বৃক্ষে ফুল থাকুক আর নাই থাকুক তবুও মেনে নিল বসন্তকে।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩৬:৩২ রাত
বৃক্ষে ফুল থাকুক আর নাই থাকুক তবুও মেনে নিল বসন্তকে।
সুরা আসরের শিক্ষার আলোকে বুঝা যায় যে, সময়ের হিসাব দিতেই হবে।আল্লাহর দেওয়া সময়ের হিসাব দেবার ভয়ে দুপুরের খাবারের পর নিজের দূর্বল ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহটা বার বার বুঝাচ্ছে আরাম আয়েশে তাকে তার অবস্থানে ছেড়ে দিতে । নাতীর আশা উনাকে বুকে উষ্ণতায় সাথে ভালবাসা মিশিয়ে বুকে ঝড়ায়ে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকি । নাতির দাদার বিকালে কোর্ট থেকে এসেই বক্তব্য ,"সেই বাসা থেকে সকালে বের হওয়ায় পর থেকে বুকটা খা খা করে কখন যে বউ এর সামনে গিয়ে হাজির হব ।আর ......।" মনে মনে বার বার বলি আলহামদুলিল্লাহ । কারন এই ভালবাসা পাবার উপযুক্ত আমি না।এটা দয়ালুদের শ্রেষ্ট দয়ালু আমার আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নেওয়ামত ।
সবার সব চাওয়ার ভাষা বুঝেও সবাই কে আল্লাহর পথে বের হবার গুরুত্ব ওফজিলত বুঝায়ে নিজের নফসের আরাম কে আখিরাতের সুখের আশায় জলাজ্ঞলি দিয়ে অবসন্ন দেহটাকে ঠেলাগাড়ির মত ঠেলে ঠেলে আন্দোলনের কাজে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে বের হয়ে যাই । কারন আমার মনে হয় ,আজ আমি যেই সময় পেয়েছি আগামী কাল আমি সেই সময় নাও পেতে পারি , আর আমি যদি আমার জান্নাতের সিড়ি দুনিয়া থেকে বানায়ে নিতে না পারি তা হলে আমার জন্য কেউই এই মজবুত ও মসৃন শ্বেত পাথরের সিড়ি তৈরি করবে ্না। আমার জান মাল সুরা তাওবার ১১১ নং এর আলোকে জান্নাতের বিনিয়ে বিক্রি হওয়া । আল্লাহর ওয়াদা আর আমার চুক্তি এই দুই এর প্রতি খেয়াল রেখে কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহ ইনশাল্লাহ আমার উপর সন্তুষ্ট হবেন আর তিনি এর জন্য আমাকে যখন যে ভাবে রাখেন তাতেই আমি আমার প্রভূর উপর সন্তুষ্ট। আর যখনি ইসলামের কাজের জন্য আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে তখন আমার মনিবের ডাক আসলে যেন উনার গুনগান গাইতে গাইতেই আমি উনার সান্নিধ্যে হাজির হতে পারি ইনশাল্লাহ ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো ইরশাদ করেন-" যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে (কন্যাকে) কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্ট ও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তা'য়ালা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।" (মুসনাদে আহমদ, ১ঃ২২৩)
এই হাদিস এর আলোকে চিন্তা করলাম আমার মামনি টাকে (ছেলের বউ ) আমার ছেলে আইনজীবি হওয়াতে বর্তমান মেয়েরা যেমন আশা করে সেই পরিমান বেশি সময় দিচ্ছে না। আজ নিজের থেকে আমাকে বলল ,"মা মনি আপনার আজ কি প্রোগ্রাম আছে ? না থাকলে একটু আপনাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যেতাম "। আলহামদুলিল্লাহ । আমি এতে অনেক খুশি হলাম আর আমার প্রোগ্রাম এর দায়িত্ব আমি অন্য বোন কে দিইয়ে তাকে তৈরী হতে বললাম।
এই পার্কে রাখালের মত আমি প্রথম আমার বড় ৩ ছেলেকে শতায়্যু অঙ্গনের সামনের বড় মাঠে এনে ছেড়ে দিয়ে তাদের আইনজীবি বাবা আমাদের সন্ধ্যার আগে নিতে আসার পথের দিকে চেয়ে বসে থাকতাম । আজও সেই খানে গিয়ে বসলাম অতীত জীবনের বসন্তের দিন গুলি স্মৃতিচারন করছিলাম মামনিটার সাথে । এই দিকে নাতনির কচি মন বন্দিখাচা থেকে মুক্ত হয়ে খোলা মাঠ আর নীল আকাশ দেখে আনন্দে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি দিয়ে নাচানাচি করছে , সকালে খালি পেটে বের হয়ে আর সন্ধ্যায় ভরা পেটে নীড়ে ফিরে আসা পাখিদের আল্লাহর শুকরিয়া আর প্রশংসার কিচিরমিচির কোলকাকলিতে মুখর করে আনন্দ করছে আর যেই দিকে চোখ যাচ্ছে দৃষ্টি ফিরানো যাচ্ছে না ।কারন আল্লাহ রহমানুর রাহিম কি অপরূপ সাজে প্রকৃতি কে বাসন্তি সাজে সাজিয়েছে সুবহানয়াল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবার , যা দেখে শুধু আমার নয় আমার মত প্রকৃতি প্রেমিকা অনেকেরই মনটা নেচে উঠে আল্লাহর প্রশংসা করে উঠবে।
আমরা শতায়্যু অঙ্গনে যেখানে বসলাম সেখানে ঊঠার সিড়ির ডানে আর বামে দুই দিকে দুটো বৃক্ষ এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যা দেখে আমার মনটা কেদে উঠল । তারা এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে , প্রথমে যে কেউই ভাববে তারা মরে গেছে। তাদের জীবিত ভাবার মত কচি পাতা , গাড় সবুজ হৃদইয় কাড়ার মত রং আর ফুল ফলের বাহার তাদের কিছুই ছিল না।আমার মনে হলো , বসন্ত অন্যদের কে ফুলেফুলে সাজিয়ে সুন্দর করে বসন্তের কোকিলদের সাদর সম্বাষন জানাতে গিয়ে কখন কিভাবে যে গাছ গুলোকে স্বপ্নের মায়া দেখায়ে একফলকে তাদের হৃদয়ের ভালবাসা দিয়ে আকড়ানো পাতা ফুল গুলো নিয়ে নিয়েছে। আজ তারা অসীম নীল আকাশের নীল দিগন্তের পানে রিক্ত হস্তে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে ।আর এই বৃক্ষরা পাতা ফুল নেই তবুও সে বসন্তের সুন্দর্য্য কে মেনে নিল ।
আমার মনে হল একজন মায়ের জীবন আর এই গাছ গুলোর জীবন একই রকম । একজন মা এক সময় কচি গাছের চারার মত শৈশব । সেই চারা গাছটার মত মানুষ নামের গরু ছাগল এর হাত থেকে বেড়া দিয়ে রক্ষা করে তাকে সঠিক পরিচর্যা দিয়ে কিশোরী বা যৌবনে এনে দেন।একটা গাছের মত একজন মা এর যৌবন আসে । তখন সে নানান রং এর পাতা ফুল ফলে এমন এক রূপে রূপবতি হয়ে উঠে যে মাতাল ফাগুনের মত অনেকেই তখন তাকে বসন্ত বাহারে ঝড়ায়ে নিতে চায়।ইসলামের আলো দিয়ে আলোকিত থাকে যারা শুধু তারাই অনেক বসন্তের কোকিলের সুর শুনেও নিজেকে লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মত ছেড়ে না দিয়ে নিজের মন কে নিজের আয়ত্বেও রাখে। এক সময় বসন্ত যৌবনের ফুলের উপর স্বামী নামের ভ্রমর এসে ভালবাসার রেনু সরায়ে তাকে আরো ফুলে ফলে বিকশিত হবার সুযোগ করে দিয়ে তার কদর মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করে দেয় ।শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুর ঠান্ডা তাপদাহ আর সিক্ততা সহ্য করেও নিজের সন্তান নামের ফল গুলোকে পরিপক্ক ফলে রূপান্তরিত করে অন্যের উপকারে নিজের আগলে রাখা সম্পদ ছেড়ে দেয় । আর তখন তারা হয় সমাজের নামীদামী ব্যক্তি।
আর সব প্রতিকুল আবহাওয়া গাছটি নিজের কান্ড শাখা উপশাখার উপর দিয়ে সয়ে সয়ে ফল গুলো কে কাচা ঝরে পরতে দেয় না।আর বার বার ফল নামের সন্তান দেওয়ার মাঝে সে এক সময় হয় বয়স্ক/বৃদ্ধা। এক সময় সবাই সব ভুলে যায়। আর এই মা ঐ ফুল পাতা ঝরা গাছ টা মত একা হয়ে ব্যাথা বেদনা বিদূর দুই নয়নে রিক্ত হস্তে দাঁড়িয়ে থাকে আর আল্লাহর ডাকের প্রহর গুনে ।কারন সে তখন আর কারো মন জাগানো সুরে গান শুনাতে পারে না। তখন এই মা এর হিয়াটা অমাবশ্যার ঘনকাল রাতের মত দিক সীমানা হারিয়ে আনমনা হয়ে সেই বসন্ত বয়সের পূর্নিমার রাতের মধুর স্মৃতি গুলোর বুকে খেয়া ফেলে জীবনের রেখে আসা দিনগুলো বাইতে থাকে।জীবনের সব চাওয়া আর পাওয়া অংক কষে দেখেন যে তার জীবনের সব কিছুই ছিলো স্বামী সন্তানের কল্যান ঘিরে।আকাশের নীল এক জায়গায় থাকে না পুরো আকাশেই সে ছড়ায়ে দেয় ।তেমনি একজন মেয়ে কখন মেয়ে কখন স্ত্রী কখন মা কখনো দাদী/নানী যেভাবে যখন যেখানেই থাকুক না কেন তার ভালবাসা সব সময় সব খানে প্রান উজাড় করেই নিঃস্বার্থ ভাবে ছড়িয়ে দেন। তাই স্ত্রী/মায়ের জন্য স্বামী/সন্তানদের ভালবাসা থাকুক আর নাই থাকুক তোমাদের জীবনের বসন্তীবাহারের সুখেই স্ত্রী/মায়েরা সুখি। যেমন বৃক্ষের পাতা ফুল ফল থাকুক আর নাই থাকুক তবুও সে মেনে নিল বসন্তকে।বৃক্ষে ফুল থাকুক আর নাই থাকুক তবুও মেনে নিল বসন্তকে।
বিষয়: বিবিধ
৪০৮৪ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কত ফুল ফুটে ,
কত পাখি গায় ।
বসন্ত বাহারে আমার হৃদয় টা ভরিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ আপনাকে সর্বউত্তম জান্নাতের বাসিন্দা হবার সুযোগ করে দিন ।
আমার নাতনি আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছেন তবে ইয়াং দাদাদের ভালবাসা খুজেন সারাক্ষন।
আমার ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরুস্কার দান করুন ।
আপনার facebook লিংকটা একটু দিবেন?
https://www.facebook.com/parvins3
https://www.facebook.com/Sondhatara69
আলহামদুলিল্লাহ । শিশিরে সিক্ত ভালবাসা মিশ্রিত ফুলের পরিবর্তে কি দিতে হয় তা আমার মরুহৃদয়ে জানা নেই তাই আল্লাহ কে বলি তিনি যেন আমাদের এই পবিত্র ভালবাসার পরিবর্তে আমাদের কে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় ঘেরাও করে রাখেন ।
আমার ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরুস্কার দান করুন ।
অত্যন্ত চমৎকার ও খুব সুন্দর সাহিত্যিক রস দিয়ে লেখা আপনার এই ব্লগটি আমার কাছে দারুণ ভাল গেলেছ।
একটি বিশ্বাসী পরিবারের বাস্তব চিত্র এমনই হওয়া উচিত যা আপনার প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন।
একদম খাটি কথাই বলেছেন। উত্তম সন্তানের কারণে দুনিয়াতে ভিজিবল নগত পুরুস্কার তো দেখাই যায়। আখিরাতেও উত্তম সন্তানরা সদকায়ে জারিয়ার উসিলা হওয়ার কথা রাসুলের সুন্নাহ থেকেও আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। এক্ষেত্রে শুধু মা'কেই এককভাবে সম্মানের আসনে বসানো হয়নি। পিতারাও এর ফল ভোগ করেন।
আলহামদুলিল্লাহ ।
আমার ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরুস্কার দান করুন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন