"সাহসী মানুষের গল্প"
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪৯:০১ রাত
"সাহসী মানুষের গল্প"
মুতার যুদ্ধ ক্ষেত্র। সিরিয়ার রোমক শাসক শুরাহবীলের নেতৃত্বে এক লক্ষ রোমক সৈন্য দন্ডায়মান। যুদ্ধক্ষেত্রে এক লক্ষ সৈন্যের বিরুদ্ধে তিন হাজার মুসলিম মুজাহিদ দাঁড়িয়ে। মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব করেছেন যায়েদ ইবন হারেসা (রাঃ)।
ঘোরতর যুদ্ধ শুরু হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাপতি যায়েদ (রাঃ) শহীদ হলেন। মহানবী (সাঃ) এর পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী সৈন্য পরিচালনার ভার গ্রহণ করলেন জাফর ইবন আবী তালিব (রাঃ)। এক লক্ষ সৈন্যের বিরুদ্ধে তিন হাজার সৈন্যের এক অদ্ভুত অসম যুদ্ধ চলছে।
জাফর (রাঃ) এর এক হাতে পতাকা, অন্য হাতে তাঁর তরবারি। ভীষণতমযুদ্ধে মেতেছেন তিনি। যুদ্ধের প্রথমে তাঁর ডান হাত কাটা গেল, পরে বাম হাত। তাঁর বাম হাত ছিন্ন হয়ার সাথে সাথে পিছন দিক থেকে এক আঘাত এসে পড়ল তাঁর দেহে। জাফর (রাঃ) যখন শহীদ হলেন, তখন মহানবীর (সাঃ) মনোনীত পরবর্তী সেনাপতি আবদুল্লাহ ইবন রওয়াহা যুদ্ধ ক্ষেত্রের এক কোণে বসে এক টুকরা গোশত খাচ্ছিলেন। দু’দিন আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আর তিনি কিছু খাননি। তিনি যখন খাচ্ছিলেন, সে সময় তাঁর নামে ডাক এল। সঙ্গে সঙ্গে হাত থেকে গোশত ফেলে দিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, “জাফর শহীদ হয়ে গেল, আর তুই এখন দুনিয়ায় ব্যস্ত।”
অতঃপর আবদুল্লাহ ইবন রওয়াহা (রাঃ) সৈন্য পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। ঘোরতর যুদ্ধে ব্যাপূত হয়ে পড়লেন তিনি। এক আঘাতে তাঁর একটি আঙ্গুল কেটে গেল। মুহূর্তের জন্য আবদুল্লাহ ইবন রওয়াহা (রাঃ) একটু দমে গেলেন। বোধ হয় একটু দ্বিধা কিংবা ভয় এল তাঁর মনে। কিন্তু দ্বিধা ভয় ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, “হে অন্তর, এখন কিসের জন্য এ চিন্তা ! স্ত্রী ! আচ্ছা, তাকে তালাক ! গোলাম ! তাঁকে আযাদ করে দিলাম। বাগবাগিচা ! ঐগুলো আল্লাহুর রাস্তায় সদকা করে দিলাম।”
আবদুল্লাহ ইবন রওয়াহা (রাঃ) এর নেতৃত্বে ভীষণতর সংগ্রাম চলতে লাগল ‘মুতা’ রণাঙ্গনে।
মুতা যুদ্ধে যাত্রা করার সময় আবদুল্লাহ ইবন রওয়াহা (রাঃ) বলেছিলেন, “আল্লাহর দরবারে আমার গুনাহের জন্য মাফ চাচ্ছি। আমার জন্য এমন তরবারি আসুক, যা দ্বারা ঝরনার মত আমার রক্ত প্রবাহিত করা হবে কিংবা শত্রু এমন বর্শা দিয়ে আমাকে আঘাত করবে যা আমার হৃদপিন্ড বিদীর্ণ করে দেবে এবং লোকেরা আমার কবরের পাশ দিয়ে যাবে, তখন তারা বলবে, আল্লাহ তোমাকে কৃতকার্য এবং তাঁর প্রিয় হিসেবে গ্রহণ করুন। বস্তুতঃ তুমি তো প্রিয় এবং সফলকামই ছিলে।”
আবদুল্লাহ ইবন রওয়াহা (রাঃ) এর এ আকাংখা সফল হয়েছিল। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) বলেন, “যুদ্ধের জন্য আমরা যখন দাফনের জন্য আবদুল্লাহ ইবন রওয়াহা (রাঃ) এর লাশ সংগ্রহ করে নিয়ে এলাম; তখন দেখা গেল, তাঁর শরীরের উপরিভাগে ৯০টি জঘম রয়েছে।” যায়েদ (রাঃ), জাফর (রাঃ), আবদুল্লাহ (রাঃ) এবং জানবাজ মুজাহিদদের এই আত্মত্যাগই এক লক্ষ রোমক সৈন্যের মনে দারুন বিস্ময় ও ভয় সৃষ্টি করেছিল।
সংগ্রহীত
বিষয়: বিবিধ
১২১৫ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
আজ বড় প্রয়োজন সেসব সাহসীদের...
মন্তব্য করতে লগইন করুন