষন ,জুলুম ইত্যাদি অপরাধ কচুরি ফেনার মত বিস্তার লাভ করে । আর সেই সুশিক্ষার জন্য আমাদের বার বার কোরান পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তালার তার খাটি বান্দা হিসাবে এ কিতাব কে নির্ভূল ,নির্ভেজাল ও পথ নির্দেশনার পথের মুত্তাকিন দের মত পথিক হতে হবে ।কোরান এর সিরাতাল মুস্তাকিমের পথে চলে হুদাল্লিন মুত্তাকিন হয়ে সালেহিনদের কাতারে দাঁড়াতে হবে ।কারন প্রকৃত শিক্ষা ছাড়া প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ হওয়া যায় না।

কিয়ামতের দিন না তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন কোন কাজে আসবে - না সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে। সেদিন আল্লাহ তোমাদের পরস্পর বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। আর তিনিই তোমাদের আমল বা কর্মফল দেখবেন।

-(সুরা মুমতাহিনা,৩)

কাল কিয়ামতের মাথে এই কোরান এর সুপারিশ কারী হিসাবে পাবার জন্য রমজানে অর্থসহ খতম করতে হলে আসুন আমরা আজ থেকেই তারাবির তালিকা মতে নীচের তালিকা অনুসারে রমজান এর আমোল শুরু করে দেই ।ইনশাল্লাহ আমরা শেষ করতে পারব।

মাহে রমজান –

তারাবীহ তে কোরান খতম এর তালিকা

১ ] মাহে রমজান –১ম তারাবীহ

১ম ও ২য় পারার প্রথমার্ধ

সুরা আল ফাতিহা থেকে বাকারা ২০৩ আয়াত পর্যন্ত

২] মাহে রমজান –২য়তারাবীহ

২য় পারার শেষার্ধ ও ৩য় পারা

সুরা আল বাকারা ২০৪ থেকে – আলে ইমরান ৯১ আয়াত পর্যন্ত

৩] মাহে রমজান –৩য়তারাবীহ

৪র্থ পারা থেকে ৫ম পারার প্রথমার্ধ

আলে ইমরান ৯২ থেকে সুরা আন নিসা ৮৭ পর্যন্ত

৪] মাহে রমজান –৪র্থ তারাবীহ

৫ম পারার শেষার্ধ ও ৬ষ্ঠ পারা

সুরা আন নিসা ৮৮ থেকে সুরা আল মায়েদা ৮২ পর্যন্ত

৫] মাহে রমজান –৫ম তারাবীহ

৭ম পারা থেকে ৮ম পারার প্রথমার্ধ

সুরা আল মায়েদা ৮৩ থেকে সুরা আল আ’রাফ ১১ আয়াত পর্যন্ত

৬] মাহে রমজান – ৬ষ্ঠ তারাবীহ

৮ম পারার দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ৯ম পারা

সুরা আল আ’রাফ ১২ আয়াত সুরা আনফাল ৪০ আয়াত পর্যন্ত

৭] মাহে রমজান – ৭ম তারাবীহ

১০ম পারা

সুরা আনফাল ৪১ আয়াত থেকে সুরা আত তাওবাহ ৯৩ আয়াত পর্যন্ত

৮] মাহে রমজান – ৮ম তারাবীহ

১১ তম পারা

সুরা আত তাওবাহ ৯৪ আয়াত থেকে সুরা হুদ ৫ নং আয়াত পর্যন্ত

৯] মাহে রমজান – ৯ম তারাবীহ

১২ তম পারা

সুরা হুদ ৬ নং আয়াত থেকে সুরা ইউসুফ ৫২ পর্যন্ত

১০] মাহে রমজান –১০ম তারাবীহ

১৩ তম পারা

সুরা ইউসুফ ৫৩ থেকে সুরা ইব্রাহিম শেষ আয়াত পর্যন্ত

১১] মাহে রমজান –১১ তম তারাবীহ

১৪ তম পারা

সুরা আল হিজর ও সুরা আন নাহল

১২] মাহে রমজান –১২ তম তারাবীহ

১৫ তম পারা

সুরা বনী ঈসরাইলের ১ থেকে সুরা কাহফ ৭৪ আয়াত পর্যন্ত

১৩] মাহে রমজান – ১৩ তম তারাবীহ

১৬ তম পারা

সুরা কাহফ ৭৫ আয়াত থেকে সুরা ত্বোয়া-হা শেষ আয়াত পর্যন্ত

১৪] মাহে রমজান –১৪ তম তারাবীহ

১৭ তম পারা

সুরা আম্বিয়া ১ থেকে সুরা আল হাজ্ব শেষ আয়াত পর্যন্ত

১৫] মাহে রমজান – ১৫ তম তারাবীহ

১৮ তম পারা

সুরা আল মুমিনুন থেকে আল ফুরকান ২০ আয়াত পর্যন্ত

১৬] মাহে রমজান – ১৬ তম তারাবীহ

১৯ তম পারা

আল ফুরকান ২১ আয়াত থেকে সুরা আন নামল ৫৯ আয়াত পর্যন্ত

১৭] মাহে রমজান – ১৭ তম তারাবীহ

২০ তম পারা

সুরা আন নামল ৬০ আয়াত থেকে সুরা আল আনকাবুত ৪৪ আয়াত পর্যন্ত

১৮] মাহে রমজান – ১৮ তম তারাবীহ

২১ তম পারা

সুরা আল আনকাবুত ৪৫ আয়াত থেকে সুরা আল- আহযাব ৩০ আয়াত পর্যন্ত

১৯] মাহে রমজান – ১৯ তম তারাবীহ

২২তম পারা

সুরা আল- আহযাব ৩১ আয়াত থেকে সুরা ইয়াসিন ২১আয়াত পর্যন্ত

২০] মাহে রমজান – ২০ তম তারাবীহ

২৩ তম পারা

সুরা ইয়াসিন ২২ আয়াত থেকে সুরা আয যুমার ৩১ আয়াত পর্যন্ত

২১] মাহে রমজান – ২১ তম তারাবীহ

২৪ তম পারা

সুরা আয যুমার ৩২ আয়াত থেকে সুরা হা-মীম আস্‌ সাজ্‌দা ৪৬ আয়াত পর্যন্ত

২২] মাহে রমজান – ২২ তম তারাবীহ

২৫ তম পারা

সুরা হা-মীম আস্‌ সাজ্‌দা ৪৭ আয়াত থেকেসুরা আল জাছিয়া শেষ আয়াত পর্যন্ত

২৩] মাহে রমজান – ২৩ তম তারাবীহ

২৬ তম পারা

সুরা আল আহ্ক্বাফ ১ আয়াত থেকে সুরা আল যারিয়াত ৩০ আয়াত পর্যন্ত

২৪] মাহে রমজান – ২৪ তম তারাবীহ

২৭ তম পারা

সুরা আল যারিয়াত ৩১ আয়াত থেকে সুরা আল হাদীদ এর শেষ আয়াত পর্যন্ত

২৫] মাহে রমজান – ২৫ তম তারাবীহ

২৮ তম পারা

সুরা আল মুজাদালা থেকে সুরা আত তাহরীম এর শেষ আয়াত পর্যন্ত

২৬] মাহে রমজান –২৬তম তারাবীহ

২৯ তম পারা

সুরা আল মূলক থেকে সুরা মুরসালাত এর শেষ আয়াত পর্যন্ত

২৭] মাহে রমজান – ২৭ তম তারাবীহ

৩০ তম পারা

সুরা আন নাবা থেকে সুরা আন নাস এর শেষ আয়াত পর্যন্ত

নিয়েছি : ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশান এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন[আই.ই.আর.এফ}

"যারা (আল্লাহর ওপর)ঈমান আনে, আল্লাহ তা'লাই হচ্ছেন তাদের সাহায্যকারী (বন্ধু),তিনি (জাহেলিয়াতের)অন্ধকার থকে তাদের (ঈমানের) আলোতে বের করে নিয়ে আসেন,

(অপরদিকে) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, বাতিল শক্তিসমূহ-ই হয়ে থাকে তাদের সাহায্যকারী, তা তাদের (দ্বীনের) আলোক থেকে (কুফরীর) অন্ধকার এর দিকে নিয়ে যায়; এরাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। [আল কুরআনঃ সূরা আল বাক্বারাহঃ ২৫৭]

আপনারা আল্লাহর বান্দা ও রাসুলের উম্মত হিসাবে পোস্টটি কপি ,পেস্ট বা শেয়ার যেই ভাবে চান আরো সুন্দর করে হলেও অন্যদের ক্লাছে পৌছে দিন। আমি সুনামের জন্য নই আল্লাহর খলিফা হিসাবে মুক্তির জন্য এই কাজ করেছি।তাই আমি তাতে কিছুই মনে কববনা

ইয়া আল্লাহ !আমার দায়িত্ব এই সংবাদ আমার এলাকায় সবার কাছে পৌছানোর। আমি তোমার দেওয়া জ্ঞানের মাধ্যমে তা দেশে বিদেশে সকল বাংলাভাষী দের কাছে পৌছে দিলাম শুধু তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।হে প্রভু!তুমি তা কবুল কর

এর ফজিলতে আমাদের কবরে আমাদের একাকিত্বের সময় তুমি আমাদের এই কোরানের আলো দিয়ে প্রশান্তি দান করো।ইয়া আল্লাহ কোরানকে তুমি আমাদের জন্য ইমাম ,নূর পথ প্রদর্শক ও সুপারিশ কারী বানিয়ে দাও। আমাদেরকে তোমার রহমান নামের গুনে ক্ষমা করে দাও ।হে মালিক এই কিতাবের জ্ঞানকে আমাদের পরকালের মুক্তির জন্য দলিল বানিয়ে দাও।আমিন ।

বিষয়: বিবিধ

২৯১০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

203533
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:০৩
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপনি খুব সুন্দর করে লিখতে পারেন। চালিয়ে যান
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:০৬
152888
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ । আমার লিখাকে নয় ইসলামকে ভালবেসে আমার লিখা পড়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সব চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।
203534
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:০৫
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার লিখা যেন কবুল করেন সেই দোয়া করি Praying
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:২৪
152882
মাটিরলাঠি লিখেছেন : আ-মী-ন।
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৩১
152893
সত্যলিখন লিখেছেন : ইসলামকে ভালবেসে আমার লিখা পড়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে
দুনিয়া ও আখিরাতের সব চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।
203538
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:১৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার লিখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আলহামদুলিল্লাহ্‌।
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৩২
152894
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ । আমার লিখাকে নয় ইসলামকে ভালবেসে আমার লিখা পড়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সব চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।
203590
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৪০
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খায়ের
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:২৭
152901
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ । আমার লিখাকে নয় ইসলামকে ভালবেসে আমার লিখা পড়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সব চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।
০৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:২৯
152904
সত্যলিখন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ । আমার লিখাকে নয় ইসলামকে ভালবেসে আমার লিখা পড়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সব চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।
203651
০৭ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:১৯
তহুরা লিখেছেন :
203668
০৭ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:৩০
আল সাঈদ লিখেছেন : ইসলাম শান্তির ধর্ম। সত্যিই খুব ভাল লেখেছেন। ধন্যবাদ
204244
০৮ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৫:৫১
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : কুরআন মুমিনের ভাষা। আগ্রহী গ্রহীতার জন্য তার রসাস্বাদন সহজ করা হয়েছে। বিশ্বাস আর ভালবাসায় তাকে ধারণ করতে পারলে তার সংবাদ আর সৌন্দর্যের নাগাল পাওয়া সহজ হয়ে যায়। এই অত্যন্ত মৌলিক কাজটি যখন আমরা করতে উদ্যোগী হব, আমাদের ঈমান ও আমল-আখলাক শুদ্ধ হবার পথ খুঁজে পাবে। কুরআন আমাদেরকে তখন সঠিক দিক-নির্দেশনা দেবে কোন বিষয়কে কিভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং কোন পন্থায়, কত গভীরতায়। কুরআনে উল্লেখিত মধ্যপন্থার স্বরূপ কী, তা প্রয়োগের হেকমত কী তা আমাদের কাছে সু্স্পষ্ট হবে।

কুরআনের জ্ঞান অর্জনের সকল আয়োজন সকলের খুব কাছেই বিদ্যমান। এর নাজিলকারী সকলপ্রকারে পুরো মানবজাতিকে উদ্ভুদ্ধ করেছেন, কুরআনের কাছে আসতে, এই গ্রন্থখানা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করেত, এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে – সর্বোপরি এর সংস্পর্শে এসে আরোগ্য লাভ করতে (১০.৫৭, ১৭.৮২, ৪১.৪৪)। যে যেই ভাষা বা জাতি গোষ্ঠিরই হোকনা কেন কুরআনের শিক্ষাগ্রহণ যে সহজ করা হয়েছে তা পুনঃ পুনঃ উচ্চারিত হয়েছে। আমরা যেন কাউকে সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথ থেকে প্রতিরুদ্ধ না করি (অ-ইয়াছুদ্দুনা আংছাবিলিল্লাহি-৩.৯৯, ৭.৪৫, ৭.৮৬, ৮.৪৭, ৯.৩৪, ১১.১৯, ১৪.৩, ২২.২৫/ ৪.১৬৭, ১৬.৮৮, ৪৭.১, ৪৭.৩২, ৪৭.৩৪, ৫৮.১৬, ৬৩.২)। আর আল্লাহ পাক আমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে মোটেই অনবহিত নন (অমাল্লাহু বিগফিলিন ‘আম্মা তা’মালুন-২.৭৪, ২.৮৫, ২.১৪০, ২.১৪৪, ২.১৪৯, ৩.৯৯)।

আমরা অনেকেই কল্যাণের জন্য ছুটোছুটি করি, কিন্তু সুস্থির হয়ে এই আলো প্রক্ষেপনের কাজটি করিনা। অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দেন যে, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা কর (ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু ‘আলাইকুম আংফুসাকুম)। যখন তোমরা সৎপথের উপর রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রষ্ট হলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। তোমাদের সকলকে আল্লাহরই সমীপে ফিরে যেতে হবে। অতপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা কিছু তোমরা করতে”- ৫.১০৫। “কেউ কারো বোঝা বহন করবে না” (৬.১৬৪, ১৭.১৫, ৩৫.১৮, ৩৯.৭, ৫৩.৩৮)- অলা তাঝিরু অঝিরতুও বিঝরা উখরা। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন: “ওরা যা বলে তা আমি সম্যক অবগত আছি। তুমি তাদের উপর জোরজবরদস্তিকারী নহ (অমা আংতা আলাইহিম বিজব্বার); অতএব যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে কুরআন দ্বারা উপদেশ দাও (ফাজাক্কির বিল কুরআন)”-৫০.৪৫।

এখন সময় এসেছে সবাই মিলে কুরআনের সবটাকে ভালভাবে গ্রহণ ও ধারণ করার। সময় এসেছে এই অবহেলিত, পরিত্যক্ত মহাগ্রন্থকে গভীর মমতায় বুকে তুলে নেবার। সময় এসেছে এর মধ্যে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রক্ষেপনের। আমরা কি কিছুক্ষণ ভেবে দেখব, এমন একটি সমাজের কথা – যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিবিড় নিষ্ঠা আর অত্যন্ত ভালবাসা নিয়ে প্রতিনিয়ত সকাল-সন্ধা কুরআন চর্চা করে, জীবনাচরণে তার প্রকাশ ঘটায় ভারসাম্য ও মধ্যপন্থার মাধ্যমে, নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে থেকে তা পৌঁছে দেয় স্বীয় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন আর আল্লাহর অন্যান্য বান্দার কাছে, কুরআনের ভাষায় যারা কথা বলে, যাদের শারিরীক ভাষাকে কুরআন এক যথাযথ আদল দিয়ে দেয়, তাহলে কতইনা সন্তুষ্ট হবেন আল্লাহ সেই সত্তাগুলোর প্রতি, আর সমষ্টিগতভাবে সেই সমাজের প্রতি – যারা আল্লাহর শেখানো ভাষায় কথা বলে – যাদের ভয়েস আল্লাহর ভয়েস হয়ে যায়।

আমরা নিজেকে আল্লাহওয়ালা বলে ভাবব, কিন্তু আল্লাহর মধুর বাণী কুরআন আমাদের টানবে না, তা কি কখনো হয়? প্রতিটি সন্দিগ্ধ মন ভেবে দেখুক, কেন কুরআন তাকে টানেনা। ‘শোনা ইসলাম’ আর ‘দেখা ইসলাম’কে কুরআনের কষ্টিপাথরে যাচাই করার তাগিদ কেন আমাদের নেই? পুরো মানবজাতি সংস্কারহীন মনে এই মহান গ্রন্থখানা আদ্যোপান্ত পড়ে দেখুক কী নেয়ামত থেকে মানবজাতির কমন ও স্বঘোষিত দুষমন শয়তান আর তার দোসররা তাদেরকে বঞ্চিত করছে।

খাতামুন্নাবিয়্যিন হযরত মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম)-এর ওফাতের অব্যবহিত পরে হযরত উম্মে আয়মন বারাকাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে যে, “আসমান থেকে আসা অহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেল”। হযরত উম্মে আয়মন ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মুত্তালিবের কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসী, শেষনবীর ধাত্রীমাতা। আরবের মরুপথে যখন মা আমেনার মৃত্যু হয়, তখন শিশু মুহম্মদকে (দHappy এই উম্মে আয়মন বারাকাহই কোলে করে আগলে মক্কায় ফেরত এসেছিলেন। শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং নবুওয়াতী জিন্দেগীর প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই তিনি আল্লাহর রাসূলের নিকট সান্নিধ্যে ছিলেন। নবীকে কুরাইশী গোত্রবাদী অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে আসমানী সওগাত প্রদানের এ যেন দোজাহানের বাদশাহর অভূতপূর্ব এক আয়োজন। বস্তুতঃ শেষনবীর ইন্তেকালের পর আরো বেশ কবছর বেঁচে ছিলেন তিনি – যাকে নবীজি আমেনার পর তাঁর মা বলে ডাকতেন। স্বীয় রব্ব আল্লাহর প্রতি নিষ্কলুষ ঈমান, রাসূলের সার্বক্ষণিক সাহচর্য, নিবিড় পর্যবেক্ষণ, আজীবন অপার নিষ্ঠাপূর্ণ খেদমত থেকে রাসূলের ওফাত সম্পর্কিত তাঁর এই যে অভিব্যক্তি, তা সবিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ, গভীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয়বহ। এই প্রতিক্রিয়া মানবসৃষ্টির সূচনাকালকে ছুঁয়ে প্রতিঘাত হতে হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

এই সেই অহী যা মানব ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ক্ষণে দীর্ঘ ২৩ বছর মেয়াদে যখন যেমন প্রয়োজন আল্লাহর তরফ থেকে মানুষের কল্যাণে নাযিল হয়েছে। এই সেই অহী যা সীমাহীন যাতনা-লাঞ্ছনা, দুঃসহ কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে আল্লাহর শেষনবী পুরো মানবজাতির জন্য রেখে গিয়েছেন – যে যন্ত্রণার ব্যাপ্তি, গভীরতা আমাদের পক্ষে কস্মিনকালেও অনুভবে বা বোধের জগতে আনা সম্ভব নয়। ইহকাল পরকালে মানবজাতিকে মহিমা দান করতে, অকল্যাণ থেকে বাঁচাতে, আর চিরস্থায়ী কল্যাণ দিতে অহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত চূড়ান্ত ফয়সালাকারী সেই বাণীর সংকলন পবিত্র আল-কুরআন। সেই মহিমান্বিত কুরআন পরিত্যক্ত, পরিত্যজ্য, অবজ্ঞাত, বর্জিত (২৫.৩০)– আমাদের দৈনন্দিন হিসাবের একেবারেই বাইরে।

পৃথিবীতে মানব সভ্যতার সামগ্রিক বয়স অনেক। হয়ত ক্বিয়ামত খুবই সন্নিকটে (১৬.৭৭, ২১.১, ৪২.১৭) যেমনটি আসমান-যমিন ও তার মধ্যস্থিত সকল কিছুর মালিক বলেছেন। চারিদিকে তাকালে, একটু ভাবলে কেমন যেন স্পষ্ট হয়ে যায়, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল দিক থেকে সৃষ্টিটাকে গুটিয়ে আনছেন। পশ্চাতে আয়োজন চলছে এই সাময়িক-পর্বটি চুকিয়ে ফেলার। কত শত সহস্র নবী-রাসূল আর তাঁদের মাধ্যমে আসমানী কিতাব পাঠিয়ে আল্লাহর একত্ব, তাওহীদের শিক্ষা, স্বীকৃতি ও তার উপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকতে মানব সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর অপার করুনার ধারা অহীর মাধ্যমে জারী রেখেছিলেন এই সেদিন পর্যন্ত। আজ সেই ধারাটি বন্ধ হয়ে গেল ‘মুহম্মাদুর রাসূলুল্লাহর’ ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে। এরচে’ বড় সংবাদ বা তার শিরোনাম আর কী হতে পারে? তাবৎ পৃথিবীর মানুষের পক্ষে হাজার বছর সেজদায় লুটিয়ে পড়ে থেকেও আর কোন আসমানি বাণী আণয়ন সম্ভবপর হবে না। তার প্রয়োজনও নেই। কেননা শেষনবী আর মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ মানবকূলের প্রতি তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূলের ওফাতের পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা ইসলামের নামে অনেক কথা-কাহিনী, টার্ম-টার্মিনোলজী তৈরি করেছি আমাদের খেয়াল খুশিমতো, কখনো উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে – কুরআন পড়লে যা আপনাআপনি অসাড় বলে প্রতিয়মান হয়। কাজেই কুরআনের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের জীবনকে সেই অনুযায়ী পরিচালিত করা প্রত্যক মুমিন মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File