রাজহাস মানে রাজার হাস নয়,বরং হাসের রাজাই রাজহাস ।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৩৮:০৮ দুপুর
রাজহাস মানে রাজার হাস নয়,বরং হাসের রাজাই রাজহাস ।
আগে কত সুন্দর ভোটের দিন টা কাটাইতাম ।ভোর রাতে উঠেই রান্না শেষ করে ফজরের নামাজ পড়েই রেডি হয়ে কেন্দ্রের সামনে কখন হাজির হব তা নিয়ে কি ব্যস্ততা । পারভীন তুমি দেরি করছো কোন কাজে ? এই প্রশ্ন কয়েক বার শুনতে হত ?
কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দাড়ালে কারো ভাবী ডাক আবার কারো আপা ডাক দিয়ে বার বার বুঝাচ্ছেন পোলিং এজেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালনের গাইড লাইন গুলো । ভিতরে আল্লাহর নাম নিয়ে ডুকেই অন্য সব পার্থির এজেন্টদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে সবাইকে এখানে আমাদের যে দায়িত্ব তার উপর কিছু কথা বলে দিতাম । সবাই একমত হতাম যে কেউই কাউকে জাল ভোট দিতে সহযোগিতা করব না। তা হলে আমরা আল্লাহর কাছে এর জবাবদিহি করতে হবে । তাই আমরা চার চোখ দিয়ে নাম ঠিকানা মিলায়ে তারপর ছাড়তাম। বার বার ভিতরে আমাদের খোজ় খবর সুবিধা অসুবিধা জানতে ভাইরা খাবার সহ আসতেন। আমার হিজাব ও নেকাব থাকায় আমি কিছুই খেতাম না অন্য বোনদের খেতে দিতাম। এতে বোনরা খুব খুসি হয়ে যেতো।
ঘন্টার পর ঘন্টা মহিলারা লাইন ধরে এসে ক্লান্ত চেহারার মাঝেও আসলামুয়ালাইকুম পারভীন আপা/ ভাবি বলে কি সুন্দর হাসি দিয়ে নাম মিলিয়ে ভুতে ডুকে ভোটটা দিয়ে আবার যাবার সময় বিজয়ের একটা হাসি দিয়ে বিদায় নিতেন । যারা জাল ভোট দিতে আসতেন তাদের চেহারা আর স্বামীর নাম বলতে বললে যে ব্যাগাচ্যাগা চেহারা হত তাতে ধরে ফেলতাম । আর সব বোনেরা হাসতাম যে জাল ভোট দিবে কিন্তু স্বামী হিসাবে অন্য জনের নাম বলতে নারাজ ।
সন্তাসী মাস্তান রা ভিতরে গিয়ে কয়েকবার সন্তাসী ব্যবহার দিয়ে ধমক দিয়ে এসেছেন যে আমার কারনে জাল ভোট দিতে পারছে না । তাই আমি বাহিরে আসলে আমার খবর করাবে ।আল্লাহ সাহায্য করলে কেউই কিছু করতে পারেন না । ৫ বার পোলিং এজেন্ট হওয়াতে এই বার সেই রকম আমেজ না থাকাতে সেই দিন গুলো আজ স্বপ্নের মত ভেসে ভেসে মনে পড়ছে সেই দিন গুলো ।
কিছু ক্ষন আগে রাস্তায় বের হয়ে দেখি চির চেনা কোলাহল আর যানজটের ঢাকা শহরের ব্যস্ত্ রাস্তা গুলো মনে হচ্ছে কুয়াশার চাদর গায়ে ঝড়ায়ে ঘুমে বিভোর হয়ে আছে । একটা রিক্সা বা মানুষ চলাচলও নেই । দোকানে গেলাম আর দোকানদার বলে আপা আল্লাহ অশেষ রহমত যে আপনি আজ আমার দোকানে এসেছেন । সকাল এখন দুপুর পর্যন্ত একজন কাষ্টমার পাই নাই । আপনিই প্রথম । আপা কিভাবে আমরা আমাদের সংসার চালাবো । উনারা একজন আসে একজন যায় ।এর মাঝে উনাদের ভাগ্য পালটায় কিন্তু আমাদের তো কোপালের ভাগ্য তো আর পালটায় না বরং আরো দিন দিন খারাপ হচ্ছে । না খেয়ে মরলেও আমাদের কথা কেউ ভাবে না ক্ষমতায় গিয়ে । সবাই নিজের আখের গোছা গোছায়ে নেয় আগে । আমি বুঝলাম উনার মনের সব রাগ আমার উপর দিয়ে সারাবেন । তাই তাড়াতাড়ি করে সদাই নিয়ে দে দৌড়।
পরে ভাবলাম , এ কোন ধরনের রাজনীতি চলছে দেশে। একটা দেশের সরকার দেশের ও দশের কল্যানে কাজ করে জনজনের মৌলিক চাহিদা গুলো পুরন করার জন্য। কারন তিনি জনগনের ভোটের মাধ্যমে যে কোন দল থেকে তাকে ক্ষমতায় বসান হয় । তখন সেই দলই জনগনের কল্যানে কাজ করার জন্য তাকে সাহায্য করেন। আর সেই রাজনৈতিক দল ভাল কাজ করলে সে নির্ভয়ে আবার গনতান্তিক ভাবে আবার ক্ষমতায় আসেন । জনগন এর কল্যান না করে খারাপ কাজ করলে ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দিয়ে দেন ।তাই আজ দেখা গেল্লো জনগন ঘৃনা আর ক্ষোপে রাস্তায় কেউই নামে নাই ।
আমাদের শাসকরা ক্ষমতায় এসেই মনে করেন , রাজনীতি করে ক্ষমতায় এসেছি । তাই এখন আমিই রাজা । আর রাজার মন গড়া নীতিতে দেশ চলবে । আর এমন ভাবে চালান যা বুঝে যে , গনতন্ত্র নিপাত যাক রাজতন্ত্র মুক্তি পাক । কিন্তু তিনি ভুলে যান রাজনীতি মানে রাজার নীতি নয় । যেমন রাজহাস মানে রাজার হাস নয় , বরং হাসের রাজাই রাজহাস । তেমনি নীতির রাজাই হলো রাজনীতি ।
নীতি মানে নিয়ম দেশ কোন নিয়মে চললে জনগন শান্তিতে তাদের মৌলিক চাহিদা পুরন করতে পারবেন এর বিধান বা ফয়সালা নির্ধারন করার নাম রাজনীতি। রাজনৈতিক বিরোধী দল রাজার প্রতিপক্ষ শত্রু নয় । বরং রাজার নিয়ম বহিভুত কোন কাজ দেশের ক্ষতি বা প্রতিবেশী দেশের আক্রমনের স্বীকার হয়া থেকে দেশকে রক্ষা করার স্বার্থে সমালোচলা করে রাজাকে সঠিক পথে পরিচালনা করা । এতে রাজার আরো দেশ পরিচালনায় সহজ হয় নীতির মধ্যে চলতে । তাই রাজনীতি সবার কল্যানে দেশের কল্যানে সবার অংশ গ্রহনের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসাবে আমাদের সবার সক্রিয় ও স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে অংশ গ্রহন উচিত। আল্লাহর রাসুলও তাতে অংশ গ্রহন করেছেন বলে মদিনা সনদ এর আলোকে রাজা হয়ে দেশ পরিচালনা করে দেখায়েছিলেন । তাই যারা বলে ইসলামে রাজনীতি হারাম তারা আসলে ইসলামের অতীত ইতিহাস জানেন না বা জেনেও মানুষ কে ভুল পথে পরিচালিত করছেন।
বিষয়: বিবিধ
৫২২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন