রাজকুমারী হয় অনেকজন ,রাজরানী হয় একজন।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:০০:১২ রাত
রাজকুমারী হয় অনেকজন ,রাজরানী হয় একজন
আমি বিয়ে প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহন করতে লিখিনি।কারন আমি কোন লেখিকা নই বা জ্ঞানীব্লগারদের চোখে পড়ার মত সেই রকম কোন ব্লগারও নই।আমার মেধা জ্ঞান যোগ্যতা প্রতিভা যাই বলেন না কেন সেই রকম কিছুই আমার নেই।আমার প্রান প্রিয় সন্মানিত শিক্ষক দাদা উনার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর মাঝে আমার মত অজ্ঞ বোকা ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি কে কেন যে হাতে খড়ি দিয়ে এই জ্ঞানের মহাসাগরের এনে ছেড়ে দিয়ে গেলেন? আমার মাথায় আজো তা আসছে না।আর আমি এখন জ্ঞানের সাগরের অথৈ জ়লে হাবুডুবু খাচ্ছি কিন্তু কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না।এই ভীরু ভীরু মন নিয়ে পিছনে ফিরে দেখি তীরে আর দাদাকেও দেখা যাচ্ছে না।আমি চিতকার করে আজ দাদাকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে “দাদা আমি কি সামনে দূর্গম বন্ধুর মরুপথ অতিক্রম করে লক্ষ্যস্থলের দিকে এগিয়ে যাবো?নাকি আবার পিছনে দিকে আমার সেই গতিহারা দিশেহারা জীবনের দিকে ইউটার্ন করব?আমার লক্ষ্যস্থল হল ,আমার জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাচা পাকা অভিজ্ঞতা গুলো আল্লাহর বান্দাদের জন্য রেখে যাওয়া।তাতে যদি কোন মানব মানবীর বিন্দু পরিমান কল্যানে আসলে আল্লাহ যেনো তা আখিরাতের কবুল করেনেন।
বিয়ে টা কি ?
আমার মনে হয়, বাংলা ২ টি ব্যঞ্জনবর্নকে ২টি স্বরবর্ন দিয়ে সংযুক্ত করে দাড় করিয়ে দিলেই বিয়ে হয়ে যায় ।আবার আমার মনে হয় রেললাইনের দুইটি সমান ও সমান্তরাল লৌহপাতের সংযোগস্থল যা আবার জীবন নামের রেলগাড়িটাকে লক্ষস্থলে নিয়ে যাবে।আবার মনে হয় বিয়ে হল সেতুবন্ধন।সেই সেতুর এক প্রান্ত দুনিয়াতে আর অপর প্রান্ত আখিরাতের জান্নাতে।দুনিয়া থেকে পাথেয় দুইজনে বহন করে একটি হাত আর একটি হাতকে শক্ত ভাবে ধরে সমান ভারসাম্য রক্ষা করে জীবনের আয়ুকালের সময় টুকু সেতুর উপর দিয়ে অপর পাড়ের জান্নাতে চলে যাওয়া।
একালের বিয়ে:
আমার এ্যার্পাটমেন্টে আমার পরিচিত এক বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে। বিয়ের যাবতীয় কার্যাবলী মেয়ের অনুমতি ও পছন্দ সই করতে হবে।ছেলের বাড়িতে দেওয়া ফার্নিচার সহ সকল সাজসঞ্জাম দামি ও ব্যান্ড এর হবে। বাবা-মা মুখ আস্তে আস্তে নিস্প্রভ করেই ছাড়ল।বিয়ের দিন পার্লারে গিয়ে এমন বিউটি সেজেছে, কান্না করলেই সব রং চখের পানিতে ধুয়ে যাবে।আমি অবাক হয়ে বান্ধবী বললঃ “তোমার তো মেয়ে নাই তুমি এই সব বুঝবেনা”। আমি শুধু বললামঃ “আমাদের বিয়ে হয়েছে না”।সে আমাকে বলল “সেকালের বিয়ে আর একালের বিয়ে অনেক প্রার্থক্য আছে”।
আমি মেনে নিলাম পার্থক্য আছে। কিন্তু তাই বলে কি মায়া মমতা লজ্জা শরম সব চলে যাবে? আর বাবার অবস্থ্যার কথা না ভেবে স্বামীর বাড়িতে সব তুললেই কি মান সম্মান বেড়ে যাবে ?একটা মেয়ের কি কোন যোগ্যতা দরকার হয় না? শুধু বাবার গলাচিপে নেওয়ার ্সম্পদ দিয়েই তার যোগ্যতার বিচার হবে? আর এই দিকে এই কারনে যৌতকের শিকার হচ্ছে যোগ্যতা সম্পন্ন নিরীহ অসহায় মেয়েরা। কারন তারা স্বামীর বাড়ীতে নেওয়ার মত কোয়ান্টিটি না পেলেও অনেক কোয়ালিটি পেয়েছে।একালে জন্মেছি বলে হিন্দুদের মত নিরবে যৌতুকের মত পাপের পথে সুখ খুজতে যেতে হচ্ছে। আর এ কাজে আমরা মেয়েরাই বেশি উৎসাহিত হচ্ছি আজকাল। লজ্জা নারীর ভুষন, এটা বর্তমান ছেলে মেয়েদের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
সেকালে আমাদের বিয়েঃ
আমার বিধবা মা ভাবতেন আমাকে বিয়ে দেয়া যাবে কিনা?
কারন এক অর্থসংকোট আর আমি আমাদের পরিবারের সবার চেয়ে কালো খাটো রোগা ।
তাই মা ভাবতেন এত বিপদ কোন পুরুষ লোক কি মেনে নিবে?
ক্লাস এইটে স্কলারসীপ পরীক্ষা দেওয়ার সাথে সাথে একমাত্র নিজের ভাই, পিতৃস্নেহে আমাদের তত্ত্বাবধান করা একমাত্র দুলাভাইয়া, আর আমার মায়ের ফিসফিসানিতে বুঝতে বাকি নেই যে, কোরবানীর গরুর মত আমাকে বিক্রি করে দেবার পরিকল্পনা চলছে।কারন আমার কিশোরী মন তখন জানত যে বিয়ে হওয়া মানে একজন মেয়ের মনের সব স্বাধীনতা বিক্রি হয়ে যাওয়া।কারন ক্লাসমিট হালিমা বলেছে, তার শরীল মন কিছুই এখন আর তার হুকুমে চলে না , সব চলছে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের কথা মত ।সদ্য বিয়ের পিড়িতে বসা চাচাতো বোন নেপুরের থেকে বিয়ে সম্পর্কে ইতিবৃত্ত যা শুনলাম তাতে ভয়ে আমার হৃদয়টা সাহারা মরুভুমি হয়ে গেল।বিয়ে হলে কি কি লাভ-ক্ষতি এবং বিয়ের আগে পরে আমার করনীয় ও বর্জনীয় অনেক নিয়ম শিখালো।শিক্ষনীয় বিষয়ের মধ্যে কঠিন ছিল কান্নাকাটির পর্ব টা।কোন কোন সময় কান্না করতে হবে তাও সে বলে দিল।কারন যে যে সময় কান্না করতে হবে সেই সময় তা না করলে দুই কুলেই সবাই সমালোচনা করবে।আমার হল হাসির রোগ।আর এই রুগীরা সুখেও হাসে দুঃখেও হাসে।হাসির জন্য বোকা উপাধিও পেয়েছি।তাই আমার দ্বারা যে তা হবে না তাই নিজের অপারগতার ভয়ে হৃদয়ের চোখে যদিও লোনা পানির সাগর বইছে কিন্তু বান্ধুবীর আনুগত্য করে চোখ দিয়ে প্লাবন বইতে দেইনি।
কবুল বলো, বলো বলো কবুল।
ক্লাসমিট মানিক এসে বলল,“তোর জামাই পায়ে হেটে বিয়ে করতে এসেছে,মনে হয় অনেক গরীব। নেপুরের জামাইর তো পালকি তে চড়ে এসেছে।আবার সাথে বিদেশী দামি শাড়ী,গয়ণা সাবান, সাজসজ্জার ও পারফিউম আরো কত কিছুই এনেছে”।মা বলেছেন “যাদের বাবা নেই তাদের কোন সখ থাকতে নেই।আর অন্যের জিনিসের দিকে তাকাতেও নেই”।তাই আমার সেই সবের জন্য কোন মোহ নেই। গিয়াস ভাই যে অনেক ভাল মানুষ তা বিয়ের আগে থেকেই জানি।নানাজান কানাকানি করে মাত্র জানালেন,”ভয় নাই, দুলাভাই অনেক ভালো মানুষ”। কবুল বলো ,বল বল কবুল।কবুল বলতে বিলম্ব হচ্ছে কারন নেপুরের সুত্র মত ১।আমার কান্না আসছে না।২।কবুল বলার সময় কান্না কেন আনতে হবে তা আমার ব্যর্থ বালিকা মন তখন না বুঝলেও, আমি চেষ্টার ত্রুটি করিনি।৩।কবুল বলার পর যে ভয়ংকর দায়িত্ব ঘাড়ে আসবে সে সময় কি উপায় হবে?৪।বিদায়ের সময় পালকিতে উঠার আগেও কান্না আসতে হবে।আল্লাহ একি বিপদের দিকে আগাচ্ছি।শ্বশুর বাড়িতে নেপুরের থেকে শুনা সেই ভয়ংকর রাতের বর্ননার কথা মনে হয়ে ওনেক কান্না করেছি যখন আর আশে পাশে শান্তনা দেবার মত কাউকে পাইনি।
বাসর রাত
সানাই বাঝে নাই আলোক সজ্জা হয় নাই ।বর টা সাজানো পাজারো গাড়ী চড়ে আসে নাই । লাল বেনারশি আর গহনার বাক্স দেখি নাই । একচালা বাসর ঘরের কাঠের চার পায়ার চকি টা নানা রং এর ফুলেও মখমলের চাদরের নরম মেট্রেক্স এ সাজানো ছিল না । তবে সেখানে বসা ছিল অতি বিনয়ী সহজ সরল নম্র ভদ্র একজন রাজকুমার। যার হৃদয়টা ছিল অমুল্য ভালবাসার সানাই আর নানান রঙ্গের আলোক সজ্জায় ভরপুর স্বপ্ন রাজ্যের রাজার মত।যে রাজার রাজ্যে ছিল কোটি কোটি টাকা মুল্যের মানিক মুক্তার হীরা যহরতের চেয়েও মুল্যবান ভালবাসা ময়ুরসিংহাসন । যে আসন টি রাজরানী ছাড়া আর কেউ কোন দিন বসা তো দূরে থাক দেখতেও পায়নি। কত মরুপথ পাড়ি দিল ,কত নীড় ভাঙ্গা ঝড় তুফান আর তীর ভাঙ্গা উত্তাল সাগরের ঢেউ এর সাথে জীবন তরী বাইতে গিয়ে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ কেউই কাউকে এক মুহুর্তের জন্য ভালবাসার বন্ধন থেকে দূরে সরালো না । ভালবাসার শক্ত বন্ধনের প্রাচীরের সামনে দুর্ভিক্ষ, অভাব অনটল সহ সব প্রতিকুলতা হার মেনে নিল । তাই আজ আমাদের কাছে দুনিয়ার মুল্যবান সব কিছু থেকে স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা অনেক বড়। এই ভাবেই ্ধৈর্য্য ধরে এক অনাথ বালিকা রাজকুমারী থেকে রাজরানী।আপনিও হতে পারেন বিয়ের মাধ্যমে রাজকুমারী থেকে রাজরানী।
যার কাছে শুধু শিক্ষা অর্জন যায় । যে অনুর্ভর মাটিতে দক্ষকৃষকের মত ভালবাসার উর্বর সার দিয়ে ফলান নানান জাতের সোনালী আশ ,রবি শষ্য ফসল আর বসন্ত বাহারে সাজানো পুস্পশয্যা। যিনি একজন স্ত্রী কে দিতে পারেন দুনিয়া ও আখিরাতের পাথেয় সিরাজুম মুনিরা । যিনি মন প্রান উজাড় করে দিতে পারেন পবিত্র প্রেম প্রীতি ভালবাসায় পরিপুন্য দুনিয়াবী জান্নাতী সুখ ।একজন স্বামী নিজের স্বেত পাথরের কোমল হৃদয়ে সোনার হরফে লিখতে পারেন আদর্শ স্ত্রীর আদর্শ মায়ের নাম । আর সেই ভালবাসার স্বেত পাথরের সিড়ি বেয়ে দুই দুই জনার হাত ধরে চলে যাবেন ইনশাল্লাহ জান্নাতের সিড়িতে ।
স্বামী একজন ভাল বন্ধুঃ
স্বামীর চেয়ে বেশি একজন ভাল বন্ধু আর কেউই হতে পারে না । যেই বন্ধুর মাধ্যমে আমি পেলাম ৫ টি গোলাপের একটি বাগান আলহামদুলিল্লাহ । তিনি আরো দিলেন কোরানের সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত একটি সংগঠন সাথে পথ চলা। ইসলামের আলোকিত অনেক ভাই বোন ছেলে মেয়ে। যাদের কে না পেলে আমার জীবন এর শুন্যতা আর অন্ধকারে ঢেকে থাকত। এত সুন্দর ফুলেল উতফুল্ল মনের মানুষ আল্লাহ আমাকে দান করার জন্য আমি আল্লাহর প্রশংসা সারা জীবন করেও শেষ করতে পারব না
১৯৮২ সালের ২৪ শে জুন শুভ লগ্নে শুভ পরিনয়ের মাধ্যমে আমি আদৌ জানিনি বুঝেতে বা অনুভব করেতে পারিনি যে, আল্লাহ রহমানুর রাহিম আমাকে এক জান্নাতী বন্ধু দান করতে যাচ্ছেন । বর্তমান সময়ের স্ত্রীদের মত হিসাব করে দেখলাম কি পেলাম আর কি পেলাম না তা হিসাব করে দেখি । পাওয়ার অংক টা অনেক বড় । না পাওয়ার দেখি কিছুই নেই । বরং আমিই তার কাছে ঋণী ।িভাবে এই ঋন শোধ করব ? আল্লাহ আমার এই ঋণ শোধ করার দায়িত্ব আপনি নিয়ে উনাকে জান্নাতী শুখ দুনিয়া ও আখিরাতে দান করুন ।
আপনারাও আমাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ আমাদের গুনাহ খাতা মাফ করে যত দিন বেছে থাকা কল্যান কর তত দিনের নেক হায়াত দান করুন আর আমাদের যেই জীবন আমাদের জন্য অক্যান কর তার আগে শহিদি মরন দান করুন । আমার স্বামী সন্তান কে আমার নয়ন শীতল কারী ও মুত্তাকিন দের ইমাম বানিয়ে দিন
বিষয়: বিবিধ
৩৮৯৭ বার পঠিত, ৫১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাশা আল্লাহ অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
আপনার ধারনা ভুল । আল্লাহ মাফ করুন ।শুধু আমি নয় আমার চেয়েও উত্তম বোনেরা স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে থেকেও কত সুন্দর জান্নাতী সুখে হাসিমুখে সব মেনে নিচ্ছেন। আমার কথায় মনে ব্যাথা পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন ।আমার ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম পুরুস্কার দান করুন ।
কিন্তু দু’আটা সাগ্রহে আমীন বললাম কারণ আপনাদের দু’আ ছাড়া আমার আর কোন পাথেয় নেই
ওখানেই যেন দেখা হয় আপনার সাথে
চমৎকার লেখা। আপনার এই লেখা থেকে অবিবাহিত/ অবিবাহিতা ব্লগারগণের এবং আমাদের সবার জন্যই অনেক শিক্ষা রয়েছে। ধন্যবাদ
মহারাণী হয় একজন,
চাকরাণী হয় বহুজন।
আপনি যে অসাধারণ সুইমার হয়ে উঠেছেন, দাদা তা ঠিকই অনুধাবন করেছেন।
আমার জন্যও দুয়া করবেন।
মডু প্রচুর স্টিকি করতে হবে যে
khub valo laglo. Ashakori niyomito likhben.
মন্তব্য করতে লগইন করুন