আজ আমার হিরার কনার জন্ম দিন ।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৩ মার্চ, ২০১৪, ০৭:১৮:৫০ সন্ধ্যা
আজ আমার হিরার কনার জন্ম দিন ।
"আপনি আবার মা হতে যাচ্ছেন" । কিন্তু আল্ট্রাসোনগ্রাফিতে দেখলাম য়াপনার দেড় মাস আগের বাচ্ছার জন্য যে সিজার করতে হয়েছে তা এখনো কাচা ও অনেক জায়গায় ইনফেকশান।আপনার বয়স কম তাই মায়ের জীবন বাচানোর জন্য এই বাচ্ছাটা রাখা যাবে না।যা করতে হয় আজই করতে হবে ।তাইআপনার সাহেবকে ভিতরে ডাকেন"।
ডাক্তার আপা আপনি যা বলছেন তা কি সত্যি ?
"আমি সব সত্যি বলছি ।
ডাক্তার এর রুম থেকে বের হওয়ার আগেই তাতক্ষনিক আল্লাহর উপর ভরসা করে সিন্ধান্ত নিলাম " আল্লাহ জীবন মৃতুর ফয়সালাকারী তাই যা হবার তাই হোক আমার । তাও আমি আমার সন্তান হত্যা করতে দিব না । আল্লাহ আমার সাহায্যকারী তাই আমার কিছুই হবে না। তাই ডাক্তার রুম থেকে বের হয়ে সাহেব কে ডাক্তার আপার ভয়ংকর কথার কিছুই না বলে হাস্যুজ্ঞোল ভাবে জানালাম আমাদের আরেকজন নতুন মেহমান আসছেন। আলহামদুলিল্লাহ দুই জনেই খুশি মনে বাসায় চলে আসলাম।
সময় তো আর থেমে থাকে না তাই প্রেগনেট সময় ৫মাসে পড়ল । আমার সংসারের কাজ কর্ম , বড় ৩ছেলের পড়া লেখার দেখা শুনা ,প্রায় ৭ মাসের কোলের দুধ খাওয়া বাচ্চার দেখা শুনা , নিজের উঠা বসা বা নিজের গা গোসল টয়লেটে বসা সব আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল । আমি একটু কিছু করতে গেলেই আমার পেটের ভিতরের এমন পেইন শুরু হতো , আমার মনে হতো আমার পেট্টার সেলাই গুলো এখনি ফেটে যাবে। আল্লাহর কাছে অনেক সাহায্য চেয়ে চেয়ে ৭ মাস পার হলো । শুরু হলো একলাম শিয়া মানে রকত শুন্যতা থেকে খিছুনি রোগ।আলহামদুলিল্লাহ আমি মনোবল না হারালেও আমার সাহেব আর আমার বিধবা মা অনেকটাই আমার আশা বাদ দিয়ে দিলেন । সাহেব আল্লাহর কাছে আমার জানের বদলে গরুর জান কোরবানীর নিয়ত করলেন। আর আমার মা বললেন , "আল্লাহ যেন উনার জানের বিনিময়ে হলেও আমার জানটা রক্ষা করেন ।"
আমাকে দেখতে আসা এক বোন আমার বাবুর নড়াচড়া কম শুনে ও আমার অবস্থ্যা দেখে আমার সাহেব বলে আমাকে অনেক কষ্ট করে হসপিটালে নিয়ে যায় । আমার অবস্থ্যা কেমন ছিলো আমি জানি না । তবে দাক্তার আপা সাহেব থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার সময় বলেছেন "যে কোন একজন কেই বাচানো যাবে । " আমার সাহেব ও আমার দ্বীনি বোন টা বলেছেন "আমরা শুধু গাছ টা চাই ফল না হলেও চলবে "। আমার তখনো আল্লাহর উপর বিশ্বাস ছিলো আমার জীবন মৃত্যুর মালিক রহমানুর রাহিম ইচ্ছা করলে গাছ ফল ২ টাই বাচাতে পারবেন । ইনশাল্লাহ । তাই হল । আমার এই পৃথিবীর অমুল্যধন বিধবা মা আর আমার প্রান প্রিয় স্বামী ও দ্বীনি বোনদের উপকারের ঋন শোধ করার দায়িত্ব আমি আমার আল্লাহকে দিলাম ।
আবারও ৪ছেলের পর ছেলে শুনে অনেক কান্না করলাম একটা মেয়ের জন্য । মা আমাকে অনেক নরমে গরমে বুঝালেন । মা আমার পাশে হসপিটালও বাসায় অনেক কষ্ট করলেন।
নবজাত ছেলের প্রতি আমার অবহেলা মায়ের চোখ কে ফাকি দিতে পারল না। আমি বুকের দুধ ৪র্থ ছেলেকেই বেশি দিচ্ছি মেয়ে হয় নাই বলে ছোট ছেলে কে তেমন দিচ্ছি না বলে মায়ের অভিযোগ ছিল আমার প্রতি। তাই আমার মা বেশি নবজাত ছেলের প্রতি খেয়াল রাখত ও ওর পাশেই শোয় । ওর জন্মের ১৫ দিনের দিন শুক্রুবার শেষ রাতে নবজাত ছেলেটি খুব কান্দছে । আমার মা অনেক চেষ্টা করেছে থামাতে আর আমি ৪র্থ ছেলেকেই দুধ খাওয়াচ্ছি আর আধা আধা ঘুমাচ্ছি। এমন সময় একজন বুজুর্গ পর্দানশীন বোন আমাকে বলছেন "তুমি তোমার ছোট ছেলের প্রতি খেয়াল করছ না কেন ? সে তোমার একটা হিরার কণা" । সাথে সাথে মাকে বললাম । মা যা তাতক্ষনিক জানালেন আলহামদুলিল্লাহ ওর মাঝে ইসলামের সেই দিক গুলো আল্লাহ আমাকে এখনো দেখাচ্ছেন ।
১৯৯৮ সালের ১৩ই মার্চ আল্লাহ আমাকে যেই হিরার কণা দান করলেন । আজ আমার হিরার কনার জন্ম দিন । আমার বাসায় জন্ম দিন বা মেরেজ ডে এই সব কিছুই চলে না। কিন্তু আজ আমার আব্বু টা আবদার করল মা আমি আজ কে আমার ১০ জন দ্বীনি ভাইকে দুপুরে খাওয়াবো । ভাইরাস জ্বরে কাবু করা শরীল তাও রাজি হয়ে গেলাম। কারন আমার টা হিরার কণা না হলেও তার দ্বীনী ভাই গুলো আমার কাছে একটা একটা হিরার খনি ।যারা মায়ের মুখ বা মায়ের হাতের রান্না কতদিন থেকে খেতে যেতে পারে না । আমার কাছে আমার সন্তান থেকেও এই ছেলে গুলো অনেক বেশি কলিজার টুকরা । তাই অনেক শান্তি লেগেছে অদেরকে পেয়ে ।
কিন্তু আমার ভিতরে যে এর সাথে সাথে হারানোর বিউগল সারাদিন বেজে যাচ্ছে তা আর কেউ জানে না । কারন আমি ওর জন্মের ৩ মাস পর সুস্থ্য হওয়াতে মা আমার থেকে বিদায় নিয়ে দেশে গেলেন ।আমি আদৌ জানতাম না যে আমার মায়ের ঐটাই ছিল আমার সাথের চির বিদায় । দেশে গিয়ে মা খুব তাড়াতাড়ি নিজের স্থায়ী ঠিকাণায় চলে গেলেন । আমার মা বললেন , "আল্লাহ যেন উনার জানের বিনিময়ে হলেও আমার জানটা রক্ষা করেন ।" মায়ের জান টা আল্লাহ কবুল করে আমার জান টা মা বাবা হারা ব্যাথায় ভরিয়ে দিয়ে গেলেন । এই মা যে আমার কত বড় ধন ছিল তা আমি আর আল্লাহ ছাড়া কেউই বুঝবে না। আজ বার বার মনে হচ্ছে আমার বিধবা মা এর কত ত্যাগ আর কষ্টের পর আমি দুনিয়ার আলো বাতাস উপভোগ করছি । আমি ছেলেদের পেয়ে মা হয়ে যখন মায়ের অবদান বুঝতে শুরু করলাম তখনি মা কে হারালাম । আমার মত আর কোন সন্তান যেন হারায়ে না বুঝেন । দাত থাকতেই দাতের মর্যাদা দাও ।
আল্লাহ আমার মাবাবা সহ সকল সন্তানের হারানো মাবাবা কে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন । আল্লাহ আমার সন্তান সহ সকল মায়ের সন্তানদের আল্লাহ প্রতিনিধি হিসাবে দুনিয়া তে ইসলামের খাদেম ও মুমিন মুত্তাকিনদের ইমাম বানিয়ে আখিরাতের প্রশান্ত আত্তাদের সাথে মিলিত হবার উপযোগী ইমানী এলেমী ও আমলি যোগ্যতা দান করুন আমিন ।
বিষয়: বিবিধ
২২৬৭ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন