সবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন , আমরা কি সত্যি সেই রকম মুসলিম হতে পেরেছি ?
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২২ মার্চ, ২০১৪, ১২:৪৪:০৪ রাত
সবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন ,
আমরা কি সত্যি সেই রকম মুসলিম হতে পেরেছি ?
[
"যখন তার রব তাকে বললো, “মুসলিম হয়ে যাও ৷"
তখনই সে বলে উঠলো, “আমি বিশ্ব-জাহানের প্রভুর ‘মুসলিম’ হয়ে গেলাম ৷ ” সুরা বাকারা ১৩১
মুসলিম কাকে বলে?
মুসলিম অর্থ অনুগত ও অনুসরন করা । আল্লাহর অনুগত হবে আর রাসুল সা ঃ অনুসরন করবে।যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত হয়, আল্লাহকে নিজের মালিক , প্রভু ও মাবুদ হিসেবে মেনে নেয়, নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়ায় আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে সে-ই মুসলিম ।
"আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি" সুরা বাকারা ২৮৫
আল্লাহর বানী মুসলিম রা শুধু শুনবে আর আর অনুগত দাস হিসাবে তা মেনে বিনা বাক্য ব্যয় এ মেনে নিবে । এ মৌখিক স্বীকৃতি ও আকীদা-বিশ্বাস এবং বাস্তব জীবনে তা পালন করার কর্মপদ্ধতির নাম 'ইসলাম'।
মানব জাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব নবী এসেছেন এটিই ছিল তাঁদের সবার দীন ও জীবন বিধান । আমাদের দীন আল্লাহর আদেশ নিষেধ রাসুল সাঃ এর শরিয়ত অনুসারে মেনে চলা অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি অনুগ্রহ ও বিশ্বস্ত গোলাম হয়ে থাকা । আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন ।
যেমন দরুন । একজন পরীক্ষার্থী প্রথমশ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত বরাবর ক্লাসে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য গলা ফাটিয়ে সারাক্ষন পড়ে মৌখিক স্বীকৃতি দিল । কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেও্য়ার পর দেখা গেল সে ফেল করেছে । বোর্ড কতৃপক্ষ থেকে জানা গেল যে ,সে সব বিষ্ইয়ে গোল্ডেন A+ নম্বর পেয়েছে কিন্তু সে প্রেক্টিক্যাল পরীক্ষায় তেমন কিছুই পারেন নাই তাই ফেল করেছে । আর তার ক্লাসের তার বন্ধু ক্লাসে তার মত গলা ফাটানো আওয়াজ দিয়ে বেশি সময় না পড়লেও কিন্তু যত টুকু পড়েছে মন দিয়ে বুঝে শুনে থিউরী আর প্রেক্টিক্যাল এর মিল রেখে পড়েছে । তাই সে এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট গোল্ডেন A+ পেল । কারন তার থিউরী আর প্রেক্টিক্যাল পরীক্ষায় একই সমান তালে ছিল ।
তেমনি আমরা অনেকে ইসলামের বা কোরান সুন্নার জ্ঞানের অনেক বড় ডিগ্রী দারী বলে নিজেকে দাবী করি । নামের পুর্বে ইসলামিক খ্যাতাব গুলো লাগাতে পছন্দ করি । কিন্তু আমার মনে আজ প্রশ্ন জাগে ইসলামের আজ এই দুর্দিনে আমরা নিশ্চুপ কেন? কোরান সুন্নাহর যে জ্ঞান অর্জন করেছি তা বাস্তবে আমরা কি প্রয়োগ করলাম । মেমোরি কার্ডে স্টোল করে কোরান মুখস্ত করে মেধাবী হাফেজ হলাম কিন্তু ইসলামের দরজায় দায়ী ইলাল্লাহ হিসাবে ইসলামের লেবাস পরে দাড়িয়ে রইলাম । কোরানের সুন্নাহর বাস্তবায়ন করার জন্য নিজের জীবনে , পরিবারে , সমাজে ও রাষ্ট্রে তার কোন প্রয়োগ করলাম না ।
আর যারা জান মাল দিয়ে ইসলামের স্বল্প জ্ঞান কে নিজের জীবনে , পরিবারে , সমাজে ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করে প্রয়োগ করতে চায় তাদের কেও সহযোগিতা করলাম না । কিন্তু আল্লাহর জিকিরে জমিন কাপিয়ে তুলছি । কোরআনের থিউরী তে জিকির করলাম কিন্তু প্রেক্টিক্যাল নিজের জীবনে তা প্র্য়োগ করলাম না । তা হলে আমাদেরও আর ঐ ছাত্রের থিউরী তে গোল্ডেন A+ আর প্রেক্টিক্যাল এর ফেল করতে হবে। আর আখিরাতের ফাইনাল রেজাল্ট দেও্য়ার পর দেখা যাবে আমরা ফেল করেছি। আর কোরান বুঝে পড়ার কারনে ঐ বন্ধুর মত কোরআন যত টুকু পড়ব মন দিয়ে বুঝে শুনে থিউরী আর প্রেক্টিক্যাল এর মিল রেখে জীবন অতিবাহিত করলে আল্লাহ আমাদের ইনশাল্লাহ আখিরাতে রেজাল্ট গোল্ডেন A+ হিসাবে ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন ।
"মিথ্যার রঙে রাঙিয়ে সত্যকে সন্দেহযুক্ত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করার চেষ্টা করো না৷" সুরা বাকারা ৪২
"বলোঃ “আল্লাহর রঙ ধারণ করো ! আর কার রঙ তার চেয়ে ভলো? আমরা তো তাঁরই ইবাদাতকারী ৷” সুরা বাকারা ১৩৮
.
আমরা আল্লাহর রং ধারণ করেছি বা আল্লাহর রং ধারণ করো । এর অর্থ যে ইসলামে ধর্মে যারা প্রবেশ করে কেবল তারাই তাওবা করে নিজের সমস্ত গোনাহ ধুয়ে ফেলে এবং আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুসারে ইসলাম ধর্ম বাস্তবায়ন করে নতুন রং ধারণ করল । এ ব্যাপারেই কুরআন বলছে, আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হও । যা কোন রঙ্গিন পানির দ্বারা হওয়া যায় না । বরং তাঁর বন্দেগী (জানা আর মানার মাধ্যমে)পথ অবলম্বন করে এ রঙে রঞ্জিত হওয়া যায় । তাই আমাদের কে সবরকারী, সত্যনিষ্ঠ, অনুগত ও দানশীল এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে হবে ৷ সত্য পথে পূর্ণ অবিচলতার সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। কোন ক্ষতি বা বিপদের মুখে কখনো সাহস ও হিম্মতহারা হওয়া যাবে না। ব্যর্থতা এদের মনে কোন চিড় যেন ধরায় না। লোভ-লালসায় পা পিছলে যাবে না। বর্তমানে আপাতদৃষ্টিতে ইসলামের সাফল্যের কোন সম্ভাবনাই দেখা যায় না বলে ইসলাম থেকে সরে যাওয়া ্যাবে না বরং আরো মজবুতভাবে সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে ইনশাল্লাহ ।
.আপনি যদি বলেন মসজিদের ঈমাম ঘুষ খায়না কারন সে মুসলমান ।আমি বলব এখানে তার মুসলমান হয়ে দেখানোর কিছুই নেই কারন ঘুষ খাওয়ার সুযোগ মসজিদে সেই ঈমামের নেই । আপনি যদি বলেন সেক্রেটারীয়েট ভবনের প্রাধান সচিব ঘুষ খান না তখন আমি মেনে নেব যে, বাস্তবিক তিনি খাটি মুসলমান । কারন হাতের কাছে সু্যোগ থাকতেও তিনি মুসলমান হয়ার কারনে আল্লাহর ভয়ে তা গ্রহন করেন নাই ।
"হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো৷ মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়৷"
সুরা আলে ইমরান ১০২
"হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও ১২২ এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে৷"সুরা নাহল ১২৫
দাওয়াত দেবার সময় দুটি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে ।
১ ) প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা ঃ
"তারা কালা, বোবা, অন্ধ৷তারা আর ফিরে আসবে না "৷ বাকারা -১৮
***জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার মানে হচ্ছে, হককথা শোনার ব্যাপারে বধির , হককথা বলার ক্ষেত্রে বোবা এবং হক ও সত্য দেখার প্রশ্নে অন্ধ ও নির্বোধদের মত চোখ বন্ধ করে দাওয়াত প্রচার না করা নয় । বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার মন- মানস, যোগ্যতা ও অবস্থার প্রতি নজর রেখে এবং এ সংগে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে কথা বলে দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যাওয়া ।
***েকই পাল্লায় সব জিনিস মাপা যায় না। তুলার পাল্লা আর সোনার পাল্লা একই পাল্লা নয় । তেমনি যে কোন যক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে তারপর এমন যক্তি প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে যা তার মন মস্তিষ্কের গভীর প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলতে পারে ।
২) সদুপদেশঃ
সদুপদেশের দুই অর্থ হয় ।
এক, যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে তাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তৃপ্ত করে দিয়ে ক্ষান্ত হলে চলবে না বরং তার আবেগ - অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে ।
দুষ্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে বাতিল করলে হবে না বরং সেগুলোর অশুভ পরিণতির ভয় দেখাতে হবে ।
ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ ও সৎকাজে আত্মনিয়োগ শুধু যে ন্যায়সংগত ও মহৎ গুণ, তা যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করব না বরং সেগুলোর প্রতি আকর্ষণও সৃষ্টি করতে হবে ।
দুই, উপদেশ এমনভাবে দিতে হবে যাতে আন্তরিকতা ও মংগলাখাংকা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে । যাকে উপদেশ দান করা হচ্ছে সে যেন একথা মনে না করে যে, উপদেশদাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির স্বাদ নিচ্ছে । বরং সে অনুভব করবে উপদেশদাতার মনে তার সংশোধনের প্রবল আকাংখা রয়েছে এবং আসলে সে তার ভাল চায় ।
এটি যেন নিছক বিতর্ক, বুদ্ধির লড়াই ও মানসিক ব্যায়াম পর্যায়ের না হয় । পেঁচিয়ে কথা বলা, মিথ্যা দোষারোপ ও রূঢ় বাক্যবাণে বিদ্ধ করার প্রবণতা যেন না থাকে । প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের গলাবাজী করে যেতে থাকা এর উদ্দেশ্য হবে না । বরং এ বিতর্ক আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার করতে হবে । উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে । যুক্তি প্রমাণ হতে হবে ন্যায়সংগত ও হৃদয়গ্রাহী । যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ, একগুঁয়েমী এবং কথার প্যাঁচ সৃষ্টি হবার অবকাশ না দেখা দেয় । সোজাসুজি তাকে কথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে এবং যখন মনে হবে যে, সে কূটতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছে তখনই তাকে তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে যাতে ভ্রষ্টতার নোংরা কাঁদামাটি সে নিজের গায়ে আরো বেশী করে মেখে নিতে পারে । .
তাই কোরান সুন্নাহ আলোকে ইসলামের সথিক জ্ঞান অর্জন করিতে হবে আর তা বাস্তবায়ন করে নিজেকে ইসলামের মডেল হিসাবে তৈরী করে অন্যদের কে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করিতে হবে । ফূলের রঙ্গে পাগল হয়ে ভ্রমর আসে ফুলের কাছে। তেমনি আল্লাহর রঙ্গে আমরা আমাদের রাঙ্গাতে পারলে অন্যরা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হবে ।আর ভ্রমরের পাখায় করে ফুলের রেনু ছরিয়ে পড়ার মত ইসলাম এর দাওয়াত দ্রুত সবার হৃদয়ের আঙ্গিনায় ছড়িয়ে পড়বে । আর ফুলের বাগানের সুবাসের মত ইসলামের সুবাস ছড়িয়ে পড়বে ব্যক্তি , পরিবার ,সমাজ ও রাষ্ট্র । আর যদি ইসলামের এই দাওয়াত প্রচার প্রসার করার কাজের দেরি হয় তার জন্য আমি আপনি আমরা সবাই কাল হাশরের ময়দানে দায়ী থাকব আল্লাহর কাঠগড়ায় । তাই কলেমার নামধারী মুসলমান রা জেনে বুঝে আল্লাহর সত্য কে গোপন করা যাবে না ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন